স্পর্শের অস্তিত্ব

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২১)

Chadniafroj
  • 0
  • ২৩
আমি এখন সময় করেছি
তোমার এবার সময় কখন হবে সাঁঝের প্রদীপ সাজিয়ে ধরেছি
শিখা তাহার জ্বালিয়ে দেবে কবে…..

তোমার কন্ঠে রবীন্দ্রনাথ সর্বদা জীবিত। তোমার মিষ্টি কন্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনেই তো আমি প্রথম ছুটে গিয়েছিলাম তোমার পানে। সেদিনটি আমার কাছে অদ্ভুত এক সত্য ।তোমার কন্ঠে এখনো রবীন্দ্র সংগীত শুনলেই আমার সে প্রথম দিনটির কথা মনে পড়ে।আমাদের প্রথম পরিচয়ের কথা মনে পরে ।তুমি যখন গাও,আমি তখন চোখ বন্ধ করে মনে করি আমি সেমিনার থেকে বের হয়ে আসছিলাম আর হঠাৎই I hear your voice and I feel something. আমি আবার ছুটে যায় এবং মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি তোমার দিকে। সত্যি তোমার কন্ঠে জাদু আছে অনি।
অরণি: আজ দীর্ঘ পাঁচ বছর যাবত আমি তোমায় আমার নামটি সঠিক করে উচ্চারণ করা শিখাতে পারলাম না। আমি অরনি। সে বাদ দাও বেশ কবি কবি ভাব চলে এসেছে মনে হচ্ছে। কি ব্যাপার !
স্পর্শ: Do you know you are really that person who made my day everyday.
অরণি: তোমায় বড্ড দেখতে ইচ্ছা করছে।
স্পর্শ: একটু ধৈর্য ধরো কাল সকালেই তো দেখা হচ্ছে।But I think you're worried about something. তোমার কি কিছু হয়েছে?
অরনি: ও তুমি বুঝবে না। আমি খুব সাধারন পরিবারের একটি মেয়ে। আমি জানিনা তোমার মা আমায় কতটা সাধারণভাবে গ্রহণ করতে পারবে।
স্পর্শ:What are you talking about, Arni? I think you know about my mother.
অরনি: আমার কেমন জানি ভয় হচ্ছে।
স্পর্শ: এসব ছেড়ে ঘুমোতে যাও। near off 2 a.m. its already too late. কাল আসছি তো তোমার সকল ডর ভয় আমার করে নিতে।
অরণি: এই শোনো না কাল পাঞ্জাবি পরে এসো।
স্পর্শ: জো আজ্ঞা মেরি রানি।
ফোন রেখে দেওয়ার পর অরনি বেশ অনেকক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে চুপ করে বসে রইল। আর ভাবতে লাগলো সত্যি কি সে পাবে তার ভালোবাসার মানুষটিকে? এত ধনী পরিবারের সন্তান স্পর্শ বিখ্যাত সাহিত্যিকের একমাত্র ছেলে। {সাথে সাথে প্রাণবন্ত হয়ে ভাবতে লাগলো} সাহিত্যিকদের কাছে ভালোবাসা দাম আছে। উনি আমাদের ভালবাসার বুঝবেন।

এসব ভাবতে ভাবতেই অরনি কখন ঘুমিয়ে গেছে নিজেও বুঝতে পারিনি। ঘুম ভেঙেই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে বেলা গড়িয়ে ৮ টা বেজে গেছে। অরণি তাড়াতাড়ি উঠে হাত মুখ ধুয়ে রান্না ঘরে চলেগেল। মা কি রান্না করছো তুমি ওই কিন্তু দশটা নাগাদ চলে আসবে।
অরনীর মা: তোকে এসব নিয়ে ভাবতে হবে না আমি দেখে নিব। তুই যা নিজে রেডি হও। আর তোর বাবাকে একটু উঠতে বল।
অরনি তার বাবাকে দেখে নিজের রুমে চলে গেল রেডি হতে। আলমারি থেকে স্পর্শের পছন্দের কালো রঙের শাড়িটা নামিয়ে নিল।নিজেকে স্পর্শের পছন্দ মত নিজেকে সাজিয়ে তুলতে লাগলো। নিজের মুখ খানা আয়নায় দেখে নিজেকে স্পর্শের স্ত্রী হিসেবে ভাবতে লাগলো আর লজ্জায় লাল হতে লাগলো। গুন গুন করে গাইতে লাগলো-
আমার বেলা যে যায় সাজ বেলাতে। তোমার সুরে সুরে সুর মেলাতে...

হঠাৎ ডোর বেল বেজে উঠল-
অরনির মা দরজা খুলে দিল। সামনে এত বড় এক লেখিকাকে দেখতে পেয়ে কিছুটা হকচকিয়ে উঠলো। আসেন ভিতরে আসেন আপনাদের দেখে বেশ ভালো লাগলো ।আপনাদের আসতে কোন সমস্যা হয়নি তো?
স্পর্শ আর স্পর্শের মা সআনন্দে আপ্যায়ন গ্রহণ করল এবং ভিতরে যে বসলো। তবে স্পর্শেরমা কে কিছুটা বিশমিত দেখাতে লাগলো। অরনি এসব কিছুই দেখছিল তার রুমের দরজার পাড়ে দাড়িয়ে।
অরনির মা অরনীকে ডাকলো_অরনি, এই অরনি ।এদিকে আয়। দেখ স্পর্শ আর ওর মা এসেছে।

অরনি স্পর্শের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ।স্পর্শের মার পাশে বসে বলতে লাগলো। কেমন আছেন আন্টি? আপনা কে কখনো সামনাসামনি দেখতে পাবো তা তো কখনো ভাবতেও পারিনি আমি। এ তো আমার সৌভাগ্য। আমি আপনার লেখা অনেক বেশি পছন্দ করি। আপনার এমন কোন বই কবিতা গল্প উপন্যাস নেই যা আমার পড়া হয়নি। স্পর্শের দিকে তাকিয়ে আমি তোমাকে বলতাম না আজ আন্টির এই বইটা পরলাম আজ আন্টির ওই বইটা পরলাম।
স্পর্শ: হ্যাঁ তা শুনেছি অনেক । তবে তোমার বইয়ের কালেকশন দেখে তা মনে হচ্ছে না। (পিছনে রাখা বুকশেলফের দিকে তাকিয়ে) তোমার কানেকশনের বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে বিখ্যাত লেখিকা অনন্যা সরকারের(স্পর্শের মা) একটি বই ও নেই।

অন্য সকলের বইয়ের পাশে তার বই মানায় না। সে (অনন্যা সরকার) একাই বিশাল এক লাইব্রারি ডিজার্ভ করে।
(কথাটি বলতে বলতে এগিয়ে এলো অরনীর বাবা) অরনির বাবাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেল স্পর্শের মা। একে অপরের দিকে বাকরুদ্ধ ভাবে তাকিয়ে রইল। হঠাৎই অরনির বাবা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, এত বড় বিখ্যাত লেখিকার ছেলে স্পর্শ কই তুমি তো আগে বলনি অরণি। কথা শনে স্পর্শের মা স্বাভাবিক হলো। তবে তাকে পূরটা স্বাভাবিক লাগছিল না।
আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না আপনি আমার বাসায় ।এতো পুরোই মিরাক্কেল ব্যাপার। আপনার বই এর জন্য আলাদা লাইব্রেরী রয়েছে সেখানে শুধুই আপনার বই।অরনির বাবা স্পর্শের দিকে হ্যান্ডসেক করার হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল_কি অবস্থা young man. এবার বুঝলেন কেন এখানে তার বই নেই। হঠাৎই স্পর্শের মার ফোনটা বেজে উঠলো। স্পর্শের মা ফোনে কথা শেষ করে। অরনীর বাবা মাকে বলল আপনাদের সাথে কথা বলে পরিচিত হয়ে অনেক বেশী ভাল লাগল তবে আমার একটি জরুরী কাজ পড়ে গেছে আজ তাহলে উঠি বাকি কথা আমরা ফোনে সেরে নেব। তা ঠিক আছে তবে একটু বলবেন প্লিজ। কি কথা বলে অবনীর বাবা লাইব্রেরী থেকে অন্যন্যা সরকারের লেখা বিখ্যাত উপন্যাস "কে তুমি" বইটি নিয়ে এল। স্পর্শের মার দিকে বইটি এগিয়ে দিয়ে বলল অটোগ্রাফ প্লিজ। স্পর্শের মা হাসিমুখে অটোগ্রাফ দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে এলো।

স্পর্শ ওদের বাড়িতে-
বাড়িতে এসে স্পর্শ তার মাকে জিজ্ঞেস করল। হঠাৎ এমন করে চলে এলে যে! Anything wrong mom?
স্পর্শের মা: তুমি ওকে ফোন দিয়ে বলে দিও আমরা এসম্পর্কে আর আগাতে চাচ্ছি না।
স্পর্শ: এসব কি বলছ মম! Are you kidding with me? I love her a lot. You know that mom.
স্পর্শের মা: স্পর্শ, আশা করি তুমি একথা খুব ভালো মতন জানো। আমি এক কথা দ্বিতীয়বার বলতে পছন্দ করি না। আশা করি তুমি আমার কথার মানে বুঝতে পেরেছ।
স্পর্শ: how can you say this mom? What's wrong can you tell me please.
স্পর্শের মা: আমার ওদের পছন্দ হয়নি।
স্পর্শ: তোমার কি পছন্দ হয়নি মম? ওদের আর্থিক অবস্থা? No, hold on. Do you really think about their religion?
স্পর্শের মা: স্পর্শ, তুমি আমায় প্রশ্ন করছো?
স্পর্শ: অবশ্যই মম। This is about my life .I have right to ask you that. I love her, mom .I love her a lot. How could you do this with us? তুমি তোমার গল্প কবিতা উপন্যাসে এত এত ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কথা বলছো। আর সেই তুমি আজ তার বিপরীতে দাঁড়ালে? আর তুমি একজন সাহিত্যিক হয়ে কি করে ভালবাসার বিপরিতে অবস্থান করতে পারো আমি তো ভেবে পাচ্ছি না।Is that possible? (কিছুটা রাগ অভিমান ও বিশমিত হয়ে)
স্পর্শের মা: তোমার সকল প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে একটাই। তুমি ওকে ভুলে যাও। This is good for all.
স্পর্শ: এটা কোনদিনও সম্ভব নয়। তুমিতো খুব ভালো মতনই জানো মম। (স্পর্শ তার মায়ের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো) তুমি এটা কি করে করতে পারো মম।I can't believe that you're saying this. Don't do that mom.I love her so much. I can't live without her.please try to understand. Please mom please.
স্পর্শের মা: স্পর্শ তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছ। আমরা সুদূর কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসেছি শুধুমাত্র তোমার ভালোবাসার জন্যই।
স্পর্শ: তাহলে এখন এমন কেন করছো ?কি সমস্যা আমায় বুঝিয়ে বল।
স্পর্শের মা: তোমার কি তোমার মার প্রতি কোন বিশ্বাস নেই? যদি থেকে থাকে তাহলে বলব এর বেশি আর একটি কথাও বলোনা কোনোভাবেই এটা সম্ভব নাই।
স্পর্শ: (চোখ মুছে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে)
I will end myself if Orni is not mine.

হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো-

(স্পর্শ দরজা খুলল) আশ্চর্য হয়ে আনন্দের গলায় বলে উঠলো অয়ন মামা (স্পর্শের মার পাতানো ভাই)। তারা দুজনে কোলাকুলি করল।
তারপর বল ভাগ্নে দু'বছর পর তোর সাথে দেখা। (কিছুটা মার প্রতি ক্ষোভ দেখিয়ে) কিছু কি আর বলার বাকি রেখেছে তোমার বোন। আমি বুঝতে পারছি না সে কেন আমার সাথে এমন করছে। কি চাইছে সে । আচ্ছা মামা ,তুমি বল মা তো এমন না। So why is she doing that with me?
তুই এসব নিয়ে একদম ভাবিস না তো ভাগ্নে। তোর মামা আছে না। (অয়ন এদিকে ওদিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো)কোথায় সে মহারানী কোথায়? আর কোথায় হবে তার রুমে বসে আছে।
স্পর্শের মার রুমে ঢুকে অয়ন বলল-
What a present surprise! না এটা কে Surprise বলা যায় না(কিছুটা অভিমানের সুরে)। স্পর্শ ফোন না করলে তো জানতেই পারতাম না তোরা দেশে এসেছিস! মানুষ আসার আগে একটা ফুটো করে।
স্পর্শের মা: ভেবেছিলাম দেশে এসে সবাইকে সারপ্রাইজ করে দিব। উল্টো এসে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম। (রাগ আর কষ্টের সুরে)আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে তো দিয়েছে এখন আবার আমার ছেলের পিছনে পড়েছে। আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা, কিছুই বুঝতে পারছি না। (কিছুটা বিরক্ত হয়ে)।
অয়ন: এসব তুই কি বলে যাচ্ছিস তোর জীবন নষ্ট তার সাথে আবার স্পর্শের জীবন! তুই কি আমাকে কিছু বুঝিয়ে বলবি! কি হয়েছে এসবের মানে কী?আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
স্পর্শের মা: (হাত দিয়ে চেয়ার ইশারা করে) এসব ছাড় তো। তুই বস এখানে।
অয়ন:(স্পর্শের মার দিকে তাকিয়ে) একি তোর চোখে জল ওদিকে স্পর্শ ও কাঁদছে। তোরা দুজন মিলে আমায় পাগল বানিয়ে ফেলবি। আমায় কি একটু খুলে বলতে পারিস কি হয়েছে?
স্পর্শের মা:আমার এই জীবনটা আর ভালো লাগছে না ।আমিতো এখন মরেও যেতে পারবো না(নমনীয় কন্ঠের ভেজা চোখে)। ও কেন আমার জীবনে বারবার ফিরে আসছে আমি কি ক্ষতি করেছি ওর?
অয়ন: কে ফিরে আসছে! কি বলছিস.. জীবন নষ্ট ফিরে আসা.... আচ্ছা ,তুই কি রিদম এর কথা বলছিস? না না ও কোত্থেকে আসবে? এটা হতে পারে না!
স্পর্শের মা: আর কে হবে।আমার জীবনের কালিমা লেখার অধিকার তো শুধু এক জনেরি ছিল।
অয়ন: দীর্ঘ 25 বছর বড় কোত্থেকে? আর রিদমের সাথে স্পর্শের ভালোবাসার কি সম্পর্ক?
স্পর্শের মা: রিদম অরনির বাবা।
অয়ন: কি বকে যাচ্ছিস এসব!
স্পর্শের মা: শোন অয়ন, স্পর্শ কে এসব কিছু বলা সম্ভব না। ও আমার কথা বুঝবেও না। তুই ওকে একটু বুঝিয়ে বল এটা সম্ভব না।প্লিজ তুই ওকে একটু বোঝা। এও কি কোনদিন সম্ভব হতে পারে।
অয়ন: সবই তো ঠিক আছে। তবে সম্ভব নয় কেন? রিদম তোর ভালোবাসা ছিল বলে নাকি তুইও সেই ধর্মের দোহাই দিবি?
স্পর্শের মা: না আমার ভালোবাসা ছিল বলে আর না ধর্মের দোহাই।
অয়ন: তাহলে ,তাহলে কিসের এত দোটানা কেন তুই ছেলেটা কে এভাবে কাদাচ্ছিস!
স্পর্শের মা: এ উত্তর আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব নায়।
অয়ন: তুই এমন টা করতে পারিস না। তোর সঙ্গে যা হয়েছিল তার জন্য তুই স্পর্শের সঙ্গে এমনটা করতে পারিস না। ও মরে যাবে মেয়েটা কে না পেলে।
স্পর্শের মা:ও মরে গেলেও আমার পক্ষে এ বিয়েতে সম্মতি দেওয়া সম্ভব না। অরনির সাথে কোনভাবেই ওর বিয়ে হতে পারে না।
অয়ন: আচ্ছা বলতো, আরো কিছু কি আছে যা এখনো আমি জানিনা? (আশ্চর্যের সুরে অবাক হয়ে)
স্পর্শের মা: যা আছে তা আমাতেই থাকতে দে। এ সত্য না হয় আমার মাঝেই থাক আমার মাঝেই বিলীন হয়ে যাবে।
অয়ন: যা আছে তা তোর রাগ আর অহংকার। তার জন্য দুই ছেলেমেয়ে গুলির জীবন নষ্ট করে পারিস না।এ অধিকার তোকে কেউ দেয়নি।তুই একজন সাহিত্যিক একথা আমার ভাবতেও ঘেন্না হচ্ছে। (অয়ন রুম থেকে বের হয়ে গেল)

স্পর্শের মা বারান্দায় বসে আছে-
রাতের ঠিক বারোটার কাছাকাছি। হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো।
সে নাম্বারটি চেনার চেষ্টা করল তবে চিনতে পারল না বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ফোনটা রিসিভ করল।
এভাবে আমার মেয়ের জীবন নিয়ে খেলার অধিকার কে দিয়েছে তোমায়? না তুমি এটা কোনোভাবেই করতে পারো না।
স্পর্শের মা: এসবের মানে কি?
রিদম: আচ্ছা, তুমি কি প্রতিশোধ নিচ্ছো?
স্পর্শের মা: প্রতিশোধ!
রিদম: তোমার অহংকার রাগ ঠিক আগের মতনই আছে ।তুমি একচুল অব্দি পরিবর্তন হয়নি। তুমি এমনটা করোনা প্লীজ আমার মেয়েটা মরে যাবে (কাঁদো কাঁদো কন্ঠে)
স্পর্শের মা: আমি বাচ্চা নই যে প্রতিশোধ প্রতিশোধ খেলব। আর এখানে প্রতিশোধের বা কি আছে? তুমি কি ভাবছো সেদিন তুমি আমাকে ধর্মের দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দিয়েছে বলে আমিও তাই করছি! না তোমার ধারণা ভুল। আমি চাই না কোন ভাবেই তোমার সাথে আমার কোনরকম যোগাযোগ কিংবা সম্পর্ক হোক।
রিদম: কোনদিন বলা হয়নি তবে একথাটি তুমিও খুব ভালো মতন জানো ।আমার বুকের বাঁ পাশটা শুধুই তোমারি।
স্পর্শের মা: ভালোবাসার অধিকার নিয়ে আমি তোমার কাছে কোনোদিন আসব না। তোমার পথে বাধা হবো না । আমায় নিয়ে তোমার কোন ভয় নেই। এ কথাগুলি আমি সর্বদাই তোমায় বলতাম কারণ আমি বিশ্বাস করতাম তোমার হাত আজীবন অব্দি আমার হাতটি ধরে রাখবে। তবে তুমি আমার সেই পবিত্র ভালোবাসা কে ঠেকিয়ে দিয়েছে ধর্মের আগে। আমার কেন জানি মানতে কষ্ট হয় ধর্ম টা কি সত্যি মুখ্য ছিল? নাকি.....
রিদম: থামলে কেন বলো। তোমায় কতটা ভালবাসি তা তোমায় হারিয়ে ফেলার পর বুঝতে পেরেছি। তুমি তো জানো আমি এত সাহসী না। সমাজের সাথে পরিবারের সাথে যুদ্ধ করার ক্ষমতা বা সাহস কোনটাই যে আমার নেই। আমি তো ভীতু।
স্পর্শের মা: আজ সকল ভয়-ডর কেটে সাহস উপচে পড়ছে!(উপহাস করে)
রিদম: তোমায় হারাবার পর অনেকটা সাহস এসেছে মনে। আর এ শেষ বয়সে এসে পাবার বা হারাবার তো কিছু বাকি নেই ।
স্পর্শের মা: আমার জীবনের তিনটি বছর। তোমার সাথে সত্যি খুব ভালো কেটেছে তুমি আমার প্রথম ভালোবাসা ছিল। তোমার হাত ধরে ঘুরতে তোমার পাশে থাকতে আমার অনেক ভালো লাগতো। তুমি পাশে থাকলে আমার নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী মনে হতো ।ধর্ম বর্ণ জাত পাত সবকিছু উপেক্ষা করেই আমি তোমায় ভালোবেসে ছিলাম। তবে তুমি আমার সর্বস্ব নিয়ে আমায় নিঃস্ব করে দিয়েছো।
রিদম: না, তুমি আমায় মিথ্যে অপবাদ দিওনা। তুমি হঠাৎই আমায় না বলে বিদেশ পাড়ি জমালে। আমি তোমায় অনেক খুজেছি তোমার ফোনে অনেক ফোন দিয়েছি তোমাকে অনলাইনে খুঁজেছি কোথাও তোমায় পাইনি। আমার যতটা সাধ্য আমি চেষ্টা করেছি তবে তোমার সন্ধান কোনোদিন কোনো কালেই পাইনি। হ্যাঁ একদিন তুমি নিজেই এসে ধরা দিলে। যেদিন পত্রিকার হেডলাইন হয়ে আসলে তোমার বই নোবেল পাচ্ছ। সে দিন পত্রিকায় তোমার প্রথম ছবি দেখে আমি বিস্মিত ছিলাম। ছদ্মনাম এ লিখেছ আর নিজের ছবি পর্যন্ত সামনে আসতে দাওনি। সেদিন ছবিটি না আসলে হয়তো জানতেই পারতাম না তুমি বিলেত আছো। তোমার দেয়া ছোট্ট মেসেজটি পাওয়ার পর থেকে আমি তোমায় হাজার বার চেষ্টা করেছি হাজার হাজার বার।
তুমি কি জানো সেদিন যখন আমরা নিকুঞ্জ থেকে ফিরলাম। আমার তারপর থেকে কেমন যেনো এক সাহস ভেতরে কাজ করছিল ।আমি চাচ্ছিলাম আজীবন তোমার পাশে থাকতে। কিন্তু তুমি আমার সেই সাহসে চিঙ্গারি না ভোরে আমায় একা রেখে পালিয়ে গেলে।
স্পর্শের মা: তোমার সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মুহূর্ত আমার জীবনে আজীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল নিকুঞ্জ। মনে আছে অঝোর ধারায় কি বৃষ্টি না হচ্ছিল সেদিন। তা বলতে হবে তুমি সত্যি আমার সব ইচ্ছে পূরণ করেছ। তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভেজাও তো আমার একটি ইচ্ছে ছিল। সেই বৃষ্টি ভেজা শরীরে তোমার সাথে পাশাপাশি সারাটি রাত। সে রাতের পর থেকে আমি ভেঙে পড়েছিলাম। তোমার দিকে আমি অতিরিক্তভাবে ঝুঁকে পড়ছিলাম। হ্যাঁ আমার মনে আছে তোমার আমার সাথে বন্ধুত্বের শুরুতেই বলা ছিল। আমরা কেউ কারো কখনোই পথের বাধা হবো না কখনো কাউকে পাওয়ার জন্য জেদ কিংবা বায়না ধরব না। তবে আমার ধৈর্য টলমল করতে শুরু করলো। তুমি ভালোবাসো আমায় তা আমি জানতাম তবে এভাবে সারাটি জীবন কাটানো কি সত্যি সম্ভব। আমি তখন হয়তো থাকলে জানিনা তার পরিণতি কী হতো। তাই চলে যাওয়াটাই উত্তম মনে করেছিলাম।
রিদম: আমাদের ভালোবাসার জন্য হলেও তো তোমার ওদের ভালোবাসাটা মেনে নেওয়া উচিত। আমরা পারিনি বলেই তো ওদের পাশে আমাদের দাঁড়াতে হবে। আমি জানি তুমি অন্যায় করতে পারো না। দুটি অবুঝ মনের ভালোবাসা তুমি এভাবে ভেঙ্গে দিতে পারো না। তুমি এতটা নিষ্ঠুর কিংবা পাষাণ নও।
স্পর্শের মা: তুমি আমায় অনুরোধ করো না আমি এটা পারবোনা। তোমার অনুরোধ ফেলা আমার বড় কষ্টের হবে। তোমার মেয়েকে বল স্পর্শকে ভুলে যেতে। এটা সম্ভব না কোনোদিনও সম্ভব না।
রিদম: তুমি বিশ্বাস করতে পারছি না এটা তুমি। তুমি কি করে নিজের ছেলের জীবন নিয়ে খেলতে পারো। তুমি একজন নিষ্ঠুর অহংকারী দম্ভশালী!
স্পর্শের মা: তুমি একটি কথা বলতে আমায়, তোমার মনে আছে? তোমার প্রত্যেকটি কথাই আমার কাছে বাইবেলের মত। তুমি তোমার লেখা বাইবেল ভাঙলেও। আমি সেদিন ও তা ভাঙ্গিনি আর আজতা ভাঙবো না । তুমি আমায় মাফ করো। স্পর্শ আর অরণী কোনদিনও এক হতে পারবে না। আমি মরে গেলেও ওদের এক হতে দেব না।
রিদম: তুমি আজ যা করছ তার জন্য তোমাকে পস্তাতে হবে।

ফোনটা রেখে দিয়ে স্পর্শের মা বেশ কিছুখন চুপ করে ছিল। তারপর পায়ের ওপরে রাখা ডাইরি টি বুকে জড়িয়ে অঝোর ধারায় কাঁপতে লাগলো।
হে ঈশ্বর, এ কেমন পরিস্থিতি তে ফেললে তুমি আমায়। এ কী করে সম্ভব স্পর্শ আর অরনি কি করে এক হবে।এত প্রকৃতির খেলাফ। যে ভয় নিয়ে আমি ২৫ কি বৎসর পালিয়ে বেরিয়েছি তার সামনে তুমি আমাকে আবার দাঁড় করিয়ে দিলে। ভাই বোন কি কখনো স্বামী স্ত্রী হতে পারে?কি করে রিদম কে বলবো স্পর্শ তোমার ছেলে। সেদিন বৃষ্টিতে তোমার বন্ধুর বাসায় তোমার সাথে আমার সেই মাহিন্দ্র সময় টুকু যেখানে প্রকৃতির সকল নিয়ম ভেঙে তুমি আমি এক হয়েছিলাম। হ্যাঁ আমি জানি তুমি কিছুটা মদ্যপান করেছিল নিজের অজান্তে। তুমি জানতে পারলে সারা জীবনের মতো ভেঙে পড়তে। নিজের জীবনটা শেষ করে দিতে। এমন কিছু হলে তুমি নিজেকে শেষ করে দিবে তার ইঙ্গিত আমাকে অনেক আগেই দিয়েছিল। আমি যে তোমার মিথ্যে বলতে পারব না তার জন্যই তো পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমি কোনভাবেই চাই না তুমি কখনো জানো স্পর্শ তোমার ছেলে। ঈশ্বর তুমি আমায় শক্তি দাও আমি যেন সারাটা জীবন এভাবে এই সত্য আমার নিজের মাঝেই লুকিয়ে রাখতে পারি। আমি তীব্র ভয়ে আছি কোন ভাবে যদি এসব প্রকাশ হয়... না না এ সত্য প্রকাশ হবার নয় ।আমি কোনদিনও প্রকাশ হতে দিব না। এ সত্য জানলে আমি স্পর্শের কাছেই বা কি করে মুখ দেখাবো ওকি জানবে ওর মা ওকে মিথ্যে বলেছে সারা জীবন।ও এক জারজ সন্তান। না আমার স্পর্শ মরে যাবে এ কথা শুনলে। ওর মা কোনদিন বিয়ে করেনি ওর বাবা মারা গেছে তা মিথ্যা গল্প। ও এক পাপের ফসল। না আমি পারিনা একসাথে এতগুলো মানুষকে কষ্ট দিতে। এই ভয় যেন আমার মাঝেই শেষ হয়ে যায় আমি আর এক মুহূর্ত কিছু ভাবতে পারছিনা।

পরদিন সকালে এয়ারপোর্টে...
(এয়ারপোর্টে অয়ন কে জড়িয়ে ধরে স্পর্শের মা) আমি তোকে অনেক দরকারে কাছে পেয়েছি তবে বিশ্বাস কর। কিছু জিনিস সবার না জানায় মঙ্গল। ওরা বিদায় নিয়ে চলে গেল। প্লেন টেক অফ করল। স্পর্শ ও তার মা পাশাপাশি বসে। একে অপরের হাত ধরে আছে।
স্পর্শ প্লেনের জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ জলে ভরে আসছে। ঈশ্বর, তুমি সত্যিই বড় দারুন খেলোয়াড়। তুমি আমায় সাহস দাও আমি জানি এ সত্য হজম করতে পারি। আর আমার মা কখনো জানি বুঝতে না পারে তার গুপ্ত সেই ডাইরি আমার সকল ভাষাকে না জানায় দাঁড় করিয়েছে। কাল মাকে কাঁদতে দেখে ডায়েরি টা না খুললেও পারতাম। আমি যে জানি আমি এক জারজ সন্তান তা জানি মা জানতে না পারে। মার জীবন পুরোটাই কষ্টে ভরা সে যদি জানে এ রহস্য আমার জানা । তবে আমার সামনে দাঁড়াবার সাহস তার হবে না। সে ভীত লাচার অসহায় হয়ে পড়বে তাকে এভাবে দেখার সাহস আমার নেই। এই সত্যের ভয় অনেক ভয়ঙ্কর। আমি যেন এ ভয় জয় করতে পারি। আমি যেন আমার মায়ের মত হয়ে উঠতে পারি। ভালো থাকিস অরনি। ভালো থাকুক আমাদের ভয়ঙ্কর ভালোবাসা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
Dipok Kumar Bhadra সুন্দর লিখেছেন। ভোট দিলাম।
ভালো লাগেনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১
ফয়জুল মহী অত্যাধিক সুন্দর প্রকাশ। চমৎকার উপস্থাপন।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০২১
গোবিন্দ বীন অনেক ভালো লিখেছেন,শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এমন এক সত্য প্রকাশে চারটি জীবন নষ্ট। এই সত্য লুকানোর চেষ্টাই ভয়ের কারণ।

০৯ জুলাই - ২০২১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪