অভিনন্দন

বিশ্বকাপ ক্রিকেট / নববর্ষ (এপ্রিল ২০১১)

অদৃশ্য
  • ২০
  • 0
  • ৯১
রংবেরঙের নানা সজ্জায় সজ্জিত একটি স্টেডিয়াম। এখানে আজ অনুষ্ঠিত হবে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল। এই ফাইনালে যে দুটি দল মুখোমুখি হচ্ছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বের এক পরাশক্তি। অপর দলটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বলতে গেলে কেউ চিন্তাই করতে পারেনি এই দলটি ফাইনাল খেলবে।
তাই আজকে যে সকল দর্শক স্টেডিয়ামে উপস্থিত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগই মনে মনে একটি একতরফা খেলা দেখার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন। অনেকে তো সরাসরি মন্তব্যও করছেন যে এই দলটি এতদূর এসেছে স্রেফ কিছুটা ভাগ্যের সহায়তা নিয়ে। ফাইনালে তো এরা দাঁড়াতেই পারবে না।
স্টেডিয়ামের সিংহভাগই বড় দলটির সমর্থক তবে ছোট দলটির সমর্থক যে একেবারেই নেই তা নয় কিন্তু তাদের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
খেলা শুরুর আগে প্রথমে টস হল। টসে জিতলেন বড় দলটির অধিনায়ক। জিতেই তিনি ব্যাটিং নিলেন। তা দেখে বেশিরভাগ মানুষই ধারণা করল যে প্রথমে ব্যাট করে বেশ বড়সড় একটি স্কোর করে ছোট দলটিকে প্রথম থেকেই একটা চাপের মধ্যে ফেলার জন্য বড় দলটির অধিনায়ক এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বড় দলের দুই ওপেনার ব্যাটিং করতে নামল। প্রথম থেকেই উইকেটে সামান্য টার্ন পাবার আশা করে ছোট দলের অধিনায়ক বোলিং ওপেন করল একজন স্পিনার দিয়ে। ৫ ওভারে যখন দুই ওপেনার মিলে প্রতি ওভারে গড়ে প্রায় ৯ করে রান নিয়ে করলেন ৪৩ তখন বেশিরভাগ দর্শকই মোটামুটি হিসাব করা শুরু করেছেন ৫০ ওভার শেষে রান কি ৩৫০ এর বেশি হবে না কম হবে। ছোট দলটির সমর্থকেরা প্রথমে স্পিনার খেলানোর মত ভুল তাদের অধিনায়ক কিভাবে করল এটা ভেবে তখন মাথা চাপড়াচ্ছেন।
এমতাবস্থায় খেলার ৬ষ্ঠ, ৮ম ও ৯ম ওভারে অল্প রানের ব্যবধানে ৩টি উইকেট পড়ে যাওয়ায় খেলা নতুন দিক পরিবর্তন করল।
বড় দলের খেলোয়াড়দের মাথায় তখন এ অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসার চিন্তা আর ছোট দলের খেলোয়াড়দের এ চাপ কিভাবে বজায় রাখা যায় সে চিন্তা।
যদিও এর পরে ছোট দলের অনেক চেষ্টা সত্যেও আর উইকেটের পতন হল না এবং বড় দলের চতুর্থ উইকেট জুটির দুই ব্যাটসম্যান প্রাথমিক ধাক্কা সামলে উঠে ধীরে ধীরে আবার রানের চাকা সচল করে তোলার চেষ্টা শুরু করল। ৪র্থ ও ৫ম ব্যাটসম্যান মিলে এর পরের ৩৩ ওভার ধরে অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে খেলে স্কোর কার্ডে যোগ করলেন মূল্যবান ১৬৫টি রান। এরপর শুরু হল পাওয়ার প্লের খেলা। ব্যাটিং দলের লক্ষ্য এই পাওয়ার প্লের সদ্ব্যবহার করে তাদের স্কোর কার্ড আরও সমৃদ্ধ করা।
কিন্তু এরকম সময় প্রতিপক্ষ দলের অধিনায়ক ঘন ঘন বোলার বদল করবার সিদ্ধান্ত প্রয়োগ করলেন যেটা প্রায় জাদুর মতই কাজ করল। পাওয়ার প্লের ৫ ওভারে আউট হলেন যথাক্রমে ৪র্থ ও ৫ম ব্যাটসম্যান। ব্যাটিং দলের রানের গতিও আবার মন্থর হয়ে এলো।
এভাবে প্রথম ৫০ ওভারের খেলা শেষে বড় দলটির মোট সংগ্রহ দাঁড়াল ২৮০ রান ৫ উইকেটে। এটা এই মাঠে এই দলটির ২য় বৃহত্তম স্কোর।
জেতার জন্য ছোট দলটির দরকার মোট ২৮১ রান।
আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় ২৮১ রান তো আজকাল একদিনের ম্যাচে তাড়া করা কোন ব্যাপারই না। কিন্তু এই মাঠে যেখানে পরে ব্যাট করা একটু কঠিন সেখানে এই ২৮১ রানই হয়ে উঠতে পারে পাহাড়সম।
ছোট দলটির খেলোয়াড়দের মনে তখন একটাই চিন্তা এই বিশ্বকাপে তারা যে এই পর্যন্ত আসতে পারবে সেটা ছিল তাদের কল্পনারও বাইরে। এতদূর আসতে পারাটাই তাদের কাছে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। তাই এ খেলায় তাদের হারানোর কিছুই নেই বরং শতভাগ উজাড় করে খেললে তারা পেতে পারে অকল্পনীয় সম্মান।
এই মনোভাব নিয়ে ভালো খেলার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে মাঠে নামল ছোট দলের দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান। তাদের দৃঢ়তাপূর্ণ ব্যাটিঙে প্রথম ১৫ ওভারের মধ্যেই তাদের দল পৌঁছে গেল ভাল একটি অবস্থানে। স্কোর কার্ড বিনা উইকেটে ৯০ ।
কিন্তু এর পরই প্রতিপক্ষ দলের একজন দুর্দান্ত স্পিনারের অসাধারণ বোলিং এ খুব শীঘ্রই পতন ঘটল ছোট দলটির দুই ওপেনারের। এরপর ৩য় ও ৪র্থ ব্যাটসম্যানের অতি সাবধানী ব্যাটিং এ আর কোন উইকেট না পরলেও রান তোলার গতি হয়ে গেল শামুকের চাইতেও ধীর। প্রতি ওভারে নির্ধারিত রান রেট তখন একটু একটু করে বেড়ে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে ছোট দলটির ওপর।
এ অবস্থায় রান নেবার চেষ্টা করে ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রান আউট হয়ে গেলেন ৩য় ব্যাটসম্যান। ছোট দলটির স্কোর কার্ড তখন ২৫ ওভারে ১১০ রান ৩ উইকেটে।
এর পর ব্যাটিং করতে এলো দলটির অধিনায়ক। তিনি প্রতি বলে বলে ১ অথবা ২ রান নিয়ে রানের চাকাকে আবার সচল করে তুলবার চেষ্টা করতে থাকলেন। কিন্তু অধিনায়কের চেষ্টা সত্বেও অপর পাশে নিয়মিত আরও ৩টি উইকেট পড়ার পর একসময় মনে হচ্ছিল খেলা সেখানেই শেষ।
ছোট দলটির সমর্থকেরা তখন মনে মনে ভাবছে আর যাই হোক আমাদের দল এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে এটাই আমাদের বড় পাওয়া। হার জিত যাই হোক আমাদের মনে কোন আফসোস থাকা উচিত না।
কিন্তু ক্রিজে ব্যাট করতে থাকা দলটির অধিনায়ক ও অপর ব্যাটসম্যানটির মনে তখন অন্য চিন্তা, তারা ভাবছে- এত পথ পারি দিয়ে, জয়ের এত কাছাকাছি এসেও যদি আমরা এখন হাল ছেড়ে দেই তাহলে আমাদের এত বছরের ক্রিকেট খেলাই বৃথা।
তাদের মনে তখন একটাই লক্ষ্য আর যাই হোক হাল ছাড়া যাবে না। তাদের ওপর তাদের দেশের কোটি কোটি মানুষের যে আশা তা বিফলে যেতে দেওয়া যাবে না। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যেতে হবে।
এভাবে ৭ম উইকেট জুটিতে এই দুই ব্যাটসম্যানের ইস্পাত সদৃশ ব্যাটিং এর ফলে শেষ পর্যন্ত খেলার অবস্থা দাঁড়াল এরকম যে জিততে হলে শেষ ওভারের ৬টি বলে প্রয়োজন ৬টি রান।
৫০তম ওভারের খেলা শুরু হল। প্রথম ৩ বলে কোন রান হল না। ছোট দলটির সারা দেশ তখন প্রার্থনারত। সমর্থকেরা যে যেখানে ছিল সেখানে যেন পাথরের মূর্তির মত জমে গেছে।
কি হয়? কি হয়?
কে জেতে? কে জেতে?
চিন্তায় অনেকে নিজের মাথার চুল টেনে ধরছে কেউবা নিজের চুল টানতে গিয়ে উত্তেজনায় ভুল করে টেনে বসছে অন্যের চুল। অনেকে ভয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে।
এমন অবস্থায় সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করলেন দলটির অধিনায়ক।
প্রতিপক্ষের আক্রমণাত্মক ভাব, চোখ রাঙানই, গ্যালারী ভর্তি দর্শকের সমর্থনের অভাব সবকিছুই ম্লান হয়ে গেল দলটির দৃঢ়প্রত্যয়ই ১১জন খেলোয়াড়ের কাছে। গ্যালারীর গুটি কয়েক সমর্থক এবং দলটির দেশে তখন আনন্দের বন্যা। রাস্তায় রাস্তায় আনন্দরত মানুষের মিছিল।
আর তখন স্টেডিয়ামের লাউডস্পিকার থেকে ভেসে আসছিল ঘোষণা- অভিনন্দন আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের নতুন বিজয়ী দলকে।
অভিনন্দন বাংলাদেশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মেহেদী আল মাহমুদ স্বপ্ন না দেখলে স্বপ্ন পূরণ হবার চাঞ্চ আসে না। আপনি স্বপ্ন দেখেছন, একদিন সেটা পূরণও হবে আশাকরি।
বিষণ্ন সুমন তুমি যে একজন আশাবাদী লেখক তা আগেই জানা ছিল. এবারও তার ছাপ সুস্পষ্ট. অনেক অনেক শুভকামনা তোমার ও তোমার আশাবাদী সৃষ্টির জন্য.
রওশন জাহান চোখ ভিজে গেলো আনন্দে।একদিন সত্যি হবে এই সপ্ন।
মোঃ শামছুল আরেফিন বাংলাদেশ এর সাথে যে দেশটি খেলেছে তার নামটি বলেন্নি।বাংলাদেশ একদিন চ্যাম্পিয়ন হবে এই আশা আছে কোটি বাঙ্গালির মনে।বিজয়ী একদিন হবই আম্রা।তবে আপাতত আসা করি আপনি এবার চ্যাম্পিয়ন হোন।অনেক অনেক শুভ কামনা রইল।
মাহাতাব রশীদ (অতুল) আপনার গল্পটির মতই আমরা যেন একদিন বিশ্বকাপে জিতি সেই কামনা রইল।৫এ৪
শাহেদুজ্জামান লিংকন প্রত্যাশার মাঝে লুকিয়ে থাকে প্রাপ্তির সম্ভাবনা। তাই বড় স্বপ্ন দেখতে হবে। আবার বাস্তবায়নের চেষ্টাও করতে হবে। আমার লেখা পড়ার আমন্ত্রণ http://www.golpokobita.com/golpokobita/article/3228/714
আনিসুর রহমান মানিক জিতব আমরা জিতব , অদৃশ্য ও জিতবে /

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪