ম্যানেজার স্যারের রুম থেকে মনটা একেবারে খারাপ করে বের হয়ে এলো সারা। চুপচাপ নিজের ডেস্কে গিয়ে বসে পড়লো। মন খারাপের সময় প্রশ্ন করতে নেই। তাই আমি আর এগোলাম না। লাঞ্চের সময় সারাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলাম, "কাজ নিয়ে কোন সমস্যা সারা? স্যার তোমাকে কিছু বলেছে?"
"না আশিক ভাইয়া, কাজের ব্যাপারে না। বললো, আমি যেন অফিসে আর বিড়াল নিয়ে না আসি। দেখেন, আপনি তো জানেনই আমার বাসায় অসুস্থ মা ছাড়া আর কেউ নেই। সে তো বিড়ালের দেখাশোনা করতে পারবে না। আর আমি ছাড়া আমার লিওর কেউ নেই। ও একটা এতিম বাচ্চা। এখন ওকে কি করবো সেটাই ভাবছি..!"
আমাকে কথাগুলো বলে সারা যেন কিছুটা হালকা হলো। ওর ব্যাপারে আমি অনেক কিছুই জেনেছি বা জানি। সংসারে মা, মেয়ে আর এই ৬ মাস বয়সী বিড়ালটা। বাসায় রাখার মত পরিস্থিতি না থাকায় অফিসে সাথে করে নিয়ে আসে। বাসায় রেখে আসলে অন্য কার বাসায় চলে যাবে। কার খাবারে মুখ দেবে। কে ওকে ধরে বেঁধে রাখবে বা মারবে। এই সব ভেবেই ডেস্কের পাশে বেঁধে রাখে গলার বেল্টের দড়ি দিয়ে। মাঝে মাঝে আমিও গিয়ে দুষ্টামি করি। সারা এখানে জয়েন করেছে প্রায় এক বছর। ও অনেক মিষ্টি আর সরল মনের একটা মেয়ে। ওর চেহারার দিকে তাকালেই ভালো লাগে। সাথে ওর বিড়ালটাও। আমি সারার নাম দিয়েছি 'ক্যাট'স মম'। একদম মায়ের মত আগলে রাখে ওর লিওকে।
আমি সারাকে বলেছিলাম, "সমস্যা হলে তুমি বিড়াল অফিসে আনবে। কিন্তু স্যারের চোখে যেন না পড়ে।” তার জন্য আমি একটা খাঁচার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। সারা লুকিয়ে লুকিয়ে বিড়াল নিয়ে ঢুকে ওর ডেস্কের নিচে
খাঁচার ভেতরে রেখে দিতো। একদিন কোনভাবে ম্যানেজার স্যার বুঝে ফেলে ব্যাপারটা। সারাকে স্যারের রুমে ডাকে। আমি মনে মনে বলি, এইবারই অবস্থা খারাপ। আর হয়তো কোনভাবে বাঁচানো সম্ভব না।
রুম থেকে বেশ জোরে চেঁচামেচির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ম্যানেজার ব্যাটা বিড়াল পছন্দ করে না ভালো কথা। তাই বলে আরেকজনকে এইভাবে অপমান অপদস্থ করবি। মনে হচ্ছিলো গিয়ে ব্যাটার কলার ধরে গলায় বিড়ালের বেল্ট পরিয়ে দিই।
এর পরপরই সারা রুম থেকে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়। এক মুহুর্ত দেরি না করে ব্যাগ আর বিড়াল নিয়ে বের হয়ে যায়। এইটা দেখার পরে আমারও মাথায় কাজ করে না। আমি দৌড়ে ম্যানেজারের রুমে ডুকে পড়ি। সত্যি সত্যি ম্যানেজারের কলার ধরে গায়ের জোরে দুইটা ঘুষি মারি। এরপর আমিও বের হয়ে যাই অফিস থেকে। করবো না তোর চাকরি! তুই থাক তোর অফিস নিয়ে। চাকরি ছেড়ে দিলে তো ম্যানেজারের আর কোন পাওয়ার নেই আমাদের ওপর।
এরপর একটা বছর পার হয়ে গেলো। আমি অন্য কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছি। আমাদের এই অফিসে অবশ্য বিড়াল নিয়ে কোন রেস্ট্রিকশন নেই। তবে সারার মত কেউ বিড়াল আনেও না। মাঝে মাঝে সারা- দ্য ক্যাট'স মমের কথা খুব মনে পড়ে। কি শান্ত আর মায়াবী! ওর কোলে বিড়াল থাকলে সেটা আরও বেশি সুন্দর লাগতো। যোগাযোগ থাকলে আমি এই অফিসে ওকে বিড়ালসহ রেফার করে দিতাম।
রিকশায় চড়ে অফিসের দিকে যাচ্ছি। হঠাৎ চোখ পড়লো একটা সুপার মার্কেটের গেটে। সারা না? ও এখানে কি করে?? তাড়াতাড়ি রিকশা দাড় করিয়ে ভাড়া মিটিয়ে দৌড়ে গেলাম। সারাও তো আমাকে দেখে অবাক!
"আশিক ভাইয়া, আপনি??"
-"হ্যা আমি। সেদিন কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি? আমি কত জায়গায় খুঁজেছি তোমাকে।"
"সেদিন আমার চাকরি করার ইচ্ছেটাই মরে গেছিলো। জানেন? আমার লিওটাও মারা গেছে ৭. মাস হলো।"
-"আহারো কত কিউট ছিলো বাচ্চাটা। তো এখন কোথায় থাকো? কি করছো??"
-"এখন অনেক ভালো আছি। আমার একটা ক্যাট কেয়ার সেন্টার আছে। ওখানে কমপক্ষে দুইশোটা বিড়াল আছে। আমি চাইনা আমার লিওর মতো কারো বিড়াল অবহেলিত হয়ে মারা যাক।"
"জানো? সেদিন তুমি বেরিয়ে যাওয়ার পরে আমার মাথা ঠিক ছিলো না। ম্যানেজারকে গিয়ে দুইটা ঘুষি মেরে আমিও বের হয়ে গিয়েছিলাম।
"ওমা!! কেন?"
"তোমাকে বকেছিলো সেজন্য।"
"আমাকে বকলে আপনি ম্যানেজারকে মারবেন?"
"ম্যানেজারের জায়গায় যে কেউ থাকলেও আমি তাই করতাম।"
"কেন? আমি আপনার কে?"
-"তুমি তো আমার ক্যাট'স মম।"
"হ্যাঁ তো?"
"আমি চেয়েছিলাম লিওর ড্যাড হতে।"
-"সেটা তো এখন সম্ভব না। কারণ লিও বেঁচে নেই। তবে হ্যাঁ, যদি প্রস্তাব দেই। তবে আমার দুইশোটা ক্যাটের ড্যাড হতে পারবেন?"
"সত্যি???"
-"জ্বি, মিস্টার আশিক- দ্য ক্যাট'স অ্যাড।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ম্যানেজার স্যারের রুম থেকে মনটা একেবারে খারাপ করে বের হয়ে এলো সারা।
১১ মে - ২০২৫
গল্প/কবিতা:
৪ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“ ” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ , থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।