ঘরের ভিতর অন্ধকার আর অন্ধকার। ছোট্ট একটা ছিদ্র দিয়ে আলো এসে গায়ে লাগছে রাসেলের। মেঝেতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে রাসেল। হাত পা বাঁধা। মুখটাও বাঁধা। মাথাটা নিচের দিকে নুয়ে আছে। আস্তে আস্তে চোখ খুলে রাসেল। মুখ থেকে উঃ উঃ শব্দ বের হচ্ছে। সম্ভবত সে বলতে চাচ্ছে আমি কোথায়? অন্ধকারের মধ্যে কিছু দেখতেও পাচ্ছে না সে। হাত থেকে বাঁধন খুলার জন্য অপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে। না কোনো লাভই হচ্ছে না উল্টো আরোও ব্যথা করছে। বড় রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। ভীষণ শক্ত। নড়া-চড়া করারও কোনো সুযোগ নেই। ব্যথার জন্য প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে রাসেলের। হাত-পা বেঁধে কিছুক্ষণ থাকলে কতটুকু ব্যথা হয় তা রাসেল এখন বোঝতে পারছে। এমন ব্যথা পুরোটা অনুভব করা কষ্টকর। যে এমন পরিস্থিতিতে পড়ে সেই ভালোভাবে বোঝতে পারে। পিপাসায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে রাসেলের। এখনই যেন প্রাণ হারাবে রাসেল। একদিকে ব্যথা অন্যদিকে পিপাসা। হঠাৎ দরজা খুলার শব্দ কানে এলো রাসেলের। কে যেন ভিতরে আসছে। রাসেলের মাথার সামনে এসে কে দাড়িয়েছে। রাসেল একটু মাথা উচু করে দেখল গায়ে কালো কাপড় পড়া এক ব্যক্তিকে। লোকটির মুখেও মুখোশ পড়া। হাতে একটা গ্লাস। লোকটি রাসেলের মুখের বাঁধন খুলে দিলো। রাসেল পানি পানি করছে। লোকটি নিচে বসে গ্লাসটা রাসেলের মুখে ঠেকাতেই এক ঝটকায় গ্লাসে থাকা পানি খেলো রাসেল।
কিছুদিন আগে......
কলেজের নাম্বার ওয়ান ছাত্র রাসেল। সবদিক দিয়ে সেরা সে। সেটা পড়া হুক আর খেলা হুক। সে সবার প্রথমেই থাকে। তাকে পিছনে ফেলতে ওনেকেই চেষ্টা করে। কিন্তু সবাই ব্যর্থ হয়। সবাই থাকে পছন্দ করে। কিন্তু কিছু লোক বাদে। এর মধ্যে একজন হচ্ছে সাবেত। সে মোটেও রাসেলকে সহ্য করতে পারে না। সব সময় রাসেলকে হারানোর চেষ্টা করে।
আজ কলেজে এসেছে রাসেল। কলেজের মাঠে বন্ধুদের নিয়ে বসে আছে। হঠাৎ প্রেন্সিপাল স্যার অফিস থেকে ডেকে পাঠান। রাসেল অফিসে আসে। দেখতে পায় সাবেতও এখানে বসে আছে। প্রেন্সিপাল স্যার রাসেলকে বসতে বলেন। রাসেল চেয়ারে বসে। তারপর প্রেন্সিপাল স্যার বলেন
- শুন তোমাদেরকে আমি বিশেষ কথা বলার জন্য ডেকেছি!
- (দু’জনে স্বমস্বরে) বলুন স্যার কি কথা?
- শুন তবে “সেরা ফুটবলার সন্ধানি গ্রুপ’’ (SFSG) এবার একটা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে। তারা খুজছে ঢাকা বিভাগের সেরা ফুটবলারকে। আমি চাচ্ছি তোমাদের মধ্যে একজন সেখানে অংশগ্রহণ করো। তোমরা কলেজে ফুটবল খেলার আয়োজন করবে। সেখানে যে বিজয়ী হবে সেই অংশ নেবে (SFSG) এর প্রতিযোগিতায়।
- ঠিক আছে স্যার!
- তাহলে আজ থেকেই প্রস্তুতি নাও। কাল থেকেই খেলা শুরু করতে হবে।
- আচ্ছা স্যার!
কথা গুলো যেন স্যার রাসেলকেই বললেন। তার দিকে তাকিয়ে, তাকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন কথা গুলো। রাসেলকে যেন শুধু কলেজে নয় ঢাকা বিভাগের মধ্যে বিজয়ী হিসেবে দেখতে চান তিনি।
রাসেল আর দেরি করল না মাঠে এসে সবাইকে জানিয়ে একটা টিম গঠন করল। এগারো জনের টিম। সাবেতও টিম গঠন করেছে। তারা মাঠকে সাজিয়ে তৈরি করল ফুটবল খেলার মাঠ। প্রেন্সিপাল স্যার এসে মাঠ দেখলেন। তারপর বললেন
- মাঠ তৈরি হয়ে গেছে। কাল থেকে খেলা শুরু হবে। খেলার নিয়মাবলি জানিয়ে দিচ্ছি। খেলা চার রাউন্ডে হবে। প্রতি রাউন্ড ত্রিশ মিনিট করে। এর মধ্যে যার টিম তিন রাউন্ড জিতবে সেই হবে বিজয়ী।
- আচ্ছা স্যার!
- তাহলে তোমরা প্র্যাকটিস করো!
এই বলে স্যার চলে গেলেন। রাসেল ও সাবেত তারাও যার যার বাড়িতে চলে আসলো। রাসেল বাড়িতে ফুটবল দিয়ে প্র্যাকটিস করছে। আর সাবেত বন্ধুদের সাথে বসে আছে।
সাবেতের বন্ধু একজন বলে উঠল
- সাবেত তুই রাসেলকে হারাবে কি করে?
- সেটাই তো ভাবছি!
- তাহলে চল খেলার প্র্যাকটিস করি?
- খেলার প্র্যাকটিস করে কি হবে? একদিনে প্র্যাকটিস করে কি আর রাসেলকে হারানো যাবে?
- তাহলে কি করবে ভাবছিস?
- এখনো কিছু মাথায় আসেনি। আসলে তোদের বলব! এখন তোরা চলে যা!
সাবেতের বন্ধুরা যে যার বাড়িতে চলে গেল। সাবেত বিছানায় সুয়ে কি যেন ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়ল।
এভাবেই রাত কেটে গেল। এখন সকাল দশটা বাজছে। রাসেল ও সাবেত কলেজের মাঠে। সবাই রাসেল রাসেল ধ্বনি দিয়ে রাসেলকে উৎসাহ দিচ্ছে। সবাই বিশ্বাস করে রাসেলই জিতবে। খেলা শুরু হয়েছে একের পর এর গোল দিয়ে চলেছে রাসেলের টিম। রাসেলের টিমের পাঁচটা গোল হয়েছে। আর একটা গোল সাবেতের। কিছু সময় পার হওয়ার পর খেলা শেষ হয়ে যায় । আর কেউ গোল দিতে পারেনি। এই ম্যাচটা রাসেল জিতে গেল। সবাই রাসেল রাসেল বলে জয়ধ্বনি করছে।
রাগে মুখ ফেটে যাচ্ছে সাবেতের। সাবেত বন্ধুদের নিয়ে বাড়ি চলে এলো।
- তোরা একটাও কাজের নয়। ম্যাচটা জিতাতে পারলে না। শালারা শুধু খেতেই পারে।
- মাথা শান্ত কর সাবেত। আমরা আর কি করব বল? ওকে হারানো কি এতই সহজ!
- তাহলে শুন মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে। রাসেল যদি কাল কলেজে না পৌছায় তাহলে আমরা কাল জিতে যাব।
- কিন্তু ওকে আটকাবে কি করে?
- ওকে অপহরণ করতে হবে।
- অপহরণ! আরে তোর মাথা খারাপ হয়েছে নাকি? সামান¨ একটা খেলার জন¨ এতো বড় ঝুকি নেবে?
- হুম! নিতেই হবে।
- এসব আমরা করতে পারব না!
- তোদের করতে হবে না। আমার পরিচিত একজন আছে সেই করবে।
- আচ্ছা ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছা তাই কর! আমরা তোর সাথে নেই।
সাবেত তার পরিচিত লোক সফি গুন্ডাকে ডেকে এনে কি করতে হবে সব বলে দিলো। সফি গুন্ডা তার কাজ করতে শুরু করলো।
সময় এখন বিকেল চারটা। রাসেল বাড়িতে নেই। কোথায় যে চলে গেছে কেউ জানে না। ফোনটাও বন্ধ। সবাই চিন্তিত।
যদিও চব্বিশ ঘন্টা না হলে পুলিশ আসে পরিচিত হওয়ায় এসেছে। খানিক্ষন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর পুলিশ বোঝতে পারে বিষয়টা আসলে কি। ইনচার্জ তন্ময় হাসান বলে উঠেন এখনই সাবেতকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ঠিক হবে না। আগে রাসেলকে খোঁজে বের করেতে হবে।
রাসেলের ফোনের শেষ লোকেশন জানতে পারে পুলিশ। আর দেরি না করে ততক্ষণাত বেরিয়ে পড়ে পুলিশ। রাসেলের ফোনের শেষ লোকেশন ছিল চৌরাস্তার মোড়ে থাকা ধুমধাম খাও রেস্টুরেন্টে। পুলিশ হাতে একটা ছবি নিয়ে ম্যানেজারকে দেখিয়ে বলে
- এই লোক কি আজ তোমাদের রেস্টুরেন্টে এসেছিল?
- ইনি তো রাসেল স্যার! কেন আসবেন না? প্রতিদিনই আসেন আজকেও এসেছিলেন।
- তারপর কি হলো?
- তিনি কিছুক্ষন থেকে খেয়েদেয়ে চলে গেলেন!
- সত্যি বলছ্ নাকি মিথ্যা?
- কেন মিথ্যা বলব স্যার?
- দেখ রাসেলকে কোথাও খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ওর ফোনের লোকেশন থেকে আমরা জানতে পেরেছি ও শেষবার তোমাদেরই রেস্টুরেন্টে এসেছিল। তারপর থেকেই ওকে আর খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কোথায় লুকিয়ে রেখেছো ওকে বল?
- স্যার আমরা কেন লুকাতে যাব? ওনার সাথে আমাদের কিসের শত্রুতা? বিশ্বাস করুন আমরা কিছু করিনি।
- ঠিক আছে! সি. সি. টিভি ফুটেজ দেখাও?
- এদিকে আসুন স্যার! এই দেখুন।
সি. সি. টিভি ফুটেজ দেখতে লাগলো পুলিশ। রাসেল বসে আছে চেয়ারে। খাবার খাচ্ছে। সে একাই আছে। তার সাথে কেউ নেই। কিছুক্ষন পর রাসেল কাউন্টারে বিল দিয়ে বেরিয়ে আসে।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়েছে এমন সময় রাসেলের সামনে একটা কালো গাড়ি এসে দাড়ায়।
গাড়ির দরজা খুলে একটা লোক রাসেলকে ডাক দেয়। রাসেল ওদের ডাকে সাড়া দিয়ে সোজা গাড়ির দরজার সামনে এসে দাড়ায়। গাড়ির আবরণের জন্য কেউ রাসেলকে দেখতে পাচ্ছে না। আর তারপর ওরা রাসেলের মুখে রুমাল চেপে ধরে। রাসেলের ফোনটা পকেট থেকে পড়ে ভেঙে যায়। রাসেলকে ওরা গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়।
ওদের মুখটা ভালো করে দেখেন ইনচার্জ তন্ময় হাসান। মুখোশ পড়া তাদের মুখে। তাই কারা ওরা বোঝতে পারাটা বড় কঠিন বিষয়। ইনচার্জ তন্ময় হাসান বিডিওটাকে ভালোভাবে দেখে গাড়ির নাম্বার নোট করেন। ইনচার্জ তন্ময় হাসান আর দেরি না করে গাড়িটা কার নামে রেজিস্ট্রার্ড করা জানেন। গাড়িটা ছফি নামক এক ব্যক্তির। ছফির ফোন নাম্বার রেজিস্ট্রারি খাতা থেকে পেয়ে যান। দেরি না করে ফোনটার লোকেশন ট্র্যাক করেন।
দ্রুত গতিতে ফোনের লোকেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ইনচার্জ তন্ময় হাসান। কিছু সময়ের ব্যবধানে রাসেলের কাছে পৌছে যায় পুলিশ। গুন্ডা ছফিকে হাতেনাতে ধরে পুলিশ। গুন্ডা ছফি সাবেতের কথা সব বলে দেয়। সাবেতকেও গ্রেফতার করে পুলিশ। রাসেলকে পুলিশ বাড়িতে পৌছে দেয়। পুলিশ রাসেলের কলেজে গিয়ে প্রেন্সিপাল স্যারের কাছে সব ঘটনা খুলে বলে।
পরদিন সকালে রাসেল কলেজে যায়। প্রেন্সিপাল স্যার সবাইকে ঘটনা খুলে বলেন এবং আরোও বলেন রাসেলই খেলায় বিজয়ী হয়েছে। রাসেলই অংশ নেবে (SFSG) এর প্রতিযোগিতায়। সবাই তখন রাসেলের জয়ধ্বনি করে।
পরবর্তীতে রাসেল (SFSG) এর প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়। রাসেলই হয় ঢাকা বিভাগের সেরা ফুটবলার। শত বাধা আসার পরও রুখতে পারেনি রাসেলকে। প্রেন্সিপাল স্যারের আশা, সবার বিশ্বাস পূর্ণ করতে পারে রাসেল।
( এই গল্পের সব চরিত্রই কাল্পনিক। সেরা ফুটবলার সন্ধানি গ্রুপ, তার ফুটবল প্রতিয়োগিতা, ধুমধাম খাও রেস্টুরেন্ট, রাসেলের অপহরণ এবং সাবেতের গ্রেফতার হওয়া সবই কাল্পনিক )
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এই গল্পের মধ্যে রাসেল নামক একটি ছেলে থাকে। রাসেল পড়ালেখাতে সবার প্রথম স্থান অর্জন করে। খেলাতেও রয়েছে তার অবিশ্বাস্য প্রতিভা। সবাই তাকে পছন্দ করলেও সাবেত থাকে মোটেও সহ্য করতে পারে না। সে সব সময় চায় রাসেলকে পেছনে ফেলতে। সেরা ফুটবলার সন্ধানি গ্রুপ একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। রাসেল ও সাবেতের কলেজের প্রেন্সিপাল স্যার চান তাদের মধ্যে একজন সেখানে অংশ নিক। তিনি মন থেকে চাইছিলেন রাসেল সেখানে অংশ নিক। তিনি জানেন রাসেলই একমাত্র পারবে সেখানে অংশ নিয়ে বিজয়ী হতে। সাবেতকে এজন্য বলেছেন যাতে সে ঝামেলা না করে। এজন্য তিনি কলেজে খেলার আয়োজন করেন। সেখানে যে বিজয়ী হবে সেই অংশ নেবে প্রতিযোগিতায়। সাবেত রাসেলকে খেলায় হারানোর জন্য অপহরণ করায়। কিন্ত তার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এবং রাসেল প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। রাসেল প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়ে স্যারের আশা পূর্ণ করে।
২৬ জানুয়ারী - ২০২২
গল্প/কবিতা:
২৮ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।