প্রার্থনা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

অপদেবতা
  • ৫৩
  • 0
  • ১২২
সন্ধ্যার একটু আগে , সূর্যর কর্মবিরতির একটু আগে , যখন ব্যস্ত মানষগুলো ক্লান্তিতে ধুকছিল । তখন সূর্য অন্যদিনের মত প্রার্থনা সারল।

প্রার্থনা এই জন্য না যে , তাকে আবার পৃথিবীতে আসতে দেওয়া হোক । বরং এই জন্য যে, তাকে যেন আর এই গ্লানিময় পৃথিবীতে আসতে না হয়। নোংরা মনের মানুষগুলোর কাড়াকাড়ি , ধংস , লুটপাট সারাদিন দেখতে দেখতে সে ক্লান্ত । সে মুক্তি চায় । চায় ছুটি । দেখতে চায় না সে আত্বকেন্দ্রীক মানুষ ।

কাকগুলো তখন পশ্চিম দিক থেকে পূর্বে ফিরছিল। আকাশে বিষন্নতার লাল আভা ছিল। ধোঁয়াযুক্ত বাতাসও ছিল । সে বাতাস ঝকঝকে শহরে যেমন বইছিল , তেমনি বইছিল অবহেলিত নোংরা ওই বস্তিতেও । ঠিক তখন সূর্যর না চাইলেও বার বার তার চোখ যাচ্ছিল ঐ ছোট্ট শিশুটার দিকে , যে শুয়েছিল তার মৃত মায়ের পাশে । এর একটু আগে প্রচন্ড ক্ষুদা নিয়ে তার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। প্রচন্ড ক্ষুদা নিয়ে মারা যাচ্ছে সেও। সূর্য আবার পৃথিবী থেকে পালাতে চাইল। চাইল ধংস তার নিজের ।

তবুও ডুবে যাওয়ার একটু আগে আবার চোখ গেল তার, মেয়েটির দিকে । শুনল মেয়েটির অস্ফুট প্রার্থনা , ‘‘ ছোট্ট শহরের মানুষগুলো অন্যের জন্য বেচে থাক। জেগে উঠুক সবার মনে মায়া , ভালবাসা , দয়া । ”তারপর নিথর হয়ে গেল মেয়েটা। ঠিক তখনই টুক করে লুকিয়ে গেল সূর্য।


প্রতিদিন হাজারো প্রার্থনা হয় । সব প্রার্থনা কি আর ফলে ? বাতাসে প্রতিটি স্তরে জমা পড়ে থাকে অজস্র প্রার্থনা ।সব প্রার্থনা কি নি:স্বার্থ? হয়ত কেউ নি:স্বার্থ প্রার্থনা করতে এখনও শেখে নি । তাই হয়ত স্রষ্টাও এড়িয়ে যায়। এ ছোট্ট প্রার্থনা অন্য সব প্রার্থনার মত ছিল না । ছিল না এতে স্বার্থ। হয়ত তাই , অথবা অন্য কারনে সেই ছোট্ট শহরে উপর একটা ভিন্ন বাতাস বয়ে গেল। গাছরা তাই রাতেও নড়ে চরে উঠল।গাছরা একে অন্যের দিকে তাকিয়ে বলল, কিছু কি ঘটেছে , কিছু ঘটেছে কি ?

তারপর রাত আরও বাড়ে , একসময় তা শেষও হয় ।তারপর ?

তারপর সূর্যটা আস্তে আস্তে ঊঠতে থাকে ।একরাশ আলো শহরের ঘুম ভাঙ্গায়। হয়ত চেতনাটাকেও। মানুষগুলো আজ অন্য দিনের মত স্বাভাবিক ব্যস্ত নয় । কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত । তারা হাটছে , তারা ভাবছে। কিন্তু এ ভাবনা অন্য দিনের মত না। তারা আজ চাকুরীতে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো করছে না।করছে না একে অন্যের সাথে ধাক্কাধাক্কি । টেক্সী চালকগুলো অস্বাভাবিক ভাড়া চাচ্ছে না । বলছে না আজ তারা যাবে না । সবাই হাসি মুখে , হাটছে , চড়ছে , কাজ করছে এবং ভাবছে ।

সব স্বাভাবিক চলছে, তবু আজ কিছু অন্যরকম ঘটনা চোখে পড়ে । যে লোকগুলো সকাল বেলা ব্যায়াম করত তারা আজ ব্যায়াম শেষে রাস্তা ঝাড়ু দিচ্ছে । তারা বলছে একটা তাদেরও কাজ । আজ অফিসে গমনরত ব্যাক্তিগত গাড়িগুলো খালি যাচ্ছে না । একই পথের যাত্রীদের লিফট দিচ্ছে । সবার চোখে সাহায্যের আশ্বাস, ভালবাসার আশ্বাস, বিশ্বাসের আশ্বাস ।

বেলা একটু বাড়তেই প্রত্যেক খবর চ্যানেল গুলোর ব্যাস্ততা বেড়ে গেল। একটার পর একটা খবর এর বোমা ফাটাতে লাগল। দেশের ধনীরা তাদের সম্পদের একটি অংশ দান করে একটা ফান্ড করার ঘোষনা দিল । এই ফান্ডের অ‍‍র্থের অ‍‍র্ধেক দিয়ে, সুলভ মূল্যের খাবার দোকান খোলার ঘোষনা দেওয়া হল। বাকী অর্থ চিকিৎসা এবং পথশিশুদের জন্য বরাদ্দ করা হল। যুব সমাজ আরও এক বিস্ময়কর ঘোষনা দিল । তারা বলল তাদের নেশার জন্য ব্যবহৃত সকল অর্থ দিয়ে একটা ফান্ড খোলা হবে এবং এর সমস্ত অর্থই ব্যয় করা হবে বিভিন্ন বস্তিতে দুধের বাচ্চাদের খাদ্যের জন্য। তরুনীরাও পিছিয়ে নেই । তারা তাদের প্রসাধনী খরচ সম্পূর্ন মুছে ফেলে পথ শিশুদের শিক্ষার জন্য ব্যায় করার ঘোষনা দিল। সরকারী দল ঘোষনা দিল সবার আগে জনকল্যান তাদের মূখ্য কাজ । বিরোধী দলগুলো সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসল। সবাই বিভিন্ন স্থানে কারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল লোকের কর্মসংস্থানের কর্মসূচী প্রনয়ণের জন্য একত্রিত হল। সকল সন্ত্রাসী অস্ত্র ফেলে দিল। সকল কর্মকর্তা কর্মচারী ঘুষ এবং দূর্নীতি সমূলে উৎপাটনের শপথ নিল। সকল ব্যবসায়ী ঘোষনা দিল কালোবাজারী, মজুতদার বিলুপ্ত করার । বিশিষ্ট কবি সমাজ ঘোষনা দিল তাদের কাছে একটা কবিতা লেখার চেয়ে একটা গাছ লাগানো অধিক গুরুত্বপূর্ন। বিশিষ্ট চিত্রকররা গ্রামে পাড়ি জমাল।উদ্দেশ্য কৃষদের সাহায্য করা । বাদক উঠিয়ে রাখল তার তবলা।তার চোখে আরও অধিক গুরুত্বপূর্ন কিছু কাজ ভাসতে লাগল। নিজের ভাললাগা সবাই বিসর্জন দিল।সেখানে গুরুত্ব পেল অন্যের জীবন। সকল শিক্ষার্থীরা প্রচলিত শিক্ষার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা দিল। যে সব বই তাদের অপ্রয়োজনীয় মনে হল তা তারা ছুড়ে ফেলে দিল। তারা প্রয়োগিক শিক্ষার দিকে ঝুঁকে গেল। সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হতে লাগল , সবাই মানুষ , সবার সুন্দর ভাবে বাচাঁর অধিকার রয়েছে । নিজের জীবন অন্যের জন্য উৎসর্গ করার শপথ স্থানে স্থানে ধ্বনিত হতে লাগল। চারদিকে আলো আর আলো । সবাই নিজের আলোয় অন্যকে আলোকিত করতে লাগলো। প্রত্যেক মানুষ । প্রত্যেক মানুষ ।

দিন শেষে সূর্য আজ আনন্দের সাথে বিদায় নিচ্ছে । তার আলো আজ তার কাছে ম্লান মনে হচ্ছে । প্রতিদনি সে একধরনের গ্লানি নিয়ে বিদায় নিত । আজ সে বিদায় নিচ্ছে নতুন আশা নিয়ে । ভাললাগা নিয়ে । ডুব দেওয়ার একটু আগে সে নজর দিল ঐ জায়গায় সেখানে কাল সন্ধ্যায় ছোট্ট শিশুটি এবং তার মাকে বিদায় দিয়েছিল। সেখানে সে দেখল, কারা যেন তাদের শান্তিতে ঘুমানোর ব্যবস্থা করেছে । তাদের কবরের উপর লাগিয়েছে অনেকগুলো গোলাপ গাছ । তারা কি জানত ? এরা কি করেছিল? না মনে হয়। হয়ত তারা শুধু গভীর মমতা অনুভব করেছিল, অকারণে । অনেকদিন পর সূর্য তার স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করল যাতে সে কাল আবার পৃথিবীতে আসতে পারে , গাছ গুলোকে আলো দেওয়ার জন্য । সেও দেখতে চায় শত শত গোলাপ ফুল।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
অপদেবতা ধন্যবাদ ণীলকান্ত। ............... নাজমুল : আমারও প্রার্থনা এই । হয়ত আমি নিজেও প্রার্থনা করতে শিখি নি ।
Md.Nazmul Hasan Shanto ভালো লাগলো .............এমনি যেন হয়,ক্ষুদার কোনো গল্প যেন পড়তে না হয়......ভোট দিলাম
অপদেবতা ধন্যবাদ খন্দকার সুলতান ,আমারও ইচ্ছা যদি এমন হত । হয় না হয়ত । তবু স্বপ্ন তো দেখতে পারি।আরও একবার পড়ার জন্য ধন্যবাদ নিরব ।
নিরব নিশাচর ..........আবার এলাম আবার একই কথা বলতে বাধ্য ... একেবারে ভিন্নরকম লাগলো... দশটা গল্পের চেয়ে আলাদা.. আপনার স্বপ্ন সত্য হোক, এই বাসনায় থাকলাম... লিখে যেতে থাকুন... এবং পরে যেতে থাকুন... পাশে থাকব ইনশাল্লাহ...
Azaha Sultan ভাই, অপদেবতা কাজ করেছ দেবতার মতো...কিন্তু প্রার্থনা কবুল হওয়ার আশা করো না--কারণ, এ পৃথিবীটাই স্বার্থপর- নিঃস্বার্থ কেউ ভাবে না......এমন যদি হত....ভাল লাগল...
অপদেবতা আলপিন ভাই , কোন জায়গা বাদ নাই
অপদেবতা বিষন্ন সুমন,জীবন,দীপক,মিজানুর ,ধ্রুব ,রনীল,বিন আরফান পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।
বিন আরফান. N/A আত্নকথন গল্পের রসকে তাল নয় খেজুর রসে পরিনত করেছে. আমরা স্বপ্ন দেখি বলেইতো বেচে আছি. আর যারা স্বপ্ন দেখায় তারা নিজেরাই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্যস্ত. সাহিত্যের হাত অনেক ভালো চলতে থাকবে ভবিষ্যতে ভালো কিছু হবার লক্ষণ স্পস্ট. শুভ কামনা রইল.

১৭ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“অক্টোবর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ অক্টোবর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী