মা জননী

জননী (মে ২০২৩)

Mohammed Monjur Alam
  • 0
  • ৪৩
মা জননী আইসিইউ তে, ব্রেইন স্ট্রোক করে, হাসপাতালে নিয়ে আসলে আইসিইউ তে ভর্তি করানো হয়। মায়ের অবস্থা তেমন একটা ভালো না। যেকোনো সময়ে হতে পারে দুর্ঘটনা। একলা একা বসে আছি হাসপাতালের করিডোরে। বাবা মারা যায় তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। একমাত্র মা আমার সব। আমাকে নিয়ে মায়ের যত দুশ্চিন্তা। সামান্য চোখের আড়াল হলেই আমার জন্য চিন্তিত থাকে মা। আজ আমার কারণে মায়ের এই অবস্থা, এই জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আমি নিজে!

সেদিন ডিউটি থেকে ফেরার পথে । হঠাৎ একটি মাইক্রো এসে পিছনে থেকে আমাকে ধাক্কা দিলে আমি মোটরসাইকেল সহ ছিটকে পড়ি রাস্তার পাশে। আমার ডান হাত টা ভেঙে যায়। বন্ধু রাফি কল করে আমার মা,কে । মা, সয়তে পারেনি, সাথে সাথে মাথা ঘুরে পড়ে যায় মাটিতে। সেই থেকে মা আজ হাসপাতালে আইসিইউ তে। মায়ের কোন সাড়াশব্দ নেই। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে, পায়চারি করছি হাসপাতালের করিডোরে। বন্ধু রাফি আসলে তাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ি। রাফি- আমার মা,
কথা বলছেনা। আমি মা,কে ছাড়া কেমনে থাকবো,আমি কাঁদতে থাকি, রাফি জড়িয়ে ধরে।

রাফি আমাকে সান্ত্বনা দেয়,আল্লাহর উপর ভরসা রাখ দোস্ত, আল্লাহ অবশ্যই তোমার মা'কে সুস্থ করে দিবেন।

আমার মায়ের একমাত্র সন্তান বলেই, সব সময় মায়ের কাছাকাছি থাকি। মায়ের প্রতি মাসে ডায়বেটিস চেক আপ ঔষধ খাওয়ানো সব আমি নিজের হাতে করি। একটা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সেলসম্যান এর কাজ করি। সারাদিন মোটরসাইকেল নিয়ে কাজ আমার। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মা,কে সময় দিই। সারাদিন মা একলা থাকে বাসায়। সকাল থেকে তিন চার বার কল দিয়ে খবর নেন-- বাবা দুপুরের খাবার খেয়েছিস? হোটেলের কিছু খাবিনা, মা আমাকে দুপুরের খাবার টিফিনবাক্সে দিয়ে দেয়, যাতে আমি বাইরের কোন খাবার না খাই।

গতমাসে মা'কে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলাম নানাবাড়িতে, মাঝে মধ্যে মা'কে খুশি রাখতে হঠাৎ হঠাৎ প্লেন করি, মা ও খুশি তাতে । মায়ের পছন্দের খাবার তিতা করলা।
একদিন মায়ের পছন্দের খাবার তিতা করলা বাজার থেকে একসাথে তিন কেজি নিয়ে আসছি বলে মা আমার উপর যে রাগ। মা আমাকে বলে, এক কেজি নিয়ে আসো না, এক সাথে তিন কেজি! আমি আর মা, বন্ধুর মতো, আমার তো আর মা ছাড়া কেউই নেই তাই মা আমাকে বাবার অভাবটা বুঝতে দিতো না।

আপনি কি মাহমুদা খানমের ছেলে? হঠাৎ করে একটা নার্স এসে জিজ্ঞেস করলো, আমি বললাম, হে। আপনাকে ডাক্তার ডেকেছেন। দৌড়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে। জ্বি! বলেন স্যার, আমাকে ডেকেছেন? ডাক্তার আমার দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো তারপর বললো, হে ডেকেছি, তোমার মায়ের কন্ডিশন খুব খারাপ, ব্রেইনে রক্তক্ষরণ হয়েছে, ইমার্জেন্সি আমরা একটা অপারেশন করবো তবে বেশি আশাবাদী হতে পারছিনা, কিন্তু এটা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। উনার ব্রেইন কাজ করছে না, রক্তক্ষরণ প্রচুর হওয়ার কারণে ব্রেইনের নার্ভ করলো ব্লক হয়ে আছে। আমি কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না। বন্ধু রাফি বললো কাগজ দেন আমরা সাক্ষর করে দিচ্ছি, যা যা করার আপনারা করেন, স্যার। এই বলে আমরা বের হতেই, মা'কে আইসিইউ থেকে ওটি রুমে নিয়ে গেলো সাথে সাথে । এরই মধ্যে ৬ ঘন্টা অতিবাহিত হয়ে গেলো।

ওটি রুমের ভিতর থেকে কোন সাড়াশব্দ আসছে না।
একটু পরে হঠাৎ দেখি ডাক্তার বেরিয়ে আসলো। আমি বসে আছি ওটি রুমের বাইরে , ডাক্তার সোজা আমার কাছে আসলো, আমি বোবার মতো চেয়ে আছি ডাক্তারের দিকে, আমার পুরো শরীরটা যেন ভার হয়ে আসছে, ডাক্তার আমার কাঁধে হাত রেখে বললো- দুঃখিত আমরা তোমাার মা'কে বাঁচাতে পারলাম না! আমি কিছু বুঝতে পারছি না, আমার কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি,চোখে ঝাপসা দেখছি, রাফি এসে জড়িয়ে ধরলো আমাকে। আমার মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো সেই মূহুর্তে । আমি চিৎকার করি,বুক ফাটা চিৎকার! মা হারানোর আত্মচিৎকার। মায়ের দেহ টি সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে নিয়ে আসলো আমার কাছে। মা, মা, আমি কার কাছে থাকবো, মা। আমি তো এতিম হয়ে গেলাম মা। আমাকে হারিয়ে দিয়ে তুমি ভালোবাসার কাছে জয়ী হয়ে চলে গেলে, মা। আজ আমাকে হারানোর ভয়ে থাকতে থাকতে আজ আমাকেই অসহায় করে চলে গেলে মা! তোমার স্বার্থহীন ভালোবাসার কাছে আজ আমি অপরাধী, মা! মা! মা!

পৃথিবীর মা গুলোর ভালোবাসা এমন কেন? সব সময় সন্তানের জন্য নিজের জীবন জলাঞ্জলি দিতে দিধাবোধ করেনা। পৃথিবীর সকল মায়ের প্রতি রইলো শ্রদ্ধা ভালোবাসা।
সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা অবিরাম মায়া বেঁচে থাকুক অনন্ত কাল। নিঃস্বার্থ মায়ের ভালোবাসা, মাতৃত্বের বন্ধন, অটুট থাকুক অনন্ত কাল। মা জননী, দরদমাখা মমতাময়ী ডাকটি, যুগ যুগ ধরে থাকুক ,অম্লান।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শাওন আহমাদ আপনার মা যেহেতু আপনার বন্ধুর মতো ছিলেন, নিশ্চয়ই আপনাদের অনেক মজার মজার স্মৃতিও আছে? আপনি সেই স্মৃতি গুলো লেখার সাথে যুক্ত করে লেখাটাকে আরও সুন্দর করে তুলতে পারতেন। আপনার মায়ের জন্য দুআ রইলো।
মোঃ মাইদুল সরকার আরও ভাল করতে হবে অপশনটা বেছে নিলাম ভোটের জন্য।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মায়ের ভালোবাসা নিঃসন্দেহে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভালোবাসা। "মা" ছাড়া সন্তানের জীবন অসহায়, মমতাময়ী "মা" সন্তানের বন্ধন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। একমাত্র মায়ের ভালোবাসা সন্তানের যাতে কোন স্বার্থ নেই।

১৮ ফেব্রুয়ারী - ২০২৩ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪