কুয়াশা ঢাকা ভোরে

শীত (জানুয়ারী ২০১২)

আনিসুর রহমান মানিক
  • ৩৮
  • 0
বেশ ঠান্ডা লাগছে। অগ্রহায়নের মাঝামাঝিতে এত ঠান্ডা হবে বুঝতে পারেনি রিমন।আন্তঃনগর ট্রেন বেশ গতিতে চলছে। জানালার সাটারটা নামিয়ে দেয় রিমন।সামনে বসে থাকা অপূর্ব সুন্দরী মেযেটির দিকে তাকায় সে।ইচ্ছে হয় তার মেয়েটির সাথে কথা বলবার।কিন্তু সাহস পায়না। আর কথা বলেই বা কি লাভ!কিছুক্ষন আগে তার সাথের লোকটি জানিয়ে দিয়েছে মেয়েটি তার স্ত্রী।একটু পর পরই মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছিল দেখেই হয়তো লোকটি আগ বাড়িয়ে কথা জুড়িয়ে দিয়েছিলো।নিজের পরিচয় জানিয়েছিলো। সে একজন বড় ব্যবসায়ী। বাসা রংপুরে। মাঝে মাঝে ঢাকায় থাকেন।এখন রংপুর যাচ্ছেন।
অবাক হয়ে যায় রিমন। এত সুন্দরী মেয়ের এরকম একটা বয়স্ক স্বামী।লোকটির বয়স ৪০ হবে আর মেয়েটির ২০ কিংবা ২২।আফসোস হয় তার।হায়রে নিয়তি!সুন্দরীরা সব গিয়ে জোটে বড়লোক বয়স্ক স্বামীর ঘরে। মনে মনে ভাবে সে, তার যে ছোটখাট একটা চাকরী।তার ভাগ্যে সুন্দরী বউতো দুরের কথা কবে যে বউ জুটবে সেটাই জানেনা।
-আপনার পরিচয়? চমকে গিয়ে বলে ওঠে রিমন,আমি শাহরিয়ার রিমন।একটা এনজিওতে আছি।দিনাজপুরে যাচ্ছি অফিসের কাজে। দু"দিনের জন্য।

এরপর আর বেশী কথা হয়না।চুপচাপ বসে থাকা।একটু পর পর মেয়েটির দিকে তাকায় রিমন।সামনে এরকম একটা সুন্দরি মেয়ে বসে থাকলে কি চুপ করে না তাকিয়ে তার দিকে বসে থাকা যায়।মেয়েটিও তার দিকে তাকায়।চোখে চোখ পড়তেই নামিয়ে নেয় চোখ রিমন।মেয়েটি দুষ্টুমির হাসি হাসে।মেয়েটি যেন মজা পাচ্ছে।
রিমন ভাবে মজাতো পাবেই।এরকম সুন্দরী মেয়েরাই কত ছেলেকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়ে শেষে ধনী কোন পাত্র পেলে হোক না সে বয়স্ক বিয়ে করে ফেলে।হয়তো এ মেয়েটিও তাই করেছে।
নিজেতো দেখতে খারাপ না। পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি লম্বা। সুদর্শন। তাকেওতো মেয়েটি দেখবেই।
মেয়েটিকে নিয়ে কল্পনা করতে ভালোই লাগে তার।দুজনে একসাথে বেড়াচ্ছে,কঙ্বাজার না হয় সিলেট। যা হয হোক।একটা জায়গা হলেই হলো। শিশিরে ঘাসগুলো ভিজে আছে। সাদা সুন্দর দুটো পা শিশির ভেজা ঘাসে ছন্দতুলে শিউলি ফুল কুড়াচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে থাকে রিমন।
কি দেখছেন অমন করে?চমকে লজ্জায় চোখ নামিয়ে ফেলে রিমন।
-কই নাতো!
মেয়েটির স্বামী পাশে নেই হয়তো বাথরুমে গেছে।
-আপনি গরম কাপড় আনেননি?
-না এত ঠান্ডা লাগবে বুঝিনি।
-উত্তরাঞ্চলে বেশ ঠান্ডা পড়ে।
-তাই বলে এত আগে...
-আপনার কষ্ট হচ্ছে?
-কিছুটাতো বটেই।
-এটা নিন। মেয়েটার হাতে রাখা চাদরটা বাড়িয়ে দেয় রিমনের দিকে।
-না লাগবেনা।অবাক হয়ে রিমন ভাবে একটু আগেতো মেয়েটার কাছে চাদর ছিল না। কখন বের করল ব্যাগহতে?
-মেয়েদের চাদর।
-তাতে কি!ঠান্ডাতো দুর হবে।
-তা হয়তো হবে কিন্তু...



-কোন কিন্তু নয়।এই নিন। প্রায় জোর করে হাতে চাপিয়ে দেয় চাদরটি।
রিমন ভাবে মেয়েটির স্বামী এলে কি ভাববে!মেয়েটির উপর নিশ্চয়ই রাগ করবে?
-আপনার স্বামী?
-উনি বাথরুমে গেছেন। ঘন ঘন বাথরুম পায়। ডায়াবেটিস আছেতো।
-ও তাই।
আচ্ছা মেয়েটি কি সুখী ? আপনমনেই নিজেকে প্রশ্ন করে রিমন।নাকি সুখী সুখী ভাব ফুটিয়ে রেখেছে।নিশ্চয়ই মেয়েটি গরীব ঘরের মেয়ে।আচ্ছা মেয়েটির নামটা কি? জিজ্ঞেস করবে কি?
এই সময় তার স্বামী এসে পড়ে। নাম আর জানতে চায়না সে।চাদরটা গায়ে পেচিয়ে নেয়।
মেয়েটির স্বামী তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বসতে থাকে। সে কিছু বলার আগেই মেয়েটি বলে দেখেননা উনি ঠান্ডায় কাঁপছিলেন।তাই চাদরটা দিয়েছি।

কখন ঘুমিয়ে পড়েছিল টের পায়নি রিমন। জেগে দেখে সামনের মেয়েটি আর তার স্বামী নেই।পাশের লোকটিকে জিজ্ঞেস করতেই উনি বললেন,ওনারা রংপুর নেমে গেছেন।
-তার মানে আমরা দিনাজপুর এসে গেছি।
-হ্যা এই আর একটু।
গায়ের চাদরটার দিকে তাকিয়ে বলে উঠল রিমন,চাদরটা নিয়ে গেলোনা যে ?
পাশের লোকটি বলল মেয়েটির স্বামী নিতে চেয়েছিল মেয়েটি নিষেধ করেছে। বলেছে দেখছেননা ঘুমাচ্ছে।থাক না ওটা।
আপনিওতো ডাকতে পারতেন,লোকটিকে বলে রিমন।
আমি আপনাদের মধ্যে ঢুকতে চাইনি।

চাদরটা ফেরত দেয়া উচিত।অবশ্যই ফেরত দিতে হবে। কিন্তু ঠিকানা। হ্যা রংপুরের জায়গার নামটি বলেছিলো ভদ্রলোকটি মুলাটোল।লোকটির নামওতো জানা। এখানকার বিশিস্ট ব্যবসায়ী হয়তো অনেকেই চিনবে\\
অত কিছু বোঝেনা সে। সে জানে চাদরটা ফেরত দেয়া যাবেনা। কেননা সে যখন চাদরটা শরীরে দেয় অন্য রকম এক অনুভূতি কাজ করে।সেটা শ্লীল না অশ্লীল সে বিচার করতে চায়না রিমন।সেই সুন্দরীর মেয়ের শরীরের গন্ধ লেগে আছে সে চাদরে। চাদর শরীরে চাপিয়ে সে অনুভব করে মেয়েটির পরশ। যেন তাকে ভালবাসার আদরে জড়িয়ে রেখেছে।
সেবার ঢাকা ফিরে আসে রিমন।প্রায় মাসখানেক পর আবার দিনাজপুর যেতে হবে।তখনই চাদরটা ফেরত দেবে ঠিক করে। হঠাৎ চমকে ওঠে চাদরটার এককোণে একটা মোবাইল নম্বর দেখে। এটা কি মেয়েটার নম্বর?সে কি ইচ্ছে করেই দিয়েছে নাম্বারটা। কলম দিয়ে লেখা।রিং দেবে কিনা ভাবতে থাকে রিমন।

-হ্যালো । ও পাশ থেকে মেয়েলি কন্ঠ বলে ওঠে।
-হ্যালো কে বলছেন?
-আপনি কে বলছেন ? আপনিতো ফোন দিলেন।
-আমাকে চিনবেন কিনা,ঠিক বুঝতে পারছিনা।
-মানে..
-আমি ট্রেনের..
-ও হ্যা হ্যা আপনি.. তাহলে নাম্বারটা পেয়েছেন।
-আপনি তাহলে ইচ্ছে করেই নাম্বারটা দিয়েছেন।
-বারে চাদরটা ফেরত দিবেননা!
-শুধু কি সে জন্যই নাম্বারটা দিয়েছেন।



-কি মনে হয়।
-না ঠিক আছে। আমি ২০/২২ দিন পর দিনাজপুর যাচ্ছি তখন দিয়ে আসব।
-রাগ করেছেন?
-কেন?
-এই যে কেমন করে কথা বলছেন।
-না ঠিক আছে।
-আমি যদি চাদরটা নেবার জন্যই শুধু নাম্বারটা দিতাম তাহলে সেটা ভাবলে ভুল করবেন। আমিতো তখনই চাদরটা নিয়ে যেতে পারতাম।
-তাহলে নাম্বারটা কেন দিয়েছেন?
-আপনার কি আমার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছেনা।তাহলে রেখেদেই।
-না না সেটা করবেননা। আপনার সাথে কথা বলতে ভাল লাগছে।

এরপর শুধু কথা আর কথা। তার সাথে কথা বলতে না পারলে রিমনের মন কেমন যেন করে।স্বামী ব্যবসার কাজে বেশীর ভাগ সময়ই বাইরে থাকে।মেয়েটির নাম রোদেলা।রোদেলা রংপুরে তাদের বাসায় যেতে অনুরোধ করে।বলে বাসায় আমি আর আমার শ্বাশুড়ী থাকি।ওতো বেশীরভাগ সময়ই এ জেলা ও জেলা থাকে।চলে আসুননা বাসায়।
আপনি থেকে তুমি।রিমন বুঝতে পারে সে যেমন রোদেলাকে ভালবেসে ফেলেছে রোদেলাও তেমনি তাকে ভালবেসেছে।
সে হিসাব মেলাতে পারেনা। মেয়েটির পরকীয়া প্রেমে সে জড়িয়ে পড়েছে। রোদেলা তাকে এ কোন আষ্টেপৃষ্টে বেধে ফেলেছে।
রোদেলার স্বামী তাকে অনেক, অনেক ভালবাসে..কিন্তু,রোদেলা..
রোদেলা জানায় সে বুঝতে পারেনা । সে একটু সঙ্গ চায়।তার স্বামী ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
সে রিমনের সঙ্গ পেতে চায়। অন্য রকম এক আহবান টের পায় রোদেলার কাছ থেকে।

কুয়াশা ঢাকা ভোরে ট্রেন থেকে নেমে পড়ে রিমন। ষ্টেশনে ভাপাপিঠা খেয়ে নেয়। দ্বিধায় পড়ে যায়।ভুল করছে নাতো!সে কি যাবে রোদেলার বাড়িতে।খেজুরের রস কিনে খায়। একটু ভাববার জন্য সময় নেয়। রোদেলাকে জানায়নি যে সে আজ আসছে। তাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়।

শিশিরে ঘাসগুলো ভিজে আছে। কিছুটা দুরে কতগুলো বাচ্চা ছেলে আগুন পোহাচ্ছে।
এগিয়ে যায় সেদিকে। রিমনের শরীরে মেয়েটির চাদর। ওদের পাশে বসে আগুন পোহায়। আসলে সে একটু সময় নিতে চাচ্ছে।
কি করবে সে ?একটু দুরে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকা মহিলাটির কাছে গিয়ে তার গায়ে চাদরটা জড়িয়ে দেয়। উঞ্চতা পেয়ে বৃদ্ধ মহিলাটি রিমনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

ষ্টেশনে দাড়িয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে রিমন। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে চলে যেতে চায় সে।

( এই গল্পের প্রতিটি ঘটনা এবং চরিত্র কাল্পনিক । যদি কোন ঘটনা কিংবা চরিত্র কারো সাথে মিলে যায় তবে তা কাকতালীয়মাত্র।)
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আনিসুর রহমান মানিক সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা /
ভালো লাগেনি ২৬ জানুয়ারী, ২০১২
তানজির হোসেন পলাশ খুব সহজে নিজেকে ছেড়ে দেওয়ার মত মনে হয়েছে / তবুও ধন্যবাদ /
সেলিনা ইসলাম নিঃসন্দেহে আপনার গল্প লেখার শক্তি অসীম । গল্পের মাঝে বেশ কিছু বাস্তবতার স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে যা আমাদের সমাজে অবক্ষয়ের মূল কারন । ছোট্ট পরিসরে বেশ প্রশংসনীয় লেখা । বেশ ভাল - নিজে থেকেই রিমনের মেয়েটার প্রতি আগ্রহ দেখানো আবার চরম মুহূর্তে আত্ব সংযত হয়ে মহানুভবতা দেখানো ! এই শুভ বুদ্ধির উদয় আগেভাগে হলে আরো অনেক ভাল হত, হয়ত সেই ক্ষেত্রে বৃদ্ধ মহিলাটি বঞ্চিত হত । আরো ভাল লেখা প্রত্যশা করি শুভকামনা !
মোহাম্মদ ওয়াহিদ হুসাইন চমৎকার লাগল। শুভেচ্ছা রইল।
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
রোদের ছায়া অসাধারণ গল্প.......শীত তো আছেই সেই সাথে বেশ প্রেম ভালোবাসাও আছে ...কিন্তু ভাই রংপুরে কি খেজুরের রস কিনতে পাওয়া যায়? ৫/৫ পেলেন কিন্তু..যদিও ভোটিং বন্ধ
ভালো লাগেনি ২৩ জানুয়ারী, ২০১২
এফ, আই , জুয়েল # শীতের তীব্রতার সাথে জোড়াল প্রেমের সেতুবন্ধন । গল্পের ভাব ও এর প্রকাশরুপ অনেক সুন্দর ও সাবলীল । লেখককে ধন্যবাদ ।।
ভালো লাগেনি ১৪ জানুয়ারী, ২০১২
আনিসুর রহমান মানিক অনেক অনেক ধন্যবাদ বন্ধু তোমাদের /
ভালো লাগেনি ১২ জানুয়ারী, ২০১২
amar ami আমার কাছে গল্পটি অনেক ভালো লাগলো, লিখেছেনও ভালো ..... পরিবেশ মানুষকে ভুলের দিকে টানতে পারে, মানুষেরই উচিত তা থেকে সরে আসার
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১২
মোঃ আক্তারুজ্জামান গতানুগতিক নয় বেশ একটু বৈচিত্র আছে তাই খুব ভালো লাগলো|
ভালো লাগেনি ১১ জানুয়ারী, ২০১২

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী