পৌষের পয়লা দিন শায়লা ওর এগারো বছরের ছেলেকে নিয়ে সকাল সকাল বাপের বাড়ি উপস্থিত। খবর না দিয়ে তো মেয়ে এভাবে আসে না! আজ হলো কী? মায়ের চেহারায় প্রশ্ন, তবে মুখ ফুটে প্রশ্নটা করার সাহস পাচ্ছে না। মেয়ের যা মেজাজ! মায়ের মতো বিস্মিত শায়লার ভাই আর ভাই-বৌও। শায়লা অতসবের ধার ধারে না। ভারী ট্রলি ব্যাগটা টানতে টানতে ভেতর ঘরে চলে গেল। মা-ছেলে দুজনের চোখভর্তি ঘুম, ট্রেনে কারোরই ভালো ঘুম হয় না। কোনোমতে হাতমুখ ধুয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিল। শোয়া মাত্রই ঘুম। ঘুম ভাঙল দুপুরে।
-কী রে মা, বল তো কী হয়েছে?
-ওসব পরে হবে। আগে খেতে দাও, খিদে পেয়েছে
-আয় আয়, খাবার তো বাড়াই আছে
শায়লার ছোট ভাইয়ের বৌ বেশ করিৎকর্মা, কী করতে হবে বলার আগেই বুঝে যায়। সংসার সামলাচ্ছে কার্যত সে-ই।
-ভাবী, শোল মাছের তরকারি ভালো হইছে
-বুবু, আরেকখান মাছ দেই?
-দ্যাও!
শায়লার মা আর ভাই মুখ চাওয়াচাউই করে। ওর এমন নির্বিকারভাব রীতিমত দুশ্চিন্তার জন্ম দিচ্ছে। নিশ্চয়ই বড় কিছু হয়েছে! নীরবতা ভাঙল শায়লা নিজেই
-শোনো মা, আমি পাকাপাকিভাবে বাড়ি চলে আসছি
-ক্যান রে, কী হইছে?
-লিপুর বাপে তো আমারে ডিভোর্স দিছে! ডিভোর্স লেটার পাঠাইছে
-এইটা কী কস তুই?
রুকাইয়া বিবির মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। ডাঙ্গর একটা ছেলে আছে, এক যুগের সংসার ভাঙতে বসেছে- অথচ এ নিয়ে মেয়ের মধ্যে কোনো বিকার নেই। চিন্তার বিষয়!
-কী কইছি শোনো নাই? খাঁটি বাংলায় কইছি, না বোঝার কী আছে!
-না তা তো বুঝছি! কিন্তু তোর এদ্দিনের সংসার...
-বিয়ের বয়স বারো বচ্ছর, কিন্তু সংসার কয়দিনের? গত বারো বচ্ছরে লিপুর বাপে দ্যাশে আসছে কয়বার আর এক লগে থাকছে কয়দিন?
-কিন্তু হইছে টা কি তা তো কইবি?
-কী হইছে তা হ্যাতে রে জিগাও?
-না, তুই ক
শায়লা কয়েক মুহূর্ত চুপ থাকল। এরপর শান্ত স্বরে জবাব দিল
-বাংলাদেশি মেয়েছেলে এখন তার পোষায় না, এইবার সে ফরেন মাইয়া বিয়া করব
-তরে ক্যাডায় কইছে?
-হ্যায় নিজে কইছে
কথা বলতে বলতেই শায়লার খাওয়া শেষ। অন্যদের কথার তোয়াক্কা না করে এঁটো প্লেটটা হাতে করে গেল পুকুরঘাটে।
অনার্স ফার্স্ট ইয়ারেই শায়লার বিয়ে হয়ে যায়। পাত্র বিদেশে থাকে। মালয়েশিয়া। শায়লার বিয়েতে মত ছিল না। পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ছিল। বিদেশপ্রবাসী ছেলে তার পছন্দও না। কিন্তু শায়লার বাবা রাগী মানুষ, একবার কিছু বললে সেটার নড়চড় হয় না। তার এক কথা, মেয়েছেলের অত লেখাপড়ার দরকার কী? শেষমেশ তো সংসারই করবে! আর জামাই যদি পড়াতে চায় তো পড়বে।
না, শায়লার আর পড়ালেখা হয় নি। বিয়ের তিনমাসের মাথায় স্বামী বিদেশ ফিরে গেল, বছর ঘুরতেই শায়লার কোলজুড়ে এলো সন্তান। কোলজোড়া সন্তান আর বুকভরা ক্ষোভ-অভিমান নিয়ে এক যুগ পার করেছে মেয়েটা। বাবা মারা গেছে চার বছর, কিন্তু ওর ক্ষোভ যায় নি।
-আরে শায়লা নাকি! আইলি কহন?
পুকুরঘাটে নূরন। শায়লার ছোটবেলার বান্ধবী। বাসন মাজতে এসেছে।
-এই তো বিয়ানে। আছস কেমন?
-ভালা! তা তোর পোলাডা কই?
শায়লা আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখায়। লিপু পুকুরের ওপারে ক্ষেতের মধ্যে পায়চারী করছে।
-লিপু তো অনেক বড় হইয়া গ্যাছে!
-বড় হইছে খালি গায়েপায়ে। বুদ্ধিচিন্তা অহনো পোলাপাইনের নাহান
থালা ধুয়ে পাকঘরে রেখে শায়লা আরেক দফা বিছানায় গেল। শীতের দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর বিছানায় গড়াগড়ি যাওয়ার আরামটা সে বিগত অনেকগুলো বছর মিস করেছে। ঢাকায় তার একটা বুটিক শপ ছিল, সকাল থেকে সন্ধ্যা ওতেই সময় দিত।
লিপু অনেক আগেই খেয়েদেয়ে অদূরে সরিষাক্ষেতের দিকটায় গেছে। আগে যখন সে নানাবাড়ি বেড়াতে আসত তখন তার নাওয়া খাওয়া ঘুমের ব্যাপারে মায়ের পূর্ণ মনোযোগ থাকত। এবার নেই। বড়দের আলাপের মধ্যে থাকতেও তার ভালো লাগে না। মামাত ভাইবোন দুটো এখনো স্কুল থেকে আসে নি। ওদের নাকি ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। মনমরা হয়ে লিপু একা একাই ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে।
মনটা খারাপ আট-দশ দিন ধরে। লিপুদের স্কুল ছুটি হয় বিকাল চারটায়। শায়লা দোকান বন্ধ করে স্কুল থেকে লিপুকে নিয়ে বাসায় ফেরে। ফেরার পথে দুজনের রাজ্যের আলাপ হয়। প্রতিদিনের চিত্র এটা। কিন্তু সেদিন স্কুলগেট থেকেই শায়লাকে গম্ভীর দেখাচ্ছিল।
-কী হয়েছে আম্মু?
-কিছু না। চল
-কী হয়েছে বলো না! সুরাইয়া আন্টি বাকি টাকা নিয়ে আবার ঝামেলা করেছে?
-আহ বললাম তো কিছু হয় নি!
লিপু বুঝে ওঠে না আজ হলোটা কী। মাকে তো এরকম চুপচাপ কখনো দেখে না। রিকশা করে আসার পুরো সময় দুজনের মধ্যে আর কোনো কথা হয় নি। লিপু ভেতরে ভেতরে কৌতূহল আর দুশ্চিন্তা অনুভব করছে। অবশেষে ডাইনিং টেবিলে মা মুখ খুলল। লিপুর প্লেটে খাবার বাড়তে বাড়তে বলল,
-তোর বাবা তো আমারে ডিভোর্স দিসে!
-ডিভোর্স কী আম্মু?
শায়লা শুকনো মুখে লিপুর দিকে তাকাল। মুখে কিছু বলল না। পরদিন স্কুলে গিয়ে লিপু ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করল ডিভোর্স কী। ক্লাসের সবচেয়ে পাকনা ছেলেটা জবাব দিল, ডিভোর্স মানে হাজবেন্ড ওয়াইফ ছাড়াছাড়ি! তার মানে তারা আর একসাথে থাকবে না। বাচ্চা যার কাছে থাকতে চায় থাকবে। কিন্তু কে কাকে ডিভোর্সে দেবে? ছেলেটা কৌতূহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল। কিন্তু লিপু বলতে পারল না কথাটা।
এরপর থেকেই লিপুর টেনশন শুরু। ক্লাসে সে কাউকেই বলে নি বাবা মাকে ডিভোর্স দেবে। অবশ্য বাবা মা সেই অর্থে একসাথে থাকেও না। তারপরও তো বাবা দেশে ফিরে ওদের কাছেই তো আসত। এখন কি তাহলে বাবা লিপুকে দেখতে আসবে না?
এসব ভাবতে ভাবতেই লিপু দেখল দূর থেকে রিয়াজ আর ফুলি আসছে। মামাত ভাইবোন। সাথে প্রতিবেশী আরো কিছু ছেলেমেয়ে। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার রাস্তা একটু ঘুরে এলেও শর্টকাট হিসেবে ক্ষেতের আইল দিয়েই ওরা রোজ স্কুলে যায় আসে। আজ ওদের বার্ষিক পরীক্ষার শেষ সাবজেক্ট ছিল।
কুশলাদির বালাই নেই, লিপুকে দেখে ওদের প্রথম প্রশ্ন
-কীরে তুই মুখে ঠুসি পড়ছস ক্যান?
লিপুর মুখে কাপড়ের মাস্ক। ঢাকায় ঘরের বাইরে গেলে মাস্ক পরা তার অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন অবশ্য পরেছে ফুটানি দেখাতে। ঢাকা থেকে এসেছে- লোকজনকে দেখাতে হবে না! শহরে থাকার একটা প্রচ্ছন্ন অহম ওর মধ্যে কাজ করে গ্রামে এলে।
-ঠুসি কী?
-ঠুসি চিনিস না? ওই দ্যাখ
ফুলি দূরে ইশারা করে দেখালো। একজন মাঝবয়সী লোক কয়েকটা গরু নিয়ে ওদের দিকেই আসছে। ক্ষেতের ফসলে যাতে মুখ না দিতে পারে সেজন্যে ওগুলোর মুখে বাঁশের চটার দিয়ে বোনা মাস্ক পরানো। মাস্কে বড় বড় ফুটো যাতে গরু দম নিতে পারে। লিপু ক্ষেপে গেল
-কী, আমি গরু?
লিপুর রাগ দেখে ওদের সে কী হাসি! লিপু মুখ ঝামটি দিয়ে ভেতর ঘরে চলে গেল। জামাল পিছন থেকে বলতে লাগল, রাগ কমলে বিকালে আসিস, মাছ ধরব। মাছ ধরার কথা শুনে লিপুর রাগ পানি।
বড়শিতে বেশি মাছ পাওয়া গেল না। সন্ধ্যার সময় ওরা ডোঙা নিয়ে বিলের মাঝে কাঠিজাল পেতে আসল। রাতে একটা গোপন মিশন আছে। ওরা লিপুকে রাতে জেগে থাকতে বলল।
শীতকালে অল্প রাতকেই গভীর রাত মনে হয়। সবাই সকাল সকাল শুয়ে পড়েছে। লিপু মায়ের পাশেই শুয়ে আছে। মা ঘুমিয়ে কাদা, কিন্তু লিপুর চোখে ঘুম নেই। কথা ছিল ওরা আওয়াজ দিলে লিপু ঘর থেকে বেরুবে। কিন্তু ওরা এখনো ডাকছে না কেন?
সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে লিপুর চোখ ঘুমে জড়িয়ে এসেছে, এমন সময় সে শুনতে পেল পেঁচার ডাক। সজীব! গোপন সংকেত পেয়ে লিপু সাবধানে দরজা খুলে বাইরে এলো। পূর্ণিমার আলোয় চারপাশ ঝকঝক করছে। অদূরে ছেলেপুলের দল দাঁড়িয়ে।
কেন যাচ্ছে কোথায় যাচ্ছে লিপু কিছু জানে না। একবার জিজ্ঞেস করেছিল, সজীব ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করেছে কথা না বলতে। হাঁটতে হাঁটতে ওরা ক্ষেতের ধারে চলে এলো। টানা অনেকগুলো খেজুর গাছের সারি। লিপু কিছু বুঝে ওঠার আগেই দুজন তরতর করে দুটো গাছে উঠে গেল কাঠবিড়ালির মতো। নেমে এলো মাটির হাড়ি নিয়ে। হাড়িভর্তি রস। রস একটা বড় কলসে ঢেলে হাড়িগুলো আবার গাছে বেঁধে আসলো। রসভর্তি কলসিটা বাজারের ব্যাগে ভরে বাসার পথ ধরল।
লিপু একটু হকচকিয়ে গেছে। কিন্তু এখন কিছু বলা যাবে না। বাড়ির ভেতর ঢোকার পর হাফ ছেড়ে বাঁচল ওরা। ইদানিং গাছিরা খুব সাবধান হয়ে গেছে, রাতের বেলা টহল দেয়। ধরা খেলে দু’ঘা দিয়ে সোজা বাপের হাতে তুলে দিত। বাবা আবার দিত ক’ঘা।
-তোরা রস চুরি করলি!
-চুরি ক্যামনে হইল? এইটা গ্রামের জিনিস, প্রতিবেশী হিসেবে আমগের হক আছে না!
-এখন কী করবি?
-অহন আর কিছু করুম না। রাইখা দিমু, সকালবেলা ক্ষীর রাইন্ধা খামু। ভোরে ভোরে উঠিস
-ক্যান, ভোরে কই যাবি?
-বিলে। জাল পাতছি না, তুলতে হইব
লিপুর এমনিতে ভোরে ওঠার অভ্যাস নেই। তার ওপর শীতকালে আটটার আগে ওঠার প্রশ্নই ওঠে না। স্কুল ডে-শিফট হওয়ায় সুবিধা হয়েছে। কিন্তু পরদিন ঠিকই ভোরে ঘুম ভেঙে গেল ওর।
কাঠিজাল টেনে তুলতেই অজস্র মাছ- টাকি পুটি মেনি খয়রা বাইন শিং খলসে...। কোনো কোনটা এখনো জ্যান্ত। সূর্যের আলো ফোটার আগেই হাড়িভর্তি মাছ নিয়ে বাড়ি ফিরল ওরা। এতক্ষণে মা নিশ্চয়ই জেগেছে। আজ মা কী করে তা নিয়ে লিপু পুরোটা রাস্তা টেনশন করেছে। নিশ্চিত চটকনা দেবে! অন্যান্যবার গ্রামের বাড়ি এলে হাজারটা বারণ- এটা কোরোনা ওটা কোরোনা... কিন্তু কী আশ্চর্য, শায়লা আজ কিছুই বলল না!
ফেরার পথে ক্ষেত থেকে ফুলকপি বেগুন শিম মটরশুঁটি তুলেছিল ওরা। সকালে সবজি দিয়ে মাছের সালুন আর খাওয়া শেষে খেজুর রসের পায়েস। লিপুর মনে হলো এত স্বাদের খাবার খেয়ে সে জীবনেও খায় নি!
রাতের বেলা লিপুর মা মামী আর নানু বসল ঢেঁকিতে চাল কুটতে। সাথে পাশের বাড়ির কাকীরা। আজ চিতই পিঠা বানানো হবে। সেই পিঠা সারারাত মিষ্টি রস আর দুধে ডুবে টসটসে হবে। সকালে হবে পিঠাভোজ। ঢাকায় লিপুর মা ঘরে বহুবার চিতই পিঠা করেছে, কিন্তু গ্রামে ঢেঁকি-ছাঁটা চাল আর লাকড়ির চুলার জ্বালে যে পিঠা হয় তার কাছে আর সব ফেল!
শেষ পরীক্ষার দিন শায়লা লিপুকে বলেছিল বন্ধুদের ‘বাই’ বলে আসতে। লিপু পারে নি। এতদিনের বাল্যবন্ধুদের বিদায় জানাতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছিল। তার চেয়ে বড় কথা কেন শহর ছাড়ছে- এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর সে দিতে পারত না। গ্রাম তার খুব একটা ভালো লাগে না। কিন্তু শেষমেশ সেই গ্রামেই সেটেলড হতে হবে!
এই ক’দিনে গ্রামটাকে খুব আপন লাগতে শুরু করেছে লিপুর। কাজিন আর প্রতিবেশী ছেলেপুলেদের স্কুল বন্ধ। ওরা সারাদিন এ গ্রাম ও গ্রাম ঘুরে বেড়ায়। দুপুরবেলা ক্ষেত থেকে গাছসুদ্ধ ছোলা তুলে এনে পুড়িয়ে খায়। শীতের টানে পানি কমে আসা নদীতে ঝাঁপিয়ে বাসায় ফেরে। সন্ধ্যাবেলা কোনদিন পুঁথিপাঠ, কোনদিন কবিগানের আসর। এসব আসরে ছোটদের যাওয়া মানা। মানা শোনে কে! ওরা লুকিয়ে লুকিয়ে ঘর ছেড়ে বেরোয়। কুপির আলোয় বাঁশঝাড়ে ঘেরা মেঠো পথ ধরে চলতে গা ছমছম করলেও এডভেঞ্চারের স্বাদ পাওয়া যায়।
লিপুর আর গ্রাম নিয়ে নাক শিটকানোভাব নেই। মা-ও এখন ছেলেকে অত চোখে চোখে না। শায়লাই হয়ত চেয়েছে লিপু ‘গ্রামের মানুষ’ হয়ে উঠুক। মা-বাবার ছায়া থেকে বেরিয়ে ‘বড়’ হোক আপন শক্তিতে। ডিভোর্সের কপি সাইন করে পাঠানোর পরই তো সে পুরোদস্তুর সিঙ্গেল মাদার! এই তো আর ক’টা দিন... ওর প্ল্যান গঞ্জে একটা লেডিস টেইলরিং দোকান খুলবে। আয় যা হবে তা দিয়ে মা ছেলের দিব্যি চলে যাবে।
কিন্তু ডিভোর্স লেটার মালয়েশিয়া আর পাঠানো হলো না শায়লার। লিপুর বাবা স্বয়ং মালয়েশিয়া থেকে দেশে এলো, তবে লাশ হয়ে। রোড এক্সিডেন্ট।
শীতের দিনের শেষ বেলাটা লিপুর কাছে অদ্ভুত লাগে। বেলা গড়িয়ে সূর্য পশ্চিম দিগন্তে হেলে পড়ার পর আচমকাই যেন হারিয়ে যায় দিগন্তের ওপাড়ে। পেছনে ফেলে যাওয়া চাদরের মতো এক প্রস্থ পাতলা কুয়াশা ঝুলে থাকে সর্ষেক্ষেতের ওপর। বেলাশেষের আলোয় কেমন মিস্টিক একটা আবহ তৈরি হয় ক্ষেতজুড়ে। ফিনফিনে সেই কুয়াশাই সকালে ভারী হয়ে চারপাশটা যেন গ্রাস করে।
বাবার মৃত্যু লিপুকে গ্রাস করল একই রকম করে।
বাবাকে সামনে থেকে মোট কতবার দেখেছে তা লিপু আঙুল গুনে বলে দিতে পারে। মা-বাবার বিচ্ছেদ আর বাবার পুনরায় বিয়ের মধ্য দিয়ে মানুষটা হারিয়ে যেতে বসেছিল লিপুর জীবন থেকে, শেষবেলার সূর্যের মতো আচমকাই। তারপরও কোথায় যেন একটা অদৃশ্য সুতো রয়ে গেছিল। বাবার মৃতদেহ সামনে আসার পর সেই সুতোটাও ছিঁড়ে গেছে। শীতের সকালের শাদা ভারি কুয়াশার মতো কাফনের কাপড় মানুষটাকে আচ্ছন্ন করেছে। এই আচ্ছন্নতা বুঝি বা কোনদিনও কাটবে না!
But... time is the best healer!
সময় প্রবাহের এক অদ্ভুত ক্ষমতার সাথে লিপুর পরিচয় হয়ে গেল। শীতের প্রভাতে সূর্যরশ্মি যেমন কুয়াশার চাদর গলে ফুল পাতা স্পর্শ করে, তেমনি সময়ের স্রোত গলিয়ে দিল লিপুর হৃদয়ের শোকের হিমবাহ। পিতৃশোক কাটিয়ে জীবনে ফিরল সে। এখন সে কাজিনদের সাথে স্কুল শেষে পুরো গ্রাম দস্যিপনা করে সন্ধ্যেবেলা ঘরে ফেরে। টানের সময় বিলে পলো ফেলে মাছ ধরে। ধানের মৌসুমে আর সবার মতো মাথায় করে ধানের আঁটি নিয়ে বাড়ি ফেরে। পাটের সিজনে কাজিনদের সাথে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে হাত লাগায়।
সেই শীতটা লিপুর জীবন অনেকখানি বদলে দিয়েছে, পুরদস্তুর ‘গেঁয়ো’ বানিয়ে ফেলেছে তাকে।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
পৌষের পয়লা দিন শায়লা ওর এগারো বছরের ছেলেকে নিয়ে সকাল সকাল বাপের বাড়ি উপস্থিত।
৩০ সেপ্টেম্বর - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
২৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪