সেবার আমি যাবো গ্রামের বাড়িতে ঈদের ছুটি কাটাতে। তখন সাভারের হেমায়েতপুরে থাকতাম। চাকরি করতাম সেখানে। আমার গ্রামের বাড়ি রৌমারী। ভারতের আসাম সীমান্ত সংলগ্ন ছোট একটি শহর। আমার গাড়িতে উঠতে হয় মহাখালী বাস টার্মিনালে গিয়ে।
বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে অগ্রীম টিকেট কেটে রেখেছিলাম। নির্দিষ্ট তারিখে সন্ধ্যার আগে আগে আমি বাসা থেকে বের হলাম। তখনও আমার হাতে চার সাড়ে চার ঘন্টা সময় ছিল। গাড়ি ছাড়বে রাত ১০ টায়। হেমায়েতপুর থেকে মহাখালী যেতে এক ঘন্টা বড়জোড় দের ঘন্টা সময় লাগে। আমি হেসে খেলে টাইম পাস করতে লাগলাম। বাসস্ট্যাণ্ডে এসে চা খেলাম। পাশের একটা শপিং মলে গিয়ে সবুজ রঙের টি-শার্ট খুঁজতে লাগলাম। একটা ছেলেকে একদিন পড়তে দেখেছিলাম। ভালো লেগেছিল খুব।
প্রায় এক ঘন্টা পর খালি সিট দেখে মহাখালীগামী একটা বাসে উঠলাম।
গাড়ি চলতে শুরু করলো। বলিয়ারপুর পার হয়ে এক কিমি যেতে না যেতেই গাড়ি যানজটে আটকা পড়লো। ভাবলাম সামনে কেরানিগঞ্জ যাওয়ার একটা বাইপাস রোড আছে হয়তো সেকারনে যানজট। মিনিট দশ পার হলো গাড়ি যাওয়ার কোন লক্ষণ দেখা গেলো না। ড্রাইভার সাহেব গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে দিলেন।
ধীরে ধীরে দুশ্চিন্তা দানা বাঁধতে শুরু করলো আমার মনে। এরকম পরিস্থিতে আমি আগেও পড়েছিলাম। একবার আমি ভাইবা দিতে যাব সাইন্সল্যাব বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে। দশটার সময় অফিসে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। এক ঘন্টার রাস্তা বলে আমি আটটার সময় বাসা থেকে বের হলাম। হেমায়েতপুর থেকে আমিনবাজার পর্যন্ত গাড়ি বেশ গতিতে এলো। কিন্তুু গাবতলীর পর থেকে গাড়ি চলতে লাগলো শম্বুক গতিতে। গাড়ি ঠিক থামছেও না আবার যাচ্ছেও না। এদিকে রীতিমত উসখুস করছি আমি। জানালা দিয়ে বার বার বাইরে দেখছি। সামনে গাড়ির বহর। যখন সাইন্সল্যাব এসে পৌছালাম তখন সাড়ে এগারোটা পেরিয়ে গেছে। এসে দেখলাম আমার সিরিয়াল পার হয়ে গেছে। অনেক বলে কয়ে শেষ পর্যন্ত ভাইবাটা দিতে পেরেছিলাম। চাকরিটা অবশ্য হয়নি।
অন্ধকার রাত। ড্রাইভার সাহেব গাড়ি বন্ধ করে বসে আছেন। সামনে কি হচ্ছে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। যখন এক ঘন্টায় দশ কদমও সামনে যেতে পারলাম না ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। ভারী ভারী দুইটা ব্যাগ নিয়ে রুদ্ধশ্বাসে ছুটতে লাগলাম সামনের দিকে। কিছুতেই গাড়ি মিস করা যাবে না। ঈদের সময় একটা টিকেট মানে সোনার হরিণ।
গাবতলীতে এসে যানজটের কারনটা বুঝলাম। অজস্র গরু ভর্তি ট্রাক জটলা পাকিয়ে আছে। আবার কিছু গাড়ি টার্ন নেওয়ার চেষ্টা করছে বেরিবাঁধের দিকে। দুজন ট্রাফিক পুলিশ আছেন বটে। কিবা করবেন তারা।
আমি গাবতলীতে এসে লেগুনায় উঠলাম। শ্যামলীতে এসে আবার জ্যামে পড়লাম। এদিকে সাড়ে নয়টা পার হয়ে গেছে। আগারগাঁও সিগন্যাল পার হয়ে গাড়ি লিংক রোডে উঠল। ড্রাইভারের তারিফ করতে হয়, উল্কার বেগে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তিনি। গতি আমাকে স্বস্তি দিচ্ছিল। যখন জাহাঙ্গীর গেটে মোড় নিয়ে গাড়ি মহাখালীর দিকে ঢুকবে তখন আবার জ্যাম। না, আর গাড়িতে থাকা সম্ভব নয়। দশটা বাজে তখন। গাড়ির সুপারভাইজার ফোন দিলেন, কোথায় আপনি?
-চলে আসছি, আর দুই মিনিট লাগবে।
-আপনার টার্মিনালে আসার দরকার নেই। ফ্লাইওভারের নিচে দাঁড়ান।
-আচ্ছা আমি দাঁড়াচ্ছি।
আমি একটা সিগারেট ধরিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে টানতে লাগলাম। গাড়ি এসে দাঁড়ালে সিগারেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে গাড়িতে উঠলাম। বুকিং দেয়া সিটের কাছে এসে আমি চমকে গেলাম। আমার পাশের সিটে বসে আছে অপূর্ব এক তরুণী। সে আমার দিকে তাকিয়ে ভদ্রতাসূচক হাসলো।
বলল, আপনার সিট?
-হুম।
সিটে বসলে মেয়েটি বলল, আমি অনি। রাজীবপুর যাব। আপনি কোথায় যাবেন?
-রৌমারী।
-আমাদের পাশের থানা। আমি গিয়েছি বেশ কয়েকবার। রৌমারী কলেজপাড়ায় আমার মামার বাসা।
-আপনার মামার নাম?
-মঞ্জু সরকার।
-আপনার মামা একসময় আমার শিক্ষক ছিলেন।
-আপনি তো তাহলে চেনেন দেখছি।
-মঞ্জু স্যার আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন। বলবেন আহনাফ নামে কোনো ছাত্রকে চেনা আছে কিনা। আমার আব্বার সাথে মঞ্জু স্যারের খুব ভালো সম্পর্ক। ছাত্রজীবনে তারা বন্ধু ছিলেন।
-আপনাদের বাসা কি কলেজ পাড়াতেই?
-না, আমাদের বাড়ি পাখিউড়া গ্রামে। রৌমারী শহর থেকে প্রায় সাত কি.মি. দুরে।
টঙ্গী, গাজিপুর চৌরাস্তার যানজট পেরিয়ে গাড়ি যখন ময়মনসিংহ হাইওয়েতে উঠল গাড়ি চলতে লাগল ঝড়োগতিতে। যানজট মুক্ত চার লেনের প্রশস্ত রাস্তা। রাস্তার দুপাশে শাল গজারীর বন। গাড়ির ভিতরের বাতিগুলি নিভিয়ে দেওয়ার কারনে নীবিড় অন্ধকার। অপোজিট থেকে আসা গাড়ির হেডলাইটের আলোয় হঠাৎ হঠাৎ অস্পষ্ট ভাবে আলোকিত হয়ে ওঠে।
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। অনেক রাত্রে ঘুম ভেঙ্গে দেখলাম মেয়েটা আমার কাঁধে হেলান দিয়ে পরম নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। আনন্দে মনটা ভরে গেলো আমার। এমন অপূর্ব রাত আগে কখনো আসেনি আমার জীবনে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার পথে তীব্র যানজটে পড়তে হয় আমাকে। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে অল্পের জন্য গাড়িটা মিস হয় না আমার।
১৪ আগষ্ট - ২০২৪
গল্প/কবিতা:
৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।