বিকেল বেলার সাথী

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

আনিসুর রহমান মানিক
  • ৫০
  • 0
রফিকুল ইসলাম সাহেব।বয়স ৬৫।দু'ছেলে এক মেয়ে।
ছেলেদুটো বিদেশে থাকে।মেয়ের বিয়ে হয়েছে।চট্টগ্রামে স্বামীসহ থাকে।স্ত্রী গত হয়েছেন ১০ বছর হল।বাড়ির কেয়ারটেকার,রান্নার জন্য একজন লোক আর তিনি।বাড়িতে এই তিনজন মানুষ।প্রতিদিন সকাল বিকাল পার্কে বেড়াতে আসেন।ঠিক বেড়াতে নয় হাটতে আসেন।

সুমনা রহমান।বয়স ৬০ ছুই ছুই করছে।স্বামী মারা গিয়েছেন সে হলেও সাত বছর হল।একছেলে এক মেয়ে দুজনেরই বিয়ে হয়েছে। দুজনেই বিদেশে থাকে। বাড়িতে কাজের মেয়ে,গাড়ির ড্রাইভার আর ড্রাইভারের পরিবার। এ্ নিয়েই এখন সুমনা রহমানের সংসার।তিনিও নিয়ম করে প্রতিদিন সকাল বিকাল পার্কে আসেন।
আজও দুজনেই এসেছেন।পার্কে আরও অনেকে এসেছেন।

রফিকুল সাহেব কদিন থেকেই ভাবছেন মহিলার সাথে পরিচিত হবেন। কিন্তু সাহস হয় না। পার্কে অনেক মানুষ থাকলেও কেন যেন মহিলাটির সাথে পরিচিত হতে ইচ্ছে করে।তাকে দেখলেই কেমন যেন পরিচিত পরিচিত মনে হয় তার ।ভাল লাগে। কথা বলতে ইচ্ছে করে।এ যেন এক অন্য অনুভূতি।আপনমনেই হেসে ওঠেন তিনি।তার যৌবনকালের কথা মনে পড়ে যায়।ঠিক যেমন সিলভিকে দেখলেও তার প্রথম প্রথম এমনই লাগত।তারপর ভয় সংকোচ কাটিয়ে সিলভির সাথে পরিচিত হওয়া,ভাললাগা,ভালবাসা অতঃপর বিয়ে।বড়ই অসময়ে চলে গেল মেয়েটি।মাত্র ৩৪ বছরের সংসার জীবন।চোখ ভিজে ওঠে তার।পকেট হতে রুমাল বের করে চোখ মুছেন।কি হবে আর তাকে ভেবে।তাতে শুধু কষ্টটাই বাড়বে।

আসসালামু আলাইকুম।
চমকে মাথা তুলে তাকান রফিকুল সাহেব।ওয়ালাইকুম সালাম।অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকেন মহিলাটির দিকে।
আমি কি একটু বসতে পারি আপনার পাশে।
জ্বী বসুন।একটু সরে গিয়ে জায়গা কওে দেন মহিলাটির বসার জন্য।
আপনার কি আজ মন খারাপ?
না । কেন বলুনতো?
দেখলাম চোখ মুছছিলেন !
না, এই আরকি! তা আপনি কেমন আছেন? প্রতিদিন আপনার সাথে দেখা হয়,আসলে আমারই উচিত ছিল আগে আপনার সাথে পরিচিত হওয়া।
তারপর একটু থেমে বলেন,আমি রফিকুল ইসলাম।রিটায়ার্ড সরকারী কর্মকর্তা।
আমি সুমনা রহমান,কাছেই ধানমন্ডি ৩ এ বাসা।

আসলে কাজ না থাকলে যা হয়,বাসায় একা একা ভাল লাগে না তাই পার্কে আসা।জীবনের শেষ সময় তো এসে গেল।জীবনের বিকেল পেরিয়ে যাচ্চে।রফিকুল ইসলাম সাহেব বলেন।
হ্যা তাই।আমার দুটো ছেলে মেয়ে ,দুটোই বিদেশে থাকে।ওদের বাবা গত হয়েছেন সাত বছর হল।
তাহলে আপনিও তো আমার মত একা। নিঃসঙ্গ।

তারপর কথায় কথায় সময় গড়িয়ে যায়।দুজনের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে।একজন আরেকজনকে না দেখলে মনটা যেন কেমন করে ওঠে।ঠিক যেমন যৌবনকালে,প্রেমিক প্রেমিকার মত না হলেওদুজনের প্রতি সহানুভূতি,শ্রদ্ধা ভালবাসা কোনটিতেই কমতি নেই।দিন যতই গড়াতে থাকে তাদের পরস্পরের প্রতি ভাললাগাও বৃদ্ধি পেতে থাকে।মোবাইলে কথা বলতে শুরু করলে কখন যে সময় গড়িয়ে যায় দুজনের কেউই টের পায়না।
চলুননা কাল কোন এক রেষ্টুরেন্টে ডিনার করি।
সুমনার এ কথায় মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে হেসে ওঠেন রফিকুল সাহেব।
কেন ,যেতে আপত্তি আছে কি?
না ঠিক আপত্তি নয়।তবে এ বয়সে পার্কে বসে ঘন্টার পর ঘন্টা গল্প করছি, এরপর যদি আবার রেষ্টেুরেন্টে খেতে যাই..
লোকে কি খারাপ বলবে?কথা ছুড়ে নিয়ে বলে ওঠে সুমনা।
না এখনতো আর লোকলজ্জার ভয় নাই।
তাহলে শুনুন কাল আমরা ডিনার করছি।
তা হঠাৎ কাল কেন?কোন বিশেষ দিন?
হ্যা অবশ্যই বিশেষ দিন।
আপনার জন্মদিন?
হাসালেন আমাকে।এখন কি আর জন্মদিন করা মানায়।
তাহলে?
কাল বন্ধু দিবস।
ও তাই।তাহলেতো অবশ্যই বন্ধুর আমন্ত্রন গ্রহণ করতে হয়।
লোকলজ্জার ভয় না করলে কি হবে! তারাওতো সমাজেরই অংশ।তাদের নির্ভেজাল বন্ধুত্বকে অনেকেই ভাল চোখে দেখেনা। খবর চলে যায় দুজনের সন্তানদের কাছেই। তারা ছিঃ ছিঃ করেও ওঠে।এই বয়সে তাদের বাবা মা এসব কি করছে?
বিদেশ থেকে ছেলে বলে বাবা তুমি কি করছ?
কি করছি মানে?
তুমি কোন মহিলার সাথে নাকি---
থামলি যে?
বল বাবা তুমি এসব করতে পার এই বয়সে এসে----
শোন,তুই কি শুনেছিষ আমি জানিনা । আমি বলি সে আমার বন্ধু।বন্ধু সম্পর্কে কিছু বলার আগে ভাল করে জেনে বলতে হয়।বন্ধুতো যে কেই যে কোন বয়সের হতে পারে।তোরাওতো আমার বন্ধু হতে পারতি?আমার সুখে দুঃখে আমার পাশে থাকতে পারতি। বিদেশে না গিয়ে এদেশেইতো থেকে আমাকে সাথে রাখতে পারতি!তোকে স্পষ্টভাবে বলে দেই যে আমরা দুজনে দুজনার ভাল বন্ধু। আর তুই যা ভাবছিস সেরকম কিছু নেই। উই আর দ্য বেষ্ট ফ্রেন্ড,দ্যাটস অল।
ফোনটা্ নিজে থেকেই কেটে দেন রফিকুল সাহেব।
সুমনাকেও ফোন করে তার সন্তানেরা। তারা একই প্রশ্ন করে, জবারটাও রফিকুল সাহেবের মতই দেন তিনিও।নিঃসঙ্গতা একাকীত্ব দুর করার জন্য প্রয়োজন সঙ্গীর,বন্ধরু । কি করে বুঝবে ওরা ? ভাবেন সুমনা রহমান।
হঠাৎ করে মাথা ঘুরে পড়ে যান রফিকুল সাহেব। হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।সন্তানদের খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন তার বন্ধু সুমনা রহমান।রাত্রি জেগে সঙ্গ দিতে থাকেন অসুস্থ বন্ধুকে হাসপাতালে।একদিন সকালে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরে সুমনা দেখেন তার সন্তানেরা বিদেশ থেকে এসেছে।না জানিয়ে এভাবে আসায় বেশ অবাক হন সুমনা।
মা তুমি কাল সারারাত কোথায় ছিলে?মেয়ে মাকে প্রশ্ন করে।
সন্তানের কাছ হতে এরকম প্রশ্ন শুনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন তিনি।
আস্তে করে বলেন হাসপাতালে।বন্ধুর কাছে।ও অসুস্থ।
তার জন্য তোমাকে থাকতে হবে?তার সন্তান আছে,কেউ না থাকলেও কি তোমার থাকা উচিত---
তুই আমাকে উচিত অনুচিত শিখাতে আসিছ না।
মা মেয়েতে বেশ একটা বাকযুদ্ধ হয়ে গেল।
সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন রফিকুল সাহেব।সুমনার সেবা শুশ্রূষার কথা ভুলতে পারেননা তিনি।বাসায় তার ছেলেমেয়ে থাকায় তাদের দুজনের আর দেখা হয় না। মোবাইলেও কথা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।

দুদিন পর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান রফিকুল সাহেব।সারাদিন চলে গেলেও বাড়িতে ফেরেননা তিনি।খোঁজাখুজি শুরু হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার সুমনার বাড়িতে গিয়েও রঝিকুল সাহেবের সন্তানেরা জানতে পাওে তিনিও সকালে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে তখন পর্যন্ত বাড়িতে ফেরেননি।দুপরিবারই দুঃশ্চিন্তায় পড়ে যায়।
খোজখবর চলতে থাকে।অবশেষে তাদের পাওয়া যায় একসাথে।ওল্ড হোমসে।বৃদ্ধনিবাসে।না তারা বিয়ে করেনি। কিংবা বিয়ে করার চিন্তাও করেনি।তারা পরস্পরের সাথে কথা বলত,কথা বলার সুযোগ পেতেই তারা আশ্রয় নিয়েছে ওল্ড হোমসে।সেখানে তারা পেয়ে যায় তাদেরই সমবয়সী আরও অনেক বন্ধু।তারা বুঝতে পারে এ বন্ধুত্ব ছেড়ে জীবনসঙ্গীহীন,সন্তানহীন সংসারে বেঁচে থাকা সম্ভব না।তাদের জীবনে এখন শেষ বিকেল চলে এসেছে।যে কোন সময় সূর্য অস্ত যাবে।শেষ বিকেলের বন্ধুদের মাঝেই তাদের সন্ধ্যা নামুক।এটিই তাদের চাওয়া।তাদেওর সন্তানদের ফিরিয়ে দেন তারা।
বিকেলের সোনালী রোদ্দুরে বৃদ্ধ নিবাসের বাগানে হাঁটতে হাঁটতে দু"জনে ভাবতে থাকেন,আর কিছু না হোক বন্ধুদের সাথেই,হেসে খেলে সময়গুলো পার করে দেয়া যাবে। দুজনের ভাবনাগুলো এক হয়ে ছড়িয়ে পড়ে সকল বন্ধুদের মাঝে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
আনিসুর রহমান মানিক রওশন জাহান ,ধন্যবাদ /
আনিসুর রহমান মানিক Akther Hossain (আকাশ) আপনাকে ধন্যবাদ /
আনিসুর রহমান মানিক Shahnaj Akter ,অনেক ধন্যবাদ গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য /
রওশন জাহান চমৎকার গল্প
Akther Hossain (আকাশ) জীবনের সেস প্রান্তে এসে মানুস যখন নিসসঙ্গ হয়ে পরে তখন তার বন্ধুর বড় প্রয়োজন আর একথাটি সব ফামিলির মাথয়ে রাকতে হবে বিশেষ করে যাদের ফামিলিতে এ রকম বয়স্ক মানুষ রয়েছে! গল্প সুন্ধর !
শাহ্‌নাজ আক্তার অন্যরকম স্বাদ পেলাম গল্পটি পড়ে,,, শেষে এসে উনারা সঠিক সিদ্দান্ত নিয়েছেন , ধন্যবাদ | ভোট দিলাম |
আনিসুর রহমান মানিক Md. Akhteruzzaman , আপনাকে অনেক ধন্যবাদ কষ্ট করে পড়ার জন্য /
মোঃ আক্তারুজ্জামান বাস্তবতার সুন্দর চিত্র একেছেন|
আনিসুর রহমান মানিক Khondaker Nahid Hossain,আপনাকে অনেক ধন্যবাদ /
খন্দকার নাহিদ হোসেন বড় ভালো লাগলো আপনার গল্প। বৃদ্ধ বয়সের সেই নিঃসঙ্গতা যেন অনুভব করলাম।

২০ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৪০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪