অসতর্ক

বন্ধুত্ব (অক্টোবর ২০২১)

gcbhattacharya
  • 0
  • 0
  • ৩৫
আমার যে গৌরব বলে একটা ছেলে আছে তা হয়তো অনেকেই এখন জানে কেননা কয়েকটি ঘটনার কথা আগেই আমি লিখেছি আর তাই মনে হয় যে তার বিশেষ পরিচয় আমাকে এখন আর নতুন করে দিতে হবে না…
তবে যদি ও এখন ছেলেটা বেশ ছোটই তা হ’লে কি হয় সে একটু বেশ অন্য ধরণের ছেলে।
যে কয়েকটি ঘটনার কথা আমি আজ অবধি বলেছি তাইতেই সেটা বেশ বোঝা গেছে মনে হয়। এখন আজ আরো একটি ঘটনার কথা বলছি।
সে’দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমি মনে মনে ভাবলুম যে এখন তো সবে শ্রাবণ মাস চলছে আর পূজো আসতে বেশ দেরী আছে তাই গৌরবের স্কুলে ও ছুটি হচ্ছে না এখন …তা এখন এই বর্ষাকালে একটু কোথাও যদি বেড়াতে যাওয়া যেতো তাহ’লে মন্দ হতো না কিন্তু যাই কোথায়?
গৌরব তখনো ঘুম থেকেই ওঠে নি যে জিজ্ঞাসা করবো।
গৌরব অবশ্য আমি একবার ডাকলেই চট করে উঠে পড়ে…অন্য সব ছেলেদের মতন কোন বায়না বা ঝামেলা কিছুই করে না… যেন কারো কড়া নিষেধ আছে তার ওপরে…কোন ঘ্যান ঘ্যান ও আব্দার ও করে না…এমন কি কষ্ট বা শরীর খারাপ হলে একবার আমাকে বলে ও না…
আমি উঠে তাড়াতাড়ি করে সকালের ঘরের সব কাজকর্মে লেগে গেলুম …
ঘরদোর কিচেন বাথরুম সব সাফ করা থেকে শুরু করে নিজের ব্রাশ করা… স্নান ও ব্রেকফাস্ট তৈরী করার সব কাজ সেরে নিয়ে গৌরবকে ডাকতেই ছেলে উঠে পড়ে বললো-‘বাপী, আরো আগে আমাকে তুমি ডাকলে না কেন? আজ ও তোমার তো সব কাজ সারা হয়ে গেছে মনে হয়…’
আমি বললুম-‘নাঃ হয়নি এখনো অনেক কাজ বাকী আছে…চলো এখন আগে তোমার পালা..’
গৌরব বললো-‘এই যাঃ বাপী…আমি কি বাসনপত্র না কিচেন যে আমার পালা …সত্যি বাপী তুমি ও না…’
আমি আর কথা না বাড়িয়ে ঝপ করে নীচু হয়ে আমার আট বছরের ঝকঝকে স্মার্ট রূপবান ফর্সা নরম নরম চকচকে ছেলেটাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে একটানে কোলে তুলে নিয়ে বাথরুমে চলে গেলুম আর তাই দেখে গৌরব বলে উঠলো-‘এই না না না…এই বাপী …যাঃ কি যে করো না তুমি বাপী… আমার বুঝি লজ্জা করে না? আমি বুঝি বড়ো হইনি?’
‘মনে তো হয় না…এই নাও ব্রাশ আর পেস্ট … শুরু করো…’
‘আরেঃ যাঃ… ও বাপী… আগে আমাকে তুমি ছাড়বে তবে তো ব্রাশ করবো আমি..’
‘নাঃ…. আমার এখন একটু ও ইচ্ছেই করছে না ছেলেকে ছেড়ে দিতে তাই কি আর করা… তুমি ব্রাশ করা শুরু করো…’
‘ওঃ বাপী… তাহ’লে আজ কি আমাকে তুমি কোলে নিয়েই চান ও করাবে না কি? হিঃ..হিঃ..হিঃ..হিঃ…হিঃ……’
‘আচ্ছা…সে আমার কোন অসুবিধা নেই কেননা পে লোড তো মোটে ১৭ কেজি …তাই করাবো না হয়…’
বেশ জব্দ হয়ে তখন গৌরব বললো-‘পে লোড? সে তো হয় মহাকাশযানেতে… বাপী, তুমি যে কি বলো না…যাঃ……’
তবে সে তখন খালি ছটফট করছে নীচে নামবে বলে আর তারপরে হঠাৎ থেমে গিয়ে বললো-‘ওঃ…আমি বুঝতে পেরেছি এতোক্ষণে সব…আমারই ভূল..’
আমি গৌরবকে নীচে নামিয়ে দিয়ে বললুম- ‘কি বুঝেছো শুনি গৌরব?….’
গৌরব মুখ ধুতে বেসিনের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো-‘আমার বাপির অভিমান হয়েছে…’
আমি গৌরবের স্নানের আয়োজনে লেগে গেলুম মানে তেল সাবান তোয়ালে অন্তর্বাস সব গুছিয়ে নিয়ে তৈরী হলুম আর…টয়লেট শেষে গৌরবকে সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়ে এনে দামী বডি লোশন পাউডার ডিও ক্রীম নানা রকমের উপকরণ দিয়ে ছেলের প্রসাধন পর্ব সেরে যখন আমি গৌরবকে ড্রেস করাচ্ছিলাম তখন বললুম-‘হুঁ… আজকে ও মনে হয় বৃষ্টি হবে… কি যে করা যায় তাই বলো তো গৌরব?…’
‘কি আর করবে বাপী? তবে একটু কোথাও বেড়াতে গেলে মন্দ হতো না বাপী…
আমি বেশ অবাক হয়ে বললুম-‘তা কোথায় যাওয়া যায় বলো তো…’
গৌরব ঠাট্টা করে বললো-‘কেন বাপী? রবার্টসগঞ্জ মুঙ্গের দ্বারভাঙা বা তোপ চাঁচি আর মাইথন হাজারীবাগ …অনেক সব জায়গাই তো আছে …’
‘তা তো আছেই বিহারে আর ঝাড়খন্ড রাজ্যে তবে রাঁচিটা আবার বাদ পড়লো যে কেন তাই তো ভাবছি আমি…’
‘সেখানে পাগল থাকে ভূত নয় বলে…’
‘তবে বাকি সব জায়গাগুলো কি ভূতের আড্ডা নাকি?… ’
‘তাই তো শুনেছি আমি … তবে সব চেয়ে বেশী ভূত নাকি আছে মুঙ্গেরে.. তবে তারা সব কয়লা খাদানের ভূতের মতন মাটির নীচে থাকে আর শুধু খুব ঝড় জল বা দুর্যোগের সময় বেরিয়ে এসে ভয় দেখিয়ে লোককে মেরে ফেলে বলে শুনেছি……’
’ওঃ…তবে থাক…আমাদের আর সেইসব জায়গায় বেড়াতে গিয়ে কাজ নেই..’
‘তা তো ঠিকই তবে…’
‘এই তবেটা আবার কি?’
‘নাঃ… থাক …এখন সেই সব বাজে কথা না বলাই মনে হয় ভাল কেননা হয় তো লোকে পাগল ভাববে আমাকে…তবে একটা কথা …তুমি কিন্তু এখন থেকে সেই পঞ্চমীর দিন অবধি একটু সাবধানে থাকবে বাপী আর কোন ঝামেলায় জড়াবে না … ষষ্ঠির দিনে আমাদের যাত্রা হবে শুরু…’
‘কিন্তু টিকিট?’
‘সে আমি টিকিট চেক করে বুকিং করে রাখবো অনলাইনে বাপী…’
‘কোথাকার জন্য গৌরব?’
‘তা এখন ও আমি ঠিক জানি না বাপী … তবে ওই বিহারেই কোথাও গেলেই হবে মনে হয়…দেওঘর জায়গাটা ও বেশ স্বাস্থ্যকর বলে আমি শুনেছি আর দূর ও বেশী নয়…তবে এখন যাওয়া ঠিক হবে না বাপী কেননা এখন তো বর্ষা কালের শাওনের কাঁওড়ের মেলা চলছে…খুব ভীড় হবে…’
সেইদিন বিকেলে আমি গৌরবকে স্কুল থেকে সঙ্গে নিয়ে যখন বাড়ী ফিরে এলুম তখন আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এসেছে…
আমি গৌরবকে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে ছেলেটার স্কুল ড্রেস খুলে ওয়াশিংমেশিনে ফেললে ও ঠান্ডা লাগবার ভয়ে গৌরবকে তখন আর স্নান না করিয়ে শুধু তার হাত পা মুখ ধুইয়ে নিয়ে চলে এলুম আর ঘরের পোষাক পরাতে বসলুম…
গৌরবের আজকের পোষাকটা ছিল রাজস্থানী…
ফতুয়ার মতন হলদে জামা আর খাটো কাপড়ের বদলে একটা নতুন পায়জামা তো ছিলোই সেই সাথে এমন কি একটা লাল রঙের পাতলা কাপড়ের ভেতরে হলদে ছিটের বড় পাগড়ী ও ছিলো।
পাগড়ী আর তিলক টিলক পরিয়ে রাজস্থানের রাজপুত সাজা ছেলেকে নিয়ে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে জল খাবার এনে সাজিয়ে দিতেই গৌরব বললো-‘আচ্ছা বাপী… বলো তো আজ তোমার কি হয়েছে? শরীর খারাপ?’
‘কই না তো..’
‘তবে? মন খারাপ?’
‘হুঁ…’
‘কেন বাপী? বেড়াতে যেতে না পারবার জন্যে?’
‘নাঃ…’
‘তবে?’
‘বেড়াতে যেতে গিয়ে জব্দ হয়ে..’
‘ওঃ বাপী…তুমি আবার কোথায় বেড়াতে গেলে আর সেই কারণে মন খারাপই বা হবে কেন?’
‘নাঃ…ঠিক সেইজন্যে নয়..’
‘তবে আরো কিছু আছে…তা সেটা কি বলোতো বাপী?’
‘সেটা হ’লো বন্ধুবিচ্ছেদ…’
‘তার মানে বাপী? তুমি সব কথা আমাকে খুলে বলো তো বাপী… তোমার বন্ধুত্ব আবার কিসে গেলো? বন্ধু… সে না হয় তোমারই কেউ হবে তবে সে হঠাৎ বন্ধুত্বের ইতি টানবে কেন? এই যাঃ… আলো তো দেখি নিভেই গেল.. ও ওরে বাবা… বাইরে যে ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি পড়ছে আর সাথে ঝোড়ো হাওয়া ও আছে… সুতরাং আলো তো নিভে যেতেই পারে… হিঃ… হিঃ… হিঃ…’
‘আমি এমার্জেন্সী লাইট অন করছি গৌরব …’
‘তা করো বাপী তবে আমার খাওয়া হয়ে গিয়েছে… তুমি খেয়ে না ও এখন… তার পরে তুমি আমাকে সব কথা খুলে বলো তো বাপী ..’
আমি খেয়ে নিয়ে উঠে দেখি যে ঠান্ডা হাওয়া লেগে বেশ শীত শীত করছে আমার তাই বেসিনে হাত মুখ ধুয়ে এসেই বিছানাতে উঠে ঝুপ করে শুয়ে পড়লুম আর গৌরব নিজের বিরাট পাগড়িটা খুলতে খুলতে বললো-‘বাপী আজ আর তোমার ভাগ্যে আমার ফটো তোলা নেই… আমি এখন তাই এই পোষাকগুলো সব খুলে রাখি না হয়… পরে পরলেই হবে…’
এই বলে গৌরব নিজের পোষাকগুলো খুলে রাখলো আর শুধু সাদা স্লিভলেস গেঞ্জী আর নীল অন্তর্বাস পরা অবস্থায় বিছানায় এসে সোজা আমার বুকের ওপরে উঠে শুয়ে পড়ে বললো-‘বাপী তোমার ছেলে রেডী...’
আমি গৌরবকে বুকে জড়িয়ে ধরে আদর করা শুরু করলুম…
তক্ষুনি ছেলেটা বললো-‘এই বাপী… এখনই না… আগে তুমি আমাকে সব ঘটনা শোনা ও… তারপরে আমি যখন বিষয়টি নিয়ে ভাবনা চিন্তা করবো তখন তুমি আমাকে যতো খুশী আদর করো না হয়… এখন বলো তো যে তোমার এই বন্ধুটি কে?’
‘কে আবার? রামলাল…’
‘ওরে বাবা… তোমার সেই হাড় কিপ্টে বন্ধু…? হুঁ…বুঝেছি তা সে হঠাৎ চটলো কেন বাপী? নিশ্চয়ই কিছু গাঁটগচ্ছা গেছে তার…’
‘হুঁ..’
‘তা কি ভাবে গেলো তার টাকা?’
‘বেড়াতে গিয়ে…’
‘আরে যাঃ… বেড়াতে গেলে তো টাকা খরচ হবেই… তাইতে একেবারে বন্ধুবিচ্ছেদ হয় কখনো?’
‘বন্ধু যদি একটু বিশেষ মিতব্যয়ী স্বভাবের হয় তখন…?’
‘বিশেষ মিতব্যয়ী?...হিঃ…হিঃ…হিঃ…নাঃ…বাপী তুমি সবটা আগে বলো তো দেখি….. আচ্ছা…আগে বলো কতো টাকা গেছে?’
‘বেশী নয়…শ’পাঁচেক হ’বে হয়তো তবে রামলালের কাছে সেই অনেক…’
‘হুঁ…পাঁচশো টাকা নিয়ে কেউ বেশী দূরে কোথা ও বেড়াতে যেতে পারে না বাপী… সুতরাং কাছে পিঠেই কোথা ও যাওয়া হয়েছিলো …’
‘হুঁ…’
‘তা এই বর্ষাকালে কাছে পিঠে কোথায় যাওয়া যেতে পারে বেড়াতে? এক কাঁওড় মেলার শিব মন্দিরেতে হ’তে পারে তবে তুমি শিবের মাথায় জল ঢালবার মতন ছেলে যে নও তা আমি জানি কেননা তোমার কপালে বৌ না থাকলে কি হয় বাপী এই যে একটা হতভাগা ছেলে জন্মে আছে …এই ছেলেটাই তোমার সব ভবিষৎ মাটি করে রেখেছে… তাই তোমার কপালে আর দ্বিতীয়বার বিয়ে জুটছে না … এই ছেলে নিয়েই তোমাকে থাকতে হবে সুতরাং শিবের মেলা বাদ গেলো…’
‘হুঁ…’
‘তবে আর বাকী রইলো কি? কি? কি?.... হ্যাঁ… এই বর্ষাকালে এক সারনাথের মেলা আছে বটে … তাই না বাপী? আর আজ প্রথম সোমবার …. আমাদের ইংলিশ মিডিয়াম সেন্ট জন্স স্কুলে ছুটি নেই… তবে তোমার অফিসে অন্তত হাফ ডে কাজের ছুটি হ’তেই পারে আর রামলাল আংকলের তো স্টেট মানে রাজ্য সরকারের অফিস…. ছুটি ছিল নির্ঘাৎ কেননা রাজ্যে ধর্ম প্রধান সরকার যখন… হিঃ… হিঃ… হিঃ…’
‘তার মানে গৌরব?’
‘মানে হ’লো যে আজ তুমি আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে এসে তখন রামলাল আংকেলকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছিলে সারনাথের মেলাতে…আর সে অবশ্যই যাতায়াত খাওয়া দাওয়ার সব খরচ তোমার এই শর্তে ….কেমন? আমি ঠিক বলছি তো বাপী? হিঃ….হিঃ…হিঃ…’
‘হুঁ….’
‘তা বেশ…তারপরে তুমিই বলো বাপী?’
‘তারপরে আর কিছু নেই…’
‘আরে যাঃ বাপী…নেই কি? খুব আছে…আসল ব্যাপারটাই তো আছে …আর মনে হয় সেটা ও আমাকেই অনুমান করে বলতে হ’বে…তুমি বলবে না… তুমি না বাপী ভীষণ দুষ্টু ছেলে হয়েছো একটা… তা আমিই না হয় চেষ্টা করতে পারি তবে আমার কিন্তু এইবারে কিছু পারিশ্রমিক ও চাই বাপী…’
‘হুঁ…’
‘কি দেবে আগে বলো বাপী…’
‘হেলিকপ্টার…’
‘ওরে বাবা…সেটা আবার কী? আস্তো একটা হেলিকপ্টার… ’
‘তাই…তবে খেলনার হেলিকপ্টার…ব্যাটারী আর রিমোট চালিত… এই যা..’
‘তুমি মেলাতে গিয়ে কিনেছো তোমার ছেলের জন্যে…’
‘হুঁ…আর সেটাই কাল হয়েছে… তবে রামলাল যে এতোটা অসতর্ক হবে তা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি গৌরব…’
‘কি রকম অসত্রক বাপী?’
‘আমার কাছে ছিলো দু’হাজার টাকার একটা গোলাপী নোট আর খেলনার দোকানদারের কাছে খুচরো টাকা নেই বলে সে নোটটা ভাঙিয়ে দিতে পারবে না বললো …রিচার্জেবল খেলনাটার দাম আটশো টাকা শুনে রামলাল অকাতরে দু’টো পাঁচশো টাকার ছাই রঙের নোট নিজের পকেট থেকে বের করে দোকানদারকে দিয়ে একটা দু’শো টাকার একটা হলদে নোট ফেরৎ নিলো আর দোকানদার খেলনাটা প্যাক করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলো….’
‘তা এই অবধি তো সব ঠিক আছে বাপী…অসত্রক হলো কে আর কখন?’
‘হুঁ…তবে তারপরে আর নেই ঠিক…রামলালের মেলার ভীড়েতে আরো সতর্ক থাকা উচিৎ ছিলো….’
‘তা কেন বাপী?’
‘কেননা এই অনাচার রামলালের ধর্মে সইলো না তাই…’
‘আরে সে আবার কী? আর তার মানে বাপী?’
‘আরে বাবা, কৃপণ মানে কিপ্টেদের ধর্ম হ’লো এক পয়সা খরচ না করা যেমন চোরের ধর্ম হ’লো চুরী করা …আর পকেটমারের ধর্ম হ’লো পকেটমারা…এখন এদের মধ্যে কেউ কখনো অধর্ম করলেই ফল লাভ হয় হাতে হাতে…’
‘হ্যাঁ …বুঝতে পেরেছি আমি সব বাপী… রামলাল আংকেলের পকেট মারা গেছে মেলাতে আর টাকার শোকে পাগল হয়ে তোমার সাথে কাট্টি করে দিয়েছে যেমন আমি করি মাঝে মাঝে আমার বন্ধু গৌতমের সাথে ঝগড়া হলেই…’
‘হুঁ…’
‘তা তোমার পকেটটা আবার বাদ গেলো কেন বাপী? হিঃ…হিঃ…হিঃ…একযাত্রায় পৃথক ফল কি করে হয়? হুঁ…বুঝেছি… তা তুমি সেই দু’হাজার টাকার নোটটা ফেরৎ নিয়ে তখন আর সেটা পকেটে না রেখে হাতেই রেখেছিলে তো না কি খেলনাটার ক্যারিব্যাগেতে ...কোথায় রেখেছিলে বলো তো বাপী?’
ছেলের ঠাট্টা শুনে আমি মুখ গোমড়া করে বললুম-‘ব্যাগেতে…’
শুনেই গৌরব খিল খিল করে আবার হেসে উঠে বললো- ‘সে আমি জানি তো বাপী তোমার স্বভাব… ঘরেতে ও তো এখানে সেখানে.. ফ্রিজের মাথায় আর নয়তো টেবিলে …সব জায়গায় টাকা পয়সাই নয় আমাকে যে সব আংটি চেন আর অন্যান্য সব দামী দামী অলংকার পরা ও তুমি সেই সব ও তোমার ঘরময় ছড়ানো থাকে তো… তাই অনুমান করলুম আর কি? তা বাপী ভালোই হয়েছে একদিক দিয়ে… চোটটা পাঁচশোর ওপর দিয়ে গেছে দু’হাজারের বদলে… শাপে বর হয়েছে…হিঃ…হিঃ…হিঃ…
এই বলেই গৌরব টপ করে উঠে বসলো আর বললো-‘তা বন্ধুবিচ্ছেদ হ’তে দেওয়াটা কিছু নয় এই সামান্য কারণে …বন্ধুত্ব হচ্ছে দুনিয়ায় সব চেয়ে দামী জিনিষ… যার কোন বন্ধু নেই সে বড়ো অসহায় হয়ে পড়ে… খুব একলা হয়ে থাকতে হয় তাকে…এই যেমন ধরো রামলাল আংকেল তোমার সঙ্গে তখন না থাকলে হয়তো টাকা থাকা সত্বে ও তুমি তখন খেলনাটা কিনতেই পারতে না বাপী…নাঃ…সেটা মোটেই ভালো কথা নয় বাপী আর খেলনাটা যখন আমার জন্যে কেনা তখন সেটা কেনবার জন্যে হওয়া এই বন্ধু বিচ্ছেদটাকে আটকানোর দায় ও তো আমারই হবে,তা ঠিক… তাই উপায়টা একটু দেখে আসছি আমি বাপী…’
‘আরে আরে… এই ছেলে… এইভাবে জামাটামা না পরে কেউ এই ভর সন্ধ্যেবেলায় আবার বাইরে যায় না কী? আরে চললে কোথায়? ও গৌরব…’
ছেলেটা টপ করে উঠে খাট থেকে নেমে পড়লো আর দরজাটা খুলে এক ছুট্টে বাইরে যেতে যেতে বললো-‘বাগানে, বাপী…’
‘এই খেয়েছে কচুপোড়া…আরে গেলো যা… এই বৃষ্টিতে আবার বাগানে কে যায়? ও গৌরব…আর তাও এই ভাবে প্রায় খালি গায়ে? এই…এই.. না… না… না… আরেঃ… ও গৌরব…যাঃ চলে…’
আমি কই কম্ম কাবার…
হয়েছে… আমার আরাম করে খাটে শুয়ে বিশ্রাম করার দফা গয়া… এখন নাও… ওঠো… আর দৌড়াও এখন ছেলেকে ধরে আনতে… উঃ…আমার হয়েছে যতো জ্বালা… কি পাগল ছেলে বলোতো …ভালো লাগে না ছাই…
যতোই রাগ হোক আমার অগত্যা উঠতেই হ’লো আমাকে আর ছাতি মাথায় দিয়ে সেই বৃষ্টির ভেতরেই বাগানে ছুটে গিয়ে যখন গৌরব ছেলেটার ফর্সা চকচকে নরম ডান হাতটাকে ধরে টেনে ঘরে নিয়ে এলুম ততোক্ষণে ছেলেটা ভিজে একসা হয়ে গিয়েছে…
ওঃ…আমি কি যে করি এই এক ছেলে নিয়ে……
গৌরব বললো-‘এই যাঃ.. বাপী .. আমি তো ওদের খুঁজেই পেলুম না আর তুমি গিয়ে আমাকে ধরে টেনে আনলে কেন হিড় হিড় করে? এখন কতো সময় লাগবে বলো তো? সব বিষয়টা বোঝাতে হবে… অনেক কিছু তো শেখাতে ও হবে… তুমি না বাপী … সব কাজেতে খালি দেরী করিয়ে দাও আমার….’
আমি কোন কথা না বলে তাড়াতাড়ি করে গৌরবের পরণের ভিজে অন্তর্বাস দুটোই খুলে ফেলে দিলুম আর শুকনো তোয়ালে এনে চট করে গৌরবের ভিজে গা হাত পা মাথা সব মুছিয়ে দিতে বসলুম…
উঃ… সত্যি যার এমন একটা পাগল ছেলে থাকে না তার তো জীবন শেষ…
বলে কিনা বৃষ্টির মধ্যে বাগানে গেছে আমার বন্ধুবিচ্ছেদ আটকানোর উপায় খুঁজতে… উঃ… উঃ… কি সাংঘাতিক ছেলে… এখন ঠান্ডা লেগে জ্বর হলেই চিত্তির আর কি…
আমি রাগ করে বললুম- ‘থাকো তুমি গৌরব এখন এমনি… যেমন কর্ম তেমন ফল… আমি কিচ্ছুটি আর পরাবোই না এখন তোমাকে …একদম নয়… যাও তুমি যেখানে যাবে বাইরে..’
ঝকঝকে চকচকে ফর্সা ছেলে গৌরব খিল খিল করে হাসতে হাসতে বললো-‘অ্যাই… ছিঃ…বাপী…লোকে শুনলে কি বলবে তখন?’
‘সে যে যা বলে বলবে তারা …তারা তো সব যা ইচ্ছে তাই বলতেই পারে কেননা তাদের তো আর আমার মতন এই একটা পাগল আর দস্যি ছেলেকে সামলাতে হয় না এই ঝমঝমে বৃষ্টি আর ঝড়ের মধ্যে ছুটে গিয়ে…তাই তারা সব বলবেই তো যা খুশী… বলুক… আমার তাইতে বড়ো বয়েই গেলো…যত্তো সব অনাসৃষ্টি কান্ড…হ্যাঁ না তো…’
‘অতো রাগ করে না.. ও বাপী..আরে আমি তো আমার বন্ধুর সাথে একটু দেখা করতে বাগানে গেছিলুম …’
‘বন্ধু? এই বৃষ্টিতে? বাগানে? কটা বন্ধু সে’খানে তোমার জন্যে বসে আছে তাই শুনি একবার?’
‘তা আছে তো অনেকই বাপী তবে আপাতত এখন একজন হ’লেই হবে আমার …’
‘তবে আমার ও এই একজন হ’লেই হবে…’
এই বলেই আমি আগে গৌরবকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলুম শক্ত করে আর তখনি এক টানে ফর্সা ছেলেটাকে বিছানায় তুলে নিয়ে আবার ঝুপ করে শুয়ে পড়লুম আর তাড়াতাড়ি করে একটা আকাশী রঙের দামী পশ্মীনা শাল টেনে নিয়ে জড়িয়ে দিলুম যাতে গৌরবের ঠান্ডা না লেগে যায় সেই ভয়ে…
আর দেখো কান্ড…
গৌরব আমার রাগ ভাঙাতে নিজের দুই মরাল শুভ্র মসৃণ বাহু দিয়ে আমার গলা জড়িয়ে ধরলো আর আমাকে একটা মিষ্টি হামি দিলো আর ব্যস…
তখন আমি ও সব রাগ ভূলে গিয়ে একটু পরেই ছেলেটাকে আদর করতে ও শুরু করলুম …
দূর ছাই… এই এতো সুন্দর ছেলেটাকে নিয়ে আমার হয়েছে যতো জ্বালা …এই ছেলের ওপরে তো দেখি রাগ করে ও থাকাই যায় না…
সে যাক…
তারপরে বেশ কয়েকদিন কাটলো।
শ্রাবণ মাস শেষ হতে চললো।
একদিন গৌরব বললো-‘বাপী, কাল আমার স্কুলে ছুটি আছে…’
‘অতঃ কিম্?’
‘কোথা ও বেড়াতে যাবে বাপী?’
‘কোথায় যাবো বলো গৌরব?’
‘সে আমি ঠিক করবো না হয় তবে তোমার বন্ধু সেই রামলাল আংকেলকে ও সঙ্গে যেতে হবে কিন্তু…’
‘ইঃ…বললেই হলো..তার যেতে বড়ো বয়েই গেছে… গত প্রায় একমাস সে কথা ও বলে না আমার সাথে…’
‘যাবে বাপী… যাবে …ঠিক যাবে..’
‘কচু যাবে…’
‘আরে তুমি ফোন তো করো আগে বাপী…’
‘হুঁ…তা করছি…’
‘শোন বাপী…তুমি বলো যে আটশো টাকা ধার শোধ দিতে চাও…’
‘বলছি…আর কিছু?’
‘আর এক জায়গায় বেড়াতে ও নিয়ে যেতে চাও কাল… সেই জায়গাতে খুব ভালো একটা নতুন রেষ্টুরেন্ট খুলেছে…সস্তায় থুড়ি ডিসকাউন্টে ভোজের উত্তম ব্যবস্থা ও থাকবে সেই সঙ্গে …দেখই না… ঠিক রাজী হয়ে যাবেন আংকেল… কৃপণরা কখনো টাকা আর বিনে পয়সায় ভোজের লোভ ছাড়তে পারে বাপী? অসম্ভব…’
গৌরব রিমোটটা নিজের ফর্সা চকচকে বাঁ হাতে পরে হলদে পাখাওয়ালা হেলিকপ্টারটাকে ওড়াতে ওড়াতে বললো…
‘হুঁ… তবে তাই করছি ফোন দেখি কি বলে রামলাল…’
তা গৌরবের কথা তো মিথ্যে হবার নয় তাই হ’লো ও না… রামলাল শুনে একটু গাঁইগুঁই করে শেষে রাজী হয়ে গেলো…
এ বেশ মজা তো…
তবে শুনে গৌরব হাসতে হাসতে বললো—‘কি বলেছিলুম বাপী? তবে কাল আমাকে তুমি খুচরো তিন হাজার টাকা দেবে …হিঃ…হিঃ…হিঃ… মনে করো বেড়াতে যাবার কেনাকাটা করবার আর ভোজের খরচ আর আমাকে একটা চুড়িদার পায়জামা পাঞ্জাবী আর সানগ্লাস ও একটা টুপী ও দিতে হবে পরিয়ে…’
‘ওরে বাবা… এতো সব আয়োজন কেন? ও গৌরব…’
‘আরে কেন আবার কি বাপী? বন্ধুত্ব রক্ষা…’
‘যত্তোসব আদিখ্যেতার কথা… ‘
হুঁ…মুখে যতো যাই বলি না কেন তবে মনে একটা সন্দেহ শুরু হলো… হ্যাঁ… একটা ঘোরতর সন্দেহ…. চুড়িদার পায়জামা আর পাঞ্জাবী?.....হুঁ… ব্যাপারটা ঠিক যে কি সেটা ধরতেই পারছি না… যাঃ… শেষে কি একটা বাচ্ছা ছেলের কাছে হেরে যাবো না কি? মনে তো তাই হয় তবে সে হেরে গেলেই বা কি? লোকে তো বলবে নিজের ছেলের কাছে বুদ্ধিতে হেরে ভূ ত হ’লে ও সে হার নাকি কোন হারই নয়…সবচেয়ে বড়ো জয়…হুঁ… যতো সব বাজে কথা…ধেৎতেরি..’
তা অটো রিজার্ভ করে যখন আমরা গিয়ে সারনাথে পৌঁছালুম তখন রামলাল একেবারে রেগে আগুন…
সে না কি প্রতিজ্ঞা করেছিলো যে ইহ জীবনে সে আর কখনো সারনাথে যাবে না আর আমার সাথে সে কথা ও বলবে না আর তার সেই দুই ভীষ্ম প্রতিজ্ঞাই নাকি ধূলিসাৎ করেছি আমি…. অতি নরাধমের মতন কাজ হয়েছে এটা আমার…
টাকা শোধ পাবার লোভ দেখিয়েছি বলেই তাকে আমার সাথে কথা বলতে হয়েছে আর ভোজের লোভে পড়ে শেষে সেই সারনাথে ও আসতে হয়েছে …. তাকে না জানিয়ে এই কাজ করা না কি আমার এক মহাপাতকের কাজ হয়েছে….
গৌরব সব কথা শুনলো আর তারপরে হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেলো…
অটো থেকে নেমে সে পুরো এক মিনিট চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকবার পরে কঠোর মুখে তীক্ষ্ণ স্বরে বললো-‘বেশ…তা আপনার এই প্রতিজ্ঞার কথা কিন্তু আপনি একবার ও আমাদের বলেননি আংকেল…বলেছেন কি?’
‘না…মানে…আমি…’
‘আর তাইসেটা না জেনে আমরা যা করেছি সেটা নিশ্চয়ই নরাধম বা মহাপাতকের কাজ হ’তে পারে না…পারে কি আংকেল?’
‘আরেঃ…না…না..আমি সে’কথা বলিনি ভাই…’
‘সে কি বলেছেন তা আপনিই ভাল জানেন তবে টাকা ধার নিয়ে ফেরৎ দিতে চাওয়াটা ও নিশ্চয়ই লোভ দেখানো হ’তে পারে না… অবশ্য আপনি টাকা ফেরৎ না নিতেই পারেন… সেটা আপনার ইচ্ছে… আপনার টাকা …আপনি বুঝবেন…’
‘ওহোঃ…না…না…লোভ দেখানো আবার কি?’
‘আর রইলো এই সারনাথে আবার আসবার কথা… তা সে’দিন মেলা তো আপনারা দেখেছেন আংকেল… আমি তো আর দেখিনি …তাই আমি তো আসতেই পারি আর আমি এলে আমার বাপিকে ও তো আসতেই হবে …’
‘হ্যাঁ,,তা তো ঠিকই…’
‘আর দ্বিতীয়তঃ… আংকেল…নতুন রেষ্টুরেন্টটা যে এখানেই খোলা হয়েছে …তাই ভোজ খেতে হ’লে তো এ’খানেই আসতে হবে… তার আর আমি কি করবো?’
‘ঠিক কথা… ঠিকই তো…’
‘আমাদের জন্যে হোটেলে পাঁচ নম্বর টেবিল ও বুক করা আছে …তা এখন যদি আপনার আপত্তি থাকে তো চলুন ফিরেই না হয় যাই…এই অটো… চলে এসো… আমরা এখনি আবার ফেরৎ যাবো…ফুল অটো রিজার্ভ যাবো …চলুন আংকেল…’
রামলাল এইবারে একটা দারুণ বিষম খেয়ে বললো-‘আরেঃ …থাক থাক.. হোটেলে যখন টেবিল ও বুক করা হয়ে গেছে তখন আর কি হবে ফিরে গিয়ে? চলো যাওয়াই যাক…’
‘তা বেশ তো আংকেল…আপনার প্রতিজ্ঞায় যদি না আটকায় তবে চলুন আংকেল… তবে আমাদের বুকিং দুটোর সময় …আসুন ততোক্ষণ না হয় ফুচকা খাই আমরা আর বাপী আবার কি খেলনা খুঁজে পায় আমার জন্যে তা ও দেখুক …তবে ফেরবার সময় আপনি আটশো টাকা মনে করে চেয়ে নেবেন প্লীজ আর আজকের সব পয়সা কিন্তু আমি দেবো আর ফিরে যাবার আগে সে’দিনের মতন বিকেলে ম্যুজিয়ামে গিয়ে অশোক চক্র ও দেখবো…’
রামলাল তখন সবেতেই খুব রাজী…
আমি মনে মনে বললুম –‘ও রে বাবা… এ যে সেই অতি সৌম্যাতি রৌদ্রায়ৈ… কি ছেলেরে বাবা…ছেলেটার এই রূপ যে দেখবে সে ঘাবড়ে যেতে বাধ্য… আমার অফিসের রামগরুড়ের ছানা বস অবধি গৌরবের এই রূপকে সমীহ করেন …রামলাল কোন ছার…’
তা তখন সেই মতোই প্ল্যান করে আমাদের মেলা দেখা শুরু হ’লো আর আমি গৌরবের জন্যে সেদিন একটা ব্যাটারী চালিত ব্যাডমিন্টন সেট কিনলুম যাতে রাকেট দিয়ে জোরে মারতেই হয় না …সামান্য ছুঁয়ে দিলেই পিকক রঙের শাটল কক উড়ে যায় একেবারে আর তাকে আটকানো ও যায় না সহজে… সে বেশ মজার খেলা…
নতুন হোটেলের খাবার দাবার ও খুব ভালো…
যেমন কয়েকটা নাম বলছি …আগে স্ন্যাক্সেতে গৌরব পনীর পকৌড়ার বদলে এগ পকৌড়া অর্ডার করলো …নতুন আইটেম…খুব ভালো খেতে তারপরে লাঞ্চে মাঞ্চুরিয়ান পোলা ও কাশ্মীরী দম আলু বেশ ভালোই লাগলো আর সেই সাথে ছোলার ডালের পরোটা ও খাসা লাগলো খেতে পালক পনীরের সাথে… শেষে মিষ্টি দই আর পেস্তা বাদামের আইসক্রীম ও খুব ভালো লাগলো আমার…
সব শেষে সেই ম্যুজিয়াম দেখতে গেলুম আমরা… ধমেক স্তুপ… মৃগদাব আর জাপানী মন্দির দেখবার পরে …ম্যুজিয়াম দেখে বেরিয়ে অটো স্ট্যান্ড… সেখানে একটা অটো রিজার্ভ করতে যাচ্ছি হঠাৎ ঘটলো ঘটনাটা।
গৌরবের পাশ দিয়ে চলে যেতে যেতে একজন বেঁটে মোটা কালো মতন গাঁট্টা গোঁট্টা লোক হঠাৎ… বাপরে…মাইরে… মর গইলি রে… বচাও.. বচাও… বলে দারুণ লাফাতে আর পরিত্রাহী চিৎকার করতে শুরু করলো….
দেখতে দেখতে ভীড় জমে গেল সে’খানে….
হৈ চৈ শুরু হ’লো দারুণ… তিংড়িং বিড়িং করে লাফাতে আর চেঁচাতে থাকা লোকটা শুনতে ও পেলো না যে গৌরব তখন মুখে একটা হুইশেল নিয়ে জোরে বাজাতে শুরু করেছে তবে মোড়ের পুলিশের লোকেরা সেই শব্দ শুনেই দৌড়ে এলো ….
আসতেই হবে… কেননা গৌরবের হুইশেলটা ছিল সত্যিকারের পুলিশ সাহেবের হুইশেল…মানে গৌরবের স্কুলের এক বন্ধুর বাবার আর তিনি তখন সারনাথ থানার দারোগা…
ডান হাতের আঙুল থেকে ঝর ঝর করে রক্ত পড়তে থাকা লোকটাকে পুলিশ ধরে নিয়ে চলে গেলো আর আমরা ও একটা অটোতে উঠে বসলুম চট করে…
গৌরব বললো-‘আংকেল, কাল বা পরশু মনে হয় আপনি আপনার টাকা সমেত পার্স ফেরৎ পেয়ে যাবেন …. আমি রঞ্জিৎকে বলে দিয়েছি…ওর বাবা হয়তো এক গ্রেড প্রমোশন ও পেয়ে যেতে পারেন আর তা না হয়তো একটা স্পেশাল গ্রেড ইন্রিবেমেন্ট তাঁর আটকায় কে? চোরটা সারা মাস ধরে মেলাতে পুলিশকে বড়ো জ্বালিয়ে মেরেছিলো যে… পেপারে ও খবর বেরিয়েছিলো …’
‘আংকেল আপনি কোন চিন্তা করবেন না…’
রামলাল বললো-‘সে না হয় পাবো… চোর যখন ধরা পড়েছে তখন…. তবে …’
‘তবে কি আংকেল?’
‘আমি ভাবছি যে চোরটা অতো জোরে চেঁচিয়ে উঠে নিজের সর্বনাশ নিজেই করলো কেন?’
‘তা সে আর কি করবে বলুন আংকেল? দেখলেন না যে চোরের আঙুল দিয়ে ঝর ঝর করে কতো রক্ত পড়ছিলো …’
‘হ্যাঁ তা…তা তো দেখলুম কিন্তু কেন?’
‘সে খুব এক্সপার্ট পকেটমার তো তাই…’
‘তাইতে কি হ’লো?’
‘হবে আর কি আংকেল? সে আমার ও পকেট মারতে চেয়েছিলো… ঠিক যেমন করে সে আপনার পকেট মেরেছিলো এবং হয়তো আরো অনেকেরই…’
‘তা সে আজ আর পারলো না কেন?’
‘চিঁ চিঁর জন্যে… আংকেল…’
‘চিঁ চিঁ? কি অদ্ভূত নাম রে বাবা … তা সেটা আবার কে?’
‘কে আবার? আমার বন্ধু পিঁ পিঁর ছোট্ট বাচ্ছা…’
‘এই মরেছে…এর সাথে আবার পিঁ পিঁ ও আছে…তা কোথায় সে?’
‘কেন? আমার পকেটে…’
‘অ্যাঁ?’
‘অ্যাঁ নয় হ্যাঁ… ‘
‘মা…মা…মানে?’
‘মানে আর কি আংকেল? এই নিন আপনার আটশো টাকা ধার শোধ আর এখন একটু বেরিয়ে আয় রে চিঁ চিঁ … বেরিয়ে আয় আর এই নে একটু বিস্কুট খা… অনেকক্ষণ তোকে আজ কষ্ট করতে হয়েছে আমার জন্যে…আয়…’
গৌরব এই কথা বলতেই তার পাঞ্জাবির লম্বা পাশ পকেট থেকে লাফিয়ে বেরিয়ে এলো এক ছোট্ট বেঁজির বাচ্ছা আর সে গৌরবের কাঁধে উঠে বসে তার হাত থেকে বিস্কুট নিয়ে কুট কুট করে দিব্যি খেতে শুরু করে দিলো বাধ্য ছেলের মতন…
রামলাল সেই কান্ড দেখে একদম নির্বাক…মুখটা হাঁ.. আর সেই সাথে আমি ও।
এই তবে গৌরবের বন্ধু…চিঁ চিঁ…
আর এই থাকে বাগানে পিঁ পিঁর সাথে আর গৌরবের সব কথা শোনে আর সব বোঝে ও…
ওরে বাবা……এইসব অসম্ভব কান্ড হয় কি করে?
09452003290
bhattacharyagc@rediffmail.com
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

বন্ধুত্ব বিষয়ের গল্প

১২ ফেব্রুয়ারী - ২০২১ গল্প/কবিতা: ৫ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪