আতঙ্কের বিভীষিকা

ভয় (সেপ্টেম্বর ২০২২)

সজল কুমার মাইতি
  • ২৭
" অ্যাই সব টকার দল, তোনে লাইনে দাঁড়ি যা। তারা বাতি ঝুরি বাতি পত্যেকে পাবু। এক এক করিয়া আয়।" ভানু কাকা বাচ্চাদের উদ্দেশ্য এই কথাগুলো বলেন। বাড়ির বাসন্তী পূজোর আজ অষ্টমী। সেই জন্য কলকাতা থেকে প্রত্যেক বছরের মতো এবছর ও ভানু কাকা কলকাতা থেকে বাচ্চাদের জন্য বাজি কিনে এনেছেন। সবাইকে নিজের হাতে এক এক করে ওদের হাতে এই বাজি তুলে দেন। বাচ্চারা ও জানে। তারা সবাই খুশী মনে ভানুকাকার হাত থেকে নেয়। ঠাকুরের সামনে জ্বালিয়ে সবাই আনন্দ করে।
এক
মেদিনীপুরের কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামের জমিদার বাড়ির পারিবারিক বাসন্তী পূজো। বংশ পরম্পরায় এই পূজো চলে আসছে। এখানকার রায়চৌধুরি পরিবার বিশাল সম্পত্তির মালিক। এই পরিবারের জমিজমা কেবলমাত্র এই গ্রাম নয়, আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও তা ছড়িয়ে আছে। তাছাড়া দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় লাট অঞ্চলের বিশাল এলাকায় তা বিস্তৃত। পূজোর দেবোত্তর সম্পত্তির বেশিটাই লাট অঞ্চলে সীমাবদ্ধ। সেই জমিজমার আয়ে বছরের মূল ও প্রধান পূজো বাসন্তীপূজোর খরচ চলে। সেই আয় থেকে লক্ষীনারায়নের নিত্য পূজো ও হয়। এমনকি আশ্বিনের শারদীয় দূর্গাপূজো ও হয় ওই আয়ের ওপর। এখানকার যতটুকু দেবোত্তর সম্পত্তি তার মধ্যে দূর্গা মন্দির, লক্ষীনারায়নের মন্দির, ভোগশালা ও হাতিশালা আছে। তাছাড়া নাটমঞ্চ, দীঘিতে জল ও মাছের ব্যবস্থা বংশ পরম্পরা ধরে চলে আসছে। পূজোর সঙ্গে সঙ্গে প্রতি বছর নাটমঞ্চে যাত্রাপালার আয়োজন অবশ্যই করনীয়। চারপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন তীর্থের কাকের মত সারাবছর অপেক্ষা থাকে কবে কাঙ্ক্ষিত এই দিনটি আসবে। একবারতো অঝোর ধারায় বৃষ্টির ফলে যাত্রাপালা পন্ড হওয়ার অবস্থা। ভোর রাতের দিকে বৃষ্টি থামতে লোকজন মাঠে নেমে পড়ে। যাত্রা মঞ্চের আশপাশের জল সেঁচে বের করে। খড় ছাই দিয়ে জায়গা শুকনোর বন্দোবস্ত করে। যাত্রা দলের কনসার্ট পার্টি মাঠের দিকে দীঘি পুকুরের পাড়ে গিয়ে বাজনা বাজাতে শুরু করে। সেই বাজনা শুনে যাত্রা পাগল লোকজন অল্প সময়ের মধ্যে হাজির হয়ে যাত্রা মঞ্চ ভরিয়ে তোলে। যাত্রা পালা শুরু হয়। বেলা আটটা অব্দি যাত্রা পালা চলে। লোকেরা ঠায় দাঁড়িয়ে যাত্রা পালা শোনে। সবাই মিলে আনন্দের অংশীদার হয়। এমনই জমিদার বাড়ির যাত্রা পালার আকর্ষণ।
দুই
কৃষ্ণগঞ্জের জমিদারদের একটি ইতিহাস আছে। জমিদার মনীন্দ্র রায়চৌধুরির চার ভাই। পৈতৃক সম্পত্তি চারভাগে ভাগ হওয়ার ফলে প্রতি ভাইয়ের ভাগের পরিমাণ কমে যায়। ভাইয়েদের মধ্যে মনীন্দ্রের স্ত্রীভাগ্যে কপাল খুলে যায়। মনীন্দ্রের শ্বশুর কৈলাশ পালের একমাত্র কন্যা বিলাসীবালার সঙ্গে মনীন্দ্রের বিয়ে হয়। কৈলাশ পালের মৃত্যুর পর তার বিশাল সম্পত্তির মালিক হয় তার একমাত্র কন্যা বিলাসীবালা। সেই সূত্রে মনীন্দ্র এই সম্পত্তির মালিক। এই বিশাল সম্পত্তির আয় থেকে বিভিন্ন পূজো ও বাৎসরিক বিভিন্ন সাংসারিক খরচাপাতি চলে। মনীন্দ্র ভাইদের থেকে বেরিয়ে এসে শ্বশুরের সম্পত্তি দেখভালের দায়িত্ব নেয়। ধীরে ধীরে সংসারে নতুন অতিথিরা আসতে শুরু করে। সংসার কলেবরে বেড়ে ওঠে। ছয় ছেলে তিন মেয়ের সংসার। সঙ্গে বিভিন্ন কাজের জন্য অনেক কাজের লোক। জমিদারির নায়েব গোমস্তা, গোশালা, সবার খাওয়া দাওয়ার জন্য হাতিশালা। জমজমাট প্রাণচঞ্চল এক বিশাল জমিদারি।
তিন
মনীন্দ্রের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। তাদের বিয়ে ও হয়ে গেছে। তাদের পুত্রকন্যায় সংসার কলেবরে আরও বেড়ে উঠেছে। জমিদারি সংসারের দায়িত্ব ধীরে ধীরে ছেলেদের হাতে এসেছে। মনীন্দ্রের বয়স ও হয়েছে। এখন নাতি নাতনীদের নিয়ে বেশি সময় কাটে। কালের নিয়মে এই ভরা সুখের সংসারের মায়া কাটিয়ে মনীন্দ্র পরলোকে যাত্রা করেন। ছয় ছেলে তিন মেয়ে সবার বিয়ে হয়ে গেছে। সন্তান সন্ততি নিয়ে সবাই সুখে সংসার করছিল। পিতৃ বিয়োগ সবাইকেই কিছুটা অসহায় অবস্থায় ফেলে। কিন্তু সবাই মিলে অবস্থা সামলে নেয়। সংসার, জমিদারি সবই দক্ষ হাতে সামাল দেয় ভাইয়েরা মিলে। যদিও বড় ভাই ভূপেন্দ্র এই ব্যাপারে নেতৃত্ব দিয়েছে। ছেলেরা বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে কয়েকটি পদক্ষেপ করল। যেহেতু গ্রামে কোন স্কুল নেই। ছেলে মেয়েদের পড়ার সত্যিই খুব অসুবিধে। ছেলেরা বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে একটি প্রাইমারি স্কুল ও দশম শ্রেণি অব্দি পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আরও একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। পিতৃস্মৃতিতে একটি বড় পুকুর বা দীঘি খনন করে। তাতে ইঁটের বাঁধানো ঘাট ও তৈরি করা হয়। ঘাটে ফলকে বাবার নাম খোদিত থাকে ' মনিঘাট'নামে। এই এলাকার মফস্বল শহর কাঁথি। সেই শহরের প্রাণকেন্দ্রে বিশাল পাকা বাড়ি তৈরি করে। তাও বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। ' মনিভবন' নাম দেওয়া হয় সেই বাড়ির। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে একতলা বিশাল বাড়ি তৈরি করে পিতৃস্মৃতিতে। পিতৃস্মৃতিতে সন্তানেরা অকৃপণ হৃদয়।
চার
কালের নিয়মে মনীন্দ্রের সন্তানেরা ও বৃদ্ধ হয়। তাদের ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে। সংসারের দায়িত্ব তাদের ওপরে বর্তেছে। ভানু মনীন্দ্রের নাতি অর্থাৎ তার তৃতীয় সন্তান সত্যেন্দ্রর জেষ্ঠ সন্তান। ভানু পড়াশোনা করে ডাক্তার হয়েছে। রেলের ডাক্তার হিসেবে চাকরি পেয়েছে। হাওড়ার এক রেল কলোনীতে পোস্টিং। দিনের বেলায় রেলের কর্মচারিদের চিকিৎসা করতে হয়। বিকেলে নিজের প্রাইভেট প্রাকটিস করে। প্রথমে ভাড়া বাড়িতে থাকত, এখন নিজের বাড়ি করেছে। সেই বাড়ি একেবারে রেললাইনের ধারে। মধ্যিখানে কেবল একটি ছোট্ট জলাশয়। ট্রেন গেলে বাড়ি কেঁপে ওঠে। বাড়িতে স্বামী স্ত্রী ছাড়াও দুই ছেলে ও এক মেয়ে। একজন সর্বক্ষনের কাজের লোক। দু একজন পোষ্য তো লেগেই থাকে। তাছাড়া, দুজন কম্পাউন্ডার প্রায়শই দিনের নয়তো রাতের খাবারের অতিথি হয়। সকালের টিফিন তো প্রায় রোজই বাঁধা। এহেন জমজমাট সংসারে ভাল মন্দে হাসি কান্নায় দিন গুজরান হতে থাকে।
পাঁচ
হাওড়ার এই বাড়িতে যেহেতু দেশের লোকের প্রাধান্য, সবাই মোটামুটি দেশের ভাষায় কথা বলে। একদিন ভানুর স্ত্রী তার উদ্দেশ্যে বলে " এবারের দূর্গাপূজায় মা দূর্গাকে আমি নথ দুব মানত করছি। তুমাকে গড়ি দিতে হবে।"
" পূজার অনেক দেরি আছে। তখন দ্যাখা যাবে।" ভানুর উত্তর।
" অ্যাই কচি, তুই একটু আদা আর কাঁচা লঙ্কা লিয়ায় না বাজারনু।" ভানুর স্ত্রী ছোট ছেলের উদ্দেশ্যে বলে।
" আমি যখন বাজার যাইলি কইতে পারলনি? তুমার অ্যাটা স্বভাব হয়া দাঁড়িছে।" ভানুর তিরস্কার স্ত্রীকে। এভাবে সংসার কেটে যায়। দেখতে দেখতে মেয়ে বড় হয়। মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পাত্র পাওয়া মুস্কিল। মেয়ে বেশি দূর পড়াশোনা করে নি। তার ওপর গায়ের রঙ ময়লা। ভাল বর জোটানো রীতিমতো কঠিন। বহু কষ্টে যৌতুকের প্রলোভনে ওকালতি পড়া এক দেশজ পাত্র জোগাড় করা গেল। বিয়ের পর সেই পাত্র ঘরজামাই হিসেবে এখানে থাকার সবচেষ্টা চালিয়ে যায়। কলকাতা হাইকোর্টে প্রাকটিস করার প্রস্তাব শ্বশুর শাশুড়ির কাছে রাখে বউের মাধ্যমে।
ছয়
এদিকে ছেলে দুজন ও বড় হয়েছে। একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, আর একজন আই টি আই থেকে পাস করে মেকানিক। দুর্ভাগ্য, দুজনের কেউই কোন চাকরি জোগাড় করতে পারেনি। বড় ছেলে ডাক্তার হয়েও বাবার চেম্বারে বসে কোন পসার জমাতে পারল না। ছোট ছেলে বাড়িতে একটা প্লাস্টিক কারখানা করেও ব্যবসা জমাতে পারল না। ছেলেরা যেহেতু বড় হয়েছে, আর বেশি অপেক্ষা করা ঠিক হবে না। সেজন্য দুজনের বিয়ের আয়োজন করা হল। দুই ছেলের একই দিনে বিয়ে দেওয়া হল। ফুটফুটে দুই দেশজ বউ বাড়ি আলো করে এল। কিছু দিনের পর দুই বউের কোল আলো করে সন্তান এলো। হাওড়ার বাড়ি এখন হট্টমেলার আসর।
সাত
সংসার বড় হলে সমস্যা বহু গুন বাড়ে। দুই ছেলের যেহেতু স্থায়ী আয়ের কোন উৎস নেই, সেহেতু নিত্য নতুন বিবাদ বিসম্বাদ লেগেই থাকতে শুরু করল। ধীরে ধীরে এইগুলি ঝগড়া ঝাটিতে পরিনত হয়ে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়ার উপক্রম হল। অগত্যা, ভানু দুই ছেলেকে স্ত্রী সন্তান সহ দেশের বাড়ি কৃষ্ণগঞ্জে পাঠিয়ে দিলেন। সেখানে জমিজমা চাষবাস করে নিজেরা নিজেদের সংসার চালাবে। আগে থেকে সেখানে দোতলা পাকাবাড়ি তৈরি করা ছিল। থাকার ও কোন অসুবিধে নেই। উপর নীচে মিলে দুই ভায়ের সমান সমান ঘর ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। চাষাবাদ করে টেনেটুনে কোনরূপে সংসার চালাচ্ছিল দুই ভাই।। কিন্তু এ তো ' অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর শুকায়ে যায় '। বেচারাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। এতো জমিজমা তাতে ও সংসার খরচ চালানো এদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।
আট
ডাক্তার ভানুর বয়স হয়েছে। বার্ধক্যজনিত কারনে এখন প্রায়শই অসুস্থ ও শয্যাশায়ী। তার ওপর ছেলেদের চিন্তা। বাবা এতবড় প্রতিষ্ঠিত ডাক্তার, পাড়ায় সমাজে সর্বত্র সম্মানিত। তার ছেলেদের 'হাভাতে' অবস্থা। চিন্তায় দুঃখে কষ্টে শারীরিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়তে লাগল। একদিন সব সাংসারিক মায়া ত্যাগ করে পরলোকের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ভানু ডাক্তার। হাওড়ার সংসার সত্যিই গৃহকর্তাহীন হল।
নয়
এদিকে শ্বশুরের অবর্তমানে জামাই ঘরজামাই হয়ে হাওড়ার বাড়িতে থাকতে শুরু করেছে। হাইকোর্টে প্রাকটিস করা ও শুরু করেছে। কিন্তু কোর্টে যাওয়া আসাই সার। ক্লায়েন্টের দেখা নেই। আয়ের ঠিকানা নেই। টিফিনের খরচ ও শ্বশুরবাড়ির পয়সায় সম্পন্ন হয়। এই সব বিষয়ে টেনশন থেকে জামাই সুগারের রোগী হয়ে যায়। ধীরে ধীরে হাইকোর্টে যাওয়া বন্ধ হয়। ঘরবন্দী জামাই ঘর ভাঙার মন্ত্রনায় নিমজ্জিত হয়। মেয়ে জামাই মন্ত্রনায় বসে। জামাই স্ত্রী কে বলে " বাবা নেই। বুঝতে তো পারছ এবার তুমার দু দাদা আইসিয়া এই সব সম্পত্তি দখল করবে। তখন তুমি আঙুল চুষব। আর কি?"
" হঁ। ঠিক কইছত। তালে কি করতে হবে? স্যাটা কইব ত?" স্ত্রীর জিজ্ঞাসা।
" শুন। তুমি মাকে বুঝাও যে বাবা মরার আগে গটে উইল করিয়া রাখিছে। আমার কাছে আছে।"
" বাবা উইল কবি করল? আমি ত কুনকিছু জানিনি।"
" উইল কাইনু আইসবে? ও তো আমি আমার লোক জানা আছে। তাকে দিয়া বানিব।"
" তুমি পার ও বটে। কাকে দিয়া বানিব? কি রইবে উইলে?"
" বাবা তার মরা যায়ার পর মাকে সব সম্পত্তি দিয়িছে। এই রইবে উইলে।"
" তুমাকে মাকে বুঝিতে হবে যে মা যদি তুমার নামে সব লিখিয়া না দেয় তালে তুমার দাদারা আসিয়া সব লিয়া লিবে। ওখুনি যেন লিখিয়া দেয়।"
" হঁ। বুঝঝি। সব ঠিক হয়াবে। তুমাকে চিন্তা করতে হবে নি।"
যেমন কথা তেমন কাজ। এরপর একদিন মেয়ে একান্তে মাকে বলে " মা। শুনছ?"
" কি কউঠু?"
" দাদারা সব আইসবে। এঠিকার সব সম্পত্তি লিয়া বিক্রি করিয়া দিবে। আমার কি হবে। দু বেটা বেটি লিয়া আমি কাই যাব? আমার কি হবে?"
" আমি কি করব? তানকের বাবার সম্পত্তি তানে যা ইচ্ছা হয় করবে।"
" বাবা ত একটা উইল করিয়া রাখিছে। তুমার জামাইর কাছে আছে।"
" অ্যাঁ। কি কউঠু? উইল কাইনু আইল? আমি ত কুনকিছু জানিনি।"
" বাবা ত তুমার নামে সব লিখিয়া দিছে। তাউ ত তুমাকে কুনকিছু জানায় নি। তুমার জামাই সব জানে। উইল ও বাবা ওর কাছে রাখিয়া যাইছে।"
" তাউ নাকি? ওখন আমি কি করব?"
" দাদানকের হাতনু সম্পত্তি বাঁচিতে গ্যালে তুমাকে সব কিছু আমার নামে লিখিয়া দিতে হবে। আমার নামে মানে ত আসলে তুমার ত হইল।"
" কবি কি করতে হবে আমাকে কইবু। আমি সব লিখিয়া দুব।"
একদিন দিন ক্ষন দেখে জামাই শাশুড়ি মাকে নিয়ে গিয়ে সম্পত্তি রেজিশট্রেসনের কাজ সম্পন্ন করে। এখন হাওড়ার সব সম্পত্তির মালিক ভানুর মেয়ে। বকলমে জামাইের করায়ত্ত। দাদাদের ভাগ্যে ঘেঁচু।
দশ
দুই ছেলের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। ঝগড়া ঝাটি নিত্যদিনের ব্যাপার। ক্রমে ঋনের বোঝাও বাড়তে থাকে। এরমধ্যে ছোট ছেলে শশীর বড় ছেলে পিঙ্কু মাথা খারাপ অবস্থায় বাড়ি থেকে কোথায় যে চলে যায় তার হদিস কেউ পায় না। কয়েক মাস পর শশীর স্ত্রী মানসিক রোগগ্রস্ত হয়। রান্নাবান্না গৃহকর্ম কিছুই করে না। স্নান খাওয়া তাও বন্ধ। এই রোগ শশীর ছোট ছেলে চিঙ্কুর মধ্যে ও দেখতে পাওয়া যায়। সে কবে বাড়ি থাকে বেরিয়ে যায় তার খবর কেউ জানতে পারে না। এইসব চিন্তায় শশী অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়। খাবার ও চিকিৎসার অভাবে অকালে শশী মারা যায়। এদিকে সারা বাড়ি মনুষ্যশূন্য অবস্থায় খা খা করে। যেন ভুতুড়ে বাড়ি।
ভানুর বড়ছেলে রাম কৃষ্ণগঞ্জের এই অভিশপ্ত বাড়ি ছেড়ে কাঁথির বাড়িতে থাকতে শুরু করে। কিন্তু 'অভাগা যেদিকে তাকায় সাগর শুকায়ে যায়'। অভাব অনটনের সংসারে গন্ডগোল রোজকার ব্যাপার। এইসবের মধ্যে রামের হার্ট অ্যাটাক হয়। হসপিটালে যাওয়ার পথেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। অকূল পাথারে পড়ে অভিভাবকহীন সংসার। অদৃষ্টক্রমে একদিন রামের স্ত্রী লিলি রান্নার সময় হঠাৎ গ্যাস সিলিন্ডার ব্লাস্ট করে। সারা গা আগুনে পুড়ে যায়। প্রতিবেশীদের সাহায্যে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। বেশ কিছুদিন চিকিৎসা চলে। যেহেতু বার্ন এর ডিগ্রি অনেকটাই বেশি, ডাক্তারদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে লিলি ও ইহলোক ত্যাগ করে। রামের একমাত্র মেয়ে মিনি অনাথ হয়ে যায়। অদৃষ্টের কি লিখন এইরকম একটি সাজানো সংসার যেন অভিশাপগ্রস্তের মতো একে একে শৃন্য হয়ে গেল। হা ভগবান ! অদৃষ্টের এ কি পরিহাস! কৃষ্ণগঞ্জ ও কাঁথির ভগ্নপ্রায় বাড়ি মনুষ্যহীন অবস্থায় এখন খাঁ খাঁ করছে.......
.....................................
[এই গল্পের পটভূমি অধুনা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রাম। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রায় অধিকাংশ জায়গায় এই কথ্য ভাষায় মানুষজন নিজেদের মধ্যে কথা বলে। কিন্তু, অফিস আদালতের কাজে বা বাইরের লোকজনের সঙ্গে চলিত বাংলা ভাষায় কথা বলে। এই তাদের নিজস্ব ভাষা। এই ভাষাতে তারা নিজেদের মধ্যেই কথা বলে। উড়িষ্যা সংলগ্ন পূর্ব মেদিনীপুরের কিছু এলাকা ও আদিবাসী অধ্যুষিত পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু এলাকা ব্যতিরেকে বাকি অংশের এটাই কথ্য ভাষা। বিস্তীর্ন অঞ্চলের বহু লোকের ভাষা হওয়া সত্ত্বেও এই ভাষায় সাহিত্য চর্চা লেখকের নজরে তেমন আসে নি। এই অনুভূতি থেকে এই মাটির ভাষায় সাহিত্য চর্চার এক ক্ষুদ্র প্রয়াস লেখকের তরফ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। পাঠককূলের পছন্দ হলে ভাল লাগলে লেখকের প্রয়াস সার্থক হবে।]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
mdmasum mia হায়রে জীবন ?
ভালো লাগেনি ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২
অনেক ধন্যবাদ। আপনার উৎসাহ আমার পাথেয়। ভাল থাকবেন।
ভালো লাগেনি ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

এই গল্পের মূল পরিবারের সদস্যরা যেন কোনো এক অভিশাপের শিকার। একটি সুন্দর সাজানো স্বচ্ছল পরিবারের পরিনতি পরিবার শূন্যতায় পর্যবসিত হয়। এ যেন আতঙ্কের বিভীষিকা সৃষ্টিকারি এক কাহিনি।

১৯ জুন - ২০২১ গল্প/কবিতা: ২৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী