পাপের অনুতাপ

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

Muhammadullah Bin Mostofa
  • 0
  • ৭৭
- কে? কে ওখানে? বেড়িয়ে এসো বলছি!
এই প্রথমবারের মতো দরজা খুলে কাউকে দেখতে পেল না সাদি। ঘাম ঝড়ছে মুখ থেকে তার। হাত দিয়ে বারবার গাল বুলাচ্ছে। প্রশ্ন একটাই বারবার মনের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে, কে বারবার দরজার কড়া নারিয়ে ডিস্টার্ব করছে ওকে? আর কেনই বা এমন করছে? না! কিছুই ভেবে পাচ্ছে না সাদি। কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে সে। ফোটা ফোটা ঘাম তার শরীর বেয়ে মাটিতে পড়ছে।

এক, দুই, তিন করে করে পাঁচবার হয়ে গেছে দরজার কড়া নাড়িয়ে তাকে ডিস্টার্ব করার। প্রতিবারের মতো করে আবারও সে দরজা বন্ধ করে ঘরে চলে আসে। কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সাদি। সেই এক কথাই বারবার ভেবে চলেছে- কে করছে ওর সাথে এমন?

দশ থেকে পনেরো মিনিটের ব্যবধানে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে সাদি। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ফোন টিপছে সে। হঠাৎ দু’চোখ বুজে ফেলে। সোফার উপর হেলান দিয়ে আছে সে। দু’চোখ বুজা অবস্থায়। হাত পা কিছুই নড়াচড়া করছে না। ডান হাতটা লম্বা করে রাখা সোফার উপর। হাতের মধ্যে একটা ফোন। ফোনের ডিসপ্লেতে এখনও আলো জ্বলছে।

টন-টং।কলিংবেলের শব্দ শুনে দাড়িয়ে যায় সাদি। সাথে দরজার কড়া নাড়ানোর শব্দও আসছে তার কানে। এক পা এক পা করে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সাদি। থরথর করে কাপছে তার শরির। অদ্ভুদ ধরণের ভয় কাজ করছে তার মনে। তবুও দরজার দিকে পা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে। দরজার কড়া নড়েই চলেছে। কড়া নাড়ার শব্দ নিয়ে ভাবলে এটা মনে করা যায় যে, কেউ আর এক মূহুত© দেরি না করে ভেতরে প্রবেশ করতে চায়।
দরজা খোলার জন্য্ আর কিছু পা অতিক্রম করতে হবে সাদিকে।
সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যেই না পা উচু করলো- ঠিক সেই সময়ই থেমে যেতে হলো তাকে। অদ্ভুদ সব শব্দ কানে আসছে তার। নতুন কোনো কম্পন অনুভব করলো সে। অন্য্ কিছুর নয় এসব! তার হাতে রাখা ফোনের রিং বাজার শব্দ। কম্পনটাও ফোনের। কে ফোন করেছিল! ভালো করে দেখার আগেই ফোন কেটে যায়।
কিন্তু! ও তো এমন ভয়ংকর রিংটোন দেয়নি। তবে সিস্টেম পরিবর্তন হলো কিভাবে? সেটা বুঝে উঠতে পারছে না সাদি।
লাইটও এথন পুরোধমে জ্বলছে না। কবু জ্বলছে, কবু বন্ধ হচ্ছে। কিন্তু এমন হচ্ছে কেন?
হঠাৎ করে প্রকৃতিটাও কেমন যেন বদলে গেল। বাতাসের বেগ প্রবল রূপ ধারণ করেছে। ঘরের ভেতর খেকে স্পস্ট বোঝা না গেলেও শব্দ শুনে কিছুটা অনুভব করা যায়। বাতাস ঘূর্নি খেলে যে শব্দ হয়- সেই শব্দ কানে আসছে সাদির। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে? প্রশ্নটার উত্তর এখনো খোঁজে পায় নি সাদি।
বাইরে প্রচন্ড বাতাস থাকার পরেও দরজা খোলার জন্য এগিয়ে যাচ্ছে সাদি। বাতির কবু জ্বলা, কবু নেবা আরও ভয় জাগ্রত করছে তার মনে। তবুও তার পা ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। চেহারাতে তার স্পস্ট ভয়ের ছাপ। এ ভয়কে যেন পাথর চাপা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সে।
এখন সে দরজার মুখোমুখি। দরজাতে হাত দিয়েছে সে। ঠিক সেই সময় আসমান ডেকে উঠল। কেপে উঠলো সাদি। তবুও সাহস নিয়ে দরজা খোলে দিলো।
- একি! তু…তুত…তু……..মি? তুমি এখানে কি করে? তুমি কি সত্যিই এসেছো? না! না! এ হতে পারে না! তুমি তো মরে গেছো তাই না? তাহলে এখানে আসলে কি করে? না! না! এ হতে পারে না। কিছুতেই হতে পারে না।

কিছুদিন আগে……
আদশ কলেজে পড়ালেখা করে সাদি। তার বাড়ি গ্রামে হওয়ায় এখানে এক বাড়িতে ভাড়া দিয়ে তাকে সে। যে বাড়িতে সে থাকে সেই বাড়িটা একদম একা। আর কেউ থাকে না তার সাথে। অবশ্য বাড়ি থেকে বের হলে বাসা, দোকান, গাড়ি ও মানুষে ভরপুর। আজ নয়মাস ধরে সে এই বাড়ি থাকে।
সে এবার অনার্স্ ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র। তার মেধা প্রখর। তার বিচক্ষণতার কথা কলেজের সবাই জানে। স্যাররাও তাকে খুব ভালোবাসেন, তার প্রসংশা করেন।
কিন্তু সে কি একাই সব? আর কি কেউ নেই তার থেকেও মেধাবী?
আছে! একজন নয়! দুইজন। তাসনুভা আর রাফি। এই দুইজনই সাদির মতো মেধাবী।
হিসেব করলে সাদি ও রাফির তুলনায় তাসনুভা একটু বেশিই মেধাবী। তার মানে আগামী পরিক্ষায় সাদির তুলনায় তাসনুভা আরোও ভালো রিজাল্ট করবে। তাহলে তো সাদির এতোদিনের রেকর্ড ভেঙে যাবে।
মেধাবী ছাত্রদের তালিকায় থাকলেও সব থেকে মেধাবী ও তো আর থাকবে না। আগের মতো তেমন একটা কেয়ার কেউই করবে না তাকে। স্যারদের প্রসংশাও আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকবে। এজন্য সাদি বেশ দোষচিন্তায় পড়ে যায়।
এখন সাদি এক ক্যাফেতে বসে আছে। কিছু সময় পরপর কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে।
আচমকা কোথা থেকে এসে সাদির পাশে বসে রাফি। কিছুক্ষণ ভালো-খারাপ জিজ্ঞাসার পর এক পর্যায়ে আরেকটা কফির অর্ডার করে সাদি। দু’জন একই টেবিলে মুখোমুখি হয়ে বসে আছে।
ইতহস্ত করে রাফি বললো, আমার তোর সাথে জরুরি কথা বলার আছে। তাই বলবো বলে এখানে এসেছি।
সাদি বললো, হুম! বল কি বলার!
এরই মাঝে লাল টি-শার্ট পড়া একটা লোক এসে কফি দিয়ে গেল।
রাফি বললো, বলছিলাম এবারের পরিক্ষার জন্য কি করছিস?
ছাদি বললো, হঠাৎ এই প্রশ্ন?
রাফি বললো, না মানে…!
রাফি আর কিছু বলার আগেই সাদি বললো, আর পরিক্ষার তো আরো অনেকদিন বাকী!
রাফি বললো, এবারের পরিক্ষায় একটু জাল পেচানো না? বলছিলাম যদি আটকে যাস!
সাদি বললো, কি বলতে চাস তুই? একটু খোলে বল?
রাফি বললো, আমার কিন্তু ভীষণ ভয় করছে ওকে!
সাদি বললো, কাকে?
রাফি বললো, কাকে আবার ওই মেয়েটাকে!
সাদি বললো, কোন মেয়ে? বুঝিয়ে বল না বিষয়টা!
রাফি বললো, আরে আমি তাসনুভার কথা বলছিলাম!
সাদি বললো, ও…! তা অবশ্য ঠিক! কিন্তু কি আর করার!
রাফি বললো, আরে তুই এভাবে বলছিস যে! ও যদি একবার পরিক্ষা দিয়ে দেয় তাহলে তোর পুরো লাইফের রেকড© ভেঙে যাবে। তুই কিভাবে বলতে পারিস এমন কথা? আমি আরো ভাবলাম তুই কোনো ব্যবস্থা নিয়েছিস। না! এখন দেখছি এ নিয়ে তোর কোনো মাথা ব্যথা নেই।
সাদি বললো, কি বলছিস তুই? সত্যি আমার কিছু করার নেই। ওকে যদি কোনো ভাবে আটকাই তাহলে ওর লাইফ নষ্ট হবে। আর এখন আমরা বড় ক্লাসে পড়ি ওসব ছোটবেলার আজগুবি কান্ড ঘটিয়ে লাভ নেই। এখন পয়েন্ট কম-বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে এতো মাথা ঘামানোর কিছু নেই।
রাফি বললো, দেখ সাদি এটা তোর জীবনের বিষয়। তুই অন্যের জীবনের কথা ছেড়ে দে। এখন যদি তুই ওর থেকে খারাপ রিজাল্ট করিস তাহলে বলতো কেমন হবে? তুই নিজেকে প্রশ্ন কর সাদি। তোর মন একটা কথাই বলবে, তাসনুভাকে পেছনে ফেলতে হবে। কেন তুই নিজের জীবন ছেড়ে অন্যের জন্য মাথা ঘামাচ্ছিস? এতোদিন আমি জানতাম তুই মেধাবী, বুদ্ধিমান। কিন্তু নিজের জীবনের কথা যে ভাবে না সে বোকা ছাড়া আর কি হতে পারে? এখন দেখছি তুই তাই।
সাদি বললো, কিন্তু…!
সাদি আর কিছু বলার আগেই রাফি বললো, কোনো কিন্তু নয় সাদি! আমি তোকে সাহায্য করব।
সাদি বললো, কি করতে চাচ্ছিস একটু খোলে বল?
রাফি বললো, আগে তুই বল ঘাবড়াবি না?
সাদি বললো, আচ্ছা ঠিক আছে! বল না তাড়াতাড়ি?
রাফি বললো, ওকে মেরে ফেলতে হবে!
সাদি বললো, কি…!
সাদির মুখ চেপে ধরে রাফি বললো, হুম! যা বলছি তাই করতে হবে!
সাদি বললো, তুই কি ঠিক আছিস? তুই কি বুঝে-শুনে কথাগুলো বলছিস?
রাফি বললো, হ্যা! আমি ঠিক আছি আর বুঝে-শুনেই কথাগুলো বলছি।
আসলে তুই বিষয়টাকে সিরিয়াসলি নিচ্ছিস না। তোর কাছে জীবন হয়ে গেছে ছেলে খেলার মতো। আসলে তুই একটা বোকা ছাড়া কিছু নস সাদি। তুই চরম বোকা।
একটা দীঘ©শ্বাস ফেলে সাদি বলে, কিন্তু! বিষয়টা কি এতোই সোজা?
রাফি বললো, পৃথিবীর সবকিছুই কঠিন হয়ে যায় যদি তাকে কঠিন মনে করা হয়। আর যদি কঠিন বিষয়কে সহজ করে ভাবা যায়- গভীর আত¥বিশ্বাস নিয়ে, তবে বিষয়টা পানির মতো সহজ হয়ে যায়।
সাদি বললো, কিন্তু! যদি ধরা পড়ি?
রাফি বললো, কোনো কিন্তু নয়! বললাম না আমি আছি। ধরা পড়ার ভয়! তুই যে এতো ভীতু হতে পারিস তা আমি স্বপ্নেও কল্পনা করি নি। আজ তা স্ব্চক্ষে দেখলাম।
সাদি বললো, আচ্ছা আমি রাজি আছি তোর পªস্তাবে। কিন্তু কিভাবে কাজটা করবি বললে না যে?
রাফি বললো, কলেজের বা দিকে যে জ½লটা আছে ওখানে তাসনুভাকে কিছু একটা বলে নিয়ে যাব। আগে থেকেই সেখানে অস্ত্র্ তৈরি রাখব। তারপর ওকে নিয়ে কাজ সেরে ফেলব।
সাদি বললো, ফ্যান্টাস্টিক আইডিয়া।
রাফি বললো, কেমন? ফ্যান্টাস্টিক না?
সাদি বললো, হুম!
সাদি রাফির হাতে হাত মিলিয়ে বললো, তাহলে কালই কাজটা সেরে ফেলা যাক! তুই কাল অস্ত্র্ নিয়ে যাবি আর আমি তাসনুভাকে! কেমন?
রাফি বললো, ঠিক আছে!
সাদি বললো, তাহলে আজকের মতো বিদায় নেই?
রাফি বললো, হুম!
সাদি কফির বিল মিটিয়ে বেরিয়ে পড়ে ক্যাফে থেকে। রাফিও চলে যায়।

সাদি এখন ঘরের মধ্যে বই নিয়ে বসে আছে। মিস্ট্রির বই। বইয়ের দিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই কিন্তু পড়তে কোনো আগ্র্হ নেই তার। কিছু¶ন আগেও তার আগ্র্হ ছিলো। কিন্তু এখন নেই। পড়ার মাঝখানে গভীর ভাবনায় ডুবে যায় সে। মানুষ এসি পেয়ে গেলে যেমন ফ্যানকে ভুলে যায়- ঠিক তেমনই মনে হয় সাদি বইয়ের মধ্যে এমন কিছু পেয়ে গেছে যা এখন বই পড়া থেকেও মূল¨বান।
ঘন্টা খানেক ধরে সাদি ভেবেই চলেছে। তবুও তার ভাবনার শেষ হচ্ছে না। হঠাৎ করেই সাদি খিলখিল করে হেসে উঠলো। সাদি বলে উঠলো, এসেছে! মাথায় বুদ্ধি এসেছে।
কথা শেষ হতে না হতেই তাসনুভাকে কল করলো সাদি।
কল রিসিভ করে তাসনুভার হ্যালো বলাতে-
সাদি বললো, কেমন আছো?
তাসনুভা বললো, ভালো! আর তুমি?
সাদি বললো, ভালো!
কয়েক সেকেÛ কেটে গেলো কেউ কোনো কথা বললো না।
তাসনুভাই এবার মুখ খুললো, কিছু বলতে চাইছিলে?
সাদি বললো, হুম!
তাসনুভা বললো, বলো কি বলার?
সাদি বললো, এখন কি তুমি বিজি?
তাসনুভা বললো, না!
সাদি বললো, বির³ না হলে বলতাম!
তাসনুভা বললো, বলো না কি বলার?
সাদি বললো, কাল আমার সাথে এক জায়গায় যেতে পারবে?
তাসনুভা বললো, কেন?
সাদি বললো, তোমার সাথে আমার কিছু কথা বলার ছিলো!
তাসনুভা বললো, কোথায় যেতে হবে?
সাদি বললো, গেলে বলবো!
তাসনুভা বললো, ঠিক আছে যাব। কিন্তু দূরে কোথাও নয়!
সাদি বললো, আচ্ছা দূরে কোথাও যাব না!
তাসনুভা বললো, কিন্তু যাব কোথায়?
সাদি বললো, কাল বলবো!
তাসনুভা বললো, আরে! একটু আগে বললে- গেলে বলবে। তাহলে এখন বলছ না কেন?
সাদি বললো, আসলে এখনো সেট করি নি কোথায় যাব!
তাসনুভা বললো, ও…! আচ্ছা ঠিক আছে!
সাদি বললো, তাহলে এখন রাখি?
তাসনুভা বললো, ঠিক আছে! বায়!
সাদি বায় বলে ফোন কেটে দেয়। এখন আনন্দে নাচানাচি করতে চাচ্ছে তার মন। আগের মতো এখন আর তার মনে ভাবনা নেই। কবু বই পড়ে, কবু ফোন টিপে, কবু বাইরে থেকে ঘুরে এসে দিন কাটিয়ে দেয় সাদি।

পরদিন সকাল বেলা……
যথারীতি ঘুম থেকে উঠে নিজেকে ফ্রেশ করে নেয় সাদি। তারপর হিটার দিয়ে কফি বানিয়ে খায়। সময় এখন প্রায় দশটা বেজে গেছে। সাদি নিজেকে সাজিয়ে গুজিয়ে তৈরি করে নেয়। তারপর ফোন হাতে নিয়ে রাফিকে কল করে-
রাফি বলে- হুম! বল?
সাদি বলে- কাজ সেরে ফেলেছিস তো?
রাফি বলে- হুম! সবকিছু ঠিকঠাক রেখে দিয়ে এসেছি।
সাদি বলে- তুই এখন কোথায়?
রাফি বলে- জ½লের পাশেই আছি।
সাদি বলে- কেউ যদি ওসব দেখে ফেলে?
রাফি বলে- কেউ দেখবে না। লুকিয়ে রেখেছি!
সাদি বলে- আচ্ছা ঠিক আছে। তুই ওখানে চলে যা!
রাফি বলে- এখনি যাব নাকি?
সাদি বলে- হুম! এখনি যা। আমি ওকে একটু পড়েই নিয়ে আসছি।
রাফি বলে- আচ্ছা ঠিক আছে যাচ্ছি!
সাদি বলে- ঠিক আছে রাখি?
রাফি বলে- আচ্ছা!
কল কেটে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ে সাদি। সে এখন হাটছে, হাটছেই হাটছে। কিছু সময় হাটার পর সে কলেজে পৌছায়।
তাসনুভাকে আর কল করতে হয় না! সেও কলেজে চলে আসে। তাসনুভার পাশে গিয়ে দাড়ায় সাদি এবং বলে, চল!
তাসনুভা বলে- কোথায়?
সাদি বলে- যেতে যেতে মাঝপথে বলি!
তাসনুভা বলে- ঠিক আছে চল!
সাদির পিছু পিছু তাসনুভা কলেজ থেকে বেরিয়ে আসে। সাদি একটা অটো রিকশা ডেকে তাতে উঠে পড়ে।
রিকশার ড্রাইভার বলে- আপনারা কোনদিকে যাইবেন?
সাদি বলে- সামনের দিকে সোজা চল!
রিকশা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো।সাদি কোনো কথা বলছে না। একদম নিশ্চুপ। তাসনুভার মুখে বিরক্তির ছাপ।
এক পর্যায়ে তাসনুভা প্রশ্ন করেই বসলো, বললে না যে?
সাদি বললো, কি?
তাসনুভা বললো, আরে! আমরা কোথায় যাচ্ছি?
সাদি বললো, গেলেই দেখতে পাবে!
তাসনুভা বললো, বললে কি দোষ?
সাদি বললো, বললাম না তোমার সাথে আমার জরুরি কথা আছে। একটু ধয© ধরে থাকো না। আমরা তো দূরে কোথাও যাচ্ছি না। ঐ সামনে যাচ্ছি!
আর কোনো কথা বাড়ালো না তাসনুভা। চুপচাপ বসে রইল। রিকশা চলতেই আছে জ½লের রাস্তা ধরে। আস্তে আস্তে দোকান, মানুষ ও বাসা সবই হারিয়ে যেতে লাগলো। এক পর্যায়ে জনবিহীন হয়ে গেলো পুরো রাস্তা। তবে মাঝে মধ্যে একটা দুইটা গাড়ি চলাফেরা করছে। আরো কিছু দূর এগিয়ে গেলো রিকশা। সাদি ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেলো রিকশা থেকে। তাসনুভার মনে এখন সপ্রশ্ন জমা হয়েছে।
তাসনুভা বলেই ফেললো, এখানে বলা যায় না কথাটা?
সাদি বললো, না যায় না!
তাসনুভা বললো, কেন?
সাদি বললো, কারণ আমি তোমাকে একটা নতুন জায়গায় নিয়ে যেতে চাই!
তাসনুভা বললো, কিন্তু কোথায়?
সাদি বললো, ঐ দিকে!
তাসনুভা বললো, ঐ দিকে! ঐ দিকে তো জ½ল!
সাদি বললো, তো কি হয়েছে?
তাসনুভা বললো, না মানে!
সাদি বললো, ভয় করছে বুঝি?
তাসনুভা বললো, কেন?
সাদি বললো, আমি বলতে চাচ্ছিলাম বাঘ ভাল্লুকের!
তাসনুভা বললো, মোটেও না!
সাদি বললো, তাহলে ভেতরে চল! দেখা যাক তুমি সাহসী না ভীতু।
আর কোনো কথা না বলে জ½লের ভেতর পªবেশ করলো দু’জন। হাটতে হাটতে জ½লের অনেক গভীরে তারা চলে এসেছে। আর মাঝে মাঝে তাসনুভার সপ্রশ্নের উËর দিতে হয়েছে সাদিকে। না উËর নয়! প্রশ্নটাকে ঘুরিয়ে নেয়ার জন¨ কথা বলেছে সে।
এতদূর হাটার পরও রাফিকে দেখতে পায় নি সে। এই বিশাল জ½লে এভাবে কাউকে খোঁজলে কি করে পাওয়া যাবে? ফোনের সাহায¨ ছাড়া আর কোনো দ্বিতীয় অপসন নেই সাদির কাছে। সাদি ফোন বের করে হুয়াটস্যাপ এ ঢুকে। কিন্তু এই জ½লের ভেতরে নেটওয়াক© খুব পªব্লেম করছে। কিছু সময় নó করে হুয়াটস্যাপ ওপেন হয়। তারপর রাফিকে ম্যাসেজ পাঠায় সাদি।
সাদি বলে, কোথায় তুই? আমি এত¶ন ধরে খোঁজে পাচ্ছি না!
রাফি বলে, আমি বড় বটগাছের কাছে আছি।
সাদি বলে, বড় বটগাছ আবার কোনটা?
রাফি বলে, আরে ঐ যে! লাল কাপড় পেঁচানো, লোকে যাকে ভূতুরে গাছ বলে।
সাদি বলে, ও…! আচ্ছা আমি এক্ষুনি আসছি।
বড় বটগাছকে অনুভব করে চলতে থাকে সাদি।
তাসনুভা বলে উঠলো, কোথায় যেতে চাও তুমি? এতো জায়গা আসার পরও হয়নি?
সাদি বললো, ওই তো সামনে!
কিছু¶ন সাদি বড় বটগাছকে অনুভব করে হাটলো। তার পিছে পিছে তাসনুভাও। প্রায় আট থেকে দশ মিনিট হাটার পর তারা পৌছায় বড় বটগাছের তলায়। রাফিকে দেখে তাসনুভা চমকে উঠে।
উৎকন্ঠার স¡রে তাসনুভা বলে, তুমি এখানে?
রাফি বটগাছের ওপাশ থেকে ছুরি নিয়ে আসে। তাসনুভার আর বুঝতে বাকি রয় না কেন ওকে সাদি এখানে নিয়ে এসেছে।
তাসনুভা যেই না পালানোর জন¨ পা বাড়ালো- ঠিক সেই সময় তাকে ধরে ফেলে সাদি। এক হাত দিয়ে তাসনুভার দু’হাত কবজা করে আছে সাদি। আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরেছে। ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসে তাসনুভার কাছে রাফি। ছুরি দিয়ে একের পর এক কোপ বসায় তাসনুভার বুকে রাফি।
বারকয়েক কোপ দেয়ার পর মাটিতে পড়ে যায় তাসনুভা।
সাদি বলে, লাশ কি করবি?
রাফি বলে, এই দেখ! আমি গত© তৈরি করেছি। ওকে পুতে ফেলবো।
সাদি বলে, তাহলে তাড়াতাড়ি কর!
দু’জন মিলে লাশটাকে তোলে গর্তের ভেতর ঢুকিয়ে মাটি চাপা দিয়ে দেয়। তারপর পোষাক পরিবত©ন করে যে যার বাড়ি চলে যায়।

সাদি এখন বাড়িতে বসে আছে। কে এসে তাকে দরজার কড়া নাড়িয়ে বারবার ডিস্টাব© করছে। কিন্তু দরজা খোলে কাউকে দেখতে পায় না সাদি। রাত এখন সাতটা বাজছে। ষôবারের মতো দরজায় ডাক পড়ে তার। দরজা খোলে যা দেখে তা স্ব্চক্ষে বিশ্বাস করতে পারে না সাদি! সে দেখে তাসনুভা দাড়িয়ে আছে তার সামনে।
কিন্তু এ কি করে সম¢ব? আজই তো তাসনুভাকে ওরা………! সেটাই বুঝার ¶মতা নেই সাদির।
তাসনুভার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দেয় সাদি। ভয়ে থরথর করে কাপছে তার শরির। সে এসে সোজা বিছানায় কাঁথার নিচে লুকিয়ে যায়। ভীষন ভয় করছে তার।

কাঁথার নিচে শোয়া অবস্থায় একঘন্টা কেটে গেছে। তবুও সাদি কাঁথার নিচেই আছে। হঠাৎ তার ফোন বেজে উঠে। চেয়ে দেখে সে রাফি কল করেছে। কিন্তু এই সময় কেন? তবুও ভয় কিছুটা কমবে বলে কল রিসিভ করে সাদি-
ওপাশ থেকে- আপনি রাফির কে হন?
সাদি বলে- কেন? আপনি কে? আর রাফি কোথায়?
ওপাশ থেকে- আগে বলুন আপনি রাফির কে হন?
সাদি বলে- বন্ধু!
ওপাশ থেকে- শুনে খুব খারাপ লাগবে আপনার বন্ধু আর বেঁচে নেই!
কি! মূহুর্তের মধ্যে সাদির পªতি উËর।
ওপাশ থেকে- আজ সন্ধায় ওকে একটা ট্রাক ধাক্কা দিয়ে চলে যায়। আমি ওকে দ্রুত মেডিক্যাল নিয়ে আসি। কিন্তু তত¶নে ও…! ও এখন নিউ সেবা হসপিটালে আছে। আশা করি আপনি ওর পরিবারকে জানিয়ে ওকে নিয়ে যাওয়ার ব¨বস্থা করবেন।
সাদি বলে- আমি তো ওকে নিয়ে যেতে পারবো না। তাই কó করে আপনি ওর পরিবারকে জানিয়ে দিলে ভালো হয়। আমি ওর পরিবারের নাম্বার সেÛ করে দিচ্ছি।
ওপাশ থেকে- আচ্ছা ঠিক আছে!
কল কেটে দেয় সাদি। সাথে সাথে নাম্বার সেÛ করে দেয়। কিন্তু রাফির কথা ভেবে আরো ভয় পায় সে। এটা কি করে হলো? হঠাৎ রাফির মরে যাওয়া কেমন যেন ধাক্কা দেয় সাদিকে। ভীষণ ভয় করছে এখন সাদির। কি করবে এখন?
ও যদি রাফির মতো………! না! আর ভাবতে পারে না সাদি। বিছানায় কাঁথার নিচে শোয়ে পড়ে সে।

এভাবেই রাত কেটে যায়। ঘুমের মধ্যেই সকাল চলে আসে। ঘুম থেকে উঠে সাদি তাড়াতাড়ি করে মুখ ধুয়ে নেয়। মুখ ধুয়ে কিছু না খেয়ে সোজা বেরিয়ে পড়ে ঘর ছেড়ে।

রাস্তায় এসে সে একটা রিকশাকে ডাক দেয়। পুলিশ স্টেশন যেতে বললে- রিকশার ড্রাইভার সাফ বলে দেয় ওখানে যাবে না। সাদি বলে, ভাড়া বাড়িয়ে দেব। রিকশার ড্রাইভার বলে, পাক্কা একশ পÂাশ টাকা দিতে হবে। সাদি বলে, ঠিক আছে কথা না বাড়িয়ে চলো।
রিকশাতে উঠে পড়ে সাদি। রিকশা চলতেই থাকে। কিছু¶নের ব¨বধানে পৌছে যায় পুলিশ স্টেশন। সাদি রিকশার ভাড়া মিটিয়ে চলে যায় ভেতরে। পুলিশকে সাদি তার সাথে ঘটে যাওয়া সব ঘটনা খোলে বলে।পুলিশ সাদিকে জেলে বন্ধি করে এবং তাসনুভার লাশ উদ্ধার করে।

পরদিন পত্রিকায় ছাপা হয় পাপের অনুতাপ নামে লম্বা পªতিবেদন। যেখানে সাদির সাথে ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়। যেই ঘটনা পড়ে মানুষ শিক্ষা লাভ করে- “নিজে বড় হও, কিন্তু অন¨কে মেরে নয়। কারণ অন¨কে মারলে তোমাকেও একদিন কঠিন শাস্তির সম্মূখীন হতে হবে।”
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী খুব সুন্দর
ভালো লাগেনি ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২
অসংখ্য ধন্যবাদ
ভালো লাগেনি ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

২৬ জানুয়ারী - ২০২২ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "অবহেলা”
কবিতার বিষয় "অবহেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ এপ্রিল,২০২৪