পুকুরপাড়ের জোনাকি আর নানার বাড়ি

ছোটবেলা (জানুয়ারী ২০২৫)

এম. আব্দুল কাইয়ুম
  • 0
  • ৬৭
পড়ন্ত বিকেলের আলো গড়িয়ে যখন ধানের ক্ষেতে মিলিয়ে যায়, তখন গাঁয়ের পুকুরপাড়টা যেন অন্য এক রূপ নিয়ে জেগে ওঠে। ছোটবেলার সেই দিনগুলোতে, আমি আর বন্ধু তপু প্রায়ই ওখানে যেতাম। আমাদের হাতে থাকত কিছু বেতের পাতা আর বাঁশি। বাঁশিটা তপু বাজাতো, আর আমি তখন পুকুরপাড়ের জলে পা ডুবিয়ে কল্পনায় হারিয়ে যেতাম।

মা ডাক দিতেন দূর থেকে—“তারা, রাত হয়ে যাচ্ছে! বাড়ি আয়।” কিন্তু আমার মন চাইতো আরও কিছুক্ষণ জোনাকির আলোর মায়ায় ডুবে থাকতে। পুকুরপাড়ে তখন জোনাকি জ্বলত। মনে হতো, আকাশের তারা মাটিতে নেমে এসেছে আমাদের খেলার সাথী হতে।
তপু একদিন হঠাৎ বলল, “তারা, জানিস? জোনাকি ধরে যদি ইচ্ছা করিস, ইচ্ছাটা পূর্ণ হয়।”

আমি হাত বাড়িয়ে একটা জোনাকি ধরার চেষ্টা করলাম। সেটি আমার হাতে এসে পড়ল। ছোট্ট আলোটা জ্বলজ্বল করছে। মনে মনে একটা ইচ্ছা করলাম—“মা যেন আমাকে রাগ না করে!”

পরদিন মা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “তুই অনেক বড়ো হবি, রাগ করবো না তোকে আর।” আমি জানি না, মা সত্যিই কেন এমন বলেছিলেন, কিন্তু তখন মনে হয়েছিল জোনাকির সেই আলো আমার ইচ্ছা পৌঁছে দিয়েছিল তার কাছে।

গরমের ছুটিতে আমরা সবাই মিলে নানার বাড়ি যেতাম। বাবার বাইসাইকেলের পেছনে বসে গ্রামের পথ দিয়ে চলার সময় ঝিলের পাশ দিয়ে আসা বাতাস গায়ে লাগত। নানার বাড়ি পৌঁছানোর পর বড় গাছের ছায়ায় বসে খেজুর রসের সর সরবত খেতাম। নানার হাসি আর মিষ্টি গলায় গল্প বলার ধরণ ছিল যেন এক রূপকথার মতো।

নানীর হাতের ভাপা পিঠা খেতে খেতে পুকুরপাড়ে যেতাম। সাঁতার না জানলেও তাজা বাতাস আর ছায়াঘেরা পরিবেশে বসে থাকতে মন চাইত। রাতে আমরা খাটের উপর মশারি টাঙিয়ে শুয়ে থাকতাম। দূর থেকে ভেসে আসা ঝিঁঝি পোকার আওয়াজ, নানার গল্পের মিষ্টি সুর, আর মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ানো—সবই ছিল যেন স্বর্গের মতো।

একদিন সকালে নানার সাথে কাছের হাটে গিয়েছিলাম। কোলাহল, মানুষের ভিড়, গরু-বাছুর আর টাটকা সব্জির বাজারে মিশে এক নতুন জগৎ দেখতে পেয়েছিলাম। নানার মুঠোয় ধরে হাঁটার সময় মনে হয়েছিল, আমি যেন পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ জায়গায় আছি।

ছুটির শেষ দিনে যখন বাড়ি ফিরতাম, মনটা ভারী হয়ে যেত। তপু তখন আমাদের উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকত। তার বাঁশি বাজানোর শব্দ শুনে মনে হতো, গ্রামের সেই জোনাকি, পুকুরপাড়, আর নানার বাড়ির আকাশ আমাকে ডাকছে।

আজও, যখন পুকুরপাড়ে বসি কিংবা নানার সেই উঠোনের দিকে তাকাই, ছোটবেলার স্মৃতির রঙিন খণ্ডচিত্রগুলো ঝলমল করে ওঠে। মনে হয়, জীবনের সব ব্যস্ততা কাটিয়ে যদি একবার সেই দিনগুলোতে ফিরতে পারতাম!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Sunil Akash শুরুটা গল্প দিয়ে হলেও শেষ হয়েছে স্মৃতিচারণা দিয়ে, ঠিক গল্প হয়ে উঠতে পারে নি লেখাটা। আরেকটু গভীরে যাওয়া যেত, আরেটু দীর্ঘ করা যেত।
ফয়জুল মহী অনেক সুন্দর এবং চমৎকার লিখেছেন । শুভেচ্ছা ভালোবাসা সব সময় ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

ছোটবেলা স্মৃতি সবার কাছে সুন্দর, স্বাধীন এবং প্রাণময় ছিল। পুকুরপাড়ের জোনাকি আর নানার বাড়ির গল্প সবার কমবেশী মনে থাকেই। ছোট্র করে সাজানো মনের লেখনিতে উঠে আসলো।

২২ জুলাই - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ভালবাসা”
কবিতার বিষয় "ভালবাসা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ জানুয়ারী,২০২৫