চিরদিনের "মা"

মা (মে ২০২২)

মামুন ইকবাল
মোট ভোট প্রাপ্ত পয়েন্ট ৪.৮৭
  • ৬২
(১)আমার বাড়ির সম্মুখে পীচ ঢালা পথ শহর অভিমুখে চলে গেছে ২০০ গজ সামনে রোডের পাশে প্রকাণ্ড বটবৃক্ষ সম্মুখে প্রবহমান নদী অপরপ্রান্তে পাহাড়ি অরণ্য।
বিকালের দিকে এই বটবৃক্ষ তলে চা ভাজাভুজি খাওয়ার জন্য অনেক নর-নারী সমাগম হয় এখানে অনেকগুলি দোকানপাট ও মোটেল আছে। সুন্দর দুটি ক্যাসেল ও আছে। রাতের বেলায় ইলেকট্রিসিটির আলোয় চারদিকে ঝকঝক করে ।আধুনিক সজ্জায় সজ্জিত প্রচুর বেচাকেনা হয়। এবং বসার উপযুক্ত স্থান আছে। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে এখানের জনসমাগম কমে না। পাশেই পাহাড়ি ঝর্ণা প্রবাহিত। সে এক স্বর্গীয় পরিবেশ। পাহাড়ী ঝর্না প্রবহমান নদী কে কেন্দ্র করে ভ্রমনবিলাসিদের কারনে পর্যটন স্থানে পরিনত হয়েছে।নদীতে আছে নৌকা‌ বাইস অনেকগুলি স্পিডবোড। এখানেই একটি ক্যাসেলের খোলা বারান্দায় চেয়ারে বসেই আমি মোবাইলের স্ক্রিনে "চিরদিনের মা" নামে একটি গল্প লিখছিলাম। গল্পের কিছু অংশ পূর্বেই লেখা ছিল আর কিছু অংশ সংযোগ করছিলাম। আমার মনোযোগ অন্য কোথাও ছিল না মোবাইলের স্ক্রিনের উপরে ছিল। হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম আমার সম্মুখে রোডের পাশে একটি সাদা প্রাইভেটকার থামল। এবং কার থেকে নামল সুন্দরী অপরূপা আমার পরিচিতা আরিবা খাঁন। সে নিজেই প্রাইভেটকারটি চালিয়ে এসেছে। আমার পাশে এসে দাঁড়ালো বলল তোমাকে কত খুঁজেছি তোমার বাসায় যেয়েও পেলাম না।আমি বুজতে পারলাম তুমি এখানে আছ। আমি একটু হকচকিয়ে গেলাম হঠাৎ করে ওর আগমন হবে আমি বুঝতে পারিনি। ও আমাকে কোন খবর দেয়নি‌। আমি বললাম কি ব্যাপার তুমি কখন এসেছ গ্রামে? আমাকে তো কিছু জানাওনি।
আরিবা বলল জানানোর সময় কোথায়? মা আব্বা কে নিয়ে এই তো ঘন্টা খানেক এলাম মাত্র।আমি বললাম ফোন করলে পারতে।
ও বললো ফোন না করার কারন তোমার সামনে হটাৎ এসে তোমাকে চমকে দেব বলে।
ও বলল তো এত মনোযোগ সহকারে মোবাইল নিয়ে কি করছো তুমি? প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।
আমি প্রতি উত্তরে বললাম বস চা না কফি কি খাবে
ও বলল কঁপি
, আজ তুমি যে খুব সুন্দর একটি শাড়ি পরেছো, ইতি পূর্বে তোমাকে তো কখনো শাড়ি পরতে দেখিনি, খুবই সুন্দরী লাগছে মনে হচ্ছে পাহাড়ি ঝর্না বেয়ে কোন এক ডানা কাটা পরী নেমে এলো। আমার প্রশংসা শুনে আরিবা একটু বিব্রত বোধ এবং অপ্রস্তুত হল। এবং মনে মনে একটু রেগেও গেল। আমি বুঝতে পারলাম।
আরিবা আমার পাশে এসে একটি চেয়ার টেনে বসল। ও বলল দেখো ইকবাল ভাইয়া (আমি ওর থেকে চার বছরের বড় তাই ও আমাকে ইকবাল ভাইয়া বলে অভিহিত করে।) আমি তোমার প্রশংসা‌র বুলিতে লজ্জিত হতে এখানে আসেনি। আমাকে লজ্জা না দিলেও তুমি পারতে। আর আমি শাড়িটা পড়েছি তোমাকে সারপ্রাইজ দেবো বলে। তোমার মনে আছে অনেকদিন আগে তুমি বলেছিলে আমাকে শাড়ি পরলে নাকি সুন্দর দেখায়, তাই আজ শাড়ি পড়েই তোমার সামনে এলাম।
আমি বললাম আরিবা তুমি কিছু মনে করো না আসলে তোমাকে আমি লজ্জা দিতে চাইনি। সত্যিই তোমাকে সুন্দর দেখাচ্ছে আমি খুব খুশি হয়েছি যে আমার অনেক আগের কথাটা তোমার মনে আছে। এবার আরিবা স্বাভাবিক হলো আমি কফির অর্ডার দিলাম।
আরিবা বলল কই তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে না তো? মোবাইল নিয়ে কি করছিলে? আমি টিটকিরি করে বললাম একটা মেয়ের সাথে প্রেম করছিলাম। আমার উত্তর শুনে আরিবা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। কি বলছো তুমি এসব? সত্যি না তো? আরিবা প্রশ্নবাণ ছুড়ে দিলো। বুঝলাম আরিবার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছে। আমি মিটিমিটি করে হাসলাম।
ওয়েটার কফি দিয়ে গেল আমরা কফি খেতে খেতে কথা বলতে লাগলাম সম্মুখে দৃষ্টিপাত করে দেখলাম পাহাড়ি ঝর্নার প্রান্তর জনসমাগমে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে
আরিবা এবার আমার মোবাইলটা জোর করে কেড়ে নিল এবং স্ক্রিনে লেখা পড়তে শুরু করে দিল "চিরদিনের মা" নামে যে গল্পটি লিখেছিলাম। আমার লেখাগুলো পড়ে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল বলল তুমি মাকে নিয়ে গল্প লিখছিলে আর আমার সাথে মিথ্যা কথা বললে এটা কি ঠিক হলো?
মাকে নিয়ে গল্প লিখতে লিখতে কখন যে আমার দুই নয়নে অশ্রু গড়িয়ে পড়েছে আমি নিজেও বুঝতে পারিনি আমার নয়নের অস্ত্র দেখে আরিবা দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলল কি ব্যাপার তোমার চোখে পানি কেন? তুমি কাঁদছো।
আমি বললাম আমার মা নাই মায়ের কথা মনে পড়লে চোখে পানি চলে আসে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম আরিবা আমাকে সান্ত্বনা দিল। বলল চমৎকার তোমার গল্পটি মাকে নিয়ে গল্পটি লেখা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য আমি বলছি তোমার গল্পটি খুবই ভাল হয়েছে। চায়ের দোকান ছেড়ে পাহাড়ি ঝর্ণার দিকে হাঁটতে শুরু করলাম আমি ও আরিবা। আরিবা বলল চলো আমরা স্পিড বোর্ড ঘুরব। আমি বললাম এখন শেষ বিকাল এখন স্পিড বোর্ড নদীতে ঘুরে বেড়ানো কি ঠিক হবে? আরিবা প্রতি উত্তরে বলল কেন আমার সাথে ঘুরে বেড়াতে তোমার কোন সমস্যা আছে কি? শোনো একটু লেট হতে পারে আমি আমার মাকে জানিয়ে দিচ্ছি যে তোমার সাথে বেড়াতে যাচ্ছি। ও মাকে ফোন করলো রিং হল বলল আম্মু আমি ইকবাল ভাইয়ের সাথে একটু বেড়াতে যাচ্ছি ফিরতে দেরি হতে পারে কিছু মনে করোনা। ওপাশ থেকে মায়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো ঠিক আছে দ্রুত চলে এসো। আমরা একটা স্পিডবোটে উঠে বসলাম আরিবা নিজেই ড্রাইভ করতে শুরু করে দিল। পাকা স্পিডবোর্ড ড্রাইভার। জলরাশি ছুটে ছুটে গায়ে লাগছে মাঝে মাঝে সর্বাঙ্গ জলছটাই ভিজে যাচ্ছে। আরিবা এক মুষ্টি পানি আমাকে ছুড়ে মারলো। আমিও এক মুষ্টি পানি নিয়ে করিবার শরীরে ছুড়ে মারলাম ও খিলখিল করে হেসে উঠলো। ও বলল আমার খুব ইনজয় লাগছে। আজকের দিন‌ আমার অনেক দিন মনে থাকবে।
আমি বললাম ঠিক আছে মনের আয়নায় বেধে রেখ আজকের দিনের স্মৃতি।
আরিবা এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলো তার আকাশি রঙের শাড়ি বাতাসে খেলা করছিল চুলগুলো এলোমেলো মুখের উপর পড়ছিল, পানির ঝাপটায় আমাদের উভয়ের সর্বাঙ্গ ভিজে যাচ্ছিল। আমি বললাম বেশী দূরে যাওয়ার দরকার নেই বোর্ড ঘাটের দিকে ঘুরাও
ও বললো আরেকটু সামনে যাব ভয় নেই আমি সাথে আছি। আমি সাঁতার জানি। আর তুমি ও তো সাঁতার জানো ভয় কি তবে? মাগরিব মাগরিবের আজানের একটু পূর্বেই আমরা ঘরে ফিরলাম আমিও সেই দ্রুত অজু করে মসজিদের এর দিকে নামাজের জন্য গমণ করলাম।
সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়ে জিওগ্রাফিতে অনার্স পাস করছে সে বুদ্ধিমতী এবং সৎ পরোয়ানা। গ্রামে আমাদের বাড়ির পাশেই তাদের বাড়ি এখন ওদের শহরে বাড়ি গাড়ি ব্যবসা বাণিজ্য সবই আছে। মাঝে মাঝে গ্রামে বেড়াতে আসে তখন আরিবা আমাকে খুঁজে বের করে। অনেক শৈশব কাল থেকে ওর আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আরিবা বলল তোমার গল্পটা বিভিন্ন ধর্মের রেফারেন্স দিয়ে যে ভাবে সাজিয়েছ চমৎকার হয়েছে । আমার গল্পটি ছিল নিম্নরূপ-
ইসলাম ধর্ম অনুসারে
*আল কুরআনের "মায়ের" মর্যাদা*
ইসলাম মাতা-পিতাকে সর্বোচ্চ অধিকার ও সম্মান দিয়েছে। ইসলামের বিধানমতে, আল্লাহ তাআলার পরেই মাতা-পিতার স্থান। এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাঁদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের উফ্ (বিরক্তিও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না; তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাঁদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, “হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ঘোষণা করেন, ‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)। ‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)। আরও বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।’ (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
সর্বপ্রথম 'মা' সম্পর্কিত কিছু হাদিস বর্ণনা করছি এতে 'মার' ভূমিকা কতটুকু এবং গুরুত্ব কতটুকু উপলব্ধি হবে।

হাদীস শরীফে মায়ের মর্যাদা=
*রাসূল (সা) বলেছেনঃ বেহেশ্‌ত হচ্ছে মায়েদের পায়ের নিচে। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৫৪৩৯, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )

*ইমাম সাদেক (আ) বলেছেনঃ এক লোক রাসূলের খেদমাতে এসে আরজ করলো-হে রাসুল! খেদমত করবো কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর কার? রাসূল বললেনঃ তোমার মায়ের। লোকটি বললো-তারপর? রাসূল বললেন-তোমার মায়ের। লোকটি আবারো জিজ্ঞেস করলো তারপর কার? নবীজী বললেন-তোমার বাবার। ( আল-কাফিঃ ৯/১৫৯/২,মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ৬১৪ )
*প্রত্যেকেরই দুর্ভাগ্য কিংবা সৌভাগ্যের গোড়াপত্তন ঘটে মায়ের গর্ভে।

*মা-ই হলেন তার সন্তানের ইহকালীন এবং পরকালীন সৌভাগ্য নিশ্চিত করার প্রশিক্ষক।

মাতা পিতা ও উভয়ের জন্য দোয়া করবে সন্তান
ربي ارحمهما كما رباني سجرا
রাব্বি হামহুমা কামা রব্বায়ানি সাগীরা।


*খ্রিস্টান ধর্মে মা*
খ্রিস্টান ইতিহাস বিদগণ অনেক নারীকে সাধুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। যেমন যীশুর মা মেরি যিনি সকল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের নিকট বিশেষ করে রোমান ক্যাথলিক ধর্মে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী নারী ছিলেন। তাকে তারা যীশুর মা বলেন। এছাড়াও পরবর্তীকালে অনেক নারীকে তারা ধর্মতাত্ত্বিক, নান, রহস্যবিদ, চিকিৎসক, ধর্মীয় গোষ্ঠী প্রতিষ্ঠা করা নারী বা সামরিক নেতা, রাণী এবং শহীদদেরও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।এটি খ্রিস্টান জীবনে নারীরা বা 'মা' যে বিচিত্র ভূমিকা পালন করেছে তা প্রমাণ করে। প্রেরিত পল এই বিষয়ে নারীদের প্রতি খুব মনোযোগ দিয়েছিলেন, এবং স্বীকার করেছিলেন যে নারীরাবা 'মা' গির্জায় বিশিষ্ট অবস্থানের অধিকারীনি। যদিও তিনি নিউ টেস্টামেন্টে পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব তুলে ধরেছেন যা খ্রিস্ট প্রথম শতাব্দীতে কার্যকর ছিল।(বাংলা উইকিপিডিয়া)

'সনাতন ধর্মে মা'
সনাতন ধর্মে উল্লেখ আছে স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ “দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন আচার্য্যরে গৌরব অধিক, একশত আচার্য্যরে গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ।”(বাংলা উইকিপিডিয়া)
আমি কবিতার ছত্র পাঠ করলাম-
মায়ের অভিশাপে অভিশপ্ত সন্তান
সুখ নাহি পাই
সারা জীবন দুঃখের আগুনে জ্বলে পুড়ে
দোযখের খড়ি হয়।
মা'র উঃ আঃ এই কষ্টকর শব্দটুকু মায়ের মুখ থেকে যদি উচ্চারিত সন্তানের কারণে সে সন্তান জীবনে কখনো উন্নতি করতে পারবে না। এবং আল্লাহর কাছে না রাজির এর কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সে মায়ের কাছে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে না নেই ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহর ক্রোধ তার উপর বর্ষিত হবে।
জীবনে যদি উন্নতি করতে চাও জীবনে সৌভাগ্যের সিঁড়িতে উঠতে চাও মাকে প্রাণ দিয়ে সেবা করো মায়ের আর্শিবাদ গ্রহণ করো মায়ের দোয়া প্রার্থনা করো এর বিকল্প কোনো কিছুই নেই।
(হে আদম সন্তান আশরাফুল মাখলুকাত
সহসা এধরায় এসে গড়িলে আবাস
মায়ের অন্ধকার গর্ভ থেকে হইয়া উদয়
সৃষ্টির সেরা বলে দিলে পরিচয়)
মা এর বদদোয়া মায়ের অভিশাপ সন্তানের চিরতরে জাহান্নামী করে দিতে পারে। সাবধান মাকে কখনো আমরা যেন কোন প্রকারে কষ্ট না দেই।

মায়ের সাথে অসম্মানজনক আচরণ মাকে বকাঝকা করা কটু কথা বলা এথেকে যেন আমরা সবাই বিরত থাকি।
যে মা দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে তোমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে না খেয়ে তোমাকে খাইয়েছে না ঘুমিয়ে তোমাকে ঘুমিয়েছে
ঝড়ঝঞ্ঝা বৃষ্টি-বাদল তোমাকে আগলে রেখেছে তুমি না খেয়ে থাকলে তোমার মাও না খেয়ে থেকেছে তুমি দূরে থাকলে তোমার মায়ের আঁখি অশ্রু ঝরেছে তোমাকে বুকে পিঠে করে সর্ব সময় আগলে রেখেছে। একটুও কষ্ট পেতে দেয়নি। তোমার মঙ্গল কামনায় সবসময় আল্লাহর দরবারে হাত তুলেছে। প্রার্থনা করেছেন তোমার ভবিষ্যত উন্নতির জন্য।
তুমি অসুস্থ থাকলে তোমাকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সর্ব মুহূর্তে তোমার পাশে বসে তোমার সেবা যত্ন করেছে।
এই হল মা যার তুলনা পৃথিবীতে কখনো হয়না
একজন মা হতে পারেন দেশের 'রানী' হতে পারেন তিনি 'বিজ্ঞানী' 'পাইলট' 'ইঞ্জিনিয়ার' 'ডাক্তার'সেবিকা, জননেত্রী, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সবকিছুই তার জন্য মানানসই। তিনি পৃথিবীতে সন্তানের জন্য উত্তম শিক্ষিকা এবং সর্বোত্তম নার্স।
সবকিছু পেরিয়ে তিনি শ্রদ্ধেয়া সম্মানিতা স্নেহময়ী "মা" এ পরিচয় সবচেয়ে বড় পরিচয়।
সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট বলেছিলেন আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি একটি শিক্ষিত জাতি দেব। শিক্ষিত মা থাকলে সন্তান শিক্ষিত হয়। এবং তার প্রভাব সমাজ ও সমগ্রদেশের পড়ে যা দেশ ও জাতির জন্য সৌভাগ্য বয়ে আনে।
আল্লাহর সমগ্র সৃষ্টির মাঝে দুজন ব্যক্তি মাত্র মা ছাড়া পৃথিবীতে এসেছিলেন আল্লাহ তাদেরকে মা ব্যতীত সৃষ্টি করেছিলেন একজন হযরত আদম আলাইহিস সালাম
দ্বিতীয়জনও হযরত হাওয়া বিবি আলাই সালাম।
সৃষ্টিকুল থেকে সমগ্র পৃথিবীতে যত নরনারী সবাই মায়ের গর্ভ থেকে এসেছে
মায়ের অন্তরে এমন ভালোবাসা প্রেম আল্লাহ দিয়েছেন নিজের জীবন বাজি রেখে নিজের জীবন বিপন্ন করে নিজেকেও সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে সন্তানের মঙ্গল কামনায় তিনি অধীর থাকেন।

শুধু মানব সন্তানের 'মা' নয় সমগ্র পশুপাখি জীব জানোয়ার এদের মাঝেও সৃষ্টিকর্তা প্রেম-ভালোবাসা ঢেলে দিয়েছেন যে প্রেম ভালোবাসা দিয়ে তার সন্তানদেরকে আগলে রাখে। একটা বিড়াল 'মা, একটা কুকুর 'মা, একটা বাঘ 'মা, একটা ঘোড়া 'মা, একটা হাতি 'মা, একটা কাঠবিড়ালি 'মা, একটা কবুতর 'মা, একটা মুরগি মা, একটা ঘুঘু মা, একটা ময়ূর 'মা, একটা চড়ুই পাখি 'মা, একটা বানর 'মা, একটা হনুমান 'মা, একটা কুমির 'মা, একটা ডলফিন 'মা, একটা হাঙ্গর 'মা, একটা শোল মাছ 'মা, একটা তিমি মাছ 'মা, একটা বোয়াল মাছ 'মা, একটা কাতলা মাছ 'মা, রুইমাছ 'মা, একটা মৃগেল মাছ 'মা, একটা পুটি মাছ 'মা,দেখেছ তাদের জীবন প্রণালী সন্তানদের প্রতি কত নিদারুন ভালোবাসা। প্রত্যেকটি 'মা, পশুপাখি তাদের সন্তানের জন্য জীবন দিতে প্রস্তুত। সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণ করা তাদের আহারের ব্যবস্থা করা সবই "মার" দায়িত্বে অর্পিত। এ পর্যন্ত আমি 'চিরদিনের মা' গল্পটি লিখেছিলাম। এর পরপরই আমার বান্ধবী আরিবার আগমন গল্প লেখায় বাধা পেলাম।
(২)
দুদিন পর পাহাড়ি পথে চলতে চলতে আরিবা বলে ওঠে-তোমার সাথে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম কিন্তু তুমি-
আমি বললাম ঠিক আছে বলো আমি শুনছি
ও বলল মাকে নিয়ে গল্প লিখতে তুমি বর্তমানে ব্যস্ত আছ আমি আর অন্য প্রসঙ্গে কথা বলবো না মাকে নিয়ে কথা বলব।
আরিবা বলতে থাকে=
মা'র এক ফোটা দুধের দাম সন্তান সারাটা জীবন সেবা-যত্ন করেও পরিশোধ করতে পারবে না। মায়ের ঋণ কখনো পরিশোধ হয় না। মায়ের দোয়া বা অভিশাপ কোনটাই ব্যর্থ হয় না, সাথে সাথে আল্লাহতালা কবুল করে নেন।
মা নিয়ে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে আল কুরআনে হাদিসে খ্রিস্টান ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের ইহুদী ধর্মে সনাতন ধর্মে গল্প-উপন্যাস নাটকে কবিতায় বিভিন্ন ভাষায় এত বেশি লেখালেখি হয়েছে যা অন্য কোন বিষয়ে লেখা হয়নি তার পরেও আমাদের সমাজের লোকজন সচেতন নয়। মাকে উপেক্ষা করে মাকে অবহেলায় রেখে দেই। মাকে তুচ্ছ ভাবে মার কোনো খোঁজখবর নেইনা। মা কি খেল না খেল রোগে শোকে কিভাবে থাকলো বাঁচল কি মরল কোন খোঁজ খবর নেয়া হয়না। অবহেলিত কোন এক কুড়ে ঘরে মায়ের স্থান হয় তার আদর যত্ন সেবার খোঁজখবর নেয়ার কেউ নেই। অবহেলায় অযত্নে রোগে-শোকে ভুগে ভুগে একদিন পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়। একদিন দুইদিন অভিনয় করার মত কাঁদো । মসজিদে একদিন দোয়া মাহফিল করো। এরপরের আত্মীয়-স্বজন ডেকে নিমন্ত্রণ করে গরু ছাগল জবাই করে চল্লিশা খাওয়াও । তোমার দায়িত্ব শেষ। এই হলো আমাদের সভ্য সমাজ। এ সমাজে আমি দেখেছি মাকে কে কত অবহেলা করতে পারে যেন তার প্রতিযোগিতা চলে। শহরের রাস্তায় কত বৃদ্ধা মা'দের দেখেছি বাঁচার তাগিদে ভিক্ষা করতে। কত অসহায় তারা।
আরিবার বিরতিহীন কথাগুলো আমি মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। আমি বললাম তুমিও তো কোনো অংশে কম গেলে না। আরিবা মুচকি হাসলো। আমি বললাম তুমি যদি কিছু না মনে করো আমি কিছু কথা বলতে চাই এবার লেখাপড়া শেষ করছে এখন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ঘর সংসার কর। তোমাকে তো মা হতে হবে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। মা হওয়াতে নারী জীবনের সার্থকতা। আরিবা আমাকে মৃদু ধাক্কা দিল খিলখিল করে হেসে উঠল বলে উঠলো বাহ বাহ বাহ চমৎকার ভাষন তোমার। একজন স্বামী নাহলে মা হয় কেমন করে? তাই না বুঝতে পেরেছ কি আমার কথা? আমি বুঝলাম আরিবা কি বলতে চাইছে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললাম হায়রে কপাল আমাকে মেয়ে দিবে কে আমার পৃথিবীতে কে আছে? আরিবা অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে রইল। ও তার দৃষ্টিতে প্রমাণিত হচ্ছিল তার মা হওয়ার বড় আশা তবে কি সে আমাকে ঘীরেই স্বপ্ন দেখছে এতদিন যাবৎ এ কি সম্ভব? কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।ও আমাকে কখনোই স্পষ্ট করে কোন কিছু বলেনি।
আরিবা বলর আমি তোমাকে স্পষ্ট করে কয়েকটা কথা বলতে চাই আমি এতদিন যাবৎ তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি তোমাকেই কামনা করেছি জীবনে মরণে আমি তোমাকেই শুধু চাই এই আমার শেষ কথা, আর কিছু আমার বলার নেই। এখন সিদ্ধান্ত তোমার কি করবে কি না করবে। আমার আব্বু আম্মুকেও তোমার কথা বলেছি তারা কোন প্রকার আপত্তি করেনি। এখন ভেবে দেখো কি করবে?
উভয় কিছুক্ষণ নির্বাক হয়ে রইলাম।

কিছুক্ষণ পরে আমরা বাসায় ফিরে এলাম আরিবা বাসায় চলে গেল আমি আমার বাসায় অবস্থান করছি। মাগরিবের পরে চাচী চা বানিয়ে নিয়ে এল। আমার রান্না বান্না সংসারের সমস্ত কাজ কারবার আমার করিম চাচী করে দেন আমার মায়ের মতোই আমার সংসারের চাচী অবস্থান করেন। চাচী আমার প্রতিবেশী তার দুই ছেলে বড়জন কানাডা প্রবাসী। নাম তার রাকায়েত ছোট ছেলে সাদাত ঢাকায় স্থায়ীভাবে বাড়ি গাড়ি করে নিয়ে অবস্থান করছে স্ত্রী পুত্র নিয়ে। মা এর কোন খোঁজখবর কেউ নেই না। দুই পুত্রই উচ্চশিক্ষিত মাতাপিতা তাদের অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছে। নিষ্ঠুর পৃথিবী যে মা এতদিন তাদের লেখাপড়া শিখিয়ে বড় করেছে আজ তারা অর্থের পাহাড় গড়েছে। দুঃখিনী মায়ের খোঁজ নেওয়ার কোন সময় তাদের হয় নাই। সেই মা আজ পর হয়ে গেছে। পৃথিবীতে দুই সন্তান ছাড়া আর কেউ নয় কিন্তু সে সন্তানরা থেকেও আজ তারা নেই। পরের বাড়ির কাজ করে পেটের খোরাকি চালান। রোগে শোকে তার চিকিৎসা করিবার মতো কোনো টাকা নেই। তার বড় ভাই দেখাশোনা করে মাসে মাসে কিছু টাকা পয়সা খরচ পাঠায় রোগের চিকিৎসা করায়। ঐ ভাইয়ের অবলম্বনে চাচীর অস্তিত্ব টিকে আছে।
আরিবার মা-বাবা গ্রামে এলে এই চাচী তাদের সংসারের কাজ করে দেন রান্নাবান্না করেন।
আমি বললাম চাচী কেমন আছো তোমার মাথার রোগের সমস্যা এখন কেমন আছে? ওষুধগুলো ঠিক মত খাচ্ছ তো? সমস্যা থাকে আমাকে জানাবে আমি যতদিন আছি আমার তো মা নেই আমি তোমাকে দেখাশুনা করব। তুমি শুধু আমার জন্য একটু প্রাণ খুলে দোয়া করবা এটাই আমার জন্য যথেষ্ট হবে।
চাচী বললো মাথার রোগ টা খুব একটা ভালো মনে হচ্ছে না মাঝে মাঝে কঠিন জ্বালা যন্ত্রণা করে চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে পড়ে যায় দুদিন আগেও আমার ভাই অনেক টাকার ওষুধ কিনে দিয়ে গেছে কিন্তু অবস্থার কোন উন্নতি হচ্ছে না সন্তানদের কথা মনে পড়ে ওরা আমাকে কোন টাকা-পয়সাও দেইনা খোঁজখবর নেইনা আমার সব থাকতেও এখন আর কিছু নেই ওদেরকে আমি ভুলে গেছি। আমি বললাম থাক চাচী মনে কষ্ট নিও না সন্তানদের বদদোয়া করোনা আল্লাহ তোমার সুখের দিন ফিরিয়ে দেবে
চাচি দীর্ঘনিঃশ্বাস নিয়ে বলল আর সেই দিন আর কখনো ফিরে আসবে না। তার আগেই আমি কবরে চলে যাব। বলে প্রস্থান হইল আমি শুধু চাচীর গন্তব্য পথে তাকিয়ে রইলাম।
(৩) পরদিন বিকাল আরিবা দের লিচু বাগানে চেয়ারে অবস্থানরত আরিবা আরিবার মা এবং বাবা ও আমি বাক্য রত। সম্মুখে অনেকগুলি পরিপক্ক লিচু মাথার উপর গাছে পাকা পাকা লিচু ঝুলছে আমরা লিচুর খোসা ছড়িয়ে খাচ্ছিলাম আরিবার বাবা (আসাদ সাহেব) আমার প্রতিবেশী দায়দায়িদী চাচা বয়সে আমার আব্বার থেকেও ছোট ছিলেন। তার বড় ভাই এবং মা পাশের বাড়িতে অবস্থান করেন। (অর্থাৎ আরিবার চাচা এবং দাদি)এখন তিনি শহরের বিশিষ্ট শিল্পপতি তার এক কন্যা এক পুত্র সন্তান আর এই কন্যা আরিবা খাঁন। আসাদ চাচা বললেন ইকবাল তোমার সাথে কিছু জরুরী কথা বলা দরকার। আরিবা আমাকে তোমার সম্পর্কে সব কিছু বলেছে ও লেখাপড়া শেষ করেছে,আর তুমিও একটা কলেজে চাকরি করছ। আমি চাই তুমি এখন আরিবাকে নিয়ে ঘর সংসার কর ঠিক এমন মুহূর্তে আরিবার দাদি এল। আসাদ চাচা দ্রুত উঠে মাকে সালাম করলেন হাত ধরে বসালেন বললেন মা আপনি ভালো আছেন তো? তিনি বলে উঠলেন হ্যা আল্লার রহমতে ভালো আছি। কিরে আসাদ মেয়ের বিয়ের কথা কথা বলছিস নাকি? ইকবালের সাথে কিছু জরুরী কথা বলার আছে ওই জন্য আপনাকে আমি খবর দিয়েছি। আপনার আরিবাকে এবার আমি বিবাহ দিতে চাই । চোরাদৃষ্টিতে আরিবা আমাকে দেখছিল ।
এইবার দাদি হেসে বললেন তোরা গোপনে গোপনে এতদূরে এগিয়েছিস বিয়েটা করে নিতে পারিস নি তো কোনো ঝামেলাই হতো না।
আরিবার মা এতক্ষণ পরে কথাবার্তা বললেন আপনি যে কি বলেন মা আমার মেয়ে ও ইকবাল কখনোই এ মন মানসিকতার না। ওদেরকে আমি খুব ভালোভাবে ছোটকাল থেকেই চিনি
দাদি হেসে বললেন আরে বৌমা আমিতো একটু দুষ্টামি করলাম ওদের সাথে । আমি বললাম দাদি আমার বড় দুটো ভাই আছে ভাবী আছে বোন আছে তাদের সাথে পরামর্শ করে তারপরে আমি জানাব আপনাদের ব্যস্ত হওয়ার কোন দরকার নেই।
এমন মুহূর্তে আমার সেই চাচী এল
চাচী বললো ইকবাল কারোর ব্যস্ত না হলেও আমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছি তোমাকে আমি তাড়াতাড়ি আমার আরিবাকে বউরুপে দেখতে চাই। তোমরা একে অপরের জীবন সাথী হয়ে থাক এটাই আমি চাই। কারণ তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো আমার চোখ তোমরা ফাঁকি দিতে পারোনি।
আমি বললাম আরিবা সৌভাগ্যবতী। তার মা আছে দাদি আছে আমি অল্প বয়সে মাকে হারিয়েছি চাচা আপনি এই বয়সেও এখনো মায়ের দোয়া লাভ করছেন মায়ের আর্শিবাদ প্রাপ্ত। মাকে সেবা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আমি মাতা পিতা হারা সর্বহারা।
আপনারা যেমন আপনার মেয়েকে নিয়ে ভাবছেন আমার মা থাকলে আমাকেও নিয়ে তারা ভাবতেন বিবাহ করার জন্য পরামর্শ কথাবাত্রা বলতেন আমি তাদের আর্শীবাদ আমি প্রাপ্ত হতাম।
চাচী বললেন মনে কষ্ট নিও না আমি তোমার মা আমিতো আছি তোমার জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করি। চাচী আবারও বললেন বড় মা (আরিবার দাদি)
আসাদ (আরিবার পিতা) আরিবার প্রতি দৃষ্টি মেলে মামনি আরিবা আমার কথা গুলো তুমি তোমার মোবাইলে রেকর্ড করে রাখো আরিবা আশ্চর্য হয়ে সত্যসত্যই রেকর্ডিং অপশন চালু করল আরিবা বলল সিরিয়াসলি মনে হচ্ছে কিছু বলবে তুমি চাচী? সকলেই একে সকলে একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগলো

হাঁ এবার চাচি বলল আসাদ তোমাদের সকলকে বলছি আমার একটা অনুরোধ তোমাদের রাখতে হবে। আমার শরীরটা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। আমি যে কোন মুহূর্তে মৃত্যুবরণ করতে পারি। কারন আমি এক দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত। আমি কাউকে বলিনি শুধুমাত্র ইকবাল এবং আমার বড় ভাই জানে। অনেক আগে থেকেই আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে। এই অবস্থায় আমি লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে যাচ্ছি। এ ঘটনা তোমাদের কেও বলিনি। এমনকি ইকবাল কেও বলতে নিষেধ করেছি । আমার বড় ভাই শহরের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখিয়েছে অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তাতে আমার ব্রেইন টিউমার ধরা পড়েছে । আমার ভাই লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করেছে কিন্তু কোনো কিছুতেই কিছু হয়নি।
আমার একটাই দাবি আমার মৃত্যু হলে আমার কোন ছেলেদের খবর দিবানা এবং আমার কাফনের কাপড়ের ব্যবস্থা দাফন-কাফন তোমরাই করবা। মৃত্যুর পরে আমার লাশ যেন কেউ না দেখে। আমার ছেলেরা যেনো আমার জানাজায় শরিক না হয়। বলতে বলতে চাচী অবিরল ধারায় কেঁদে ফেললেন এবং দ্রুত স্থান ত্যাগ করলেন। চাচীর কথাবার্তায় এবং আচরনে আমরা সকলে হতভম্ব হয়ে রইলাম। ইতিমধ্যেই আরিবা রেকর্ডিং করা কথা গুলো সেভ করে নিল। দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে আসাদ সাহেব বললেন প্রাণ প্রিয় ভাবি আমার তোমার মনে এত ব্যথা কখনো বুঝতে পারিনি হায়রে সন্তান মায়ের দুঃখ বুঝতে পারলি না তোদের জনম বৃথা কেঁদে ফেললেন। তোমার সব আরজি আমি পূরণ করবো ভাবী আমি তোমাকে কথা দিলাম।
আরিবা বলল আমি চাচীকে ডাক্তার দেখাবো শহরের সবচেয়ে ভালো ব্রেন স্পেশালিস্ট ডাক্তার দেখাবো আমি তাকে চিকিৎসা করাব আমি চাচীকে অবহেলায় অযত্নে মরতে দিব না তুমি আমাকে কোলে পিঠে করে মানুষ করেছ আমি এর প্রতিদান দিব।
আরিবার দাদি বললেন বৌমার এমন অবস্থা তা তো আমাকে কেউ বলে নি।
আরিবার মা ডুকরে কেঁদে ফেলল বললেন
ভাবি তুমি কষ্টে আছো জানি কিন্তু তোমার রোগের কথা কেন আমাদেরকে বলনি শোনো কালকেই আমরা ভাবিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো ইকবাল তুমি আমাদের সাথে যাবে।
আমি বললাম ঠিক আছে চাচী । সকলের স্থান পরিত্যাগ করল। আরিবা আর আমি একে অপরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলাম। আমি বললাম আগে চাচির ব্যাপারটা দেখা যাক তারপরে আমাদের উভয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে।
আরিবা বলল তাই হোক তুমি যেটা ভালো মনে করো সেটাই হবে।
(৪) এই চাচীর রোগের কথা আমি জানতাম তার ভাই অনেক পূর্বে ভাল ডাক্তার দেখিয়ে ছিল। এবং তখনই ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছিল কিন্তু চাচী আমাকে কাউকে বলতে নিষেধ করে দিয়েছিল। পরদিন চাচীকে শহরে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলাম ব্রেন স্পেশালিস্ট ডাক্তার দেখানো হলো অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন। পূর্বের করা রিপোর্ট গুলো দেখলেন কয়েকদিন পর সদ্য করা রিপোর্ট বের হলো কিন্তু সেই রিপোর্টে ডাক্তার সাহেব চাচীর জীবনের আশা ছেড়ে দিলেন । বললেন অনেক দেরি হয়ে গেছে আর সময় নেই খুব বড়জোর সপ্তাহ দু তিন বেঁচে থাকতে পারেন ডাক্তার সাহেবের এ কথাগুলো শুনে আমি এবং আরিবা কখন যে বেদনায় নীল হয়ে গেছি নিজেরাই জানিনা। আরিবার মা ও সবকিছু জানতে পারলেন ব্যবসায়িক প্রয়োজনে আরিবার পিতা ব্রাজিল ভ্রমণ করছেন। আরিবার বড় ভাই অস্ট্রেলিয়াতে অবস্থান করেন । আরিবার পিতা মোবাইলে এ রিপোর্ট জানতে পেয়েছেন। তিনিও হতভম্ব হয়ে গেছেন। আসতে তার এখনও কয়েক সপ্তাহ বাকি বিদেশের কাজ এখনো শেষ হয়নি।
এরপর ক্রমে ক্রমে চাচীর অবস্থার অবনতি হয়েছে আবারো নামকরা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।আরিবা
আমাকে দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলে। চাচী কে বাঁচানো গেল না তুমিও কি চাচীর অসুস্থতার খবরটি আগে কখনো জানতে পারোনি? আমিতো আর সবসময় গ্রামে অবস্থান করি না।
আমি বললাম ব্যাপারটা আমি জানতাম আমাকে চাচী তার রোগের কথা বলতে নিষেধ করেছিল। তাই আমি কাউকে জানাইনি।
আরিবা বলল এ রোগের সূত্রপাত তো অনেক আগে থেকেই হয়েছে যদি কোন ভাবে আমি একটু জানতে পারতাম। অন্ততপক্ষে তুমিতো আমাকে একটু জানালে পারতে কত বড় ভুল করেছো শেষ পর্যন্ত প্রথম থেকেই চেষ্টা করে যেতাম।
আমি বললাম চাচীর ভাই তার রোগের জন্য সর্বপ্রকার চেষ্টা চালিয়ে গেছে ভাল ডাক্তার দেখিয়েছ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়াছে এবং ওষুধপত্রে রীতিমতো ব্যবস্থা করিয়ে যাচ্ছে এদিক থেকে কোন সমস্যা নাই। আরিবা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ল।

না আর কোনো আশা নেই ভরসা নেই ।ডাক্তাররা হাল ছেড়ে দিয়েছেন দু সপ্তাহ পরে চাচী পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। অ্যাম্বুলেন্সে করে চাচীর লাশ আনা হলো চাচীর বাড়ির আঙিনা লোকে লোকারণ্য আরিবার পিতা বিদেশে তখনো অবস্থানরত তিনি মোবাইলে সর্বসময় যোগাযোগ করছেন আরিবার সাথে । আমি পাড়া প্রতিবেশীর কয়েকজন এবং আরিবা মিলে সর্বপ্রকার ব্যবস্থা সম্পন্ন করলাম কাফনের কাপড় এল কবর খোঁড়া হল লোকজনের খাবারের ব্যবস্থাও করানো হলো কোন সমস্যা হলো না চাচীর বড় ছেলে সাদাত গ্রামের থেকে কারোর মোবাইলে সংবাদ প্রাপ্ত হয়ে প্রাইভেটকারে স্ত্রী-পুত্র নিয়ে মায়ের লাশ দেখতে এলো দুঃখে সবাই তখন ভারাক্রান্ত। কিন্তু না চাচির নসিয়ত অনুযায়ী তাকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হলো না। সে খুব হাউমাউ করতে লাগল কাঁদতে লাগল সাদাত আমার ও আরিবার সামনে এসে দাড়ালো বলল বোন আরিবা আমার মাকে একটু দেখতে দে ইকবাল আমার মাকে একটু দেখতে দে জীবনের মতো মাকে একটু দেখে নি আমার মাকে কেউ দেখতে দিচ্ছেনা কেন? আরিবা চিৎকার করে উঠলো না ভাইজান কখনোই সম্ভব না তোমার মাকে তুমি কখনো দেখতে পারবেনা মা জীবিত থাকতে কোনদিন দেখতে আসোনি কোনদিন তার কোন খোঁজ খবর নাওনি তার কঠিন রোগ ব্রেন টিউমার হয়েছিল সে খবরও নাওনি ডাক্তার দেখাও নি চিকিৎসার ব্যবস্থা করনি কোন টাকা পয়সা দাওনি খেয়েছে কিনা খেয়েছে তার খোঁজ খবর নাওনি কিভাবে বেঁচে আছে কোনো দিন খোঁজ খবর নাওনি আজ এসেছ মরা আমাকে দেখতে লজ্জা করা উচিত তোমার। তুমি এখনই এখান থেকে চলে যাও গ্রামের লোকজন খুব ক্ষেপে আছে। আর শোনো আমার মোবাইলে তোমার মায়ের রেকর্ড করা কথাগুলো এখানে তোমার মায়ের নসিয়ত করা আছে। ভালোভাবে শোনো এতে আমার কোন দোষ নাই। মোবাইলের রেকর্ড অন করে দিল শোনো তোমার মায়ের নিজের মুখের কথা, তোমার মা তোমাদের সম্বন্ধে কি বলে গেছে। সাদাত সমস্ত কথাগুলো স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে শুনলো।
সাদাত কে গ্রামের লোকজন জানাজায় অংশগ্রহণ করতে দিল না আরিবা এবং আমি প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করলাম। চাচির আখেরি ইচ্ছাটুকু অন্ততপক্ষে সুস্থ-সুন্দর ভাবে পালন হোক। যারা অমানুষ তাদের জন্য এটাই চরম শিক্ষা। সব কাজ অবসান হলো সাদাত শহরে ফিরে গেল বুঝতে পারল মা কত বড় সম্পদ ছিল মা থাকতে তার কদর করে নি তাই তার শিক্ষা সে পেয়ে গেল। এখন হাজার বছর চোখের পানি ফেললেও মাকে আর ফিরে পাবেনা।
আমার মাকে আমি হারিয়েছি অনেক আগে। তিনি পৃথিবীতে আজ আর নেই। মা হারানোর কষ্ট কত দুঃখ বেদনা আমি হাড়েহাড়ে বুঝতে পারি। শুধু মা নয় আমার পিতাও নাই। আমি এক সর্বহারা।
আমার মা বিনা চিকিৎসায় মারা যাননি তারক আয়ু ছিলনা তাই আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন। মাকে আমি কঠিন মাটির তলে নিজ হাতে রেখে এসেছি ভুলিতে পারি না সেই স্মৃতি বড় কষ্ট বড় বেদনা। মা এর অভাব হৃদয় আমার হাহাকার করে ওঠে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে আমার বেদনার দীর্ঘনিঃশ্বাসে।
আমি ভাবি মা জাতির কথা। লাখো-কোটি মা আছেন যাদের উপযুক্ত সন্তান আছে আয় করার মত লোক আছে। তারা মাকে রেখে বসবাস করে শহরের অট্টালিকায় স্ত্রী-পুত্র শশুর শাশুড়ি নিয়ে
আরামের জীবন যাপন করে। অথচ তার মা গ্রামে নিভূত এক ঘরে বা কোন এক বস্তির কোনে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অনাহারে অনিদ্রায় বিনা চিকিৎসায় উপেক্ষায় অবহেলায় মনের কষ্টে দিন যাপন করে। পেটে নেই আহার পরনের কাপড় নেই রোগের চিকিৎসার টাকা নেই পরের দুয়ারে ভিক্ষা করে।
এভাবে প্রতিনিয়ত জীবনের সাথে লড়তে লড়তে একদিন চির জীবনের তরে নিশ্চল অথর মহাকালের আহবানে পাড়ি জমায় লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি সন্তানের মা। তাদের ইতিহাস কেউ লিখে রাখে না
কোন পত্রপত্রিকাতে ও ছাপানো হয় না যারা ঝরে যায় অন্ধকারের গহীন কবরে।

আমার দুঃখী জীবনে পাশে দাঁড়াই এক মহীয়সী নারী যার প্রেমে ভালবাসায় কোন খাদ নাই সে হলো 'আরিবা'
কখনো কখনো গভীর রাতে মাকে স্বপ্নে দেখি চিৎকার করে উঠি ঐ আমার মা আমার মা 'মা' 'মা'। আমার চিৎকারে আরিবার ঘুম ভেঙে যায়। আমার স্বপ্নের ঘোর আরিবা তার মধুর পরশে ভুলাই।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
doel paki অভিনন্দন।
মামুন ইকবাল আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ
ফয়জুল মহী সুন্দর উপস্থাপন করেছেন।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

মা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ। যার মা নেই সেই জানে মা হারা দুঃখ বেদনা। যে সমস্ত সন্তানেরা মায়ের যত্ন নেইনা মায়ের সেবা করে না মাকে অপেক্ষায় অবহেলায় রেখে দেই কোন খোঁজ খবর নেই না।তাদের আহার বশনের ব্যবস্থা করে না। রোগে শোকে চিকিৎসা করায় না। পরের বাড়ি ভিক্ষা করে জীবন কাটায়। এবং একদিন পৃথিবী থেকে অনেক দুঃখে কষ্টে বিদায় হয়।

১১ এপ্রিল - ২০২২ গল্প/কবিতা: ৮ টি

সমন্বিত স্কোর

৪.৮৭

বিচারক স্কোরঃ ১.৮৭ / ৭.০ পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪