সামিয়া এক স্বাভাবিক, মৃদুভাষী, স্বপ্নবিলাসী মেয়ে। ঢাকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স পড়ে। সাহিত্যের প্রতি তার ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই। সে কবিতা লেখে, ডায়েরি রাখে, আর ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা রঙিন স্বপ্ন আঁকে। তার অন্যতম স্বপ্ন সে একদিন জনপ্রিয় লেখক হবে।
তার জীবনে নানা ঘটনার ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এক সময় হাজির হয় তানভীর। প্রথমে পরিচয়, তারপর বন্ধুত্ব। আর তারপর ধীরে ধীরে প্রেমে রূপ নেয় সে সম্পর্ক।
তানভীর ছিল সাহসী, আত্মবিশ্বাসী, আর মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকা এক তরুণ। সামিয়া তাকে দেখে মনে করেছিল, এই বুঝি সেই মানুষ — যার পাশে থেকে জীবন কাটানো যায়, সব দুঃখ ভুলে থাকা যায়। আর তানভীর সামিয়ার লেখালেখিতে মগ্ধ হয়। ভাবে এমন একজন মেয়েই তার জীবনে প্রয়োজন।
তাদের প্রেমটা শুরু হয়েছিল খুব সাধারণভাবে। ক্লাস শেষে ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে চা খাওয়া, টুকটাক কথা বলা, গল্প করা,একসাথে বই নিয়ে আলোচনা। সামিয়ার গল্প, কবিতা নিয়ে আলোপাত করা। আর সময় সুযোগ পেলেই আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা। সেই স্বপ্ন শেয়ার করা।
তানভীর প্রতিজ্ঞা করেছিল, "তোমাকে কখনো কাঁদতে দেব না, সামিয়া।"
সামিয়া হেসে বলেছিল, এ কথাটা সারা জীবন মনে রাখবেতো ?
তানভীর সামিয়ার হাতে একটি ডায়মন্ডকাট এর নেকলেস দিয়ে বলেছিল, অবশ্যই মনে রাখবো প্রিয়তমা।
কিন্তু সময় যে বড় নিষ্ঠুর। সময় কখনো কখনো প্রিয়তমের প্রতিশ্রিুতির হন্তারক হয়ে উঠে।
দুই বছর পর, তানভীর ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকে। ব্যস্ততা বাড়ে, যোগাযোগ কমে যায়, আগের মতো আর দেখা হয় না। সামিয়ার সব ডায়েরির পাতায় তখন শুধু একটাই প্রশ্ন — “তানভীর কি আমায় আর ভালোবাসে না?”
কিন্ত কেন ? এই কেনর উত্তর আর সামিয়া পায় না। তানভীরের যখন চাকরি হলো, সামিয়া বিয়ের কথা তুল্তেই তানভীর কেমন যেন মলিন হয়ে যেতো। আমতা, আমতা করতো।
একদিন হঠাৎ করে তানভীর জানিয়ে দেয় — তার পরিবার তাকে অন্য জায়গায় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। সে কিছুই করতে পারছে না। সে মামিয়ার কথা পরিবারকে বলেছে কিন্তু তার পরিবার মামিয়াকে মেনে নেবে না।
সামিয়া তখন বোকার মতো প্রশ্ন করে, “আমার কথা একবারও ভাবলে না?” আমি কোন দিক দিয়ে খারাপ, শিক্ষা, যোগ্যতা, সৌন্দর্য, পারিবারিক অবস্থা.............
তানভীর শুধু একটা কথা বলেছিল, “সবকিছু তো আমাদের ইচ্ছেমতো হয় না, সামিয়া।”
সেদিন সামিয়া প্রথমবার বুঝেছিল, ভালোবাসা শুধু অনুভব নয় — এটা দায়িত্বও, সাহসও। যেটা তানভীরের ছিল না।
তানভীরের বিয়ের পর সামিয়া নিজেকে গুটিয়ে নেয়। বন্ধুরা ডাকে সে যায় না, ডায়েরির পাতাগুলোও শূন্যতায় ভরে উঠে। শুধু মাঝে মাঝে মাঝরাতে হঠাৎ হঠাৎ কান্না এসে যায়। নিজের লেখাগুলোতে ভালোবাসার বদলে আসে শূন্যতা, অভিমান, আর তীব্র যন্ত্রণা।
তবুও সময় থেমে থাকে না। সময় গড়িয়ে চায় নিজস্ব নিয়মে।
একদিন সে ডায়েরির একটা পাতায় লিখে —
"তানভীর ছিল আমার জীবনের একটা অধ্যায়, পুরো বই না। আমি এখন নিজের জন্য বাঁচতে চাই।"
তারপর সামিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পায়। লেখালেখিতে মন দেয়, একটা পত্রিকায় কাজ শুরু করে, পরে একটি সাহিত্য প্রতিযোগিতায় পুরস্কারও পায়। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম ছিল, “অপূরণীয়”।
প্রেমে সে ব্যর্থ হয়েছিল, কিন্তু জীবনে নয়। কারণ সে উপলব্দি করেছিল, যে প্রেমিক তাকে ছেড়ে গিয়েছে, সেতো নিজের মত করে ভালো আছে, তাহলে আমি কেন তার জন্য কষ্ট পাব।
ভালোবাসা যদি না-ই টিকে, তবে সেটা জীবন শেষ করার কারণ হতে পারে না ।
জীবন এত তুচ্ছ নয়, যে একটি আঘাতেই শেষ হয়ে যাবে। হতাশা সাময়কি। কিন্তু জীবনকে নিজের মত করে সাজিয়ে নিতে হয়, মেনে নিতে হয়, মানিয়ে নিতে হয়।
শুন্যতার কোন রং হয় না। তাই সামিয়া নিজেকে আবার রাঙাতে চায়।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
হতাশা কখনো জীবন শেষের কারণ হতে পারে না, গল্পে তাই তুলে ধরা হয়েছে।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
১১৬ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫