জীবন ট্রেনের প্রথম স্টেশন

ছোটবেলা (জানুয়ারী ২০২৫)

Md.Tasdiqul Haque
  • 0
  • 0
  • ৪১
শৈশব তুমি তো যেন এক সোনার খাঁচায় পুরে রাখা এক রূপকথা! পারলে তো মনে হয় আরেকবার ফিরে পাই তোমাকে। কিন্তু আফসোস! যা ফেলে এসেছি তা শুধুই স্মৃতি, ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না! কবি গুরুর ভাষায়,

"দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় রইল না- সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।"

কতশত আনন্দ-দুষ্টুমি, কত শাসন, চোখ ফুলিয়ে কান্না জড়িয়ে আছে এই শৈশবে। শহুরে জীবন বলে অনেকেই ভাববে হয়তো আমার শৈশব নেই, থাকলেও হয়তো সেই রঙ গুলো ছুঁয়ে যায় নি কখনো। আসলে কিন্তু তা নয়। হয়তো মুক্ত আকাশে পাখির মত ডানা মেলে উড়তে না পারলেও বন্দি পাখির মত পরাধীনতা কখনো পাই নি। রাস্তায় পাড়ার সবাই মিলে দাগ কেটে ক্রিকেট খেলা, ব্যাট করা নিয়ে মন খারাপ করা সবই জীবনে এসেছিল। কখনো আউট হয়ে রাগ করে ব্যাট নিয়ে দৌঁড়ে পালিয়েছি, কখন বল করার ভয়ে পালিয়েছি! তবে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ক্রিকেট খেলার মজাই ছিল আলাদা! সন্ধ্যা হলেই ডাক পড়ত ঘরে ফেরার। তখন বসত পাড়ার ছেলেমেয়েদের সাথে গুণগুণিয়ে পড়ার প্রতিযোগিতা। বোনহীন এই শৈশবে ভাইয়ের সাথে সমীকরণটাই আলাদা ছিল। ভাইয়ের সাথে কখনো মিলাদে যাওয়ার জন্য দুই ভাই সাদা পাঞ্জাবি পড়ে তবারকের দিকে চেয়ে থেকেছি, কখনো আবার মসজিদে নামায পড়ার সময় চুপ থাকার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে হেসে গড়িয়ে পড়েছি। কখনো আবার তিনবেলা খেয়ে রোজা থেকেছি! কখনো বা দুইজন দুইজনের খাবারের ভাগে ভাগ বসিয়েছি। হেমন্তের শেষে সন্ধ্যার আবছা কুয়াশা যখন ঘিরে ধরে এই ব্যস্ত শহরকে, কারা যেন রাস্তার ধারে ভাপা পিঠার আড়ম্বর সাজিয়ে বসে। এইটুকুই জানান দিতে চায়," শীত আসতে চলেছে!" খেজুরের রসের জুড়ি এই শহুরে জীবনে মেলা দায়। হয়তো গ্রামের বাড়ি থেকে দিয়ে গেছে। দাদাবাড়ি থেকে দাদি আসার সময় নিয়ে আসত তিলের পুলি পিঠা। ঈদে গেলে মিলত গরম গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই- কলাই রুটি। কখনো ঝাল কখনো আবার মাংস দিয়ে চলত ভুরিভোেজ। তখন হয়তো কেবল পিঠে ব্যাগের ঝোলা উঠেছে, পড়ালেখা অতটা জেঁকে বসে নি। ধীরে ধীরে সেই বোঝা ভারী হয়ে উঠেছে, জীবনের সুখ-সময় গুলোও কমে এসেছে। কমে এসেছে বললে ভালো লাগবে না- বরং জীবনে পরিবর্তন এসেছে। ছোটবেলায় "নসিলা" চকলেট নিয়ে দুই ভাই কাড়াকাড়ি করতাম আর আজ দোকানে থরেথরে সাজানো দেখলেও খেতে মন চায় না। এই একটা বিষয়ই মনে করিয়ে দেয় বড় হয়ে গেছি।

স্কুলজীবনের খুনসুটি সে তো আরেক উপন্যাস। প্রথম দিন স্কুলে না যাওয়ার জন্য কেঁদেছি, পরে অবশ্য স্কুল যেতে না পেরে কেঁদেছি। কতশত শাসন, কতশত পড়ালেখার চাপ- তবুও স্কুল যেতে বারবার মন চাইত। সেই জীবনে ছিল স্বার্থ শব্দের মানে না জানা একদল ছোট্ট ছেলেমেয়ে যারা টিফিনে সবাই মিলে ভাগ করে খেত। যারা মায়ের শিখিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও বলে দিত," আরে এটার উত্তর তো এটানি" ফেলে এসেছি যাদের তাদের পরজীবনে অনেক খুঁজেছি, অনেককে পেয়েছি, অনেককে আবার পাইনি। হয়তো আমার পাশেই ছিল এতটা বছর কিন্তু চিন্তে পারি নি।

এরপর "জীবন" নামের অদ্ভুত ট্রেনে উঠে পড়েছি আমি। স্টেশন আছে এখানে, কিন্তু ফিরতি ট্রেন নেই। "যৌবন" স্টেশনে নেমেছি আমি, হয়তো আরো দূরে যাব। ছুঁয়ে দেখতে পাব না আমার এই ফেলে আসা জীবন ট্রেনের প্রথম স্টেশন, আমার এই ছোটবেলাকে। আর কখনোই না। তাই এই ভঙ্গুর স্মৃতির বাক্স সতেজ থাকতেই হাত বুলাতে চাই বারবার। সেই সময়ের কথা মনে পড়লে মনে হয়,

ধীরে ধীরে যাও না সময়

আরও ধীর বও

আরেকটুক্ষণ রও না সময়

একটু পরে যাও
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শৈশব তুমি তো যেন এক সোনার খাঁচায় পুরে রাখা এক রূপকথা! পারলে তো মনে হয় আরেকবার ফিরে পাই তোমাকে।

১১ ডিসেম্বর - ২০২৪ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫