বাবা

বাবা (জুন ২০২৩)

পার্থ সোম
  • 0
  • ১৬৬
তখন দুপুর। উজ্জ্বল ডোম ঘুমুচ্ছিল।হাসপাতাল থেকে গাড়ি পাঠিয়েছে।বৌ ঘুম থেকে ডেকে তুলল।একটা লাশ মানেই বেশ কিছু টাকা।মাসিক তিন হাজার টাকা বেতনে কী সংসার চলে!তাই লাশের খবর আসলেই তার মনটা খুশি হয়ে ওঠে।কে মরল, কিভাবে মরল এতে উজ্জ্বলের কিছুই যাই আসে না।মদ খেয়ে সে শুরু করে মানব মানবীর দেহে কাটাছেড়ার কাজ।কখনো সে ভাবে না কেন ছেলেটা আত্মহত্যা করতে গেল,বিষ খেয়ে মরা মেয়েটার পোস্টমর্টেম রিপোর্টে ডাক্তার কেনই বা লিখল হার্ট অ্যাটাক! এসব ভেবে তার কাজ নেই।নিষ্ঠুরের মতো বুক চিরে ফুসফুস বের করে আনা, পেট থেকে কিডনি, লিভার বের করা অথবা মাথা ফাটিয়ে মগজ বের করে পেটের মধ্যে পুরে তা সেলাই করে দেওয়া, এসবের মাঝেই সে মেতে থাকে।

ছেলেটা বড় হচ্ছে।ক্লাস নাইনে এবার। লেখাপড়ায় বেশ ভালই।আশেপাশের স্কুলে ছেলেকে ভর্তি করার সাহস পাইনি উজ্জ্বল। তাদের বস্তি থেকে মাইল তিনেক দূরের একটা স্কুলে পড়ে সে।স্কুলের কিছু মাস্টারদের খুব বাজে একটা স্বভাব "তোর বাবা কি করে রে?"এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার।উজ্জ্বল তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল,"শোন বাপ কি করে শুনলি কবি আমার বাপ রিকশা চালায়।" মানিক সে কথাটাই বলে।তার ময়লা পুরাতন পোশাক দেখে অনেকেই একথা জিজ্ঞেস করে।হয়তো কেউ মানিকের উত্তর শুনে একটু সহানুভূতি দেখানোর ভান করে, তাতে মানিকের কিছু আসে যায় না।
উজ্জ্বল ডোম কালো কিন্তু মানিক আরও কালো। উজ্জ্বল ডোম মাঝে মাঝে সোহাগ করে তাকে বলে কালা মানিক।ছেলেকে স্কুলে পড়ানোর ইচ্ছা ছিল না উজ্জ্বলের।ডোমের ছেলে ডোম হবে।উজ্জ্বলের বাপ ডোম ছিল।সেও ডোম তার ছেলেও হবে ডোম।কিন্তু কালা মানিকের মা তা হতে দিল না।পরিচয় গোপন রেখে লোকের বাড়ি কাজ করে ছেলের বই কেনার টাকা, স্কুলের ফিস দেয় মা।

উজ্জ্বল ডোম মাঝে মাঝে ছেলেকে লাশের গল্প শোনাতে যায়।দিন চারেক আগে বাড়িতে ফিরে অনেকক্ষণ ঝিম ধরে বসেছিল।তারপর শুরু করল,বুঝলি বাপ, আজ এক বুড়োর লাশ কাটলাম...
মানিক উঠে চলে গিয়েছিল।তার এসব ভাল লাগে না।মানিক হয়েছে বাপের উল্টো। বেশ ভিতু।মাঝে মাঝে বাবার উপর রাগ হয় মানিকের। হিংস্র মনে হয় লোকটাকে।কিভাবে পারে মানুষ কাটতে!দুদিন হলো মানিক রাস্তায় একটা রুপোর আংটি পড়ে পেয়েছে।নীল পাথর বসানো। উজ্জ্বল ছেলের হাতে আংটি দেখেই হেসে উঠেছিল।"ডোমের ছেলের হাতে আবার আংটি! " দে ওডা আমারে বেঁচলি চার পাঁচশ টাকা পাবানে"।

মানিক দেয়নি।সেটা সে সবসময় হাতে দিয়ে রাখে।
তৈরি হতে বিশ মিনিট এর মতো সময় নিল উজ্জ্বল ডোম।

"ট্রাক এক্সিডেন্ট এ মারা গেছে ছেলেটা"। বলল ডাক্তার। "চাঁকা মাথার উপর দিয়ে উঠে গেছে।মাথার কিছুই নেই আর।" এসবে উজ্জ্বল ডোমের কিছুই যায় আসে না।এমন সে আগেও দেখেছে অনেক।লাশ কাটা ঘরে পৌছে সাদা কাপড়ে ঢাকা শরীরটা একটানে সরিয়ে ফেলল উজ্জ্বল ডোম।এই প্রথম চোখে জল এল উজ্জ্বল ডোমের।

ছেলেটার কালো শরীর তার চেনা।আঙুলের নীল পাথর বসানো রূপার আংটিটা তখনো অক্ষতই আছে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মোঃ নুরেআলম সিদ্দিকী ছোট গল্পের মতোই হঠাৎ শেষ করে দিলেন। তবে একটা আবেগ জমে উঠলো। অনেক শুভ কামনা রইল।।
ফয়জুল মহী সত্য সুন্দর ও সতেজ অনুভব! দারুণ সাহিত্য চিত্র তুলে ধরেছেন এই ধারা যেনো অব্যাহত থাকে অবিরত ।
শাওন আহমাদ বেশ ভালো লিখেছেন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এক ডোম বাবার গল্প

০৯ ডিসেম্বর - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৮ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "নগ্নতা”
কবিতার বিষয় "নগ্নতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ মে,২০২৪