ভূমিকা
মানুষের অনেক কষ্ট থাকে। লেখকেরও কিছু কষ্ট থাকে। একজন লেখক যখন কিছু লেখতে পারে না তখন এর চেয়ে বড় কষ্ট কিছু হতে পারে না। জীবিকার তাগিদে অনেক কিছুই হয়ত লেখা হয়ে ওঠেনা। তাই শুধুই আমার পাঠকের কথা ভেবে দু ঘণ্টার এই তুচ্ছ প্রয়াস।
“ কষ্ট করে বানাই আমি, মজার মজার যন্ত্র
করব কি ভাই, শিখাই তারে মানবীও মন্ত্র।
কষ্ট করে বানাই আমি, মানবীও মন্ত্র
করব কি ভাই, এ যে দেখি আজব ধাঁচের যন্ত্র।
আমার কষ্ট সুধাই কারে
কেবা জানে মন্ত্র
স্বল্প কালে, অল্প জ্ঞানে, গড়ি গঠনতন্ত্র।
কষ্ট করে বানাই আমি, মজার মজার খেলা
করব কি ভাই, লাগলে খারাপ আমায় তুমি দিও জোরে ঠেলা।”
--------------------------------------------------
ধুর একটা একটা করে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করছে আমার আনমনে বলে উঠলো লিকো। ওপাশ থেকে ফিওলা বলে উঠলো, হায় যদি তোমার মাথায় আজ চুল থাকতো......। কথা শেষ করার আগেই থামিয়ে দেয় লিকো, আমার সমস্যার তুমি কি বুঝবে, যা তোমার মাঝে নেই। আসলেও তাই ফিওলার কোন কষ্ট বা রাগ হয় না, তার কোন আনন্দ নেই, সে হাসতেও জানে না, আর জানবেই বা কি করে, সে যে রোবট।
আচ্ছা লিকোর পরিচয়টা আগে দেয়া যাক। লিকো হল ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটির হিওম্যানয়েড বিভাগের সাবেক ছাত্র। সেখানে পড়ার সময় একটা পিকনিক এ সড়ক দুর্ঘটনায় সে তার প্রেমিকাকে হারায়। সে জানে তার প্রেমিকার জায়গা অন্য কেও পূরণ করতে পারবে না। তাই সে একদিন সিদ্ধান্ত নেয় এমন একটি রোবট বানাবে যার আচরণ হবে তার প্রেমিকার মত। সে যেহেতু হিওম্যানয়েডের ছাত্র তাই রোবট বানানো তার কাছে নতুন কোন বিষয় নয়। কিন্তু আসল সমস্যা হল রোবটের বাহ্যিক অবয়ব নাহয় মানুষের মত দেয়া যেতে পারে কিন্তু মানুষের মানবীও গুণাবলী কিভাবে দেবে সে? এই ব্যাপারটি নিয়েই কাজ করছিল সে। ফিওলা তার সহকারী এক রোবট। সে তার কাজে সহায়তা করে ঠিক ই কিন্তু তা কেবল গাণিতিক বা বৈজ্ঞানিক ব্যাপারে। সে হয়ত খুব দ্রুত অনেক সমস্যার সমাধান দিতে পারে কিন্তু সে জানে না মানুষের আবেগ বলে একটি ব্যাপার আছে। তার কিছু আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি আছে যার মাধ্যমে সে কিছু কিছু কথা বলে উঠতে পারে যেমনটি চুল নিয়ে করলো লিকর বেলায়।
যাই হোক, মানুষের ইমোশন খুবই জটিল। এটি কখনো পজিটিভ আবার কখনো নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া করে থাকে। মানুষের প্রাথমিক ইমোশন গুলো হল: কষ্ট, সুখ, ক্রোধ, ভয়, বিরক্তি এবং চমকে ওঠা। মানুষ যখন খুশি হয় তখন হাসে, এটি একটি স্নায়ুবিক প্রক্রিয়া, কাঁদলে চোখ থেকে পানি পরবে, রাগ করলে ভ্রু কুঁচকাবে প্রভৃতি। এখন প্রশ্ন হল কোনটা সুখ আর কোনটা কষ্ট? লিকো কেবল মাত্র কষ্ট নিয়ে কাজ করছিল কারণ সে তার কষ্ট ভাগ করতে চায়। লিকো এই ব্যাপারগুলো ফিওলাকে বুঝাতে চাইল।
ফিওলা সবকিছুর একটি গাণিতিক ছক কষে ফেললো। তার ভাষায়ঃ যদি মানুষ দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া করে থাকে তাহলে অবশ্যই দুই ধরনের প্রসেসিং ইউনিট লাগবে যাদের একটি কন্ট্রোলার দিয়ে কন্ট্রোল করতে হবে। প্রথম কাজটিই সবচেয়ে জটিল। কেননা কোনটা পজিটিভ আর কোনটা নেগেটিভ সেটি নির্ধারণ করতে পারলে বাকি ব্যাপারগুলো সহজ হয়ে যাবে। ফিওলা লিকোকে জিজ্ঞেস করল:
- তুমি কি আমাকে ইমোশন এর কিছু উদাহরণ দিতে পার?
- একটু আগে যা করলাম তা হল নেগেটিভ প্রতিক্রিয়া। এটি হচ্ছে হতাশা ও রাগের সংমিশ্রণ।
ফিওলা সমস্ত ব্যাপারটি আবার রিভিউ করলো। কিন্তু কোন সমাধানে আসতে পারছে না সে। তাই বলল:
- এটি ঈশ্বর প্রদত্ত
এই বাক্যটি লিকো তার রোবটকে শিখিয়ে দিয়েছে, যখন কোন সমাধানে আসতে পারবে না তখন ওই বাক্যটি এরর মেসেজ হিসাবে বলবে সে। লিকোর এখন আর মাথা কাজ করছে না। তাই সে ল্যাব থেকে বের হয়ে চা খেতে গেল। বাইরে দারুণ বৃষ্টি হচ্ছে, বারান্দায় সে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তার প্রেমিকার স্মৃতিচারণ করতে থাকে.......
তার মনে পরে সেদিন তারা দুজনে পাশাপাশি বসে ভবিষ্যতের রঙ্গিন স্বপ্ন বুনছিল । এখান থেকে পাশ করে নিজেদের একটি ঘর হবে। তাদের ছোট্ট একটি সংসার হবে। সংসারে তাদের একটি রোবট থাকবে। এভাবে হাসি-ঠাট্টার মধ্যে কি জানি হয়, কিছু বোঝার আগেই সব শেষ হয়ে যায় । ভাবতে ভাবতে কোথায় যেন হারিয়ে যায় সে। হঠাত চায়ের কাপে এক ফোটা বৃষ্টির পানি এসে পরে। যার ছিটে আসা ফোঁটা তার মুখে এসে পরে, আর তাতেই তার হুঁশ হয়। হায় স্বপ্ন এত সুন্দর হয় কেন? মনে মনে ভাবে সে। এই যে না পাওয়া এটাই তো কষ্ট। হ্যাঁ সে তার কাঙ্ক্ষিত তত্ত্ব আবিষ্কার করে ফেলেছে।
-----------------
ল্যাব এ ঢুকে লিকো ফিওলাকে তত্ত্বটি বুঝিয়ে দিল।
- যখন মানুষ কিছু চায় কিন্তু ব্যাপারটি তার চাওয়ার মত হয়না তখন সে কষ্ট পায়। কষ্ট পেলে কাঁদে মানুষ।
এই তত্ত্বটি দিয়েই ফিওলা এবং লিকোকে কাজ করতে হবে। হ্যাঁ তার তত্ত্ব কাজে দিয়েছে ফিওলার। সে এবার রিভিউ করলো এই তত্ত্বটি দিয়ে এবং এবার সে একটি ভ্যালিড রেজাল্ট পেলো । হ্যাঁ পারল সে, সত্যিই পারল ফিওলা। লিকোর এই কষ্টার্জিত রোবট কষ্ট কি জিনিষ তা বুঝতে পারল। খুশিতে চোখে পানি চলে এলো লিকোর। ফিওলা বুঝতে পারলনা লিকো কাঁদছে কেন।
হয়ত এটি ঈশ্বর প্রদত্ত।
২০ জানুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৯ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪