আপা দেইখেন না বাচ্চাটা জানি কেমন করতাছে,কাঁদতাছে।
তুমি ওমন করছ কেন?বাচ্চাতো এখন ভাল আছে।আমিতো একটু আগে দেখে এলাম।আস্তে আস্তে সুস্থ হবে।
কিছু যে খাইতাছে না !
খাবে,সুস্থ হলেই খাবে। অত অধৈর্য হইয়ো না।
একটু পর আবার আসে হাসির মা মানে ঐ বাচ্চাটির মা।আপা একটু দেইখা যান বাচ্চা কেমন করতাছে।
ওয়ার্ডে আসে ডাঃ বাধন।
বাচ্চাকে পরীক্ষা করে।
তুমি এত অস্থির হচ্ছ কেন?বাচ্চা অসুস্থ, আস্তে আস্তে সুস্থ হবে।
বাচ্চা যে কাঁদে----
বিরক্ত হয়ে বাধন বলে,বাচ্চা কাঁদবেনাতো কি করবে! তুমি চুপচাপ এখানে বসে থাক।
নিজের চেম্বারে এসে বসে ডাঃ বাধন।
ঘন্টাখানেক পর আবার দৌড়ে কাঁদতে কাঁদতে আসে হাসির মা।আপা বাচ্চা মনে হয় আর নাই।আপনি বাচ্চারে বাঁচান আপা।দৌড়ে গিয়ে ডাঃ বাধনের পা ধরে কাঁদতে থাকে সে।
বাচ্চা কাঁদেনা,নড়ে না..
ঢ়িৎকার করে কাঁদতে থাকে সে,আমার কলিজার ধন চইলা গেল ,আমি এখন কি নিয়া থাকবরে,কি হইলোরে----
ভয় পেয়ে যায় ডাঃ বাধন।সত্যি সত্যি বাচ্চাটার কিছু হল নাতো !
সে তাড়াতাড়ি চলে আসে ওয়ার্ডে।বাচ্চাটিকে পরীক্ষা করে।
না সবকিছুই ঠিক আছে।অনেকটা গভীর ঘুমে আছে।
বিরক্ত হয়ে ডাঃ বাধন বলে,তুমি এমন করছ,বাচ্চাতো ঘুমাচ্ছে।তুমি এরকম করতে থাকলে তোমার বাচ্চাকে রিলিজ দিয়া দিবো।
রাগে গজগজ করতে করতে নিজের চেম্বারে এসে ঢোকে বাধন।
শিশুবিভাগে কাজ করতে করতে মাঝে মাঝেই সে অতীষ্ট হয়ে উঠে। ভাবে কোন অলুক্ষনে যে শিশু বিষয়ে ডিগ্রী নিতে গেছে।যতনা শিশুরা ঝামেলা করে তার চাইতে তাদের মায়েরা জ্বালিয়ে মারে।বাচ্চা কাঁদলেও বলে কাঁদে কেন,আবার না কাঁদলেও বলে বাচ্চা মনে হয় মইরা গেছে।
পরদিন সকালে এক লোক এসে ঢোকে তার হাসপাতালের চেম্বারে।
আপা আপনি রাগ কইরেন না। আমি রহিমার স্বামী।ঐ যে ১৩ নম্বর বেডের বাচ্চাটার বাপ।আমার বউ আপনারে অনেক বিরক্ত করছে।
অনেকটা বিরক্তের সাথে বলে উঠে ডাঃ বাধন,কি বলতে চাও বল।
আপা আপনে বাচ্চাটারে ছাইড়া দিয়েন না।আমরা গরীব মানুষ,বাইরে কোথায় দেখাইব,কোথায় ভর্তি করাইবো।আমার বউ একটু ঐরকমই। ও ওর ছাওয়াল ছাড়া কিছু বোঝবার পারে না।
তুমি কি কর ?কয়টা বাচ্চা তোমার?
রিঙ্া চালাই। তিনটা বাচ্চা।মাঝেরটা ছেলে বাকি দুইটা মেয়ে।
ও আমিতো ভেবেছিলাম এটাই একমাত্র বাচ্চা। যেমন করে তোমার বউ,যে কেউ বিরক্ত হবে।
আপনি রাগ কইরেন না আপা।আপনার উছিলায় বাচ্চা এখন ভাল আছে।আমি ওরে রাগ করছি,ধমক দিছি ও আর বিরক্ত করবে না।
ঠিক আছে,আমরাও চাই তোমার বাচ্চা সুস্থ হোক।এজন্যতো সময় দিতে হবে।হুট করেতো আর রোগ ভালো হবেনা,সময় লাগবে।
পাঁচদিন পর পুরো সুস্থ হয়ে যায় বাচ্চাটি।তার মা পা ছুয়ে ছালাম করে ডাঃ বাধনের।বলে,মাফ কইরা দিয়েন আপা।
হ্যা ঠিক আছে, ভালো থেকো।
কদিন পর বিকালে প্রাইভেট চেম্বারে পিঠা নিয়ে উপস্থিত রহিমা আর তার পরিবার।
কি করেছো এসব !
আমি নিজের হাতে বানাইছি আপা।আপনি খাইয়েন।
সাথের ৯/১০ বছরের বাচ্চাটির দিকে তাকিয়ে বাধন বলে,ও কি তোমার বড় মেয়ে?
হ আপা।
ও কি করে? কি ওর নাম ?
স্কুলে পড়ে।তৃতীয় ক্লাসে।মাঝে মাঝে স্কুলে যায়।ওর নাম কাকন।
তোমার তিনটা বাচ্চা।তুমিতো ইট ভাঙ্গো।তোমার স্বামী রিঙ্া চালায়। এদের দেখ কেমনে? তার উপর গরীবের সংসার।
হ্যা তা ঠিকই।কিন্তু আমারইতো পোলা মাইয়া।আল্লাহ আছে ঠিকই চইলা যায়।
আমি বলি কি তুমি তোমার এই মেয়েটাকে আমার কাছে দাও।ও আমার কাছে থাক।আমারও একটা ৯ বছরের মেয়ে আছে।ওর সাথে খেলবে।কাজের বুয়া আছে।তোমার মেয়েকে কাজ করতে হবেনা। করলেও টুকটাক এই যা।
রহিমা ও তার স্বামী দুজনেই মুখটা কালো করে ফেলে।
এরকম হবে জানলে মেয়েটিকে নিয়ে আসত না, ভাবে রহিমা।
তার স্বামী বলে,তাইলেতো ভালই হয়---
রহিমা তার স্বামীর দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকায়। চোখদুটো তার জলে ভিজে ওঠে। তারপর ডাঃ বাধনের দিকে তাকিয়ে বলে,আপা পরে আপনারে জানাই।
হ্যা হ্যা ঠিক আছে। তোমরা ভেবে দেখ।দুজনে আলাপ কর। তারপর সিদ্ধান্ত নাও। তারপর একটু থেমে বাধন বলে,দেখো গরীবের সংসার, এতগুলো বাচ্চাকে মানুষ করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার আমার মনে হয় তুমি দিয়ে দাও। তোমরাও ভাল থাকবে ও নিজেও ভাল থাকবে। আর তোমরা যদি চাও মাসে মাসে মাইনে পাবে।
-না না আপা আপনি যে কি বলেন,মাইনে লাগবো কেন। তার স্বামী ডাঃ বাধনকে থামিয়ে দেয়।বাচ্চা দিলে এমনিই দিমু।আপনি আমার বাচ্চারে বাচাইছেন।
ঠিক আছে আপা আইজ আমরা যাই।আলাপ কইরা পরে দেখা করুম।
দুদিন যায়,চারদিন যায়।সাতদিনের দিন রহিমার স্বামী তার মেয়েকে নিয়ে চেম্বারে উপসি্থত।
আপা আমাদের মেয়েকে আপনার হাতে তুইলা দিলাম।
ওর মা আসেনি?
না।
কেন? ও কি তোমার মেয়েকে দিতে চায়নি।
আপা সংসার চালাই আমি।আমি বুঝি সংসার চালানো কত কষ্টের। অভাবের সংসারে ভালবাসা কি চিরকাল থাকবে।অনেক বুঝানোর পর রাজি হইছে।লন আপনে ওরে নিয়া যান।হাসির বাবার চোখেও জল চলে আসে।
মেয়ের হাত ধরে বলে এ তোর আরেক আম্মা। যা বলবে শুনবি।কখনো বেয়াদবী করবি না।মেয়েকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দেয়।
কাকন তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে।
ডাঃ বাধন চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে কাকনের হাত ধরে। এসো তুমি কেঁদোনা। তোমার বাবামাতো মাঝে মধ্যেই তোমাকে দেখতে আসবে।
বাসার ঠিকানা দেয় কাকনের বাবাকে। একহাজার টাকার একটা নোট বাড়িযে দেয় ওর বাবার হাতে।
না না এটা নিব না।
এটা দিয়ে তোমার বাচ্চাদের কিছু কিনে দিও।
না আপা লাগবে না।আপনি শুধু মাইয়াটারে একটু ভাল কইরা রাইখেন।ওর মার সাথে অনেক রাগ করছি।
হ্যা ,তুমি চিন্তা করোনা।
দুদিন পর চেম্বারে এসে উপস্থিত হাসির মা।
আমার মাইয়াটা কেমন আছে?
ভাল।
আমি ওকে একটু দেখব।
ঠিক আছে ।তোমার স্বামীর কাছে ঠিকানা দেয়া আছে।তুমি বাসায় এসে দেখে যেও।
ওতো নিয়ে যায় না।তাই আমি চুপ কইরা আপনার কাছে আইছি।
তোমার স্বামীকে আমার কথা বলো।বলো যে তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছ্।ে
এভাবে দুদিন পর পরই বাসায় ছুটে আসে হাসির মা। মেয়েটিকে দেখতে।
ডাঃ বাধন টাকা দেয়।নিতেচায়না সে।ডাঃ বাধন বলে,তুমি এরকম ঘন ঘন এসো না।আমি তোমাকে বেশী করে টাকা দিয়ে দিচ্ছি।
আমি টাকা দিয়ে কি করুম?আমি কি টাকা নিতে আসি?আমি মাইয়ার টানে ছুইটা আসি,মাযের মনতো।আটকাইতে পারিনা।
তুমি এত ঘন ঘন আসলে ওকে তোমার রাখার দরকার নাই।তুমি ওকে তোমার কাছেই রাখো।অনেকটা বিরক্ত নিয়ে কথাগুলো বলে ডাঃ বাধন।
কিন্তু আপনার যে কষ্ট হবে,আপনের মাইয়া ওকে আপন কইরা লইছে ও কষ্ট পাইবে।
সেদিনের মত চলে যায় রহিমা। ডাঃ বাধন ভাবে সে কোন ভুল করছে নাতো ! এক মায়ের কাছ থেকে তার সন্তানকে কেড়ে নিয়ে এসেছে।রহিমার সংসারে অভাব আছে অর্থের,ভালবাসার নয়।তাই সে ভালবাসার টানে, মাতৃত্বের টানে ছুটে আসে মেয়ের কাছে।অভাবের কারনেই তার মেয়েকে দিতে হয়েছে অন্যের কাছে।
সে নিজেওতো মা।সেকি তার সন্তানকে মায়ের ভালবাসা দিতে পারছে।ঠিক যেমনটি রহিমা তার সন্তানদের দিচ্ছে।
তার নিজের কাজের ব্যস্ততা রয়েছে।কিন্তু তারপরও তার সন্তানকি পেতে চায়না তার ভালবাসা।মায়ের ভালোবাসা।
প্র্রমিথির রুমে এসে ঢোকে বাধন।ঘুমিয়ে আছে সে।কিছুক্ষন আগে বুয়া তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে গেছে।
প্র্রমিথির মাথার কাছে গিয়ে বসে। কপালে হাত রাখে।চমকে জেগে ওঠে নয় বছরের প্রমিথি।
ঘুম জড়ানো চোখে বলে উঠে, মা তুমি?মায়ের কোলের উপর মাথাটা রেখে মাকে জড়িয়ে ধরে।মা তুমি আজ আমার সাথে ঘুমুবে?
মেয়েকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়ে বাধন।
সকালে স্বামী সন্তান সহ ডাঃ বাধন কাকনকে নিয়ে রহিমাদের বাড়ি যায়।রহিমা দৌড়ে আাসে।জড়িয়ে ধরে কাকনকে।মা তুই ভাল আছিস মা ? গানে চুমুু খেতে থাকে রহিমা।
কাকনের কাপড়ের ব্যাগটা রহিমার হাতে দেয়। একহাজার টাকা গুজে দেয় তার হাতে।
অবাক হয়ে রহিমা বলে,কি করছেন আপনি ? কাকন কোন বেয়াদবী করছে ?কাকনের দিকে তাকিয়ে চোখদুটো লাল করে বলে,তুই ওনাদের লগে বেয়াদবি করছিস।তুই কি করছিস ক,পিটন দিতে থাকে সে কাকনকে।
কি করছ তুমি?ওকে মারছ কেন? ও কিছু করেনি।ও অনেক ভালো মেয়ে।ও তোমারই কাছে থাকার যোগ্য। তুমি শুধু ওকে আদরই করোনা,শাসন করতেও জানো। সন্তানের প্রতি মায়ের যে টান থাকা দরকার,যে ভালবাসা থাকা দরকার তা তোমাকে দেখে আমি বুঝতে পেরেছি।আমি মায়ের ভালবাসা থেকে তোমার সন্তানকে ব্িঞ্চত হতে দিতে পারি না।আমি মায়ের যে ভালবাসা ,স্নেহ আমার সন্তান প্রমিথিকে দিতে পারিনি তুমি অভাবের মধ্যে থেকেও সে ভালবাসা তোমার সন্তানকে দিয়েছো। তাকে দেখবার জন্য ছুটে গিয়েছো।এই না হলে মা।
তারপর একটু থেমে বলে,কোন সময় কোন কিছুর প্রয়োজন হলে চলে এসো।
প্র্রমিথিকে তার বাবা মা বেড়াতে নিয়ে যায়।
প্র্রমিথি অবাক হয়ে বলে,মা, বাবা তোমরা আজ কেউ হাসপাতালে যাবে না?
না মা আজ ছুটি নিয়েছি।আজ তোমাকে নিয়ে সারাদিন বেড়াব,ঘুরব।একসাথে চাইনিজ খাব।
সত্যি মা ! যেন বিশ্বাস হতে চায় না ছোট্ট প্রমিথির।খুশিতে তার চোখদুটো ঝিলিক মারতে থাকে।গাড়িতে বসে মার গলা জড়িয়ে ধরে বলে আমার লক্ষী মা।
২০ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৪০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪