ট্রেন আসতে আসতে দেড়টা বাজবে। আরো ২০ মিনিটের মতো সময় আছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর বিশ্রামাগারের আসনের প্রথম সারির মাঝামাঝি বসে আছে রাজ। তার দু সারি পিছনে ইথেন বসে আছে ঢিলা ঢুলা বোরখা পরে। যেভাবে আছে ও। যে কেউ দেখলে বয়স আন্দাজ করতে পারবে না। হাত মোজা পা মোজা পরা। কিছুটা গুঁজো হয়ে বসেছে। দেখলেই মনে হবে বয়স্ক মহিলা। ষোলো ছুঁই ছুঁই মেয়েটাকে মনে হতেই পারে পঞ্চাশের বেশি। আবির বসে আছে পিছনের লাইনে। পাশে বসে থাকা লোকটার সাথে যেভাবে মিশে গেছে যে কেউ ভেবে ভুলই করবে এরা বাবা ছেলে, চাচা ভাতিজা , মামা ভাগনে বা যেকোনো নিকট আত্মীয়। আবির ভাবছে যে করেই হোক ট্রেন পরবর্তী স্টেশন না পৌঁছানো পর্যন্ত এভাবেই চলতে হবে। কেউ কাউকে চেনে না। ভাবতে না ভাবতেই একজন মাঝ বয়সী সাথে ৬-৭ জন ২০-২২ বছর বয়সী লোক স্টেশনে প্রবেশ করলো। ইথেন কাশি দিলো। আবির ভেবে নিলো ইথেনের বাড়ির লোক হয়তোবা ওরা। বৃদ্ধের গায়ে ধুতি পাঞ্জাবি দেখে মোটামুটি শিয়র হল ও।
রাজ ঘুমিয়ে পরছে এই ভর দুপুরে। জেগে থাকলে ভয়ে অস্থির হয়ে যাবার কথাই ছিলো। লোক গুলো রাজকে লক্ষ না করে ইথেন বরাবরই এগুতে লাগলো। আবির কি করবে বুঝতে পারছে না। আবির পাশের লোককে বলল বাবা ট্রেন কেনো যে লেট করছে। লোকটা অবাক হয়ে আবিরের দিকে তাকালো। লোকগুলো ইথেনের খুব কাছাকাছি এসে তাকে এড়িয়ে আবিরের পাশের লোকটার কাছে এলো। বলল হারামজাদা ভেবেছিলি পালিয়ে যাবি। তোকে আজ পেয়েছি চল। ওনার কলার ধরে টান দিলো। একজন অন্য একজন আবিরকে টার্গেট করে বলল কাকা এটা ওর সাথের ই। নিয়ে নেবো? বয়স্ক লোক বলল অবশ্যই। আবির বাধা দিতে যাবে তখন অন্য একজন ধুতি পড়া লোক, একজন ওর বয়সী ছেলে এবং একজন মহিলা পিছন থেকে বলল, ইথেন তুমি এখানে থাকলে বেরিয়ে আসো। নয়তো খবর আছে। আবির আগের গ্রুপকে আর বাধা দিলো না। আবির এবং তার সাথে থাকা লোকটাকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো ওরা। ইথেন বসে ই রইলো। রাজ শব্দে জেগে দেখল ওর বন্ধুকে কেউ নিয়ে যাচ্ছে। আবিরের প্ল্যান মাফিক টু শব্দ করলো না রাজ। পিছে ইথেনের অবস্থান দেখে নিয়ে বেরিয়ে পরল। তখনই ইথেনের মামার ফোন রিং বেজে উঠলো। উনি কিছুক্ষণ কথা বলে সবাইকে নিয়ে বেড়িয়ে গেলো। ইথেন খুশি হবার কথা তবে আবিরের বিপদের জন্য নিশ্চিন্ত হতে পারল না। মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করতে লাগলো। আবিরদের নিয়ে একটি মাইক্রোবাসে উঠে চলে গেলো লোক গুলা। রাজ কি করবে বুঝতে বুঝতে গাড়ি চোখের আড়ালে। বন্ধুকে ছেড়ে কিছুতেই প্রেমিকাকে নিয়ে মফস্বল ছাড়তে ওর মন চাচ্ছেনা। একটি বাইক ভাড়া করে ওদিকে যেতে লাগলো। ইথেন কে ফোন দিলো। সাবধানতা অবলম্বন করে বলল খালাম্মা আমি আসতে না পারলেও আপনি ট্রেনে উঠে যাবেন কিন্তু। ইথেন বৃদ্ধা ভয়েসে কথা বলার রিক্স না নিয়ে বললো হুম।
লোকটা বলল, ভাই কথা শোনেন এই ছেলে আমার কেউ নয় আপনারা আমার সব কিছুই তো জানেন। ওকে কেনো শুধু শুধু বিপদে ফেলছেন ছেড়ে দেন। রক্ত গরম ছেলে গুলো ক্ষেপে গেলেও বয়োজ্যেষ্ঠ বলল ঐ কে তুই? আবির বলল আমি আতিক আইছিলাম বন্ধুর বাড়িত ঢাকা যাইতাছি। কথায় এখানকার আঞ্চলিক টান না পেয়ে ওকে ছেড়ে দিলো ওরা। আবির রিকশায় উঠে রওনা দিলো স্টেশনে। নামবার সময় কি মনে করে যেন ফোন দিলো রাজকে। রাজের কথায় অনেকটা বিরক্ত হল। বলল জলদি আয়। ট্রেনের ঘণ্টা ততক্ষণে পরে গেছে। সেটাও রাজ কে জানালো ও।
রাজ বাইক ঘোরাতে বলল। জ্যাম ছাড়িয়ে স্টেশনে এসে পকেটে থাকা শেষ টাকা টুকু ড্রাইভারকে দিয়ে ট্রেন ছাড়ার শব্দে দৌড় দিলো। দৌড়ে কোনো রকম ট্রেনে উঠলো রাজ। নিশ্বাস নিতে নিতে বিজয়ীর হাসি হাসল। ততক্ষণে ট্রেনের গতি বেড়ে গেছে।
ইথেন বসেছে জানালার পাশে। মাঝে র সিট খালি এরপর বসেছে আবির। বার বার ফোন দিচ্ছে রাজকে ধরার নাম নেই। ইথেন গলা নিচু করে বললো দোস্ত তোকে মার ধর করেছে? আবির বলল আরে নাহ। ইথেন বলল রাজ আসছে না কেনো? আবির বলল শালা তো ফোন ধরছে না। কেমন যে লাগে। বস আমি দেখে আসি। ইথেন আবিরের হাত ধরে বলল নাহ একা ভয় লাগবে। কোনোদিন চুয়াডাঙ্গার বাইরে যাইনি রে।
ইথেন এভাবে ওর হাত ধরবে ও প্রস্তুত ছিলো না। যদিও ব্যাপার টা নরমাল তবে ওর কাছে নরমাল না। কয়েক মিনিটে ভেবে ফেললো অনেক কিছু। ভুল লোডে নাম্বার পাওয়া, এরপর দুষ্টুমি, প্রচুর ঝগড়া, আবার ভাব, শেষে যখন দুর্বলতা পেয়ে বসল ইথেনের উপর। ভেবেই ফেললো প্রোপোজ করবে। তখন জানলো রাজ এবং ইথেন একজন আরেক জনকে মন দেওয়া নেওয়া করে ফেলেছে।
মনে পড়লো অসুস্থ অবস্থায় রাত জেগে ওর সেবা করা বন্ধু রাজের কথা। আবির ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করতো না। তবে রাইসাকে সব সময় বলতো খেয়েছি। রাইসাকে ফোন দিয়ে রাজ কথা গুলো বলেছিল ওর ভালোর জন্য কিন্তু ও অযথা খারাপ ব্যবহার করে রাজকে অপমান করেছিলো। বিনা দোষে রাজের সাথে কত খারাপ ব্যবহার না করেছে ও। গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছে।
রাজের সাথে অনেক অন্যায় করা হয়েছে। বাবা মা থেকেও যেই ছেলের নেই। যে ওকে এতো আপন করে নিয়েছিল। দিয়েছিলো বেষ্ট ফ্রেন্ডের স্থান তাকে আবির কিচ্ছু দিতে পারেনি। এবার ইথেনকে নিয়ে যেয়ে ওদের বিয়ে দিয়ে আবির দেখাতে চায় ও আগের মতো অকৃতজ্ঞ ছেলেটা নেই। বন্ধুত্বের জন্য ও যেকোনো বিপদে পরতে পারে।
আলম ডাঙ্গা স্টেশনে ট্রেন পৌছালো। রাজের দেখা নেই। আবির আবারো ফোন করতে যাবে তখন রাজের ফোন। রাজ ভুল করে তাড়াহুড়ায় উঠে পরেছে ভুল ট্রেনে। যেই ট্রেন যাচ্ছে উলটো দিকে। ঢাকা নয় খুলনা।
সন্ধ্যা ছয়টা মহানন্দা এক্সপ্রেসে করে কিছুক্ষণ আগে খুলনায় পৌঁছেছে রাজ। তাড়াহুড়োতে এবং দিকে গত ঝামেলায় সে ভুল করে এখন খুলনা। বসে আছে রিকশায় পাশে সোহাগ। আবিরের স্কুল ফ্রেমের সোহাগ। পকেট শূন্য রাজকে হেল্প করার জন্য সোহাগকে পাঠিয়েছে ও। আবির এবং সোহাগের কথায় রাতের ট্রেনের জন্য আর অপেক্ষা না করে সোহাগের মেছে যাচ্ছে ও। সকালের ট্রেনের একটা সিট টিকেট পাওয়া গেছে। সোহাগ কেটে দিয়েছে টিকেট।
আবির ইথেন ট্রেন থেকে নেমে রাজ কে ফোন করলো। ও সোহাগের বাসায় পৌঁছে গেছে। আবির ইথেনকে বলল দোস্ত তোকে রেশমির বাসায় রেখে আমি বাসায় যাবো। কাল সকালে আসবো। ইথেন বলল আমার ভয় লাগবে রে। আবির বলল ভয় নেই রেশমি খুব মিশুক মেয়ে। ইথেন বলল আচ্ছা। আর কে থাকে ওখানে? আবির বলল বাসায় রেশমি ছাড়া কেউ থাকবে না। ওর বর গেছে চট্টগ্রাম । মেয়েটাও প্রচণ্ড ভালো। তোর ভালোই যাবে রাত টা। ইথেন বললো ভেবেছিলাম তিনজন একসাথেই থাকবো এখন তিনজন চলে যাচ্ছি তিন জায়গায়। আবির বলল যে মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে পারে সে এতো ভয় পেলে হয়? আর আমার বাসা খুব কাছেই । ইথেন বলল দোস্ত তুই কি এখনো আমাকে খারাপ মেয়ে ভাবিস? আবির বলল রিকশায় উঠ। ইথেন কে উঠিয়ে দিয়ে আবির উঠতে উঠতে বলল দোস্ত তুই কাল বাদে পরশু আমার ভাবি হবি। ইথেন বলল আমি তোর বন্ধুর বউ হবার আগে থেকেই তোর বন্ধু। ওকে পারলে দুলাভাই ডাক। আবির বলল তুই আমার থেকে তিন চার বছরের ছোট তোর জামাইকে দুলাভাই বলতে বয়েই গেছে। আসল কথায় আসি তোকে আমি খারাপ ভাবিনা দোস্ত। তখনের পরিস্থিতি এখন আমি বুঝতে পারি। মা মরা একটা মেয়ে তুই। বাবা মুসলিম মা হিন্দু। বাবা থেকেও নেই। হিন্দু মামার কাছে তুই শুঁখি নেই। তবে মেনে নিয়েছিস। কিন্তু হিন্দু ছেলের সাথে বিয়ে তুই মেনে নিতে পারছিস না।। ইথেন কাঁদতে কাঁদতে বলল, দোস্ত সারাজীবন বন্ধু থাকবি তো? আবির বলল অবশ্যই থাকবো না। দেবর হয়ে যাবো। হা হা হা।
রেশমির বাসায় পৌঁছে আর বাসায় যাওয়া হলোনা আবিরের। রেশমি বলল শুধু মাত্র তোর ভরসায় তোর ভাইয়া আমাকে একা রেখে গেছে। এখন তুই দুটো মেয়ে কে একা রেখে চলে যাবি? আবির থেকে গেলো। ফ্রেস হয়ে প্রথম ফোনটা করলো রাইসাকে।
- দোস্ত
- হুম দোস্ত
- অনেক সরি। অনেকক্ষণ তোর ম্যাসেজের রিপ্লাই দেই নি।
- এসএমএস পরিস ও তো নি।
- জানলি কিভাবে?
- এসএমএস পড়লে এখন সরি না বলে বরং আমাকে বকাবকি করার কথা।
- মানে?
- কই আছিস?
- রেশমির বাড়ি।
- তাহলে ফ্রেস হয়ে, খেয়ে দেয়ে তারপর ঠান্ডামাথায় আমার ম্যাসেজ গুলো পর।
- জো হুকুম জাঁহাপনা।
- হুম।
- আই লাভ ইউ দোস্ত
- মেবি আই লাভ ইউ ঠু।
খেয়ে দেয়ে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করে রেশমি এবং ইথেন চলে গেলো রেশমির রুমে। দুজনেই অনেকক্ষণ আড্ডা দেওয়ার মুডে ছিলো তবে আবির বলল মাথা খুব ধরছে। আজ আর আড্ডা না দেই। আবির গেস্ট রুমে এসেছে। রোজকার মতো ডাইরি বের করে লিখতে বসল আবির।
২৭ জুন ২০১২
আমি এখন আছি রেশমির বাসায়। এবারের মতো দ্বিতীয়বার এ বাড়িতে এলাম। তবে রাত কাটানো এই প্রথম। রেশমী আমার স্কুল ফ্রেন্ড। ক্লাস নাইনে পড়তে ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ইকবাল সাহেবের সাথে ওর বিয়ে হয়। কি কাহিনী বিয়েটার আগে এটা নিয়ে লিখেছি। ইকবাল সাহেব অল্প কয়েক দিনেই রেশমির মন জয় করে ফেলে। প্রায় চার বছর হলো ওদের সুখের সংসার। আজ হয়তোবা উনি বিয়ের পর প্রথম রেশমিকে ছাড়া রাত কাটাচ্ছে। ইথেন অনেক মিশুক মেয়ে। রেশমি ও আড্ডা বাজ। দুজন গল্প করতে করতে ভালোই সময় কাটাবে।
রাইসা প্রসঙ্গ ---
আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব ৬ মাস ও পূর্ণ হয়নি। অপরিচিত থেকে পরিচিত। ফটো উদ্ধারের কাহিনীর জন্য ফ্রেন্ডশিপ। এরপর সে এখন আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড। এমন ফ্রেন্ডশিপ আমাদের, ঘুমোতে যাওয়া, ঘুম থেকে যে আগে উঠবে অন্যকে তুলে দেওয়া। একসাথে খাবার খাওয়া। গোসলে একসাথে যাওয়া, সারাদিন দুই তিন ঘণ্টা কথা বলা এবং হাজার খানিক এসএমএস চালাচালি হয়। সবার দাবি আমরা অচিরেই প্রেমে পড়বো। তবে আমার এমন মনে হয়না। তবে আমাদের মধ্যে কোন লুকোচুরি নেই। আমি ওকে বলেছি। ঐ বাজে ছেলের সাথে প্রেম করে ছেঁকা খেয়েছিস এই নিয়ে মন খারাপ করবি না আমি তোর জন্য একটা রাজপুত্র খুঁজে দেবো। রাইসা বলেছে হুম দোস্ত আমিও তোকে খুঁজে দেবো একটা পরি। আর দোস্ত আমি আর কখনো প্রেমের ফাঁদে পারবো না রে। রাইসা জানি আমাকে কি এসএমএস করেছে। কি হতে পারে। হয়তো ওর মন ভাল নেই। চুয়াডাঙ্গা যাবার পর থেকে ওকে টাইম ই দেই নি একদম। নাহ আমি শিওর এমন কিছুই হবে।
ডাইরিটাও বন্ধ করে আবির হাতে ফোন নিলো। এসএমএস ফোল্ডারে ঢুকল।
দোস্ত সরি
দোস্ত অনেক সরি
তোর সাথে আমি অনেক কিছুই শেয়ার করেছি। অনেক কিছু নয় সব কিছু।
তবে দোস্ত আমার একটা ভুল হয়ে গেছে
আমি আবার রিলেশনে জড়িয়ে গেছি রে।
প্রায় ১৫ দিন হলো। তোকে জানাবো জানাবো করে জানাতে পারিনি।
দোস্ত ছেলেটার নাম সাজিদ। তোকে বলেছিলাম না আসমার স্কুল ফ্রেন্ড সাজিদ ভাইয়া। আমার ঐ অবস্থায় তুই ছাড়া যে লোকটা আমাকে মেন্টালি সাপোর্ট দিত সেই লোকটার কথা বলছি।
দোস্ত ও অনেক দিন ধরে আমাকে প্রোপজ করছে। সুমন আমার লাইফে আসার আগ থেকেই ও আমার প্রতি দুর্বল। আমি বলেছি আমি আর রিলেশনে যেতে চাইনা।
তবে এতো এতো জোর করলো, পাগলামি করলো আমি আর না করতেই পারলাম না। ওর প্রতি আবেগ নেই তার পরেও হ্যাঁ করে দিলাম।
দোস্ত রাগ করছিস খুব?
আমাকে অনেক খারাপ মেয়ে ভাবছিস? দোস্ত ভাব। কারন আমি ভালো মেয়ে নই। কিন্তু প্লিজ আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট করিস না। সত্যি বলতে সাজিদ কে আমি ভালবাসি কিনা জানিনা। তবে তুই আমার লাইফ থেকে চলে যাস না প্লিজ। সারাজীবন বন্ধু হিসাবে থাকিস প্লিজ।
আবিরের গরম মাথায় রক্ত উঠে গেলো। রাগের মাথায় আছাড় মারল ফোন। জিদে রাগে কতক্ষণ বসে থাকলো। যত দ্রুত রাগ এলো নেমেও গেলো দ্রুত ভাবলো এতে রাগার আছে টা কি?;ও রিলেশনে যেতেই পারে তাতে আমার কি? আমি তো আর ওর বিএফ না। আবার ভাবলো তাই বলে ১৫ টা দিন গোপন করে যাবে। যার জন্য আমি এতো কিছু করলাম সে আমাকে কি সত্যিই বন্ধু ভাবে? আবার ভাবলো নাহ হয়তো অপ্রস্তুত অবস্থায় সাজিদ চলে এসেছে লাইফে। আবেগ নিয়ে খেলেছে। আর যেহেতু আগে একবার প্রেম ঘটিত কারনে নাক কাটা গেছে তাই এবার আমাকে বলতে অস্বস্তি বোধ করছিল। কিন্তু ছেলেটা ভালো তো? আবার কোন বিপদের মুখোমুখি হবে না তো রাইসা? ফোন অন করার চেষ্টা করলো আবির। হল না। তবে কি হবে এখন যোগাযোগের ব্যবস্থা? ড্রইং রুমে গিয়ে টেলিফোন হাতে নিলো আবির
- হ্যালো আবির?
- কি ভাবে বুঝলি
- তুই ছাড়া আবার কে হবে বল। কে আছে আমার?
- কেন তোর নিউ বিএফ।
- দোস্ত সরি রে
- আরে সরির কি হল Congratulations
- দোস্ত মাফ করবি না?
- আর আমি রাগ করি নাই
- তাহলে ফোন বন্ধ যে?
- অহ চার্জ শেষ।
- দোস্ত
- দোস্ত যাই করিস এবার আর আগের ভুল করিস না।
- (নিশ্চুপ)
- কিরে। এবারও দিয়ে দিয়েছিস নাকি?
- নাহ
- আমার কসম
- দোস্ত দিয়ে ফেলছি। খুব জেদ করছিল। বলল ঐ সুমন কে দিতে পারলা আমাকে দিতে পারবা না? এই তোমার বিশ্বাস?
- তুই আসলেই বোকা। নাহ তুই বোকা না। মানুষ ভুল করে একবার তুই দুবার করেছিস। তুই শয়তান। নাহ তোর মতো মেয়ের সাথে কথা বলাই ভুল। ভদ্র র মুখোশ পড়া খারাপ মেয়ে তুই তোর থেকে prostitute ভালো।
আবিরের মুখে এসব কথা শোনে কাঁদতে লাগলো রাইসা। কান্না থামছেই না। চোখের পানি নাম ঠোঁট গাল থুতনি বেয়ে বেয়ে পরছে। মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে তুমুল মাথাব্যথা। ইচ্ছে করছে মরে যেতে। তখনই সাজিদের ফোন। তৃতীয় বারে ফোন রিসিভ করলো।
- সাজিদ আমি পরে কথা বলি একটু অসুস্থ বোধ করছি।।
- বালের অসুস্থ। এতক্ষণ কার সাথে চু__
- মানে?
- মানে বুঝিস না। ফালতু মেয়ে ছেলে। কয়টা লাগে তোর।
- সাজিদ কি বলছো এই সব।
- ঠিকই বলছি। তুই আসলেই নষ্টা। তাই এতো দ্রুত আমাকে তোর পার্সোনাল পিক দিলি।
- ছি সাজিদ
- ছি তো তোকে। আল্লাহই জানে আরো কত পুরুষের সাথে কিনা কি করেছিস।
- ( নিশ্চুপ)
- শোন আমার টাকা লাগবে নয়তো ভাইরাল করে দেবো। ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাকে ১০ হাজার টাকা পাঠাবি।
রাইসার উপর মহা প্লাবন চলে এলো। থমকে আছে ও। মাথা কাজ করছে না ওর। পৃথিবী ঘুরছে। ও উঠে দাঁড়ালো। মেডিসিন বক্স থেকে ৭ টা ঘুমের ঔষধ খেয়ে ফেললো। এ জীবন আর রাখতে চাচ্ছেনা ও।
আবির কাঁদছিল। রাগের মাথায় এতো বাজে কথা শুনিয়ে দিয়ে এখন আফসোস হচ্ছে নিজের। ও যতটুকু চেনে রাইসাকে। ও এই কথা গুলো নিতে পারবে না। অনেকবার ফোন দিলো। ফোন ধরার নাম নেই। মেয়েটা কিছু করে ফেললো না তো। ওর আম্মার নাম্বার তো মুখস্থ নেই । কি করি। হঠাৎ কেউ ওর পিঠে হাত রাখলো। আবির চেয়ে দেখল ইথেন।
- এই আবির কি হয়েছে তোর? তুই কাঁদছিস কেনো?
- (চুপ)
- দোস্ত। এই দোস্ত। কি হয়েছে তোর বল আমায়।
আবির ইথেনের দিকে ফিরে তাকাল। ইথেন ও কাঁদছে।
- আবির তোমার কি হয়েছে। তোমার কান্না আমার সহ্য হচ্ছে না।
- আমার কান্নায় তোর কি পাগলী। তুই কেন কাঁদিস? মানে কি?
- মানে কি জানিনা। তুমি সব সময় হাসিখুশি থাকবে বুঝলে? তোমার মন খারাপ আমার ভালো লাগে না।
- তুমি তুমি করছিস কেন? মাথা ব্যথা দোস্ত তাই চোখে পানি।
- না মিথ্যা বলবে না। আমি জানি
- কি জানিস? রা
- তুমি আমাকে ভালবাস?
- মানে?
- আমি জানি আবির তুমি আমাকে ভালবাস। তুমি আমার প্রতি আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে পরেছ। কিন্তু হুট করে রাজ আমার লাইফে ঢুকে পরেছে। যা তুমি মেনে ও নিতে পারনি। আবার বন্ধুত্বের জন্য কিছু করতেও পারলে না
- আজে বাজে কি বলছিস। যা ঘুমা।
- আমি আজেবাজে বলছি না আবির। আমি জানি তুমি আমাকে ভালবাস। আবির তুমি জানো সেই মুহুত্বে আমার বাসা ছাড়ার খুব প্রয়োজন ছিলো। রাজ হুট করে প্রোপোজ করলো আমি না বুঝে ই ওকে গ্রহণ করলাম।
- থামবি?
- না থামবো না। শোনো। তোমার প্রতি দুর্বলতা আমার আগে থেকেই। তবে বলি নি কারন তুমি বিশ্বাস করবেনা। রাজকে যখন হা করেই দিলাম তোমাকে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা ই করছিলাম। কিন্তু এই দুদিন তোমার সাথে দেখা। রাজকে আর আমাকে এভাবে ঝুঁকি নিয়ে হেল্প করা আমাকে তোমাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। আবার ঐ লোক গুলো তোমাকে তুলে নিয়ে গেলো। অনেক ভয় কাজ করছিল মনে। কি যে কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু রাজ যখন এলো না। আবার অন্য ট্রেনে খুলনা চলে গেলো কষ্ট হলো না। আজ শুধু তুমি আছো ওকে এক ফুটাও মিস করছি না।
আবির চুপ হয়ে থাকলো। ইথেন বলল রেশমি আপুর কথায় আমি শিয়র হলাম তুমি অনেক আগে থেকেই আমার প্রতি দুর্বল। রাইসাকে নয় আমাকে ভালবেসে ফেলছো। আগে থেকেই আমাকে নিয়ে পালানোর প্ল্যান করছো। কিন্তু মাঝে রাজ চলে এলো।
আই লাভ ইউ আবির। তুমি আমাকে যাই ভাবো আমি তোমাকেই ভালবাসবো। তোমার ভরসায় এতদুর এসেছি। প্লিজ আমাকে ছেড়ে যেওনা।
আবির কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো। ও রাইসার কারনে দুঃখিত ছিলো তবে কেনো জানি ইথেন কে আর ভুল ভাঙ্গাল না। ও মনে মনে কেনো জানো চোখের পানির মিথ্যা ব্যাখ্যা দিতে পাপ বোধ করছে না। আবির বলল
C2H6 আই লাভ ইউ ঠু।
ইথেন জড়িয়ে ধরলো আবির কে। আবির ও খুব ভালোভাবে আলিঙ্গন করলো। ইথেনের ফোনে রাজের কল বেজেই চলছে ইথেন আবিরের রঙ্গে মুগ্ধ হয়ে ভুলে গেছে সে একজন রাজার রানী হতে ঘর ছেড়েছিল। আবিরের মনেও রাইসা একবার ও উঁকি দিলো না। ওর মনে একবারও এলো না মেয়েটা কি করছে। একবারও মনে হল না রাজকে সাথে বেইমানি করছে ও।
ভালবাসার কাছে হারিয়ে গেলো বন্ধুত্ব। হাজারো ছলনা করতে একবার ও বুক কাঁপল না আবিরের। মনে মনে বললো।
Everything is fair in love and war.
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Muhsin Ahmed
"নিষ্কাম ভালোবাসা বলে পৃথিবীতে কিছু নেই।" আবির ইথেনের মিল করিয়ে দিতে লেখক তাড়াতাড়ি করেছেন। কিন্তু আবির কিছুক্ষণের কথায় সব সততা রোদে শুকিয়ে রাজকে ঠকালো৷ আজিব চিড়িয়া! কী দরকার এমন বন্ধুর?
তবে সত্যি বলতে রাজ বড় বাঁচা বাঁচল। এই মেয়ে এই কাহিনী আরো গভীরে গেলেও ঘটাতো। রাজ ভুল মানুষের ভুল সম্পর্ক থেকে বেঁচে গেলো।
৫০০০ শব্দে ঠিক কত শব্দ সেটা ভেবে তাড়াহুড়ো করে ফেলেছি। আপনার মূল্যবান মতামতারের জন্য ধন্যবাদ ভাই।
আমার প্রথম লেখা।
আবারো ধন্যবাদ এত ধৈর্য ধরে এই অধমের লেখা পড়ার জন্য।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
প্রেম যখন জানালা দিয়ে প্রবেশ করে বন্ধুত্ব তখন কোথায় থাকে? প্রেমের জন্য ছলনায় রুপ নেয় বন্ধুত্ব নাকি বন্ধুত্বের জন্য প্রেম হয় বিসর্জিত।
২৮ জুন - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
৪ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৮
বিচারক স্কোরঃ ২.১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৭ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।