অবহেলা

অবহেলা (মে ২০২৪)

পার্থ সোম
  • 0
  • ১৬১
"অমিত স্যার হুমায়ুন আহমেদ এর ছাত্র।তার কাছে কেমিস্ট্রি পড়ছি সপ্তাহ খানেক হলো।তার মুখে প্রায়ই শুনি হুমায়ুন আহমেদ এর স্মৃতিচারণ।
হুমায়ুন স্যার ক্লাসে কম কথা বলতেন।ক্লাসে এসেই হোয়াইট বোর্ডে লিখে যাবেন।আমরা সেগুলো টুকে নেব।হুবহু সেগুলোই পরীক্ষায় পড়বে।

অমিত স্যারের বয়স বাহান্ন পঞ্চান্ন এমন।সুঠাম দেহ।তিনি রাগী হলেও রসিক মানুষ।
স্কুল শেষ হতেই মন টানতে শুরু করে।পাঁচটায় স্কুল শেষ, পাঁচটা পনেরতে তার কাছে পড়া।

সাইকেল দ্রুত চালিয়ে কিছুক্ষণ যেতেই বুকে কেউ যেন হাতুড়ি পেটাতে থাকল।
ওকে আমার ভাল লাগে।ওর নাম...হবে কিছু একটা।ওকে আমিও একটা নাম দিয়েছি।কিন্তু সে নামে ডাকিনি এখনো।ও আমার আরো ভালো বন্ধু হলে ওকে নামটা বলব।
ও আমাকে দেখে হেসে বলল তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।একসাথে যাব তাই।
ওকে দেখলে আমার চারপাশ সুন্দর হয়ে ওঠে।ওর সবুজ সাদা স্কুল পোশাকে ওকে পৃথিবীর সবচেয়ে মিষ্টি মেয়ে মনে হয়।ওকে আমি এটাও বলতে পারিনি।
ও আমাকে একদিন বলেছিল, আমি যদি তোমার মত ফর্সা হতাম, আমি কত কালো তারপর কাদার অভিনয় করে দেখাত।
আমার মন বলত, তাকে বলি তোমার মুখ এত মিষ্টি, মনে হয় চিনি ঢেলে দেওয়া।
সে হাসত কিন্তু সে হাসি পুর্ণ হতো না।তার সে অপুর্ণ হাসি আমার কাছে অমৃতময় মনে হতো।ওর সাইকেলটা কত যত্নে রাখা।নিজের নামটা কত সুন্দর করে লিখেছে সাইকেলে।আর আমার সাইকেল!স্কুল গ্যারেজে ঢুকে প্রাইয় দেখি আমার সাইকেল ফেলানো।তারপর লাথি মেরে অন্যদের সাইকেল আমিও ফেলে দিতাম।
স্যার যে কি পড়ান সবই যায় মাথার উপর দিয়ে।কেমস্ট্রির মাঝেও অঙ্ক ঢোকানোর কী মানে।ভালো লাগে না আমার।ও সবকিছু পারে। আমাকে স্যার যদি বলে বুঝেছ?আমি বলি হুম স্যার।
ওর কলম পড়ে গেল।আমি তুলে দিলাম।তার ঠান্ডা আঙুলের স্পর্শ আমাকে অদ্ভুত এক অনুভূতি দিল।আমার সামনের বেঞ্চিতে বসে সে।মাঝে মাঝে পিছন ফিরে তাকায়।আমি নাকি প্লেতে ওর সাথে পড়তাম এক সেকশনে।তার খাতায় নাকি ফুল এঁকে দিতাম। দশ বছর আগে প্লেতে পড়তাম। অত কি মনে আছে আমার।ক্লাস টু পর্যন্ত কত বান্ধবী ছিল আমার। থ্রি থেকে বয়েস স্কুলে পড়ি।ওরা গার্লস এ।দেখা না হতে হতে ভুলে গিয়েছিলাম।তবে এখানে ওকে প্রথম দেখেই আপন মনে হয়েছিল।সেও আপনের মতই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল বন্ধুত্বের।
একদিন ইংরেজি ব্যাচের পড়া বাদ দিয়ে ওর সাথে ঘুরলাম।পাক্কা দেড় ঘন্টা। কত গল্প করলাম আমরা আকাশ পাতাল।কলকাতা বেড়াতে যাবার আগে সে বলল সাবধানে যেও।কথাটা বারবার বাজতে লাগল কানে।কলকাতা থেকে ঘুরে এসে কলকাতার গল্প বলে চললাম তাকে।সে মনোযোগ দিয়ে শুনল।ও সেদিন আমাকে বলেছিল কাল কালো জামা পরে আসবা।আমি ইচ্ছা করেই সবুজ জামা পরে আসি পরদিন।ও একটু বকুনির সুরে বলল কালো জামা পরে আসনি কেন?সে একটা সুন্দর কালো জামা পরে এসেছিল।একটা ক্যামেরাও নিয়ে এসেছিল সাথে করে।সুগন্ধা আমাদের ছবি তুলে দিয়েছিল।ও আমাকে ছবি দেয়নি।আমি জানতাম না উচিত হবে কিনা ছবি চাওয়া।

আমি ওর সাথে কদিন ধরে তুইতুকারি করে কথা বলা শুরু করলেও ও তুমিই বলতো।আমিও তুই কথাটা চলমান রাখতে পারলাম না।ও আমাকে ওদের পাড়ার চার্চে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।তবে পরবর্তীতে আমি একা গিয়েছি।ওর সাথে যাওয়া হয়নি।আমি বলতাম তোমার পদবি গোমেজ না হয়ে রাওলিং কিংবা জনসন হলে আরও ভাল হতো।সে বলত কেন?
তখন আমি উত্তর খুজে পেতাম না।

"এ কি সত্য সকলই সত্য, হে আমার চিরভক্ত। মোর নয়নের বিজুলি-উজল আলো যেন ঈশান কোণের ঝটিকার মতো কালো এ কি সত্য।"
এই কবিতাটা রাতে প্রায়ই গুনগুন করতাম।প্রেমের কি পুজার কে জানে।তবে আমি মানি ওর চিরভক্ত আমি।আমি দিদিকেও বলতাম ওর কথা।কিন্তু দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিল কিছুদিন পরই।এরপর ওর কথাগুলো ডায়েরিতে লিখতে শুরু করলাম প্রতিদিন।সে যা বলত,আমার যা মনে থাকত সবই লিখতাম।ও একদিন মেলায় আমার হাত ধরে ঘুরেছিল।ওর স্পর্শ আমি আজও অনুভব করি।সে এক অদ্ভুত ভালোলাগা।হয়তো এটাই প্রেম।
একদিন ও আমাকে একটা কলম দিয়েছিল।সেটি পেয়ে খুব খুশি হবার ভান করি।কলমটা নতুন তবে অতটাও খুশি হওয়ার মতো না।তা হয়তো সে বুঝতে পেরেছিল এবং পরদিনই আমাকে দারুণ একটা কলম উপহার দিয়েছিল।
বলেছিল,নাও তোমার জন্য এনেছি এটা।

আমি তাকে কি উপহার দিয়েছি?
একটা রুপাঞ্জেলের ব্যাচ কিনেছি ওর জন্য। ওটা ওকে দেব।কিন্তু দিতে পারলাম কই।
ওর দেওয়া কলমদুটো আজ দেওয়ালে ছুঁড়ে ভেঙেছি। ও আমার জন্য আর অপেক্ষা করে না।আমিও পারি না ওর কাছে যেতে।ব্যাচের পরীক্ষায় আজ সকালে শুনেছি একটা প্রশ্নের উওর। ও ঝাঁঝের সাথে বলল জানিনা।রাতে আমার কান্না আসত।কিন্তু চোখ দিয়ে জল বের হতো না।আমার কোনো দোষ আমি খুঁজে পাইনি।আমি অমিত স্যারের কাছে পড়া বাদ দিলাম।স্কুল ছুটির পর রাস্তায় দুচোখ জোড়া ওকেই খুঁজত।দেখা হয়ে গেলে ও দ্রুত সাইকেল চালিয়ে চলে যেত।একদিন ওকে দেখলাম অন্য একটা ছেলের সাথে পাশাপাশি সাইকেলে গল্প করতে করতে যাচ্ছে।আমাকে দেখতে পায়নি।আমি ওদের পিছনে ছিলাম।সাইকেলের গতি কমিয়ে দিয়েছিলাম।

এক শুক্রবারে রাস্তায় চলেছি একা একা।হঠাৎ কাঁধে খোচা! দেখি ও।সাইকেল থামিয়ে আমাকে বলল তুমি তো এখন আমাকে চেনই না।
এ প্রশ্নের কি উত্তর দেওয়া উচিত আমি জানিনা।ওর দিকে তাকিয়ে হাসি উপহার দেই।ও হাসেনি সেদিন।তাকিয়ে ছিল কিছুক্ষণ আমার দিকে।তারপর চলে গেল।

এক বছর হলো ওকে দেখিনা।ও ঢাকার একটা কলেজে ভর্তি হয়েছে।আরও দিন কাটল।মাস গেল,বছর গেল।তবে দেখা হয়েছে আবার আমাদের।
অনেক দিন পর। ওকে দেখে এগিয়েও যাইনি কথা বলার জন্য। কী ভাবে ও নিজেকে?এত দেমাক!
আমিও কম যাই না।তবে যখন নিজেকে মনে হয় বড় একা।আমার প্রেমিকাদের ভালোবাসা নয়,আমি ওর অবহেলার কথা ভেবে তৃপ্তি পাই।বার বার মনে হতো আরো কটা দিন বেশি পেতাম যদি।"

দম বন্ধ করে পলি তার বাবার লেখা পড়ছিল।বেশ কয়েকটা গল্প কবিতা লেখা এ খাতাটিতে।বাবার পুরাতন বইগুলো নড়াচড়া করতে করতে সে খাতাটি পেয়েছিল শেলফ এর দ্বিতীয় সারির বইগুলোর পিছনে।কে এই মেয়েটা!তার বাবার প্রথম ভালোলাগা?রাগ হচ্ছিল পলির মেয়েটার উপর।তার এমন ভালোমানুষ বাবাকে কিভাবে কষ্ট দিয়েছে!নিশ্চয় বাবার লেখা ডায়েরিও আছে। পলি বুকশেলফ তন্ন তন্ন করে খুঁজতে লাগল। পেল না।

একদিন সে বাবাকে জিজ্ঞেস করেই বসল।বাবা গোমেজ কে?তোমার ছোটবেলার প্রেমিকা?
পলির দিকে কিছুক্ষণ তিনি তাকিয়ে রইলেন।তারপর বললেন,ওকে আমি ভালোবাসতাম তবে ও না।ও আমাকে অবহেলা করতে ভালোবাসত।
সেদিন নীল আকাশ ছেয়ে গিয়েছিল ঘন কালো মেঘে।
তারপর কাদল নীল আকাশ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

প্রিয় মানুষের অবহেলাও উপভোগ্য।

০৯ ডিসেম্বর - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৯ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "আতঙ্ক”
কবিতার বিষয় "আতঙ্ক”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫