ফেসবুকে পরিচয়। ফ্রেন্ডশিপ।চ্যাটিং করা। পরস্পরের ভালোলাগা মন্দলাগা অনুভূতি শেয়ার করা। এভাবে বন্ধুত্ব এগিয়ে চলা।সোহা ইংল্যান্ডে থাকে। বড় হওয়া পড়াশুনা সেখানেই।সাত/আট বছর বয়সে মা বাবার সাথে বিদেশে পাড়ি জমানো।সেখানকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স এ পড়ছে।নিজ জন্মভূমির প্রতি তার রয়েছে অগাধ ভালবাসা।
সজিব,মফস্বল শহরে অনার্স পড়ছে অর্থনীতিতে।সাথে একটা ছোট কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করে। বেশ অনেকদিন পর দেশে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছে সোহা।আর করবেই না বা কেন?যেদেশে তার জন্ম,যে দেশে তার বাবা মার আত্মীয় স্বজন রয়েছে সে তো সে দেশে আসতে চাইবেই। আর শুধু কি তাই! এবার আসতে চাওয়ার আর এক উপলক্ষও যে আছে। কি উপলক্ষ! হ্যাঁ সামনেই পহেলা বৈশাখ।বাংলা নববর্ষ।সে জেনেছে বাঙালীরা বেশ ঘটা করে নববর্ষ উদযাপন করে।ছোটবেলার কথা খুব একটা মনে নেই।পহেলা বৈশাখের স্মৃতিও খুব একটা মনে পড়ে না তার। তাই যখন সজিব তাকে নববর্ষের দাওয়াত দিল সে সহজেই লুফে নিল।সজীবের গ্রামে যাবে।বৈশাখে ওখানে অনেক মজা করবে।
সজীব ব্যস্ত হয়ে পড়ে।বিদেশ থেকে মেহমান আসছে। বৈশাখীতে র্যালি হবে।মেলা বসেছে।সেখানকার কমিটিতে আছে সজীব।তার উপরে মেহমান আসতেছে। উপমা বলে তুমি আমায় মেলা নিয়ে যাবে না। হ্যাঁ তোমাকে তো নিয়ে যাবই।র্যালিতে যাব। তুমি ঐ বিদেশী অতিথি কে নিয়ে ব্যস্ত হচ্ছ কেন? ব্যস্ত হব না।নববর্ষের দাওয়াত দিয়েছি।আসবে ঐ দুর দেশ থেকে। তুমি ওর সাথে যাবে? কোথায়? বিদেশে। যাওয়ারতো ইচ্ছে।কেনা বড় হতে চায়! আমি কম্পিউটার চালান জানি।ওনাকে বলেছি। আমি যেতে চাই। উনি বলেছেন চেষ্টা করবেন। আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে? তোর মনটা আমার মনের সাথে বাঁধা আছেনা! আমি গিয়ে তারপর তোকে নিয়ে যাব। নিয়ে যাবে না ছাই! ঐখানে গিয়া আমাকে ভুলে যাবে। কক্ষনোই না।
গ্রামটা দেখে সোহা বলে,তোমাদের গ্রামটা বেশ সুন্দর। উপমা বলে,আপনি এমনভাবে বলছেন যেন আপনি বিদেশী।এদেশ কোনদিন দেখেননি। সজীব ধমক দিয়ে বলে তুমি চুপ কর। খালি কথা বলে।উনিতো আর এদেশে বড় হননি। তারপর সোহার দিকে তাকিয়ে বলে,আপনি কিছু মনে করবেন না ,ও আসলে এরকমই। না না আমি কিছু মনে করিনি।আসলে আমি অনেকদিন পর দেশে এলাম তো।আর গ্রাম কখনো সেভাবে দেখা হয়নি।তাই যা দেখছি অবাক হচ্ছি,ভাল লাগছে। -হ্যাঁ আমাদের দেশটা অনেক সুন্দর।সজীব আপনমনেই বলে। মানুষগুলো অনেক ভালো।সোহা বলে,তোমার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র দেখাবে না। কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যায় সোহাকে।সবার সাথে পরিচয় করে দেয়।ইনি আমাদের অতিথি,অনেক দূরদেশ থেকে এসেছেন।নববর্ষে বেড়াতে। আমি অতিথি নই। সোহা বলে,আমি এদেশে জন্মগ্রহন করেছি।আমি সজীবের বন্ধু। বন্ধু না ছাই।উপমা ফোড়ন কাটে। তুমি রাগ করছ কেন? উপমা।তুমি কি ওর বন্ধু না।সোহা বলে। আমরা----- বলতেনিয়েও আর বলেনা উপমা। হ্যাঁ আমরা দুজন ফেসবুক ফ্রেন্ড।সোহা উপমার দিকে তাকিয়ে বলে।
পহেলা বৈশাখের ভোরবেলাতে বাড়ির সকলের সাথে ঘুম থেকে উঠে সোহা। শাড়ী পড়ে। সাদা শাড়ী লাল পাড়।সজীব কিনে এনেছে।সে সেটা দেয় তাকে।এটা বৈশাখীতে পড়তে হবে।মা বেশ যতন করে পড়ান তাকে।সোহার চোখে জল চলে আসে।বুকটা ব্যথায় ভরে ওঠে।দরজায় এসে দাড়ায় সজীব।অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
কি দেখছেন? সোহার কথায় চমকে ওঠে সে। বলে,আপনাকে বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। আপনাকেও। ধন্যবাদ। এই শোনো----- উপমাকে ডাকে সোহা।চলে যাচ্ছ যে!থমকে দাড়ায় উপমা। তোমাকে বেশ সুন্দর লাগছে।সুন্দর না ছাই!কই সজীবতো আপনাকে বলল,আমাকে বলল না। ও লজ্জা পাচ্ছে। তারা তিনজনে মিলে র্যালিতে অংশ নেয়।সকালে পান্তা ইলিশ খায়।মুখোশ কিনে পড়ে। গালে রঙ করে,ছবি আঁকে।র্যালিতে বেশ মজা পায় সোহা। বিকেলে মেলায় যায়।বাতাসা খায়।নাগর দোলায় চড়ে।বেশ অনেকক্ষণ মেলায় থাকে তারা।
দোকানে দোকানে হালখাতা খোলে।সোহা বেশ আগ্রহভরে হালখাতা কি শোনে। সজীব তাকে জানায়।সে নিজের দোকানে নিয়ে যায়।মিষ্টি খাওয়ায়। সারাদিন অনেক ছবি তোলে। সেগুলো নেটে দেয় সোহা। বিদেশে মা বাবার কাছে পাঠায়। সোহার চলে যাওয়ার সময় চলে আসে।যাওয়ার সময় সজীব এর হাতে একটা প্যাকেট দিয়ে বলে ,আমি চলে যাওয়ার পর প্যাকেটটা খুলে দেখবেন। চলে যায় সোহা নববর্ষের একগুচ্ছ স্মৃতি নিয়ে। প্যাকেটটা খোলে সজীব। একটা আংটি। বেশ দামি।বোঝা যায়।সাথে একটা চিঠি।চিঠিটা পড়তে শুরু করে সজীব, সজীব,নববর্ষের শুভেচ্ছা। এদেশ অনেক সুন্দর।এদেশ ছেড়ে যেতে আমার কষ্ট হচ্ছে।ভেবেছিলাম এদেশে থেকে যাব।তোমার মত একটা বন্ধু পেয়েছিলাম।তাই তোমার ডাকে নববর্ষে ছুটে এসেছিলাম।তোমার জন্য একটা আংটি নিয়ে এসেছিলাম।তোমাকে পড়াব বলে।বাংলা নববর্ষ বাঙালীর ঐতিহ্য।সেজন্য শাড়ি পড়ে যখন বাঙালী হয়েছিলাম।কষ্ট পেয়েছিলাম।এদেশে থাকতে পারছিনা বলে।তুমি ফেসবুকে লিখেছিলে এবার আমাদের সাথে এক অতিথি বাংলা নববর্ষ উদযাপন করছে।নববর্ষের ছবির ক্যাপশনে লিখেছিলে অতিথি সহ আমরা। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম অতিথি লেখা দেখে। আমিতো বাঙালী,বাংলাদেশী। আমি এদেশের। তুমি যেতে চেয়েছিলে আমার সাথে,আমার ভালবাসার টানে নয়,তোমার উজ্বল ভবিষ্যতের জন্য।কিন্তু তুমি উপলব্ধি করতে পারনি,এদেশে তোমার ভালবাসার মানুষ উপমা আছে।এদেশে এখনও মানুষের প্রতি মানুষের মমতা সহমর্মিতা আছে।এদের ছেড়ে গিয়ে তুমি আর্থিক সচ্ছলতা হয়তো পাবে কিন্তু ভালোবাসা-----নিজ দেশ ছাড়া সেটা অন্য দেশে কখনো সম্ভব নয়। তোমরা দেশকে অনেক ভালবাস।আমিও বাসতে চাই। আমি প্রতিবছর বাংলা নববর্ষে দেশে থাকতে চাই। তোমাকে দেয়া আংটিটা সুবিধামত এক সময়ে উপমাকে পড়িয়ে দিও।তোমাদের বিয়েতে আমার শুভকামনা রইল।আশা রাখি আগামী নববর্ষে দেখা হবে।ফেসবুকে যোগাযোগ রেখো।নববর্ষের একগুচ্ছ মধুর স্মৃতি নিয়ে গেলাম।তোমার দেয়া লাল রেশমি চুড়িগুলো নিয়ে এলাম। ভাল থেকো। ফেসবুকে গিয়ে বসে সজীব।বৈশাখীর বাকি ছবিগুলো ডাউন লোড করে।এ্যালবামের ক্যাপশন লিখে-আমাদের বাংলা নববর্ষ উদযাপন।অতিথি কথাটি মিশে ফেলে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আনিসুর রহমান মানিক
কিছু মনে করবেন না ,সত্যি করে যদি বলি ,এত সুন্দর করে সুন্দর মন্তব্য করেছেন যে আপনি যদি রাজকন্না হতেন তাহলে রাজপুত্র জুটিয়ে দিতাম /কিন্তু আপনিতো মৎস কন্যা /
ফাতেমা প্রমি
গল্পের প্লটটা ভালো লেগেছে...অনেক সুন্দর গল্প..
মিথ্যে বলে কি হবে,আপনার গল্পটা না আসলে একেবারেই -----
আচ্ছা ঠিক করেই যদি বলতে হয় তাহলে বলব ::
''অসাধারণ,অপূর্ব''
বিষণ্ন সুমন
গল্পটা চোট হলেও এর অন্তর্নিহিত বক্তব্যটা অনেক বিশাল. সেটা টের পাওয়া গেল বলেই গল্পটার সঠিক রস আস্বাদন করা গেল. এটা লেখকের স্বার্থকতা. অনুরোধ রইলো এমনটি যেন আরো পাই. অনেক অনেক শুভকামনা রইলো
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।