শূন্যতা

বন্ধুত্ব (অক্টোবর ২০২১)

মোঃ হাদিউজ্জামান
  • 0
  • 0
  • ৪৩
তিনটি শব্দের বন্ধনে উচ্চারিত তোমার নামটা আজও ভুলতে পারিনি।তোমার পুরো নামটা আমি এখানে লিখলাম না,কারণ সেটা লেখার যোগ্যতা আমার নাই । নামটা খুব একটা বড় না হলেও আমি তোমাকে ময়না বলেই ডাকি। মনের গহিনে সব সময় সেই নাম ঘুরে বেড়ায় এবং সেই নামটা আমার বুকের বাঁ পাশে ছুরি দিয়ে খোদাই করে লেখা আছে। সেটা তুমিও জানো। থাকবে আজীবন।
সেই ২০০৭ সালে স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা সেই তোমাকে লুকিয়ে দেখা আর হয় না। স্কুলের বারান্দায় বই হাতে দম্ভ ভরা মুখ নিয়ে দাড়ানো সেই তোমাকে যে এখনো ভুলতে পারিনা। মেসের ছোট্ট ঘরে বেড়ানো সেই চঞ্চল–চপলা মেয়েটির দেখা নেই । যাকে একবার দেখব বলে, অধীর আকাঙ্ক্ষাতে চোখ মেলে থাকতাম ফোনের এ প্রান্তে । একটু দেখব বলে, বেলা–অবেলা পন্থ চেয়ে থাকা হতো। ভিডিও কলে তোমার সাথে কথা বলার জন্য জোরাজোরি করা। যে একদিন বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে, সেদিন আমি স্তব্ধ ছিলাম দীর্ঘ সময়। কেন জানি মনে হলো, প্রেমের এই বুঝি সূচনা হলো।
প্রথম যেদিন তোমার ফোন নাম্বার পাই, সেদিন নিদ্রাহীন রজনীতে শুধু তোমাকে ভেবেছিলাম। তোমাকে প্রথম যেদিন ফোন করে বলেছিলাম ভালোবাসি তোমাকে, উত্তরে তুমি আমাকে ভালোবাসি বলেছিলে,২০১৫ সাল থেকে
তোমার থেকে ৩৫০০ কিলোমিটার দূরে থেকেও ময়না তুমি থাকতে আমার হৃদয়ে, মনে হতো তুমি আমার পাশে বসে আছো । তুমি বলতে, পৃথিবীর কোনো শক্তি আমাদের প্রেমকে ভিন্ন করতে পারবে না। বাবা মা রাজি না হলে তুমি তাদের রাজি করাবে,আমি শুধু তোমার। ফোনে যখন ভিডিও কলে কথা বলতাম তোমার স্পর্শ অনুভব করতাম। তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরেছ। তোমার সঙ্গে আমার আলিঙ্গন, যেন স্বর্গের সুখ আমাকে ঘিরে ধরেছে। তোমার নিশ্বাসের শব্দে কান ভারী হয়ে এল। তোমার মধু বলে ডাক আমাকে পাগল করে দিচ্ছিল।
কী অদ্ভুত প্রকৃতির নিয়ম। একটু আগেও কিন্তু নিজ থেকে তোমার স্পর্শ কামনা করছিলাম। অথচ এখন তুমি আমাকে আঁকড়ে ধরে আছ। তবে এবার আমি সরে যেতে চাইছি। কিন্তু পারছি না। তোমার ডাকের এত শক্তি। হঠাৎ অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিজেকে তোমার কাছে সঁপে দিলাম। তুমি বললে, ‘ওগো, আমাকে মেরে ফেলো। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না।’ তোমার কপালে একটা চুমু এঁটে দিলাম। তুমি আমাকে দেশে যাওয়ার জন্য জোরাজোরি করতে আমি তোমাকে আমার সব সমস্যা খুলে বলেছিলাম, তুমি বলেছিলে তুমি অপেক্ষা করবা। এভাবেই কেটে গেলো প্রায় ৫ বছর, আমি অনেক বার বলেছি তোমাকে যে আমরা পারিবারিকভাবে এঙ্গেজমেন্ট করাই রাখি, তুমি রাজি হওনি, বলো দেশে আসো আগে। আমি তোমাকে বলেছিলাম ২০২০ ডিসেম্বরে আসবো কিন্তু করোনা আসার কারণে আমার রিসোর্টের কাজ কমে যাই, ২০২০ মার্চ থেকে বেতন পেতাম বেসিকের 50 পার্সেন্ট। ২০২১ নভেম্বর পর্যন্ত এখানে লকডাওন থাকবে এখনো বেসিকের হাফ বেতন পাই, বেসিক এর হাফ বেতন দিয়ে নিজের খাওয়া থাকা ভিসা খরচ দিতে পারি না ঠিকমতো, আবার মাথার উপর তো লোনের বোঝা ছিলো যেটা বাড়ি করার সময় নিয়েছিলাম, তার ভিতরে আমার ছোট বোন আমাদের না জানিয়ে প্রেম করে বিয়ে করলো,বাধ্য হয়েই করোনার ভিতরে ধার দেনা করে বোনের বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করলাম।
মেস লাইফ শেষ করে যখন তুমি বাসায় চলে আসলে
তোমার সঙ্গে তেমন কথা বলতে পারি না তোমাকে দেখাতে পারি না। ফোনে তোমাকে ঠিক মতো পাই না বলো পরীক্ষার পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত আছো। আমিও তোমাকে কম কল দিতাম, তোমার পড়াশুনার ব্যাঘাত হবে ভেবে , যেদিন তোমার পরীক্ষা শেষ হল , তুমি বলো বাসা থেকে ছেলে দেখেছে সামনে মাসের ২৫ তারিখ বিয়ে । আমার যোগ্যতা আর সামর্থের কারণে দেশে যেতে পারিনী। আমি মেনে নিয়েছিলাম সব, আমার অশ্রু সাক্ষী। তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম ছেলে কি করে তুমি বলেছিলাম ছেলে মার্কেটিং এ জব করে, আমি বলেছিলাম কোন কোম্পানিতে তুমি বলেছিলে জানিনা এ বিষয়ে আমার কোন ইন্টারেস্ট নাই। কিন্তু ময়না আমি সব সত্য জানি তোমার বর কি করে তোমাদের পরিচয় ও কিভাবে হয়েছে সেটাও জানি। তোমার বিয়ে হয়েছে কিভাবে সেটাও আমি জানি। তোমার বর নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং করা, জব করে আজমেরী এন্টারপ্রাইজ, হুয়াওয়ের সাব কন কোম্পানি। আমাকে মিথ্যা বলার দরকার ছিলো না, তুমি আজ পর্যন্ত ভালোভাবে যত কথাই বলেছো, যত অন্যায় করে আমার কাছে স্বীকার করেছো আমি সব মাফ করে দিয়েছি আমি সব মেনে নিয়েছি। আমি জানি না ক্যানো আমার কাছে মিথ্যা বলেছিলা।তোমার আমার বাড়ি একই এলাকায় হওয়ায়, আমি চাইলে তোমার বিয়ে আটকে দিতে পারতাম, তুমি বিয়ের পর ক্যামন আছো জানার জন্য ছটফট করে মরেছি, তাই তোমাকে এতো দিনে চারবার কল দিয়েছিলাম তোমাকে মেসেজে দিয়ে জানতে চেয়েছিলাম ক্যামন আছো,মেসেজ কল দিয়েও পরে,আবার অনুশোচনা হয় আমার যে আমার জন্য আমার না তোমার কথা শুনতে হয়, না তোমার কষ্ট হয়, না ক্ষতি হয় তোমার। আর তুমি মেসেজের রিপ্লাই দিয়ে বলছিলা যে বর পাশে তুমি কি আমার সংসার ভাঙ্গতে চাও। ময়না আমার ভালোবাসা এতো সস্তা না, যে তোমাকে মানুষের কাছে ছোটো করবো বা তোমার ক্ষতি করবো। যখন আমার রাগ হয়েছে তোমাকে কথা শুনাইছি। কিন্তু আমি তোমাকে কথা শুনাই নিজে আরো বেশী দুঃখ পেয়েছি।
আমার যত রাগ দুঃখ কষ্ট হয়েছে না কেন এগুলোর থেকে আমার ভালোবাসার জোর ছিল অনেক বেশি, এজন্য কোন কিছুর কাছেই আমার ভালোবাসা হার মানেনি, আজও ভালোবাসি তোমারে মরার আগের শেষ নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলবো ভালবাসি ময়না তোমাকে। এখনকার দিনে মানুষ ভালোবাসাকে এমন ভাবে, যে আমি মুরগী ভালোবাসি,তার মানে সে মুরগী খেতে পছন্দ করে। মুরগী শেষ ভালোবাসাও শেষ। আমার ভালোবাসা, মুরগী ভালোবাসার মতো ছিলো না, আমি তোমাকে কখনো ঠকাইনি, না তোমার কোন ক্ষতি করেছি আমি। আমি তোমাকে সুখী দেখতে চাই। তোমার সাথে একটু কথা বলার জন্য কত দিন হয়ে গেল তৃষ্ণার্ত পথিকের মত পথ চেয়ে বসে আছি। আমি অনেক অসুস্থ হয়ে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিলাম হাসপাতাল থেকে ফিরে তোমাকে মেসেজ দিয়েছিলাম তুমি তার রিপ্লে পর্যন্ত দাওনি। এখন আমার মনে হয় যে আমি মরে গেলে মনে হয় তুমি সবথেকে বেশি খুশি হবে ময়না । আজও তোমাকে দেখব বলে বেঁচে আছি, বেঁচে থাকি। আজও ভাবি তোমার পাশ থেকে সবাই সরে গেলেও আমি তোমার পাশে থাকবো।
মনে পড়ে ময়না, তুমি আমাকে বলতে যে, তুমি যদি আমাকে ছেড়ে যেতে চাও আমি জানো তোমাকে যেতে না দেই, বলতে আমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবা না।
আর সেউ তোমাকে যখন বিয়ে করতে না করি,তুমি বলো আমি জোর করলে সুইসাইড করবা।
তাই আমি আর জোর করিনি, আমি জানি আমি একজন আন্ডারগ্রাজুয়েট প্রবাসী আমার ফ্যামিলির আর্থিক অবস্থা ভাল না এজন্য হয়তো তুমি আমার পরিচয়ে পরিচিত হতে অস্বস্তিবোধ করতে। অথচ সেই তুমি আমাকে বলতে যে আমি তোমার জীবনে আসছি আশীর্বাদ হয়ে। আমি না থাকলে তুমি বাঁচতে পারবা না। আমার খুব মনে পড়ে যখন তুমি, রাতের অন্ধকারে একা কান্না করতে, আমার ঘুম ভেঙ্গে যেতো আর মনে হতো তুমি ভালো নেই আর তোমাকে ফোন দিয়ে দেখতাম তুমি কান্না করছো, তুমি বলতে এতো রাতে আমি কিভাবে বুজলাম। ময়না, তোমার সাথে যখনই খারাপ কিছু হয়েছে আমি সেটা বুজতে পারতাম, আমার হৃদয় আমাকে বলে দিত তুমি ভালো নেই, সেই তুমি আমাকে ছেড়ে আছ বহুদূরে। এখন আমি যখন রাতের আধারে একা কান্না করি, তখন তোমাকে পাশে পাই না ময়না, যখন ভোর রাতে স্বপ্ন দেখি তুমি ভালো নেই তোমাকে ফোন দিতে পারি না তোমার খোঁজ নিতে পারি না,তোমার খোঁজ নিতে না পারার অসহ্য যন্ত্রণা আমাকে কুড়িয়ে খাই, ময়না কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না এ যন্ত্রণা । আমার রব জানে আর আমি জানি। কেও কাওকে কখনো ভালোবেসে ছেড়ে যাই না।

আমি দেখেছি সব , তোমার স্বামীর সঙ্গে বেশ সুখেই আছ মনে হয়। আবার মনে হয় ভালো নেই। আমি জানি না তোমার মনের ভিতর কি ছিলো ময়না। পরিবারের চাহিদা , লোনের বোঝা মাথায় নিয়ে, জীবনের জন্য ছুটে চলেছি। তোমাকে ভুলতে চেষ্টা করি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তোমাকে যত ভোলার চেষ্টা করি, তার চেয়ে বেশি মনের মধ্যে তুমি ফিরে আসো। তাই তোমাকে আর ভোলা হয় না। মাঝেমধ্যে তোমাকে ভাবলে আকাশটা কেন জানি কালো হয়ে যায়। কেন জানি পৃথিবীটা ঝাপসা হয়ে যায়। বড্ড অভিমানে জমাট হয় বেদনার অশ্রু। যে আমি তোমার অস্তিত্ব ছিলাম, সেই তুমি এতটা বদলে গেলে কীভাবে? ময়না, বড্ড জানতে ইচ্ছা করে, ভুলেও কি একটু আমাকে পড়ে না মনে? তোমার জন্য মনটা কাঁদে সব সময়।
একটা কথা মনে রেখো ময়না, তোমার হাদি এখনো তোমারই আছে। জীবনে যদি কোনোদিন আবার তোমার খারাপ সময় আসে,একবার হাত বাড়িয়ে দেখো তোমার পাশে আমাকে পাবে। আমি তোমার মঙ্গল সুখ শান্তি কামনা করি। আমি জানি জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছ মানুষের কাছ থেকে এই জন্য তোমাকে আমি জান প্রাণ দিয়ে ভালবাসতাম। আমি দোয়া করি আল্লাহ পাক যেন তোমার আগামীর দিনগুলো সুখ ও শান্তিময় করে।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

শূন্যতার প্রবাস জীবন

১৩ জুন - ২০২১ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪