গ্রামটার নামঃ পাড়াতলি ।ভোর বেলা।ধীরে ধীরে জেগে উঠছে ঘুমন্ত মানুষ । সামনে ঈদ তাই তাদের কর্মব্যাস্ততা ভীষন । ভোর ভোর ঘুম থেকে উঠে পড়ে রহিম ।পাশে নব বধূ এখনও ঘুমোচ্ছে । মাসখানেক হল বিয়ে করেছে ও । এতদিন একা জীবন ছিল বাপ মা হারা রহিমের ।কিন্তু শেষ পর্যন্ত গ্রামের মুরব্বীদের বরাতে একা জীবনে দোকা এসে জুটল ওর ।
বাইরে এসে হাত মুখ ধুয়ে নেয় ও ।আজকে রোযা রেখেছে রহিম ।কামলা খাটে বলে আর বিড়ি ফুঁকে বলে রোযা রাখতে পারেনা সে । আজকেও রাখত না ।কিন্তু বউয়ের অনুরোধ ।ফেলে কি করে ? আরেকটা অনুরোধ অবশ্য আছে । একটা শাড়ী ।ঈদের শাড়ী । বিয়ের সময় শাড়ী কিনে দিতে পারেনি বউকে । বাপের বাড়ি থেকে একটা শাড়ী নিয়ে এসেছে । তাই এই অনুরোধ ।
: এই যাবি ? বেশ সাহেব সাহেব পোশাক পড়া এক লোক চেচিয়ে বলে । : কি কাম ছার? নরমস্বরে বলে রহিম । : কি কাম জেনে লাভ কি ?তুই যাবি কিনা বল ?
কাজ না জেনে যাবে কিনা ভাবে রহিম ।এই ঈদের সময় কামলার দর বেশ কমে গেছে ।সবাই ব্যস্ত কেনাকাঁটা নিয়ে ।হয়তো আরেকটা খদ্দের নাও পেতে পারে ।ভাবে রহিম । : ঐ ব্যাটা কি ভাবছ ? আবারও কর্কশ স্বরে চেচায় লোকটা ।
লোকটার কথা শুনে বেশ রাগ হয় রহিমের ।একবার ভাবে না করে দেবে ।পরক্ষনেই ওর চোখের সামনে ভেসে উঠে একটা মেয়ের মুখ ।ওর বউ ।বেচারী একটা শাড়ীর আবদার করেছে ।না দিতে পারলে হয়তো খুব কষ্ট পাবে । সায় দেয় রহিম ।
: শোন কাজটা খুবই সোঁজা । বেশ নরম স্বরে বলে লোকটা । : এই কূয়োটাতে আসতে করে নেমে যাবি ।তাঁরপর এক ডুবে সোজ তলায় ।একটা বাকসো পাবি তুলে নিয়ে আসবি । ১০মিনিটের মামলা ।
: আরে ব্যাটা যাবি আর আসবি ।কড়কড়ে নোটও পাবি ।চার হাজার ।
: না ছার আফনে একজন ডুবুরি ডাহেন ! মিন মিন করে বলে রহিম । : খালি ! বেশি বুঝুস !তোরে আমি কি কই ? একটু যেন বেপোরোয়া হয়ে উঠেন লোকটা । : আরে হোন ।এইডার মধ্যে আছে হেরোইন !বুঝলি ? তারপর একটু নরমস্বরে বলেন । : হেরোইন ! আতকে উঠে রহিম ।
শেষ পর্যন্ত পাঁচ হাজার টাকায় রাজি হয় রহিম । জোড়সে একটা শ্বাস টেনে কুয়োয় ঝাপিয়ে পড়ে ও । তারপর হাত দিয়ে পানিকে উপরে টেনে ক্রমশ গভির চলে যায় ও ।বাকসোটা নিয়ে আবার উপরে উঠে আসতে থাকে ও ।
কিন্তু হঠাত্ করেই পাটা যেন কিসে ঠেকে যায় ।একটা কাছে লতা ।কয়েকবার লাথি মেরে ওটা ছিড়ে ফেলতে চেষ্টা করেও । কিন্তু না ওটা ছিড়েনা ।বরং আরও বেশি করে পেচিয়ে যেতে শুরু করে । দম ফুরিয়ে যায় রহিমের ।ফুসফুসটা যেন ছিড়ে যাচ্ছে বাতাসের অভাবে । মাথাটা ঘুলিয়ে যায় ওর । উপরের দিকে শেষবারের মত তাকায় ।সূর্যের আলো ক্রমশ ক্ষীন থেকে ক্ষীন হয়ে প্রবেশ করছে পানিতে । আস্তে আস্তে যেন পাল্টে যায় ওটার বোল ।হলদে আভা ছাড়িয়ে ক্রমশ ঘন লাল হয়ে যায় ওটা । একটা মেয়ে যেন লাল শাড়ি পড়ে দাড়িয়ে আছে । হঠাত্ করে এমনটাই মনে হয় রহিমে ।মেয়েটা ওর বউ ।ওর নববধূ ।যে পথ চেয়ে আছে রহিমের জন্য ।একটা লাল শাড়ীর জন্য ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
জাকিয়া জেসমিন যূথী
ছোট্ট কাহিনীর গল্পটায় সংলাপ বসিয়েছেন সুন্দর করে। সেইজন্যে খুব ভালো লাগলো। আরো লিখতে থাকুন। আর অন্যের লেখা বেশি বেশি করে পড়ুন। যত বেশি সংখ্যক লেখা আপনি নিজে পড়বেন, তত বেশি সংখ্যক পাঠক আপনিও আপনার লেখায় পাবেন। ভালো থাকুন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।