১.
কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহাকাশ যানটি আছরে পরল। অড্রিন কে কিছু বলার চেষ্টা করলো লিকো। কিন্তু পারলো না। সে এতটাই আঘাতপ্রাপ্ত যে তার মনে হল কোন শক্তি আর অবশিষ্ট নেই। অড্রিন কোন রকমে ধ্বংসস্তূপ থেকে লিকোকে বের করলো। চারদিকে ধুধু মাঠ, বালি আর বালি, কোথাও কোন পাথর বা পাহাড় কিছুই নেই। তারা হাটতে লাগলো। প্রায় দেড় থেকে ২ ঘণ্টা হাটার পরে ভাবল এভাবে হাটার চেয়ে ওখানেই মরে যেতাম সেটাই ভালো ছিল। অড্রিন বলল নাহ। আমাদের কিছু একটা করতেই হবে। এতক্ষণ মনে ছিলোনা যে বায়ুর চাপ কত তা দেখবে, কিংবা এখানে নাইট্রোজেন, অক্সিজেনের ঘনত্ব কত । অড্রিন এবার চেক করল, দেখল বায়ুর চাপ এখানে পৃথিবীর প্রায় কাছাকাছি। এর পর সে দেখল নাইট্রোজেন ৭৭ শতাংশ ও অক্সিজেন ২৩ শতাংশ। এটি দেখে তার চোখ ঝলমল করে ওঠলো। আরে এ যে দেখি পৃথিবীর বায়ুর মতই। সে আর দেরি করল না, লিকোকে বলল লিকো দেখো। এর বায়ু আমাদের মতই। লিকোও পরীক্ষা করে দেখল। হ্যাঁ সত্যিই তো। অড্রিন লিকোকে বলল, লিকো আমার মনে হয় এখানে নিশ্চয় কোন প্রাণী আছে। চলো আমরা অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলি। লিকো প্রথমে মেনে নিতে চাইলো না। প্রথমে অড্রিন এই রিস্ক নিলো। সে সফল হল। তার শ্বাস নিতে সামান্য সমস্যা হলেও সে মানিয়ে নিল, তাই লিকোও একই কাজ করল। এবার তারা অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দিলো, দুজনে হাঁটছে তো হাঁটছে।
২.
প্রায় আট ঘণ্টা হাটার পরে তারা দূরে কিছু গাছপালা দেখতে পেল। এবার তারা আরও উচ্ছ্বসিত হল। সত্যি কি এখানে কোন মানুষ বাস করে.......। তারা নতুন উদ্যমে হাঁটা শুরু করলো। সেই গাছ পালার কাছাকাছি যেতেই তারা দেখতে পেলো সেখানে সুন্দর লোকালয় রয়েছে। মানুষ তো নেই। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব তাহলে। তারা কাছে গেল। একটা খুব সুন্দর কাঠের ঘর দেখতে পেল। তারা আস্তে আস্তে সেদিকে অগ্রসর হল। ঘরে ঢুকতে গেলেই ভেতর থেকে একজনকে দেখতে পেল। আরে এ যে পৃথিবীর মানুষের মত। লোকটা নামাজ পড়ছে। নামাজ শেষে লোকটি যখন সালাম ফিরাল তার বাম দিকে ২জন ব্যক্তি দেখতে পেল। প্রথমে ঘাবড়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে বলল তোমরা কারা। তারা এমন দৃশ্য দেখে বাক রুদ্ধ হয়ে গেলো। লোকটা আবার জিজ্ঞেস করলো তোমারা কারা? অড্রিন বলল আমি ডঃ অড্রিন আর ও ডঃ লিকো, নাসার মহাকাশচারী। দুর্ঘটনায় এখানে এসে পরেছি। এবার লোকটিকে বলল আপনি কে? লোকটা বলল আমি ইব্রাহীম মানে আব্রাহাম, ডঃ আব্রাহাম, রাশিয়ার মহাকাশচারী। তোমাদের মতই এক দুর্ঘটনার শিকার। লোকটি বলল, সন্ধ্যা হয়ে এলো চলো কিছু খেতে খেতে আলাপ করি।
৩.
আমি মহাকাশ নিয়ে গবেষণার সময় বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ নিয়ে পড়াশুনা করি। কোরআন সেগুলোর অন্যতম। যদিও আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলাম না। আমার এক মুসলিম বন্ধুর সহযোগিতায় আমি কোরআন পড়ি। সেখানে মহাকাশ সম্পর্কে অনেক ক্লু পাই। সেখানে অনেক কিছুই বলা আছে তবে হ্যাঁ হুবহু, বিস্তারিত কিছু বলা নেই কিন্তু অনেক কথাই আছে। এভাবে আমার একদিন সৌভাগ্য হয় মহাকাশ ভ্রমণের। ব্যাস উঠে পরি মহাকাশ ভ্রমণে।
৪.
একটি সুন্দর দিন বেছে নেয়া হয় আমাদের ভ্রমণের জন্য। লিকো মনে মনে ভাবছে এই লোকটি কি বলছে আবোলতাবোল। প্রথমে সুন্দর ভাবেই শুরু হয় আমাদের যাত্রা। সবকিছু ঠিক ঠাক চলছিলো। কিন্তু আমরা নতুন এক গ্রহের কাছাকাছি আসতেই আমাদের মহাকাশ যানটি একটা ঝড়ের কবলে পরে বিধ্বস্ত হয়। এখানে, সবাই মারা যায়। শুধু আমি বেচে যাই, জানিনা কিভাবে। আমি ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দেই। যদিও আগে ঈশ্বরে এতটা বিশ্বাস করতাম না।। এরপরে আমি যখন ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি, আমি স্বপ্ন দেখি কেও একজন আমাকে বলছে “আল্লাহ সৃষ্টি এবং ধ্বংসের মালিক। আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়েছেন।” সাথে সাথে আমার ঘুম ভেঙে যায়। তাহলে আল্লাহই কি আমাকে বাঁচিয়েছেন? আমি জানি না। কিন্তু এর পরে কেন জানি মনে হল আমার নামাজ পড়া উচিৎ, কিন্তু এখানে পানি নেই। কারণ নামাজ পড়তে হলে ওজু করতে হয়। ওজু করতে পানি লাগে। আমি আশেপাশে পানি খুঁজতে লাগলাম, কোথাও পানি নেই, এভাবে হঠাৎ আমার মুখে পানি এসে পরল।…… খোকা ওঠ, পানি ছিটিয়ে বলল মা। উফ মা দিলে তো স্বপ্নটা নষ্ট করে, আমি মহাকাশে ছিলাম। বেলা বাজে ১০টা ইনি এখনও ঘুমাচ্ছে, ওঠ, ওঠ বলছি, আজ না আমরা বাড়ি যাব। বাড়ির কথা শুনেই রাজ্যের ঘুম একেবারে হারিয়ে গেল খোকার, মানে ইব্রাহিমের।
৫.
ইব্রাহিম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র। বাবা মাঝারি ব্যবসায়ী। তার সংসারে এই তিন জনই। আজ থেকে দশ বছর আগে ঢাকায় পারি জমায় তারা। ভাগ্যের সন্ধানে। ভাগ্য তাদের সহায় হয়। তাই এত বছর গ্রামে যাওয়া হয়নি তাদের। কিন্তু এখন কোনও এক কারণে তার বাবা বাড়ি যাবার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। যাই হোক তবুও তো এতটা বছর পরে তাদের বাড়ি যাওয়া হচ্ছে। এটা ভাবতেই মন খুশিতে ভরে উঠে ইব্রাহিমের। তাই তো ঝটপট বিছানা ছেড়ে দেয়, গোসল করে তৈরি হয়ে নেয়, নাস্তা করে। আজ দুপুরে গ্রামের বাড়ি যাবে তারা। গ্রামের বাড়ি পাবনার কচুলা গ্রামে। পদ্মা পাড়ি দিয়ে যেতে হয়। আগে এখানে ট্রেনে যেতে হতো, এখান বাসেও যাওয়া যায়। ১০ বছর পর বাড়ী যাচ্ছে তাই ভাবতেই ইব্রাহীমের কেমন লাগছে। ছোটবেলার কত স্মৃতি ফেলে এসেছে।
৬.
ঘর থেকে বের হয়ে প্রথমেই শ্যামলী বাস স্ট্যান্ডে পনের বিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হয়। এরপর ওদের বাস ছাড়ে। বাস চলছে আর সে বাইরের দৃশ্য অবলোকন করছে। কিছুক্ষণ পর নিজের অজান্তেই সে স্মৃতি চারণ করতে লাগলো। ছোটবেলায় পদ্মায় কত দাপাদাপি করেছে সে। সে কি পানি ছিল নদীতে, এপার থেকে অপার দেখা যেত না। নদীর স্রোত দেখে ভয় লাগত, কিন্তু এরপরও এখানে সাতার কাটত ও আর ওর বন্ধুরা। গ্রামের মেঠো পথ ধরে দৌড়াদৌড়ি করত, পাখি শিকার করত, আখ চুরি করে খেত। এমন কোনও দুষ্টুমি নেই যা সে করত না। এভাবে ভাবতে ভাবতে কখন জানি সে ঘুমিয়ে পড়ল।
৭.
নদীর কাছাকাছি আসতেই তার মা বলল, খোকা কিরে ওঠ, দ্যাখ, পদ্মা। ইব্রাহিম বাইরে তাকাল। কিন্তু কথায় সে নদী? এ যে দেখি মাঠ। এ তো মরা নদী। নদীটি দেখেই তার মন খারাপ হয়ে গেল। সে এমন গ্রাম কল্পনাও করতে পারল না। নদীতে পানি একেবারেই নেই, চর জেগে আছে, এখানে আবার ধান চাষ হচ্ছে। এসব দেখে তার বিরক্তই লাগলো। এভাবে বাসটি যখন সেতু পার হল এরপর হঠাৎ করে তাদের বাসের সামনে একটি ট্রাক এসে লাগিয়ে দিল। ব্যাস, কিছু বুঝার আগেই সব ওলটপালট হয়ে গেল। সে বুঝতে পারছে না কিছুই, এটা কি হল, মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পেয়ে সে আসতে আসতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে, আর ওই মরা নদীর কথা মনে হচ্ছে.... আর...মহাকাশযানটি আছরে পরল, সে বেরুতে পারছে না.........।
[বি.দ্র: কম্পোজে দেরি হওয়ায় লেখাটি ২ তারিখে প্রকাশিত হল]
২০ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪