একজন নতুন মায়ের দিনলিপি

হতাশা (অক্টোবর ২০২৫)

রুমানা নাসরীন
  • 0
  • ১৯
(১)
বিছানা থেকে ধরফরিয়ে নেমে দ্রুত ঘরের বাইরে এলো রুমি। উঁকি দিয়ে দেখল শাশুড়ি রান্নাঘরে রুটি বানাচ্ছেন। ভয়ে ভয়ে ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গিয়ে বলল," আমায় দিন মা আমি বানিয়ে দিচ্ছি।" মূহুর্তেই পুত্রবধুর দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে সাথে সাথেই মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আবার রুটি বানাতে শুরু করলেন হানিফা বানু। শাশুড়ির দৃষ্টির আগুনে চুপসে গিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে রুমি ঝাড়ু হাতে উঠোন ঝাট দিতে চলে গেল। দুচোখ ভেঙে ঘুম চলে আসতে চাইছে। সমতল উঠোনটাকে মনে হচ্ছে আরামদায়ক নরম বিছানা। রুমির ইচ্ছে হচ্ছে এখানেই শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কি করবে সে! সদ্য মা হয়েছে রুমি। সাড়ে চার মাসের বাচ্চাটা জন্মের পর থেকেই কিছুতেই রাতে ঘুমাতে চায় না। সারাদিন এমন বেঘোরে ঘুমাবে অথচ রাত্রি নামার আগেই সে পুরো সজাগ। শত চেষ্টায়ও তাকে ঘুম পাড়ানোর সাধ্য নেই কারও। প্রথম একমাস রুমির মা সাথে ছিলেন। সারারাত বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে থাকতেন আর রুমি পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে নিত। শুধু বাবুকে খাওয়ানোর সময় রুমিকে ডেকে তুলতেন রুমির মা। কিন্তু তাঁরও তো সংসার আছে। রুমির বাবা ডায়াবেটিস রোগী তাছাড়া হার্টেরও সমস্যা রয়েছে। ওনাকে একা রেখে রুমির মায়ের এখানে থাকতে ভীষণ অস্থির লাগছিল। একদিকে স্বামী অন্যদিকে মেয়ের এমন কষ্টকর সময়ে কি করবেন বুঝতে না পেরে দ্বিধায় ভুগতেন তিনি। একমাস থাকার পর রুমির বাবার অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে বাধ্য হয়ে তিনি নিজ সংসারে ফিরে যান। যাওয়ার আগে বারবার রুমির শাশুড়ি হানিফা বানুকে অনুরোধ করেন যেন অন্তত তিনটি মাস রুমিকে ওনার কছে থাকতে দেন। উনি অভয় দিয়েছিলেন যে বাচ্চা এবং রুমি দুজনেরই কোন অযত্ন হবে না। কিন্তু হানিফা বানু তার সিদ্ধান্তে অটল। এ বাড়ির সন্তান এ বাড়িতেই মানুষ হবে, কোথাও যেতে পারবে না। মায়ের চলে যাওয়ার পর রুমির মনে হতে লাগলো তার চারপাশটা মরুভূমির মতো শূন্য হয়ে গেছে। যেদিকে তাকায় শুধু ধূ ধূ শূন্যতা। কোন আপনজন নেই, কোন আপন ছায়া নেই। খুব অভিমান হচ্ছিল বাবা মায়ের উপর যদিও অভিমানের সঠিক কারণ সে নিজেও জানে না। রুমির স্বামী শিহাব অত্যন্ত ভদ্র ও মানবিক হলেও শিহাবের উপরেও রুমির প্রচন্ড অভিমান হয়। তাদের তিন বছরের বিবাহিত জীবনে শিহাব তুমুল ভালোবাসা দিয়েছে রুমিকে সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রচন্ড মাতৃভক্তির কারণে শিহাব নিজের অজান্তেই রুমির প্রতি অনেকসময় অবিচার করে ফেলে যা হয়তো সে নিজেও বুঝতে পারে না। শিহাব চাকরির সুবাদে একটা বিভাগীয় শহরে থাকে। প্রতি বৃহস্পতিবার গ্রামের বাড়িতে এসে দুদিন থেকে আবার রবিবার সকালে চলে যায়। সেখানে শিহাব একটি দুই রুমের বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে। কয়েকবার রুমিকে নিয়েও গিয়েছিল সেখানে। রুমি পাকাপাকিভাবে সেখানে থাকার কথা বললেই শিহাব আপত্তি করত। শিহাবরা চার ভাই। দশ বছরের ছোট ভাই গ্রামের স্কুলে দশম শ্রেণিতে এবং বাকি দুই ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। শিহাবের মায়ের ইচ্ছা বাড়ির বড় বউ বাড়িতে থাকবে। আর তাছাড়া শিহাব তো সপ্তাহে দুদিন আসেই। বাবুর জন্মের পর রুমি অনেক কান্নাকাটি করে অনুরোধ করেছিল যাতে রুমি আর বাবুকে শিহাবের কাছে নিয়ে যায়। শিহাবকে ছাড়া রুমি খুব অসহায় বোধ করে। সন্তান প্রসবের পর এই অনুভূতি আরও তীব্রতর হয়েছে। শিহাব যে দুদিন পাশে থাকে রুমির অনেক স্বস্তি বোধ হয় কিন্তু চলে গেলেই একটা অদ্ভুত শূন্যতা গ্রাস করে রুমিকে। কিন্তু শিহাব রুমির এই অনুভূতি বোঝে না। নরম গলায় ভালোবাসার আদর মেখে রুমিকে বলে, "তোমাদের নিয়ে গেলে মা ভীষণ কষ্ট পাবেন। বাবু এই পরিবারের প্রথম নাতি, ও এখানে না থাকলে কোথায় থাকবে? তাছাড়া আমি তো সপ্তাহে দুদিন আসিই। এখানে মা আছেন, উনি তোমাদের দেখে রাখতে পারেন। ওখানে নিয়ে গেলে তুমি একা একা কীভাবে বাচ্চা সামলাবে?" অভিমানী রুমি কিছুতেই শিহাবকে বোঝাতে পারে না শশুর বাড়িতে সে একটা অদ্ভুত অসহায়ত্বে ভোগে। সন্তান হওয়ার পর আরও বেশি করে এমন মনে হয়। এখানে কেউ তার অনুভূতি বোঝে না, ক্লান্তি বোঝে না। বিয়ের পর থেকেই রুমি শাশুড়ির হাতে হাতে সব কাজ করে দিত। শাশুড়িও পুত্রবধূর এমন আন্তরিকতায় খুশি হতেন। কিন্তু গর্ভধারণের পর থেকে রুমি একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যেত। সারাদিন একটা বাজে বিষন্নতা তাকে ঘিরে ধরে থাকত। হানিফা বানু কথায় কথায় বলতেন, "আমরা আর মা হইই নি, সন্তান জন্ম দেইই নি।" খুব কষ্ট হত রুমির। কিন্তু শিহাব ভুল বুঝবে বলে কখনও কোন অভিযোগ করে নি। তবে ইদানীং সবকিছু কেমন অসহ্য লাগছে রুমির। সারাদিন একটা বাজে ক্লান্তি দানবের মতো ওকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই বাবু পুরোমাত্রায় সজাগ হয়ে যাবে। ঘরের আলো নেভালেই কান্নাকাটি করবে, রুমির দুচোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে এলেও কান্নাকাটি করে। কখনও কোন কারণ ছাড়াই শুরু করে কান্নাকাটি। রুমি তখন ভয়ে দিশেহারা হয়ে শাশুড়িকে ডেকে আনে। হানিফা বানু অত্যন্ত বিরক্ত হয়ে উল্টো রুমিকেই দোষারোপ করেন," নিশ্চয়ই বাচ্চা বুকের দুধ ঠিকমতো পাচ্ছে না অথবা নিজের অজান্তে কোথাও ব্যথা দিয়েছ বলে এভাবে কাঁদছে। " তখন খুব অসহায় লাগে রুমির। নিজেকে ভীষণ অযোগ্য আর অপদার্থ মনে হয়। বারবার মনে হয় আসলে মা হওয়ার কোন যোগ্যতাই বোধহয় তার নেই। অথচ রাতের এই কান্নাকাটি করা বাচ্চাটাই দিনের বেলা বেঘোরে ঘুমায়। এমনই গভীর ঘুম তার যে খাওয়া এমনকি গোসল পর্যন্ত ঘুমের মধ্যেই করাতে হয়। বাবুর দিনরাতের এরকম বিপরীত স্বভাবের জন্য শিহাব আর রুমি একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়েছেন। ডাক্তার বলেছেন ছোট্ট শিশুর এসব আচরণ স্বাভাবিক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঠিক হয়ে যায়। এমনিতেই সে শারীরিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ আছে। তবুও রুমির মন থেকে ভয় নামক দৈত্যটি বের হয়ে যায় না। কেবলই মনে হয় সে মা হিসেবে একেবারেই অযোগ্য। এইতো সেদিন বাবুর সে কি বমি! রীতিমতো নাক ও মুখ দিয়ে বমি বেরিয়ে আসছিল আর বাবু কেমন চোখ মুখ উল্টে ছটফট করছিল। রুমি এতটাই ভয় পেয়েছিল যে প্রাণপণে চিৎকার করে মানুষ জড়ো করেছিল। হানিফা বানু কটাক্ষের সুরে বলেছিলেন, "এমন অপদার্থ মা দেখিনি যে কিনা নিজের সন্তানকে এমন কষ্ট দেয়!" সেদিন রুমির মনে হয়েছিল সে বোধহয় একটা খুনী। সেদিনের পর থেকে যখনই বাবুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় হতো রুমির হৃদস্পন্দ বেড়ে যেত। মনে হত এই বুঝি দুধ গলায় আটকে বাবু আবার বমি করবে। রুমির এই অস্থিরতা ক্রমশই দিন দিন বাড়তে লাগলো। দিনের বেলা যখন বাবু গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে রুমি একটু পরপর গিয়ে নাকের কাছে হাত দিয়ে কিংবা বুকে কান লাগিয়ে শোনে শ্বাস প্রশ্বাস ঠিকভাবে চলছে কিনা। কখনও মনে হয় বুকের উপর বালিশ বা কাঁথা পড়ে দম আটকে যাচ্ছে কি না। একদিকে ক্লান্তিহীন রাত জেগে জেগে বাচ্চা সামলানো, অন্যদিকে দিনের বেলায় সংসারের কাজ সব মিলিয়ে রুমি কেমন হাঁপিয়ে উঠতে লাগলো। সারাদিন উস্কোখুস্কো চুল, খিটখিটে মেজাজ আর সবকিছু ঘন ঘন ভুলে যাবার প্রবণতায় বাড়ির লোকজন একরকম বিরক্ত হতে শুরু করল রুমির উপর। শিহাবের সাথেও কেমন যেন একটা দূরত্ব তৈরি হতে লাগলো। সপ্তাহান্তে বাড়িতে আসার পর শিহাব ঘনিষ্ঠ হতে চাইলে তেলে বেগুনে তেড়ে আসে। আজকাল শিহাবের মায়ের সাথে ফোনে কথা মানেই রুমির বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। বাবুকে ঠিকভাবে কোলে নিতে পারে না, খাওয়াতে পারে না, শশুর শাশুরির যত্ন করে না, ছোট দেবরের পড়ালেখা দেখে না, খালি খিটখিটে মেজাজ-- এমন হাজারো অভিযোগ শিহাবের আদালতে জমা হতে লাগলো। রুমির যেন কোনকিছুতেই কিছু এসে যায় না। ওর শুধু অপলক নয়নে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। বাচ্চার মুখের দিকে তাকালেই রুমির মনে হয় সে কি আসলেই এই নিষ্পাপ মুখের লালন পালনের যোগ্য? যদি যোগ্যই হতো তবে তো বাচ্চাটা এভাবে কাঁদতো না, কষ্ট পেত না কিংবা বমি করে চোখ মুখ উল্টিয়ে ফেলতো না? বাবু কান্নাকাটি করলে ইদানিং মাঝে মাঝেই শিহাব অন্য ঘরে গিয়ে ঘুমায়। রুমির তখন রাগে, ক্ষোভে, অভিমানে মরে যেতে ইচ্ছে করে। রুমি ভীষণ চায় শিহাব আগের মতো তার দিকে অপলকে তাকিয়ে থাকুক, তার প্রশংসা করুক। অথচ এসব কিছুই না। শিহাবের সকল আগ্রহ এখন শুধু তার সন্তান আর মা। রুমির আজকাল শুধু মরে যেতে ইচ্ছে হয়। মনে হয় এই বিশাল পৃথিবীতে তার জন্য কেউ নেই, তাকে ভালোবসার কেউ নেই। হয়তো তার কোন প্রয়োজনও কারও কাছে নেই।

(২)
অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়েই শিহাবের প্রথম কাজ হল রুমিকে ফোন করে বাবুর খোঁজ নেয়া, তারপর মায়ের সাথে গল্পের ঝুড়ি নিয়ে বসা।আজ রুমিকে ফোনে না পেয়ে সাথে সাথেই মাকে ফোন দিয়ে যা শুনল তাতে শিহাবের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল। বাবুকে রুমি আজ দেরি করে গোসল করিয়েছে। যার কারণে বাবু বেশ কয়েকবার হাঁচি দিয়েছে। মা এটা নিয়ে কথা বলতেই রুমি মায়ের দিকে তেড়ে এসেছে। বলেছে, "আমার বাচ্চার ভালো আমি বুঝব আপনি কথা বলার কে?" তারপর আরও অনেক বাজে কথা বলেছে যা শুনে মা ভীষণ কষ্ট পেয়েছে। ফোনে মা এমনভাবে কাঁদছে যে শিহাবের মনটাই খারাপ হয়ে গেল। শিহাব ফোন রেখে অনেকক্ষণ চুপচাপ শুয়ে থাকল। সে নিজেও লক্ষ্য করেছে ইদানিং রুমি খুব খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। শিহাব কিছু বললেও বিরক্ত হয়। মাঝে মাঝে কোন কারণ ছাড়াই শিহাবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে। খুব অসহ্য লাগে। সেদিন শিহাবের সাথে সামান্য কথা-কাটাকাটি হতেই রুমি আত্মহত্যার ভয় দেখাচ্ছিল। এটা কোন কথা! ঝগড়াঝাটি তো এর আগেও অনেকবার হয়েছে যেটা দাম্পত্য জীবনে খুব স্বাভাবিক। শিহাবের মনে হয়, "রুমির ধৈর্যশক্তি কেন আমার মায়ের মতো নয়? আমার মা তো চারজন সন্তান জন্ম দিয়েছেন, লালন পালন করেছেন, তারপরও সবসময় মুখে হাসি লেগে থাকে। আর রুমি একটি সন্তান জন্ম দিয়েই এরকম করছে?" শিহাব সিদ্ধান্ত নিল রুমির বাবা মায়ের কাছে অভিযোগ করবে, কড়া কিছু কথা শুনিয়ে দেবে। এভাবে তো বেশিদিন চলতে দেয়া যায় না। বিছানায় শুয়ে শুয়ে শিহাবের মনে পড়ে যায় অগনিত স্মৃতি। কি মিষ্টি চেহারার মায়াকাড়া একটা মেয়ে রুমি। ভালোবাসার স্বচ্ছ চাদরে শিহাবকে আবৃত করে রেখেছে শুরু থেকেই। ওর মনটাও একদম নিপাট, টলটলে পদ্ম ফুলের মতো। মান, অভিমান, খুনসুটি ওদেরও হতো, তবে তা বেশিক্ষণ স্থায়ী হতো না। পারিবারিক সিদ্ধান্তে বিয়ের পরও কত দ্রুত পরিবারের সবাইকে আপন করে নিয়েছিল রুমি। অথচ সেই মেয়েটিই এখন কেমন বদমেজাজী আর হিংস্র হয়ে যাচ্ছে! অন্য মেয়েরা কি সন্তান জন্ম দেয় না? একটা গভীর দীর্ঘশ্বাস ফেলে শিহাব মোবাইল ফোনটা হাতে নিল। ফেইসবুকে স্ক্রল করতে করতে একটা খবরে চোখ আটকে গেল, " পাঁচ মাসের সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেছে তার মা।" পুলিশের সাথে হাতে হাতকড়া পরানো সেই মায়ের ছবি। শিহাবের বুক কেঁপে উঠল। চকিতেই মনে পড়ল তার ছোট্ট ছেলের মুখ। এটাও কি সম্ভব! মা কখনও নিজ সন্তানকে খুন করতে পারে তাও আবার একটা নিষ্পাপ ছোট্ট শিশুকে! আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য আবার স্ক্রল করে একটা ভিডিওতে চোখ আটকালো। সেই মাকে সাংবাদিক প্রশ্ন করছে, " আপনার সন্তানকে কে মেরেছে?"
"আমি মেরেছি", মায়ের উত্তর।
" কেন মেরেছেন?"
"আমকে রান্না করতে দেয় না, খেতে দেয় না, ঘুমাতে দেয় না, বাড়ির কাজ ওর জন্য করতে পারি না তাই সবাই আমাকে বকা দেয়।"
শিহাব নিঃশ্বাস বন্ধ করে কথাগুলো শুনল। কথাবলার ধরনে মনে হল ভদ্রমহিলা মানসিকভাবে মারাত্মকরকম অসুস্থ। তার চোখের দৃষ্টি কেমন যেন উদাস এবং বলার ধরন বড্ড বেশি স্বাভাবিক। এমনভাবে বলছিল যেন সন্তানের গলা নয় কোন মাছ কাটার বর্ণনা দিচ্ছে। শিহাবের মাথার মাঝখানটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেল। অজানা শংকায় বুকের স্পন্দন ঘন ঘন হতে শুরু করল। মনে মনে ভাবল, "রুমির মানসিক অবস্থাও কি এমন ভয়াবহ হতে পারে? রুমিও তো ঠিকমতো ঘুমায় না আজ কতদিন?" প্রসব পরবর্তী মায়েদের কোন মানসিক সমস্যা হয় কি না এটা জানতে গুগুলে সার্চ করামাত্র চলে এলো অনেক বড় বড় আর্টিকেল। প্রসবের একবছর পর পর্যন্ত সময় নতুন মায়েদের জন্য খুবই সংবেদনশীল। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এবং ঘুম না হওয়া আর অতিরিক্ত পরিশ্রমের জন্য নতুন মায়েদের মধ্যে একধরনের বিষন্নতা বা হতাশা কাজ করে যাকে বলে" পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন " বা "প্রসব পরবর্তী বিষন্নতা। " এই সময় পরিবারের উচিত সবটুকু দিয়ে সেই মায়ের পাশে দাঁড়ানো। মাঝে মাঝে এই বিষন্নতা বা হতাশা এতোই প্রকট আকার ধারণ করে যে নতুন মায়েরা আত্মহত্যা বা নিজ সন্তানকে মেরে ফেলার মতো আত্মঘাতী ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে। তাই কোন অস্বাভাবিকতা চোখে পড়লে দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হয়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে এই অবস্থা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এতো অজানা তথ্য জেনে শিহাবের মাথার মাঝখানটা হঠাৎ ফাঁকা হয়ে গেল। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হতে লাগল। একবারের জন্যও তার কেন মনে হল না তার রুমি এমন হিংস্র নয়, নিষ্ঠুর নয়। কেন মনে হল না তার নিশ্চয়ই একটা কিছু সমস্যা হচ্ছে যা সে প্রকাশ করতে পারছে না। শিহাব আর দেরি না করে দ্রুত ব্যাগ গুছিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিল। আজই রুমিকে শহরে নিয়ে এসে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। বাড়ির সবাইকে যে করে হোক সবকিছু বুঝিয়ে বলতে হবে। শিহাব আপন মনে বিড়বিড় করে বলতে লাগলো, "আমি তোমার পাশে আছি রুমি, তোমার কিচ্ছু হতে দিব না--কিচ্ছু না। আমি আসছি।"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মাহাবুব হাসান খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গল্পটা লিখেছেন। পোস্ট পার্টাম ডিপ্রেশন- নামটা আমার জন্যে নতুন, তবে বিষয়টা সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আছে। একবার অফিসে কাজের ফাঁকে ফাঁকে কথা বলতে গিয়ে আমি বলছিলাম, সন্তান জন্মের সাথে সাথে মায়েদের একটা মাদারলি ইন্সটিংক্ট তৈরি হয়। যা তাকে শারীরিক-মানসিকভাবে অনেক বেশি সহনশীল করে তোলে। শুনে এক কলিগ আপু একটু কটাক্ষ করে বললেন, বাচ্চা হওয়ার সাথে সাথেই একজন নারীর মধ্যে মা মা ফিলিংস তৈরি হয়ে সবকিছু কন্ট্রোলে চলে আসে- ব্যাপারটা এমন না। উনি নিজের কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন। তার সেদিনের কথাগুলো আমার জন্যে ছিল আই ওপেনার। আসলে ধর্মে যে মায়েদের অনেক সম্মান দেয়া হয়েছে, বাবার চেয়েও অনেক বেশি, তা মূলত এই প্রসব পূর্ব, প্রসবকালীন এবং প্রসব-পরবর্তী শারীরিক-মানসিক কষ্ট স্বীকার করা জন্যেই। আপনার গল্পের মাধ্যমে ব্যাপারটা আবারও অনুভব করলাম। গল্পটাও সুন্দর হয়েছে। একটা অভিমত- গল্পের ক্ষেত্রে প্যারাগ্রাফ অনেক বড় না করে যদি ছোট ছোট প্যারায় ভেঙে লেখা হয় তাহলে পড়তে আরাম লাগে। সাবমিশনের সময় ফাইল এটাচ না করে সরাসরি পোস্ট বক্সে লেখা কপি-পেস্ট করে তারপর প্যারায় ভাগ করলে কাজটার ওপর কন্ট্রোল রাখা যায়। আমি আগে ফাইল এটাচ করতাম, কিন্তু এখন পোস্ট বক্সে লেখা কপি-পেস্ট করছি। এই অভিজ্ঞতার আলোকে বললাম আরকি।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

একজন নতুন মা কীভাবে হরমোনের পরিবর্তনের জন্য হতাশাগ্রস্ত তা এই গল্পে তুলে ধরা হয়েছে। গল্পটি বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

০৮ জুলাই - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "আতঙ্ক”
কবিতার বিষয় "আতঙ্ক”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫