নিঃসন্তান

উপলব্ধি (এপ্রিল ২০২২)

Hridoy Ahammed
  • ৩৭
বিয়ের প্রায় এক যুগ পেরিয়ে গেল শামিম-শামিমা দম্পতির। কিন্তু এখনও তাঁরা নিঃসন্তান। বিগত সময়গুলো শামীম তাঁর প্রিয়তম স্ত্রী শামীমাকে পরম আদরে আগলে রাখলেও এক যুগ পর তা আর সম্ভব হচ্ছে না আত্মীয়-স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশীর নেতিবাচক সমালোচনার কারনে। কেননা,এই দম্পতি নিঃসন্তান থাকার পিছনে একমাত্র শামীমা-ই দায়ী। ডাক্তার ইতোমধ্যে জানিয়েছেন শামীমা আর কোনোদিন মা হতে পারবেন না। শত চিন্তা ভাবনার অবসান ঘটিয়ে শামীম সাহেব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় তাঁর স্ত্রী কে তালাক দেওয়ার জন্য। গত হওয়া বছরগুলো তাঁরা নিঃসন্তান থাকলেও একে অপরের প্রতি ভালবাসা ছিলো অফুরন্ত। কোথাও কোনো বিন্দুমাত্র খাদ ছিলো না। এমনকি একে অপরকে ছেড়ে যাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলো তাঁরা। পরিবারের লোকজন সমাজের মানুষের সমালোচনা আর নিতে পারছে না। তাই পরিবার চায় শামীম আবার বিয়ে করুক। বর্তমান স্ত্রীকে তালাক দেওয়া হোক। এদিকে সন্তান লাভের আকাঙ্খায় শামীম সাহেবও মরিয়া হয়ে উঠেছেন। সব প্রতিশ্রুতি ভুলে গিয়ে একদিন শামীম সাহেব তার স্ত্রীকে বাহুডোরে আগলে পরম মমতায় জড়িয়ে তালাকনামার কথা বলেন। স্বামীর এমন অস্ফুটে বলা কথা শুনে শামীমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মত অবস্থা। অপলকে তাকিয়ে আছে ভালবাসার মানুষটার দিকে। চোখের কোনে জলবিন্দু বের হওয়ার উপক্রম। তাঁর অশ্রু ভেজা চোখে জানায়-" তুমি আবার বিয়ে করো আর যা-ই করো আমাকে তাড়িয়ে দিও না। আমি তোমার ভালবাসা না পেলে মরে যাবো। প্রয়োজনে তোমার দাসী হয়ে থাকতে চাই। তোমার সেবা করার জন্য তোমার ঘরের কাজের মানুষ হয়ে থাকতে চাই।" এই বলে তিনি শামীম সাহেবের বুকে মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠে।
কিন্তু শামীম সাহেব ও তার পরিবারের কেউ এটা মেনে নিতে নারাজ। তাছাড়া শামীম সাহেবের নতুন স্ত্রী কখনো এটা মেনে নিবে না। তাদের মধ্যে অনেক আবেগঘন কথাবার্তার এক পর্যায়ে শামীম সাহেব শামীমাকে বুঝাতে সক্ষম হয়। শামীমাও স্বামীর আশা পূরণে শত কষ্ট ধামা চাপা দিয়ে এই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তাদের এই এক যুগের ভালবাসার ইতি ঘটতে যাচ্ছে। শামীমার শেষ চাওয়া ছিলো যেন তাদের ডিভোর্স না হয় প্রয়োজনে তিনি এই বাড়ী ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু শেষ ইচ্ছেটাও আর পূরণ হলো না শামীমার। সব হিসেব চুকিয়ে তালাকনামা আসে শামীমার হাতে। স্বামীর সংসার ছেড়ে যাওয়া কতটা মর্মান্তিক তা শুধু ভুক্তভোগীরা-ই বুঝেন। স্বামী গৃহের মায়া ছেড়ে চলে যাওয়ার দিন শামীমা তাঁর স্বামীর সাথে এক যুগ কাটানো অতীত রোমন্থন করে অঝোরে কেঁদেছিলো। তার জীবন আকাশে ঘন কালো মেঘ করেছিলো সেদিন। শামীমা বাড়ী থেকে বের হওয়ার সময় স্বামীকে গলা জড়িয়ে বলেন," আমি তোমার অপেক্ষায় বেঁচে থাকবো।" শতবর্ষে কংকাল বেশে যদি তোমার কাছে আসি কাছে টেনে নিও। স্বামীর ভালবাসা আর স্বামীগৃহ ত্যাগের কষ্ট বুকে নিয়ে আশ্রয় নেয় বাবার বাড়ী। শামীম-শামীমার সংসার ভাঙার প্রায় পঁচিশ বছর পেরিয়েছে আজ। এরই মধ্যে শামীম সাহেব তিন সন্তানের বাবা হয়েছেন। শামীম সাহেব পিতৃত্বের সাধ উপভোগ করলেও মা হওয়ার হৃদয় ব্যঞ্জনা রয়ে গেল শামীমার। তাতে শামীমার কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি শুধু স্বামীর ভালবাসাকে পূঁজি করে বাঁচতে চান। দ্বিতীয় কোনো স্বামী গ্রহণ করেননি তিনি। বাবার বাড়ীতেও বেশিদিন স্থায়ী হতে পারেননি। ভাইদের চোখের কাটায় পরিনত হয়। পাঁচ বছর বাবার বাড়ীর ভাত পেটে যায়। তাঁর বাবার মৃত্যুর পর আর এই বাড়ীতে টায় মেলেনি শামীমার। পরিশেষে একমাত্র আশ্রয়স্থল হয়েছিলো বৃদ্বাশ্রম। শামীমার স্মৃতি বলতে তাদের বিয়ের একমাত্র বাধায় করা ছবিটি। সবসময় বুকে পরম যত্নে ধারণ করে রাখেন শামীমা। ছবিটির উপর তাদের বিবাহ বার্ষিকী লেখা আছে। আজ তাদের সাইত্রিশতম বিবাহ বার্ষিকী। ছবিটির দিকে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ঝরাচ্ছে শামীমা। যৌবনের শেষে এসেও মন উজাড় করা হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসায় সিক্ত শামীমা। হঠাৎ মনে পড়লো বৃদ্ধাশ্রমে আজকে একজন নতুন অতিথি আসার। বৃদ্ধাশ্রমে নতুন কেউ আসলে অনুষ্ঠান হয়। তাকে সাধরে গ্রহন করা হয় বৃদ্ধাশ্রম পরিবারে। পরিচয় পর্ব অনুষ্ঠানে থাকতে হবে শামীমা কে। সময় ঘনিয়ে আসছে। সবাই উপস্থিত। সবার সাথে শামীমাও। বৃদ্ধাশ্রমের পরিচালক নতুন অতিথিকে সামনে নিয়ে আসেন। একপলক দেখা মাত্রই আঁতকে উঠে শামীমা। চেহারায় বয়সের চাপ পড়া মানুষটাকে চিনতে ভুল করেননি তিনি। এই নতুন অতিথি আর কেউ নয়-শামীমার প্রিয়তম স্বামী শামীম সাহেব। কালো চুলগুলো সাদা হয়েছে। গালের চামড়া শুকিয়ে খসখসে ভাব। চোখের নিচে কালো দাগ পড়লেও চোখ দুটির চাহনি আগের মতই। শামীমা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি তৎক্ষনাৎ সবাইকে পিছনে ফেলে শামীম সাহেবকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত বিলাপ করতে লাগলেন, " তুমি এখানে কী করছো? ওগো আমি তোমার শামীমা। চিনতে পারোনি এখনো?" এই কথা বলে শামীম সাহেব গালে আদর মাখানো হাতটি বুলিয়ে দিচ্ছে শামীমা। এদিকে শামীম সাহেব এই দৃশ্যের জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তিনি চিনতে পারেননি। শামীমা কান্না জড়ানো কন্ঠে বোঝাতে চাচ্ছেন তিনি তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বলতে থাকেন তারঁ সাথে কাটানো এক যুগের ভালবাসার কথা। হাজারো স্মৃতি ঘেরা কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলতে থাকেন তিনি। হাতে থাকা বিয়ের ছবিটা দেখানোর পর শামীম সাহেব তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীকে চিনতে পারেন। স্তব্দ হয়ে আছেন শামীম সাহেব। চোখে অশ্রু টলমল করছে। এই বুঝি গালবেয়ে পড়বে। মুখটা পরক্ষণেই কালো বর্ণ ধরন করলো। কিছুক্ষণ মূর্তির মত দাড়িয়ে থেকে হঠাৎ শামীম সাহেব চিৎকার করে বলছেন, "শামীমা তুমি বেঁচে আছো? আজও আমাকে মনে রেখেছো? আমি একটা স্বার্থপর। আমার কোনো ক্ষমা নেই। আমার যে আজ কেউ নেই। আমি একা। যে সন্তান লাভের আশায় তোমাকে ত্যাগ করেছিলাম সেই সন্তানেরা-ই আমাকে সর্বস্বান্ত করেছে। আজ আমি নিঃস্ব। আমাকে দেখার মত কেউ নাই। তারা যার যার মত ভবিষ্যৎ গড়েছে। পাড়ি জমিয়েছে দেশের বাহিরে। আমাকে অবশেষে রেখে গিয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে। এই বৃদ্ধাশ্রম আমার শেষ ঠিকানা।"
তিনি এই কথা গুলো বলছেন আর শামীমাকে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে ফুফিয়ে কান্না করছেন। জীবনের অন্তিম সময়ে এসে একে অপরের দেখা পাওয়া এই দম্পতির সীমাহীন ভালবাসা দেখে উপস্থিত সবাই আবেগে আপ্লূত হয়ে চোখের জলে গাল ভাসাচ্ছেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী মাশা আল্লাহ মনোমুগ্ধকর রচনাশৈলীতে অনন্যসাধারণ সমর্পণ। চমৎকার।
শাহ আজিজ ভাল লাগলো আপনার লেখা গল্প ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

প্রতিযগিতায় গল্পের বিষয় "উপলব্ধি" যা পুরোপুরি আমার " নিঃসন্তান" সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

২৪ মার্চ - ২০২২ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪