নাম বদল

স্বাধীনতা (মার্চ ২০১১)

অদৃশ্য
  • ১৫
  • 0
  • ১২৯
স্কুল থেকে ফেরার পর থেকেই মুখ ভার করে বসে আছে স্বাধীন।
“কি হয়েছে বাবা? শরীর খারাপ লাগছে”? চিন্তিত মা জিজ্ঞাসা করলেন।
ক্লাস টুতে পড়ুয়া ছোট্ট স্বাধীন মাথা নেড়ে না করল।
“তবে কি স্কুলের টিচার বকা দিয়েছে?” আবার মাথা নেড়ে না করল সে।
“কারও সাথে ঝগড়া করেছ?” এবারেও উত্তর এল না।
“তবে কি হয়েছে সোনা তোমার মন খারাপ কেন?”
স্বাধীন মার দিকে তাকিয়ে তখন বলল- “মা আমার নামটা বদলিয়ে দাও না”।
হঠাত এই অদ্ভুত আবদারে বেশ অবাক হয়েই স্বাধীনের মা জিজ্ঞেস করলেন- “নাম বদলিয়ে দিতে হবে কেন? কি হয়েছে?”
“আমার এই নামটা ভাল না। আমাকে সুন্দর একটা নাম দাও”।
“এই নাম ভাল না তোমাকে কে বলল?”
“বলেছে আমার বন্ধুরা। ওদের কত সুন্দর সুন্দর নাম আর আমার নামটা পচা। আমাকেও ওদের মত একটা সুন্দর নাম দাও না মা”। আবার আবদার করল স্বাধীন।
স্বাধীনের মা এবার পরম আদরে ছেলেকে কোলে টেনে নিয়ে বললেন- “কে বলেছে তোমার নাম পচা বাবা। তোমার নামের সাথে যে কত বড় ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে তা কি তুমি জান?”
ছোট্ট স্বাধীন মাথা নেড়ে না করল। তখন স্বাধীনের মা বললেন- “তোমার জন্মদিন কবে বলত বাবা?”
“২৬শে মার্চ”।
“হুঁ, আর এই ২৬শে র্মাচেই আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমাদের এই বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করা হয়েছিল। তুমি এত বিশেষ একটি দিনে জন্ম নিয়েছ বলেই তো তোমার নাম স্বাধীন দেওয়া হয়েছে”।
মার কথা শোনার পর স্বাধীন কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল- “মা, তারপরও আমার নামটা তুমি বদলিয়ে দাওনা”।
স্বাধীনের মা আরও কিছুক্ষণ স্বাধীনকে বোঝানোর চেষ্টা করে অত:পর হাল ছেড়ে দিয়ে বললেন- “ঠিক আছে তোমার নামটা তো তোমার বাবা রেখেছে, বদলিয়ে যদি দিতে হয় তাহলে সেই দিবে। বাবা আসলে তার কাছে বলো”।

সন্ধ্যায় স্বাধীনের বাবা বাসায় আসার পর স্বাধীনের মা বললেন- “যাও তোমার আদরের ছেলেকে সামলাও”।
“কেন আবার কি করেছে সে?”
“তার নতুন বায়না হয়েছে, নাম বদলিয়ে দিতে হবে”।
“নাম বদলিয়ে দিতে হবে! তা হঠাত এত অদ্ভুত আবদার কেন হল?”
“কি জানি? কোন এক কারণে তোমার ছেলের ধারণা হয়েছে যে তার বন্ধুদের নাম তার থেকে সুন্দর। এজন্য তার নাম বদলিয়ে দিতে হবে। আমি তো বাবা নানা কথা বলে বোঝানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হলাম। এবার তুমি দেখ বোঝাতে পার কি না?”
“হুঁম, বুঝলাম তা স্বাধীন কোথায়?”
“কোথায় আবার টিভিতে কার্টুন দেখছে”।
তখন স্বাধীনের বাবা টিভি রুমে গেলেন। দেখলেন মন দিয়ে টিভিতে ‘বেন টেন’ দেখছে স্বাধীন। এটা ওর বেশ প্রিয় কার্টুন। এটা দেখার সময় কেউ স্বাধীনকে টিভির সামনে থেকে নড়াতে পারে না।
প্রথমেই স্বাধীনের বাবা রিমোট হাতে নিয়ে অন্য চ্যানেলে ঘুরিয়ে দিলেন। হঠাত প্রিয় কার্টুন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় স্বাধীন প্রায় চিতকার করে উঠল- “বাবা, কার্টুন নেটওয়ার্ক দাও না আমি ‘বেন টেন’ দেখছি তো।
“আজকে তুমি ‘বেন টেন’ দেখতে পারবে না”।
“কিন্তু আমিতো এটা প্রতিদিন দেখি”।
“প্রতিদিন দেখ তো কি হয়েছে? আজকে দেখতে পারবে না”।
বাবার এরকম কড়া আচরণে দু:খ পেয়ে টিভি দেখা বাদ দিয়ে স্বাধীন যেই কম্পিউটারের দিকে এগুতে গেল তখনই আবার শুনতে পেল- “কোথায় যাচ্ছ?”
“কেন কম্পিউটার গেমস খেলতে”
“এখানে চুপচাপ বসে থাক কম্পিউটার গেমস খেলতে পারবে না”।
তখন প্রায় কাঁদকাঁদ হয়ে স্বাধীন বলল- “আব্বু তুমি রাগ করছ কেন? আমি তো আজকে কোন দুষ্টামি করি নাই”।
“দুষ্টামি কর নাই ভাল কথা। এখন চুপচাপ এখানে বসে থাক আর একদম কান্নাকাটি করবে না”।
বাবার থেকে এরকম কড়া কথা শুনে স্বাধীন আর চোখের পানি আটকে রাখতে পারল না। ফুঁপিয়ে ফুপিয়েঁ কাঁদতে শুরু করল সে।
তখন স্বাধীনের বাবা রাগত কন্ঠে ধমক দিলেন- “বলেছি না কান্নাকাটি করবে না। তারপরও কান্নাকাটি করছ কেন?”
বাবার ধমক খেয়ে স্বাধীনের কান্নার আওয়াজ আরও বেড়ে গেল। এবার বেশ জোরেশোরেই সে কান্না শুরু করল। স্বাধীনের কান্নার আওয়াজ শুনে স্বাধীনের মা দৌড়ে এলেন। তখন স্বাধীনের বাবা চোখের ইশারায় স্বাধীনের মাকে চুপ থাকতে বললেন।
একটু পরে স্বাধীনের বাবা স্বাধীনকে ডাক দিলে ভয়ে ভয়ে স্বাধীন বাবার কাছে গেল।
তখন স্বাধীনের বাবা তার ছেলের চোখের পানি মুছে আদর করে বললেন- “বাবা, এতক্ষণ তোমাকে যে কথা গুলো বললাম সেটা কি তোমার ভাল লাগল?”
স্বাধীন বলল- “না আব্বু আমার একটুও ভাল লাগে নি”।
“তুমি এতক্ষণ যে অবস্থার মধ্যে ছিলে একে কি বলে জান?”
স্বাধীন অবাক হয়ে ওর বাবার দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল।
“একে বলে পরাধীনতা। তোমার ইচ্ছামত তুমি কিছু করতে পারবে না। সবসময় তোমাকে অন্যের ইচ্ছায় চলতে হবে। আর এই পরাধীনতা মুক্তির নামই স্বাধীনতা। এই যে তুমি তোমার ইচ্ছামত টিভি দেখতে পার, খেলতে পার এর নাম হচ্ছে স্বাধীনতা।
আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমাদের এই পুরো দেশটাই ছিল পরাধীন। ঠিক একটু আগের তোমার অবস্থার মত। কিন্তু চল্লিশ বছর আগে তোমার জন্মদিনের দিন আমরা সেই ভয়ন্কর অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে। আর সেই জন্যেই তোমার নাম রেখেছি স্বাধীন। এবার বল এখনও কি তুমি তোমার নাম বদলাতে চাও?”
বাবার কথা বুঝে একগাল হেসে স্বাধীন মাথা নেড়ে না করল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অদৃশ্য @ওয়াছিম ভাই কয়টা ভোট পেলাম সেটা বড় নয় আপনারা যারা গল্পটা পড়েছেন তাদের কাছে ভাল লেগেছে এটাই আমার বড় প্রাপ্তি।
ওয়াছিম এত সুন্দর একটা গল্প মাএ ৬ ভোট পেলেন?
মোঃ মামুন মনির লাগিল বেশ ভালো সুন্দর গল্পটি, বলতে হয় খুব সরল আপনার লেখার কল্পটি।
সূর্য ভালো লাগলো ..........
বিন আরফান. আজ থেকে চল্লিশ বছর আগে আমাদের এই পুরো দেশটাই ছিল পরাধীন। ঠিক একটু আগের তোমার অবস্থার মত। কিন্তু চল্লিশ বছর আগে তোমার জন্মদিনের দিন আমরা সেই ভয়ন্কর অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে। আর সেই জন্যেই তোমার নাম রেখেছি স্বাধীন।( জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো , এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাক. তোমার ভাষায় কথা বলি পাখির গানের মত, তোমার দেখায় রিস্স দেখি বর্ণ কত শত , বুকে তোমার , বুকে তোমার ঘুমিয়ে গেলে জাগিয়ে দিও নাকো আমায় ) অপূর্ব , আপনাদের মত লেখকদের জন্ম হয় বলেই আমরা বুঝতে পারি স্বাধীনতার স্বাধ. অভিনন্দন আপনাকে. আমার বঙ্গলিপি দেখবেন ভালো লাগবে.
রওশন জাহান সুন্দর সুন্দর
বিন আরফান. আহা, আমার নামটা যদি রাখতো স্বাধীন ! আপনার লেখা পরে অভিভূত হলাম. এত সুন্দর লিখার অপর মন্তব্য করার ভাষা আমার জানা নাই . আপনি প্রথম হলে আমি খুশি হব.

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪