বাবার তুললা কেবল বাবাই

বাবা (জুন ২০২২)

নয়ন গোলদার
  • 0
  • ৩০
বাবা শুধু মাত্র একজন ব্যক্তি - ই নয় , বাবা মানে সমস্ত ভাল লাগার , ভাল রাখার আর সন্তানের সর্বোচ্চ ভরসার নাম । "পৃথিবীতে খারাপ মানুষ বহু থাকতে পারে কিন্তু খারাপ বাবা একজনও নেই।" কথাটির তাৎপর্য বুঝলে বাবাকে নিয়ে আর কিছু বলার অবকাশ থাকে বলে আমার মনে হয় না ।
বাবা ! কি চমৎকার সুর । শুনতে যেমন ভাল লাগে , মধুর লাগে ডাকতেও তেমনি ভাল লাগে , এক পরম উপলব্দি হয় । যার বাবা বেঁচে আছে তার মত ভাগ্যবান এ জগৎে আর কেউ নেই । কারণ যার বাবা বেঁচে থাকে তার আর নিজের জন্য তেমন চিন্তা - ভাবনা করতে হয় না তেমন । একটা শিশুকে যেমন তার দুধের কথা ভাবতে হয় না , একটা বৃক্ষের ফলের যেমন তার পুষ্টির কথা ভাবতে করা হয়না, ঠিক তেমনি একজন সন্তানের বাবা থাকতে তার নিজের কথা তেমন ভাবা লাগে না ।
মা ছাড়া শুধু মায়ের মত করে সন্তানকে তেমন স্নেহের ডোরে কেবল বাবা আগলে রাখতে পারে । সন্তানের সুখের জন্য বাবা পারে না এমন কাজ নেই বললেই চলে । সন্তানের একটু সুখের জন্য বাবা বৃষ্টিতে ভিজে , রোদে পুড়ে রাত্র দিন নির্বিশেষে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলে । নিজের সমস্ত সুখ সন্তানকে ভাল রাখার জন্য বাবা হাসিমুখে বিসর্জন দিতে বাবা কখনো দ্বিধাবোধ করেন না।
আমিও মানব জীবন পেয়ে ধন্য । আমার বাবা আছে এজন্য নিশ্চই আমি অনেকের চেয়ে অধিকতর সুখী তাদের চেয়ে , যাদের বাবা আজ বেঁচে নেই । বাবা একটি বট বৃক্ষের মত , বট বৃক্ষ যেমন সর্বদা উপকারি, নিজের ক্ষতি করে হলেও সর্বদা অন্যের কল্যাণের জন্য নিজের সমস্ত অঙ্গ অনায়াসে বিলিয়ে দেন , বাবাও ঠিক তেমনি ।
ছোট বেলা থেকেই আমি ভাগ্যবান যে , আমার বাবা আমাকে আমাদের চার ভাইদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভালবাসেন , বিশ্বাস ও ভরসা করেন । বাবার চোখের মনি আমিই, এমনটাই অামি মনে করি । আমি আমার বাবার দ্বিতীয় সন্তান হবার পরেও বাবা আমার নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ , ব্যাংক একাউন্ট এবং বিভিন্ন কিছুর নমিনি করেন । বাবাকে আমার অন্য তিন ভাই খুব ভয় পেত । তারা বাবার কাছে বিদ্যালয়ের বেতন চাইতেও ভয় পেত । আমি বাবাকে বলে আমারসহ অন্য ভাইদের বিদ্যালয়ের বেতন নিতাম । পূজায় জামা কাপড়ের কথা আমি ই বাবাকে বলতাম । আমি জানতাম বাবা আমাকে ভালবাসে আর আমার কথা ফেলতে পারবে না । আবার অনেক সময় বাবার আর্থিক অবস্থা যখন খারাপ থাকত তখন বাবাকে আমাদের চাহিদার কথা বলতে পারতাম না কিন্তু ঠিকই বাবা সব বুঝতে পারতেন । আর দেরী হলেও আমাদের চাহিদা পূরণ করতেন ।
আমি যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ি তখন বৃত্তি পরীক্ষার আগের রাতে বাবাকে বলেছিলাম আমার বড় প্যান্ট (ফুল প্যন্ট) নাই । বাবা টেইলর ছিলেন , বাবা রাতেই আমার জন্য বড় প্যান্ট বানিয়ে আনেন । আমাদের স্কুলের পরীক্ষার সময় বাবার আর্থিক অবস্থা খারাপ থাকায় যখন বলতে পারতাম না স্কুলের বেতনের কথা, তখন বাবা ঠিক পরীক্ষার দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে বেতন দিয়ে আসতেন । আর আমাদের হাতে প্রবেশপত্র দিয়ে বলতেন বেতন দিয়ে এসেছি ।
ছোট বেলায় আমি খুব অসুস্থ হতাম। যখন অসুস্থ হতাম বাবা আমাকে নিজে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতেন। বাবার সাথে আমি ছোট বেলায় অনেক দূরে দূরে যেতাম এই সুবাধে । গাড়িতে করে যখন যেতাম আমার ঘুম আসত , আর বাবা বলত কোথাও আসা-যাওয়ার সময় ঘুমাতে নেই , চারপাশ ও বাহিরে তাকিয়ে দেখতে হয় । আমাকে বাবা বাহিরে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলতেন এইটা লঞ্চ ঘাট , এটা ট্রেন স্টেশন , এখানে মন্দির , এটা বাজার । আর কখনও নিজেই আমাকে প্রশ্ন করতেন সাইনবাের্ড দেখে যায়গার নাম বলার । এভাবে বাবার কাছে আমি শিখেছি কিভাবে রাস্তায় পথ চলতে চলতে যায়গা চিনতে হয় ।
এখন আমি চাকরি করি বাবাকে টাকা পাঠাই । আর বাবা এখনও প্রায় সময় ফোন করে টাকা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করে আর বলে টাকা লাগলে বলিস । এটাই বাবা ! বাবারা এমন - ই হয় । সমগ্র বাবা জাতি এভাবে তার সন্তানকে আপন স্নেহে আগলে রাখে । বাবার কাছে সন্তান কখনও বড় হয় না । বাবার কাছে সন্তান ছোট কিংবা বড় নয় , সব সময় একই রকম । বাবাকে নিয়ে বলা আমার শেষ হবে না। বাবাকে নিয়ে জীবনের কিছু বলতে পারায় ভাল লাগল।
পরিশেষে সকলের কাছে অনুরোধ করছি আপনাদের নিজেদের জন্য বাবাক কষ্ট পেতে দেবেন না কখনও । আপনিও হয়তো বাবা হয়েছেন কিংবা হবেন একদিন । পৃথিবীর সব বাবারা ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক , ভাল কাটুক তাদের দিনগুলো । সমগ্র পিতা জাতির প্রতি রইর সশ্রদ্ধ শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী সাবলীল সুন্দর প্রকাশ, ভীষণ ভালো লাগলো।

১১ মে - ২০২২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪