চিঠি ১
আমার কলিজার টুকরা মা। সন্ধ্যা হয়ে গেছে তাই না? মা তোকে ছাড়া কখনো কোথাও রাত পার করিনি। তোর বাবা না থাকলেও তোর জন্মের পর থেকে প্রতিটা রাত তোর পাশে ছিলাম। কিন্তু আজ যখন তুই কথা গুলো পরছিস তখন তুই তোর পাশে আমায় পাচ্ছিস না। কি আর করার, কাল তো তোর পরীক্ষা। আর তোর বাবা আর আমাকে ঢাকায় যেতেই হতো। ভাল থাকিস মা। আর তোর জয়ন্ত মামা তো বলেছেই খুব চেষ্টা করবে আসতে। ভয় পাস নে মা। ভূত বলে কিছুই নেই সব মনের কল্পনা।
চিঠি ২
আমার লক্ষ্মী মা মনি। তোকে খুব মিস করছি। বাবা যখন বাসায় ফেরার কথা তখন তো বাবা আজ ফিরবে না, সে জন্য রাগ করে থাকিস না মা। তোকে খুব মিস করবো সারাটা দিন। মায়ের চিঠি তে কি লেখা আমি জানিনা। তবে যদি ভূত প্রেত নিয়ে লেখে থাকে এসেই দুজন মিলে ওর বিচার করবো। যদিও বিচারের প্রয়োজন নেই। আমার মা মনি কি আর ভয় পায় নাকি ১৩ বছর ১৭৭ দিন হলো আজ। তোর বার্থডে তে এবার চমৎকার একটা উপহার আছে তোর জন্য। উপহার কি হতে পারে বলতো????
#পরের পাতায় যাওয়ার আগে চট করে লিখে ফেল আমি এসেই পড়বো তোর চিঠি।
চিঠি দুটো রেখে কাগজ কলম নিয়ে লিখতে বসলাম। কি উপহার দিবে বাবা? । কি যে লিখবো চিঠিতে। আচ্ছা আমি যে বাবা মার কথা না শুনে বিকেল না গড়াতেই চিঠি গুলো পড়ে ফেলছি কাজ টা কি ঠিক করলাম? কি আর করবো কৌতূহল কি ধরে রাখা যায়? পরের চিঠি গুলো সন্ধ্যার পরই না হয় পড়বো। এখন না হয় বাবাকে লিখে ফেলি। নাহ লেখা যাবে না এখন? আগে ভেবে নি গিফট টা কি হতে পারে।
নাহ ভাবার অনেক সময় পাবো। আগে পড়তে বসতে হবে। মামা আসলে মজার মজার গল্প গুলো মিস করাই যাবেনা। এখন পড়া গুলো কম্পিট করে নি।
ঠাকুর ঘরে প্রদীপ জ্বালাতে জ্বালাতে গুন গুন করে "শুভং করোতি কল্য়াণম্ আরোগ্যম্ ধনসম্পদা।
শত্রুবুদ্ধিবিনাশায় দীপকায় নমোস্তুতে।।" মন্ত্র খানা পড়ছিলাম। দরজা জানালা আগেই সব লাগিয়ে দিয়েছি। বাতি জালিয়ে লিখতে বসলাম। বানানের প্রতি এবং লেখা সুন্দর করার জন্য আস্তে ধীরে লিখছি।
বাবা জানিনা কি উপহার দিবে এবারের জন্ম দিনে কিন্তু আমার মন বলছে জন্মদিনের আগেও আমাকে তুমি আরো কিছু উপহার দিতে যাচ্ছ। ঢাকা থেকে ফেরার সময় কি নিয়ে আসবে বলবো? তুমি নিয়ে আসবে একটা নতুন হারমনিকা। আচ্ছা বাবা আমাদের বাড়িতে কোনো গৃহকর্মী নেই কেনো? গৃহকর্মী থাকলে তো ভয় ই থাকতো না। কিন্তু আমার মনে পরে খুব ছোট বেলা কমলা দিদি নামে কেউ একজন আমার দেখভাল করতো। সে হঠাৎ বাড়ির পিছনে গলায় দড়ি দিয়েছিলো। আর সেই তদন্তে আমাদের আরেক গৃহকর্মী নাম মনে পরছে না ওনাকে বের করে দেওয়া হয়েছিলো। তার মানে কি ব্যাপার এমন। নতুন করে আর গৃহকর্মী রাখার সাহস দেখাও না?তুমি জানলে খুব রাগ করবে আজ বিন্দু মাসি ঘর ঝাড় দিতে আর রান্না করতে আসেনি। তোমার মেয়ে না খেয়ে আছে। আর না লিখি বাবা আগে তোমার চিঠিটা পড়ি।
চিঠি ৩
মা মনি আমার। লিখে ফেলেছ? তুমি কি ধরে ফেলেছ এবার ঢাকা থেকে কি আনবো? আমার মা মনি মিথ্যে বলেনা আমি জানি। তবে তোমার চিঠিটা আমাদের চিঠির বাক্সে ফেলে দাও তো। হুম সেটায় যেটার চাবি তোমার কাছে নেই। তারপর না হয় বাকি চিঠিটা পড়ো।
আমি চিঠি বাক্সে ফেলে আবার পড়তে লাগলাম।
পড়তে যাবো এমন সময় কেমন জানো একটা শব্দ শুনে থমকে গেলাম। কে জানো গুন গুন করে গান গাচ্ছে। মনোযোগ দিয়ে শুনলাম। না মনের ভুল নয় কেউ গান গাচ্ছে। ভয়ে গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো। রাম লক্ষণের নাম নিয়ে চুপ চাপ বসে আছি। হয়তো কাঁপছি। বাবার চিঠিটা পড়ে কি মনটাকে অন্যদিকে কনভার্ট করতে পারবো???
মা মনি। আমার বালিশের নিচে একটা চাবি আছে। চাবি টা আমায় ড্রয়ারের। চট করে খুলে ফেলতো।
ড্রয়ার খুলে প্রথমেই একটা শাড়ি পেলাম। নীল রঙ্গের শাড়ি। বাবাকে বলেছিলাম আমার শাড়ি পরতে খুব ইচ্ছে হয় তবে এভাবে গিফট করবে বুঝতে পারিনি। শাড়ি ব্লাউজ সবই আছে। তার নিচেই একটা গিফট বক্সে পায়েল। সাথে সাথে পরে ফেললাম। আরো আছে একটা চিরকুট
মামনী খুশি তুমি? আমি নিচেই লিখলাম তুমি থাকলে আরো খুশি হতাম বাবা। ভয় ভয় লাগছে।
বাবার রুম থেকে বের হয়ে নিচে নামতেই দরজায় নক। মামা বললো মা আমার দরজা খোল জলদি। তোর মামা এসে গেছে।
দৌড়ে যেয়ে দরজা খুললাম। মামা বললো কিরে মা ভয় পাচ্ছিলি? আমি বললাম হুম মামা একটু পেয়েছি। তবে তুমি না এলে আজ রাতে হয়তো ভয় আমাকে মেরেই ফেলতো।
- ধুর পাগলী। কিসের ভয়। কিচ্ছু হতো না। আচ্ছা খাবার রেডি কর। আমি চট করে স্নান করে আসি।
- কিন্তু মামা।
- কিন্তু কি?
- মাসি আসেনি। আমি দুপুর থেকে বিস্কুট খেয়ে আছি।
- কি বলছিস মা। আমি চট করে স্নান শেষ করে রান্না চড়িয়ে দিচ্ছি।
রাত সাড়ে নয়টা। মামার রান্না করা খিচুড়ি ডিম ভাজি খেয়ে আবার পড়ার টেবিলে বসেছি। মামা আমার সামনে বসে আছে।
বললাম মামা। এতো স্বাদ করে রান্না কে শিখিয়েছে? মামা বললো, কেউ না একাই শিখেছি। আর তুই যতটা বলছিস অতটা স্বাদ ও হয়নি। সারাদিন না খেয়ে ছিলি তাই এ অবস্থা। বললাম যাই বলো মামা তুমি পৃথিবীর সেরা রাঁধুনি। এবার বলতো ভূত কি আছে? মামা বললেন নেই। এর পর চুপ হয়ে গেলেন। বলল শ্রাবনী মা আমার, ভুত হয়তোবা আছে নয়তোবা নেই। তবে ওরা থাক ওদের মতন আমরা আমাদের মতন। ওরা চলুক ওদের মতো করে আমরা আমাদের মতো করে। কেউ কারো রাস্তায় না এলেই তো হলো? আমি বললাম তাও মামা যদি ঘাড় মট্কায়। জানো তুমি আজ আসার একটু আগেই তো গুন গুন করে কে জানো গান গাচ্ছিল। মেয়ে কন্ঠ। খুব পরিচিত কণ্ঠটা। কিন্তু মনে করতে পারছিনা। তুমি না এলে আজকের রাত টা এক ভয়াল রাতে পরিণত হতো মামা। মামা বলল গান টা কি শিউলি গাছের ওদিক থেকে আসছিল?
আমি অবাক হয়ে গেলাম তাই তো মামা!! তুমি জানো কিভাবে? মামা বললো কণ্ঠটা কি কমলার? আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো। মামা বললো ভয় নেই মা। আমিও অনেক বার কমলার গলা শুনেছি আগে। তোর বাবা ও শুনেছে।
শোন তবে। শীত তখন একটু আকটু পরেছে। অগ্রহায়ণ মাস। তোর বাবা মার ম্যারেজ ডে পার্টি ছিল। পার্টি শেষে ছাদে গেলাম।ঘরে মদ খাওয়া বারণ। তাই আমি আর জামাই বাবু মদ নিয়ে ছাদে বসে পরি। ভালোই জমে গিয়েছিলো আড্ডা। হঠাৎ কে জানি ছাদে আসে। জামাই বাবু বলে উঠে কে? সুচরিতা। শাড়ি পরা ছায়া মূর্তি সামনে এগিয়ে আসছিল। মুখ দেখেই আমার জ্ঞান হারিয়ে যায়। মেয়েটা ছিলো কমলা। পরে দু একবার কমলার কণ্ঠ আমার কানে এসেছে। তবে কখনো কোন ক্ষতি করেনি।
মামার কথা শোনার পর থেকে ভয় আর আমার মন থেকে যাচ্ছে না। সত্যিই রাতে অনেক ভয় হয়তোবা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। আচ্ছা কমলা দিদিকে কি কেউ হত্যা করেছিলো? সে জন্যই কি ওনার অতৃপ্ত আত্মা!!!!?????
ভয়ে পুরো শরীর কাঁপছে। দরজা খোলার শব্দ আরো ঘাবড়ে গেলাম। ফিরে দেখি মামা। মামা বললো মা এখনো ভয়ের মধ্যে আছিস? আমি বললাম হুম মামা। মামা বললো সরি আমি তোকে না বললেই পারতাম। আমারই ভুল হয়ে গেছে। এক কাজ কর তুই ঘুমা আমি তোর পাশেই আছি। আমি বললাম মামা তুমি ঘুমাবে না? মামা বললো আমি রাত জাগতে ভালবাসি রে মা। তাছাড়া সকালে তোর পরীক্ষা। না ঘুমালে কি হবে? তুই ঘুমা আমি তোর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
আমি ঘুমিয়ে আছি মায়ের সাথে। ঠিক ঘুম নয় আবছা ঘুম। মা আমি ঘুমিয়ে গেছি ভেবে কোথায় জানো যাচ্ছে। অনুভব করতে পারছি। হঠাৎ অন্য এক রকম গন্ধ অনুভব করলাম কেউ এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি চোখ খুলিনি। খুললেই যদি ভয়ংকর কিছু দেখি। কিছু একটা আমার পাশে এসে বসল। মাথায় হাত রাখলো। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে গাল নাক কানে হাত বুলাতে লাগলো। আস্তে আস্তে হাত চলে গেলো গলার দিকে। গলা চেপে মেরে ফেলবে কিনা এই ভয়ে আমি অস্থির। মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে মা কোথা থেকে এলো? আমি তো ঘুমিয়ে আছি মামা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। তবে কি এতক্ষণ স্বপ্নে ছিলাম? এখন সত্যি কমলা দিদি আমার ঘাড় মটকাতে এসেছে? আমি চিৎকার করতে যাবো গলা দিয়ে শব্দ বেরুল না। ভগবান মামা কোথায়? এই কমলা দিদিতো আমাকে আস্ত রাখবে না।
আবার দরজার শব্দ হতেই পাশ থেকে জিনিস টা সরে গেলো। চোখ খুলে দেখি মামা আসছে। বললাম মামা আমাকে একা রেখে কোথায় গিয়েছিলে? মামা বলল মা আমি জল আনতে গিয়েছিলাম। কেনো ভয় পেয়েছিস? হুম সব খুলে বললাম। মামা বললেন সরি মা আর এক ইঞ্চি ও যাচ্ছি না আমি। আমি বললাম হুম মামা। কিন্তু মামা কমলা দিদি এতো দিন আসেনি কেনো? মামা বললো তুই সপ্নেই এসব দেখছিলি মা নয়তো তোর মাকে ভয় পায় তাই আসেনি। আমি ভয়ের মধ্যে হেসে ফেললাম। বললাম মামা প্লিজ প্লিজ বলো না কমলা দিদি কি ভাবে মরলো? মামা বললো তুই এই বিষয় মাথার মধ্যে রাখলে হবে বোকা মেয়ে? যত ভাববি ততো ভয় বাড়তে থাকবে। আমি বললাম মামা তুমি যতক্ষণ আছো আমার একটুও ভয় লাগবে না। তুমি সারা রাত থাকো প্লিজ। মামা বললো আমিও বিষয়টা সে ভাবে জানিনা তবে যতদূর জানি।
মেসো মশাই মানে তোর দাদু ভাই অনেক এতিম অনাথ গরীব মানুষের দেখভাল করতো। দিদির যখন চাকরি হয় তখন উনি ১২-১৩ বছর বয়সী কমলাকে তোদের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। মেয়েটা যেমন দুরন্ত ছিলো ঠিক তেমন কাজের ও ছিলো। তুই তখন খুব ছোট। তোর দেখভাল সে ভালো মতই করতো। দিদি জামাই বাবু কখনো কমলাকে চাকরানীর চোখে দেখেনি। খুব আদর করতো। দিদিকে তো মা বলেই ডাকতো কমলা। কিন্তু হঠাৎ কি যেন হয় মেয়েটার। চুপ চাপ হয়ে যায়। আস্তে আস্তে শুকিয়ে যেতে থাকে। রাতে নাকি ঘুমাতে পারতো না। খাওয়া দাওয়া ও ঠিক মতো করতো না। তারপর হঠাৎ তো একদিন গলায় দড়ি দিয়ে বসে। এর পর থানা পুলিশ ও হয়। দিলিপ দা নামে তোদের এক চাকরকে পুলিশ তুলে নিয়ে যায়। পরে ছাড়া পাওয়ার পর আর ফেরেনি সে। তবে যতদূর জানি সে নির্দোষ ই ছিলো।
আমি বললাম আমার একটু আকটু মনে আছে মামা। আমার সাথে খেলতো দিদি। আমাকে খাইয়ে দিতো। মা যতক্ষণ না থাকতো ভুলিয়ে রাখতো মায়ের কথা। আমার দিদা ছোট দিদামণি মাঝে মাঝে আসতো। ছোট দিদার সাথে তুমি আসতে তুলি মাসি আসতো।
মামা বললেন বাহ ভালোই তো মনে রেখেছিস। এবার ঘুমো তো মা। আমি চোখ বুজে আছি কিছুতেই ঘুম আসছে না। মামাকে এভাবে সারা রাত বসিয়ে রাখবো? এ কেমন কথা। মামা বলে ডাকলাম, কোনো সাড়া পেলাম না। মিটি মিটি আলোতে দেখলাম মামা চেয়ারেই ঘুমিয়ে গেছে। না আর জাগিয়ে কাজ নেই। বসে পড়লাম হাত বাড়িয়ে গ্লাস টা নিলাম। জগ উঁচু করে দেখি জল নেই। জল আনার জন্য টর্চ হাতে নিয়ে নামলাম। সিঁড়ি বেয়ে নেমে পড়লাম। রান্না ঘরে ঢুকতে যাবো সদর দরজায় কেউ নক করতে লাগলো। ভয়ে গলা শুকিয়ে গেলো। গিয়ে গেট খুলবো, না জল আনবো, না দৌড়ে উপরে উঠবো বুঝতে পারছিনা। কেউ পেছন থেকে ঘাড়ে হাত রাখলো, হাত থেকে জগ পরে গেলো। মামা বলল ধুর পাগলী আমি? একা কোথায় যাচ্ছিস? আমায় বললেই তো সাথে আসতাম। আমি ভয়ে কাঁপছি। কাঁপতে কাঁপতে বললাম মামা কে জানো দরজা নক করছে। মামা বলল কি বলছিস? এতো রাতে কে আসবে?রাত এগারোটা বাজে প্রায়। তোর মনের ভুল। চল উপরে যাই। আমি বললাম না মামা সত্যি কেউ ছিলো!! মামা বললো কেউ থাকলে তো আবার নক করার কথা, চলরে মা। আমি ভয়ে কেঁদে ফেলেছি।কি হচ্ছে আমার সাথে আজ রাতে। ভাগ্যিস মামা ছিলো নয়তো আমি আজ যেতাম। মা কে বলবো চাকরী ছেড়ে দিতে। না তা নয় বলবো নতুন বাড়িতে উঠতে থাকবো না এই বাড়িতে। আজ যা হচ্ছে আমি কিছুতেই আর শান্তিতে এখানে বসবাস করতে পারবো না।
আমি শুয়ে আছি। মামা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিড় বিড় করে গান গাচ্ছে। বললাম মামা দুঃখিত। তোমাকে অনেক কষ্ট দিচ্ছি। মামা বললো তুই না দিলে কে দিবে? এখন ঘুমো। আমি বললাম মামা তুমিও শুয়ে পরো। মামা বললো নারে মা আমি বসেই থাকি। আচ্ছা মা তুই জগ নিয়ে নিচে গেলি কেনো? আমি বললাম কেনো আবার জল আনতে। মামা বললো একটু আগেই তো আমি জল নিয়ে এলাম। আমি বললাম মামা জগ তো পুরোই খালি ছিলো। কে খেলো? মামা চমকে গেলো। বললো কি জানি। ঘুমা মা আমি আছি।
হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে অনুভব করলাম কেউ আবার আমার গলায় হাত দিয়েছে। মামা কি চলে গেছে আবার? নাকি ঘুমিয়ে গেছে। কমলা দিদি তো আমার আস্ত রাখবে না। হাতটা আস্তে আস্তে আমার বুকের দিকে চলে গেলো। হুট করে আমার উপর সে ঝাঁপিয়ে পড়লো। আমার মাথায় চুমু খেয়ে বুক থেকে হাত নিচের দিকে নিচ্ছে। আমার পাজামা খুলে ফেলতে যাবে আমি কেঁপে উঠলাম। তাকিয়ে দেখি মামা। বললাম মামা ছি, তুমি কি করছো? মামা বললেন একটু আদর করবো তোকে। ভালো লাগবে। আমি বললাম মামা আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। ছেড়ে দাও আমায়। মামা হুঁ হু করে হেসে ফেললো। অনেক বড় হয়ে গেছিস তুই। কমলা যখন ছিলো ওকে খুব আদর করতাম। এখন থেকে তোকে করবো।
অন্ধকার রাত। এই রাতে মানুষের কোন মুখোশ থাকেনা। রাত যত গভীর হয় তার মিথ্যে চেহারা লুকিয়ে আসল চেহারা ভেসে উঠে। এই সব অমানুষ গুলো নষ্ট করে দেয় আমাদের। আমি মামাকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলাম। বিছানা থেকে নামবো মামা আমাকে আবার ধরে ফেললো। বললো শ্রাবণী ভেবেছিলাম আপোষেই তুই কাছে আসবি। কিন্তু না যা করার জোর করেই করতে হবে। আমি বললাম মামা তুমি এতো খারাপ। ছি মামা। আর আমি না তোমার বোনের মেয়ে? মামা বললো তাতে কি আপন দিদি তো আর না। আমি বললাম তোমার জন্য কমলা দিদি গলায় দড়ি দিয়েছে তুমি মহা পাপী। এতো ভাল ভাবতাম তোমায় আর তুমি কিনা? মামা হা হা হেসে উঠলো। বলল শরীরে নয় মনের দিক থেকেও দেখি সব বুঝে ফেলছিস। এত কিছু কে শিখালো? বলেই আমার চুল গুলো টেনে ধরলো। আবার আমার উপরে উঠতে যাবে তখন দরজা খুলে গেলো। কেউ এগিয়ে আসছে। মামা বললো কে তুই? কে? ছায়ামূর্তি বললো আমি কমলা। তুই আজ শ্রাবণীর গায়ে হাত দিতে এসেছিস। তুই এতো নিচ? ত তোর ভাগিনী টাকে ও ছাড় দিবি না? মামা ভয়ে কাঁপতে লাগলো। কমলা দিদিকে এগুতে দেখে মামা বিছানা থেকে নেমে দৌড়াতে লাগলো সদর দরজা খোলার শব্দ পেলাম,,,,,,,,
শেষ রাত বসে আছি। কমলা দিদি আমার থেকে একটু দূরে । বললো লক্ষ্মী তুই আমাকে ভয় পাচ্ছিস? আমি বললাম না দিদি আমি আর তোমাকে ভয় পাচ্ছি না। দিদি বললো আমি তোর জন্যই ছিলাম রে। কি করে ঐ অমানুষটার হাতে তোকে রেখে যাই? আজ একেবারে শেষ করে দিয়েছি। আমি বললাম মানে দিদি? কি করেছো? দিদি বললো ও আমার ভয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে মেইন রোডে চলে গিয়েছিলো।তারপর ট্রাক এসে পিষে দিয়ে গেছে। আমার কোন কষ্ট লাগলো না। বরঞ্চ মনের মাঝে একটা শান্তি অনুভব করলাম। পাপীদের সাথে এমনই হওয়া উচিৎ। দিদি কে বললাম দিদি তুমি আমাকে এতো ভালবাসো কেনো? দিদি বললো তোর দাদাভাই দিদামণি বাবা মা এরা যে কত বড় মনের মানুষ তুই না জানলেও আমি জানি। আমার মতো মা বাবা মরা ধর্ম বর্ণহীন মেয়েটাকে কতো আপন করে নিয়েছিলো। আমি কি করে তাদের কলিজার টুকরা মেয়েটাকে বিপদে রেখে যেতে পারি। কাছে আসতাম না ভয় পাবি তাই। তবে আজ না এসে পারলাম না। আমি বললাম দিদি রাত টা সত্যি খুব ভয়ংকর ছিলো । এখন নেই। তবে এখন থেকে প্রতি রাতেই আমার ভয় লাগবে। তবে ভুতের ভয় নয়। ঐসব অমানুষের ভয়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
রাত যত অন্ধকার হয় সাব কিছুর আসল রুপ বেরুতে শুরু করে। রাত যতটানা ভয়ংকর তার চেয়ে ভয়ংকর রাত্রি কালের কুচরিত্র গুলো।
১৯ এপ্রিল - ২০২৩
গল্প/কবিতা:
১৪ টি
সমন্বিত স্কোর
৫.১৮
বিচারক স্কোরঃ ২.৩৬ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৮২ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।