একটা অফিসঘর, আর দশটা অফিসঘরের মতোই—সাদা দেয়াল, কম্পিউটারের মনিটরে ছাপ ধরা ক্লান্তি, আর এয়ারকন্ডিশনের নিঃশব্দ গর্জন। তরুণ সেদিন দাঁড়িয়ে ছিল জানালার পাশে। বাইরে শহর ঢেকে গিয়েছিল ধোঁয়াটে কুয়াশায়, গাড়ির লাইটগুলো একেকটা ভাসমান আত্মার মতো ছুটে চলছিল অজানা গন্তব্যের দিকে। আর তার ভিতরে... এক নিঃশব্দ বিস্ফোরণ।
কতদিন সে নিজেকে খুঁজে পায়নি?
সেই কর্পোরেট রুটিনের মধ্যে জীবনটা যেন থেমে গিয়েছিল—প্রেজেন্টেশন, টার্গেট, ক্লায়েন্ট ফলোআপ আর বসের চোখরাঙানি। বাড়ি ফিরলে ছেলেটার ঘুমন্ত মুখ দেখতে পেত, স্ত্রীর অভিমুখী চোখ—সবকিছুই যেন সিনেমার ব্যাকগ্রাউন্ড সাউন্ডের মতো ছিল।
আর সেদিন হঠাৎ করেই যেন সব কিছু বদলে গেল।
“আর না,” তরুণ জানালার কাঁচে কপাল ঠেকিয়ে বলেছিল। “আমি পদত্যাগ করবো।”
সহকর্মীরা হাসছিল, কেউ বলছিল ‘বউ বোধহয় ডিভোর্স দিছে’, কেউ বলছিল ‘লটারি জিতেছিস’।
কিন্তু তরুণ জানত, এই হাসির ভিতরে কেউ তার যন্ত্রণাটা বোঝে না।
সে জানত, সে হারিয়ে ফেলেছে নিজের স্বপ্ন, নিজের জীবনবোধ।
সেদিন রাতে বাসায় ফিরে স্ত্রীকে যখন সিদ্ধান্তটা জানায়, স্ত্রীর চোখে ভয়ের ছায়া।
— “তুমি কি পাগল হয়েছো? এই বয়সে, এই বাজারে চাকরি ছেড়ে কেউ চলে?”
তরুণ কিছু বলেনি। শুধু জানালার পাশে বসে থেকেছে, চুপচাপ।
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙে এক অন্যরকম নীরবতায়।
না ছিল কোনো অফিসের নোটিফিকেশন, না ছিল তাড়া।
ঘড়ির কাঁটা চলছিল, কিন্তু মনে হচ্ছিল সময় যেন হঠাৎ থেমে গেছে।
ছেলেটার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল সে।
বউয়ের চুলে সূর্যরশ্মি পড়ছিল—এমন সৌন্দর্য সে কতদিন দেখেনি!
এই ছিল তার “নতুন সকাল”।
ঠিক তখনই মোবাইলে আসে একটি ইমেইল—EternaTech থেকে।
রিমোট ট্রানজিশনের ঘোষণা। কিছু বিভাগ বন্ধ, কিছু রিমোট। আর তার ‘Creative Digital Division’-এর জন্য স্বাধীন উদ্যোগ গ্রহণে উৎসাহ।
তরুণ বসে পড়ে পুরোনো নোটবুক খুলে।
লিখে ফেলে তার বহুদিনের স্বপ্নগুলো—
১. হোম-ডায়রি অ্যাপ: ‘আমার দিন, আমার গল্প’
২. পডকাস্ট: ‘একাকিত্বের শব্দ’
৩. ডিজিটাল সেল্ফ-হেল্প জার্নাল
ঠিক তখনই শামীমের ফোন। ভিডিও কলে পুরনো বন্ধু বলে,
— “তোর জন্য একটা জায়গা রেখে দিয়েছি—ডিজিটাল লার্নিং প্ল্যাটফর্মে কন্টেন্ট স্ট্র্যাটেজিস্ট।”
তরুণ চুপ করে যায়।
— “তুই নিজের মতো করে কাজ করতে পারবি। স্কুল, কলেজ, কোচিংয়ের জন্য ডিজিটাল কনটেন্ট। পুরোনো অভিজ্ঞতা কাজে আসবে, নতুন করে ভাবার জায়গা থাকবে।”
তরুণের চোখে জল চলে আসে।
এই তো সে খুঁজছিল।
ক্লাসরুমের বাইরেও শিক্ষাদান, নিজের মতো করে।
সময় থাকবে ছেলের পাশে বসে পড়াতে, স্ত্রীর সাথে গল্প করতে।
আর থাকবে নিজের ভেতরের মানুষটাকে আবার জাগিয়ে তোলার সুযোগ।
সেই দিন বিকেলে তরুণ বারান্দায় বসে থাকে।
হাতে এক কাপ চা, পাশে ছেলের খেলনার গাড়ি।
শুধু ভাবছিল, যে মানুষটা একদিন কেবলই কুয়াশার দিকে তাকিয়ে ভাবত "এটাই তবে জীবন?",
সে আজ জানে, জীবন মানেই ছেলেটার হাসি, স্ত্রীর চোখে বিশ্বাস, আর নিজের স্বপ্নের ভিতর বাঁচা।
পদত্যাগ ছিল তার পতন নয়,
ছিল মুক্তির দরজা।
আজও সে হয়তো আগের মতো “স্ট্যাবল” নয়,
কিন্তু সে জীবিত।
পুরোমাত্রায়।
গল্পটা এখানেই শেষ নয়।
তরুণ এখন কাজ করছে নিজের শর্তে।
তার পডকাস্টে কেউ কেউ কাঁদে, কেউ আবার সাহস পায়।
তার হোম-ডায়রি অ্যাপে মানুষ নিজের মনের কথা বলে।
আর সে প্রতিদিন সকালে উঠে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যায়,
স্ত্রীর হাতে ধরা কাপ থেকে এক চুমুক চা খায়।
নতুন সকালের আভায় হাসে—
এইভাবেই,
পদত্যাগে খুলে গেছে তার ভাগ্যের বন্ধ দরজাটা।
একটা ঘরের ভিতরের পৃথিবী থেকে সে বেরিয়ে গেছে—
আর একটা নিজের পৃথিবী তৈরি করছে প্রতিদিন।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
পদত্যাগ ছিল তার পতন নয়,
ছিল মুক্তির দরজা।
আজও সে হয়তো আগের মতো “স্ট্যাবল” নয়,
কিন্তু সে জীবিত।
পুরোমাত্রায়।
গল্পটা এখানেই শেষ নয়।
তরুণ এখন কাজ করছে নিজের শর্তে।
তার পডকাস্টে কেউ কেউ কাঁদে, কেউ আবার সাহস পায়।
তার হোম-ডায়রি অ্যাপে মানুষ নিজের মনের কথা বলে।
আর সে প্রতিদিন সকালে উঠে ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যায়,
স্ত্রীর হাতে ধরা কাপ থেকে এক চুমুক চা খায়।
নতুন সকালের আভায় হাসে
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
২৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জুলাই,২০২৫