এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়- এখন তার দেহে যৌবন ! প্রেমের ঊপযুক্ত সময়- দুচোখ ভরা সোনালি স্বপ্ন – যা পায়ে ঠেলে যুদ্ধে যাওয়া মুস্কিল! স্বপ্ন ভাংগা অপরাধ, এই অপরূপা নারি, শালদা নদির জলের মত বহতা যৌবন, প্রকৃতির মত সুন্দর এই বিজু ! তাকে ছেড়ে কি যুদ্ধে যেতে পারে হাজারি? না, এই প্রেমের জন্যই তো কত রাজা- বাদশা সিংহাসন ত্যাগ করেছেন- হাজারি সামান্য মাত্র!
জয়নাল হাজারি, ফেনি কলেজের ছাত্র, ভালবাসে বিজুকে! শীঘ্রই বিয়ে করবে তারা , বিজুর বাড়িতে প্রস্তাব নিয়ে যাবে তার পরিবার! এরই মাঝে যুদ্ধের ডাক আসে- এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ! কথাগুলো বারবার ঘুরেফিরে বাজে হাজারির বুকে ! বিজুকে নিয়ে বসে নদির পাড়ে! স্রোত বয়ে চলে- দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে আসে তার বুক চিরে,-বিজু! তুমি কি করতে বল , যুদ্ধে যাব- নাকি তোমাকে বিয়ে করে সংসারি হব!
বিজু উত্তর দেয়- যুদ্ধ চলে বছরের পর বছর, কেউ মারা যায়, কেউ পংগু হয়, জীবন চলে যাবে- যৌবন ফিরে আসবে না! তুমি পারবে বিশ বছর পর এসে আমাকে বিয়ে করতে? উত্তর দিতে পারেনা হাজারি, নিরবে চেয়ে থাকে নদির ওপারে! দুটো বিমান উড়ে আসে পাক সেনাদের ক্যাম্প থেকে- বোমা ফেলে নিরস্র ফেনি শহরে ! আগুন জ্বলে ওঠে দাউদাউ করে – লোকজন ছুটতে থাকে দিকবিদিক ! পোড়া মাটির গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে ! আগুন জ্বলে ওঠে হাজারির বুকে- লাফিয়ে ওঠে, - না! আমি যুদ্ধে যাব! হাজারি বসে থাকতে পারে না- বিজু ! বেঁচে থাকলে দেথা হবে! বিজু হাতটা টেনে ধরে- সত্যিই তুমি যুদ্ধে যৃবে ?
-হ্যা! এ দেশের মাটি,মানুষ ধবংশ করবে পাক সেনারা, আর আমি বসে থাকব? বিজু! আমি চলে যাচিছ, খবরটা আমার বাড়িতে দিও! আমি মারা গেলেও দু:খ করোনা, হাজারো বিজুর স্বপ্ন বেঁচে থাকবে! দুপা এগিয়ে গিয়ে আবার ফিরে এসে বিজুর হাতটা ধরে – বিজু, তোমাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি, কিস্তু এই কি আমাদের শেষ দেখা ? বিজুর চোখে জল, - আমায় কি বলে যাচছ ?
-আমার মাথায় হাত দিয়ে ওয়াদা কর, আমার জন্যে অপেক্ষা করবে! নতুন ভূমিতে, স্বাধিন দেশে তোমাকে বিয়ে করে ঘর বাঁধব!
হাজারি চলে যায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধানে , বিলোনিয়া সিমান্ত পার হয়ে ত্রিপুরা প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে যোগদান করে! তার সাথে রশিদ, কামাল, আমিন, শাহাবুদ্দিন, মনির, আনোয়ার, হেলাল, গোলাম রসুল প্রশিক্ষণ শেষে নোয়াখালি ফিরে আসে ! সোনাগাজি ক্যাম্পে সুবেদার গুল মোহাম্মদ ও রাজাকাররা মিটিং করছিল ! ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে হাজারিরা শত্রুদের ঘিরে ফেলে তিনদিক থেকে ! অক্টোবরে তাদের প্রথম অপারেশন- গুলি ছোড়ে মুহুর্মুহু ! এরপর মতিগন্জ, চিথলিয়া, বিলোনিয়া সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর ফেনি শত্রুমুক্ত করে!
চারদিকে পোড়ামাটি আর ধ্বংশ- স্বজনরা অনেকেই নেই! যুদ্ধক্ষেত্রেই খবর পেয়েছিল বিজুর বিয়ে হয়ে যায় এক রাজাকারের সাথে! যুদ্ধের প্রথম দিকেই ওরা গ্রামে ফিরে যায়! বন্ধুরা বলে –বিজুকে ধরে নিয়ে আসি! বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজারির স্বপ্নভরা চোখ নিস্তব্ধ, যে প্রিয়তমা বিজুর জন্য স্বাধিন বাংলাদেশ নিয়ে এসেছে, আজ সে পরাধীন, অপরের বাহুবন্ধনে! ঠিকানা সংগ্রহ হাজারি নিজেই যায় বিজুকে উদ্ধার করতে! খবর পেয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় তার স্বামি ! বাড়ির দরোজায় এসে দাঁড়ায় তারা, বাড়ির ভেতরে ঢোকে রশিদ ও কামাল! অন্তসত্তা বিজুকে প্রশ্ন করে তারা- নেতা জানতে চেয়েছেন, আপনি কি স্বেচছায় বিয়ে করেছেন, না জোর করে বিয়ে করেছে আশরাফ রাজাকার! যদি জোর পূর্বক বিয়ে করে, তাহলে হাজারি আপনাকে নিয়ে যেতে এসেছে! বিজু উত্তর দেয় – সে নিজের সম্মতিতে এ বিয়ে করেছে!
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়
১৭ সেপ্টেম্বর - ২০২২
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“নভেম্বর ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী