গভীর রাত; ভাবছি শিক্ষকদের উদ্দীপনা নিয়ে কিছু লিখব কিন্তু না, আমার মনে শুধু শিক্ষকদের নেগেটিভ প্রকাশ আসে। শিক্ষকদের প্রাইভেট দূর্ণীতি, শিক্ষক নিয়োগ বানিজ্য, নকলে শিক্ষকদের সহায়তা ইত্যাদি ভাবনাগুলো চলে আসে। বাংলাদেশে মাধ্যমিক শিক্ষার ৯৫ ভাগই বেসরকারি খাতে। মনে হয় এই খাতের সুষ্ঠ বন্টন নাই। একেক স্কুলের বেতন একেক রকম। স্কুলগুলোর আয়ও ভিন্ন ভিন্ন। কোন কোন প্রতিষ্ঠানের আয় অস্বাভাবিক বেশি আবার কোন প্রতিষ্ঠানের নামমাত্র আয়। সরকারী আর বেসরকারি যাই বলি, পরীক্ষা, সার্টিফিকেট, শিক্ষাক্রম একই। মনকে নিয়ন্ত্রণ করে শিক্ষকতার ইতিবাচক দিক মনে আনার চেষ্টা করছি। নামমাত্র দুএকজন শিক্ষক দূর্নীতি করতে পারে কিন্তু সিংহভাগ শিক্ষকই ভাল। শিক্ষা ক্ষেত্র একটি মৌলিক ক্ষেত্র যা একটি সমাজের উন্নয়নের সর্বোপরি ক্ষেত্র। শিক্ষার মাধ্যমে একটি সমাজ আমলে আসা সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, সমাজ প্রগতি এবং ন্যায়ের সামাজিক মানদণ্ড পরিপূর্ণ করে। যদি একটি সমাজ শিক্ষা ক্ষেত্রে দূর্ণীতি দূর করতে পারে তবে সেই সমাজ পরবর্তীতে অন্যান্য ক্ষেত্রে দূর্ণীতি কম হবে। আমার ভাবনা গরীবে যতই গভীরে যায় ততই শিক্ষকদের ইতিবাচক দেখি। রাত ১২ টা বাজে। আকাশ পুরোপুরি পরিস্কার নয়। আকাশে মেঘ দৌড়াদৌড়ি খেলছে তাই একটু অন্ধকার আবার একটু ফর্সা হচ্ছে। হঠাৎ একটি নীলাভ আলোর ঝলক আমার সামনে পড়ল। আমি নীল আলোক রশ্মিটা হাতে নিলাম। মোলায়েল ধাতব আলো মনে হলো। সূক্ষ্মভাবে দেখলে মনে হয় ধাতব সুইচও আছে। আমি ধাতব আলোক রশ্মির সুইচে ক্লিক করার সাথে সাথে আমার চেয়ে ছোট আকৃতি একজন এলিয়েন হাজির হলো। এলিয়েন এসেই আমাকে বলল, আপনাকে ধন্যবাদ স্যার, আমার সংযোগ সুইচটা পেয়েছেন। আমি অনেক সময় নিয়ে খুজেছি কিন্তু পাইনি। আপনি সুইচ ক্লিক করে আমাকে এর অবস্থান জানিয়ে দিলেন আর আমি দ্রুত এখানে চলে আসলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আমি হাসিমূখে বললাম, এটা আপনার হলে নিয়ে যাও। আর তুমি কে? এখানে আসলে কিভাবে? তোমার গলার আওয়াজ ভাঙ্গা কেন? এলিয়েন বলল, আমি এলিয়েন। আমি পৃথিবীর যেকোন স্থানে কয়েক মিনিটে যেতে পারি তবে আমরা পৃথিবীতে আসতে চাই না। এটা আমাদের গ্রহ নয়। আমি আপনাদের ভাষা কনভার্ট করে বলছি তাই ভাঙ্গা ভাঙ্গা আওয়াজে কথা বলছি। স্যার আপনি এত সহজে আমাকে এই সুইচটি দিলেন তাতে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনার কোন প্রয়োজন থাকলে আমাকে বলতে পারেন।
-আপনি কি আমার প্রয়োজন মিঠাতে পারবে?
-জি না স্যার; তবে আমি আপনাকে সহায়তা করতে পারি।
-এখনকার লোকজন শিক্ষকদের খুব সম্মান করে কিন্তু শিক্ষকরা সুখী নয়।
-এটার জন্যে দায়ী হচ্ছে দূর্ণীতি।
-সুখের সাথে দূর্ণীতির কী সম্পর্ক?
-জি স্যার একটা সাথে আরেকটার বিপরীত সম্পর্ক।
-সেটার সাথে শিক্ষকদের সুখের কী সম্পর্ক?
-শিক্ষকদের সুখের সাথে সমগ্র জাতির সুখ নিহিত। সমগ্র জাতি সুখী হলে শিক্ষকরা এমনিতেই সুখী হবে। শিক্ষকদের আলাদা সুখ বলতে কিছু নেই। আজ সমগ্র জাতি দূর্ণীতিগ্রস্ত তাই শিক্ষকরা অসুখী।
-আপনার কথা আমি বুঝতেছি না।
-স্যার আপনি বলুন, আপনি কখন খুশী হন?
-আমার ছাত্ররা ভাল ফলাফল করলে ও ভাল থাকলে আমি খুশী হই।
-জি স্যার; এই খুশীই আপনার সুখ। কিন্তু আপনার ছাত্ররা ভাল ফলাফল করেও যখন ভাল কিছু করতে পারে না তখনই আপনাদের ব্যর্থতা। আর এই জন্যেই দায়ী সমাজের দূর্ণীতি।
-জি এইভাবে তো ভাবিনি। আচ্ছা এই দূর্নীতি প্রতিরোধে আমি কী করতে পারি?
-স্যার, এই দূর্ণীতি প্রতিরোধে আপনিই ব্যবস্থা নিতে পারেন। আপনি যদি প্রতিটি শিক্ষার্থীকে নৈতিকতার বীজ বপন করে দেন তাহলে তারা আর কখনো দূর্নীতি করবে না। আপনিই পারেন এই জাতীকে উদ্ধার করতে।
-আমি তো আমার ছাত্রদের নৈতিকতার শিক্ষাই দেই কিন্তু তারা তো সেটা রাখতে পারে না; সমাজের প্রভাবে কলুষিত হয়ে যায়।
-জি স্যার, তবে এবার দূর্ণীতির জন্য সব সেক্টরের পাশাপাশি শিক্ষা ক্ষেত্রেই বেশি জোড় দিতে হবে। শিক্ষা ক্ষেত্র হলো সকল সেক্টরের মুল। সকল উন্নয়নের মূলেই শিক্ষা। তাই শিক্ষা ক্ষেত্রে দূর্ণীতি দূর হলে অন্যান্য ক্ষেত্রে দূর্ণীতি স্বাভাবিকভাবেই চলে যাবে।
-আমার তাই মনে হয়। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে তেমন দূর্ণীতি হয় না, যা হয় তাও আবার সরকারি আমলা ও কামলারা জড়িত। এরা দূর্নীতিমুক্ত হলে শিক্ষাও কলুষিতমুক্ত হত।
-স্যার এই সরকারি আমলা কামলাদের ধরার জন্য আপনি ডিজিট্যাল পদ্ধতির সাহায্য নিতে পারেন। সেই সাথে আপনার সহকর্মীদের দূর্ণীতিও দূর করতে পারেন।
-সরকার অনেক চেষ্টা করে দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশ করেছে। দূর্ণীতিবাজরাও এই ডিজিটালাইজডের সুযোগ নিয়েছে। ধনী ও গরীবের বৈষাম্য বাড়িয়েছে অতছ এটা কমার কথা।
-স্যার, আপনারা প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার করছেন না। আপনাকে আমি কিছু টুলস এবং সফটওয়ার দিচ্ছি এইগুলো কোন ক্ষতিকর কাজ করতে পারে না। দূর্ণীতির সংকেত আপনাকে পৌছায়ে দিবে। আপনি দূর্ণীতির সংকেত পেলে দূর্ণীতিদাতাকে শতর্ক সংকেত জানাবেন যদি দূর্ণীতিদাতা দূর্নীতির সংকেত অমান্য করে তাহলে তাহার অর্জিত সম্পত্তি রাষ্ট্রে নামে ওয়াকফ হয়ে যাবে অথবা পাবলিকের কাছে প্রকাশিত হবে।
-পাবলিকের কাছে প্রকাশ হলে কোন লাভ হবে না। দূর্নীতি এখন ওপেন-সিক্রেট ব্যাপার তাই দূর্নীতি প্রকাশের চেয়ে দূর্নীতিদাতার সম্পত্তি বা অর্থ বাজেয়াপ্তই এর মুল সমাধান।
-জি স্যার, আপনাকে এই কম্পিউটার দিলাম। এই বলে আমার হাতে একটি কম্পিউটার দিল।
আমি লক্ষ্য করলাম এলিয়েনের কম্পিউটার আমাদের কমপিটারের মত নয়। এটা চালানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এটা ওপেন বা ব্যবহারের কোন দক্ষতাই আমার নাই। আমি এলিয়েনকে বললাম, আপনি কী দিলেন? আমি তো ব্যবহারই করতে পারব না। আপনি আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দেন। এলিয়েন দৃঢ়তার সহিত বললেন, স্যার এই ব্যবহার আপনি করতে পারবেন। আপনি মানুষ গড়ার কারিগর। আপনাকে পারতে হবে এবং আপনাকে শিখতে হবে। আপনি কারো উপর মুখাপেক্ষী হবেন না। আপনার জাতির জন্য আপনি আপনার শিক্ষার্থীকে দূর্ণীতি মুক্ত দেশ গড়তে এই কমপিউটার এবং অন্যান্য টুলসের ব্যবহার আপনাকেই শিখাতে হবে। দেশ গড়ার সৈনিক আপনিই গড়ে তোলতে হবে। এই বলে সুইচের লাল বাটন ক্লিক করে পশ্চিম আকাশে দিকে চলে গেল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
শিক্ষা ক্ষেত্রে দূর্ণীতি দূর হলে অন্যান্য ক্ষেত্রের দূর্ণীতি স্বাভাবিকভাবেই উদাও হবে।
১১ আগষ্ট - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১০ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।