রুবিনা বেগম আর রোহান সাহেবের সংসারে দুই ছেলে এক মেয়ে তারা উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরে বসবাস করেন। রোহানের চাকরি সূত্রে তাদের দিনাজপুরে থাকতে হচ্ছে। তাদের দুজনের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। কবির ও খবির দুই ভাই। কবির চঞ্চল ও দুষ্ট , অপরদিকে খবির শান্ত ও গম্ভীর। তাদের বোন জোবাইদা সে তুলনায় মধ্যমপন্থী না গম্ভীর না শান্ত না চঞ্চল না দুষ্টু।
যমজ ছেলে ও একমাত্র মেয়েকে জোবাইদা বেগম নিজেই বাসায় পড়ান। মেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিবে আগামী বছর। জোবাইদা জন্য অংক ও ইংরেজীর শিক্ষক আছে। একজন সাকলে ও আরেকজন বিকালে পড়াতে আসেন। জোবাইদা মাধ্যমিক পরীক্ষায় ফাস্ট ক্লাশ পাবে বাবা-মা এই আশা করে আছেন। জোবাইদা মেধাবী ছাত্রী। প্রতি ক্লাশে তার রুল নং এক থেকে তিনের মধ্যে থাকে। তো এমন মেয়ের কাছে বাপ-মা এই আশাটুকু করতেই পারেন।
কবির আর খবির পরে পঞ্চম শ্রেণীতে। ছাত্র হিসেবে তারা মাঝারী মানের। দুজনেরই অংক ভীতি প্রচুর। সাধারণ যোগ বিয়োগেই ভুল করে বসে। সে তুলনায় ইংরেজীতে তারা ভালই মার্ক পায়।
একদিন বিয়ে বাড়িতে দাওয়াত খেতে যাওয়ার সময় রুবিনা বেগম বেশ সাজসজ্জা করেন। গলার হার, কানে দুল আর হাতে আংটি পরেন। সবই সোনার গহনা।
কবির মায়ের হাতে সোনার আংটি দেখে বেশ অবাক হয় কারণ এর আগে সে এই আংটি দেখেনি। সে মাকে বলে, মা এই আংটি তুমি কোথায় পেলে ? রুবিনা বেগম ছেলের কথা শুনে বলে, কেন ?
-না মানে আংটিটা খুব সুন্দরতো তাই বললাম।
-কোথায় আর পাব। আমার বাবা আমাকে বিয়েতে উপহার দিয়েছিলেন।
-নানাজানের পছন্দ আছে বলতে হয়।
-বাবা আমার বেশ শৌখিন মানুষ ছিলেন। আহারে! ঈদের বাজার করতে গিয়ে লঞ্চ ডুবীতে মারা গেল।
বাবার কথা মনে হতেই কান্নায় চোখের জল গড়িয়ে পড়ল রুবিনা বেগমের। সে বার বার আংটিটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বাবার দেওয়া অনেকগুলো স্মৃতি চিহ্নের মধ্যে এটা অন্যতম। মনে হচ্ছে সে বাবাকেই ছুঁয়ে দেখছে। হঠাৎ করেই সে যেন ফিরে গেছে তার মেয়ে বেলায়।
বাবা তাকে মেলা থেকে আংটি, দুল, নুপুর, চেইনসহ আরও হরেক রকম জিনিস কিনে দিতেন। স্মৃতির পর্দা থেকে কুয়াশা সরে যেতেই তিনি ফিরলেন বর্তমানে।
-বাবা মরে গেছে কিন্তু তার স্মৃতি রয়ে গেছে । যতদিন এটা থাকবে ততদিন বাবার কথা আমার মনে পড়বে। তাই আংটিটি আমি খুব যত্ম করে রাখি।
-মা, আংটিটি খুব সুন্দর । তুমি আমাকে আংটিটি গিফট করবে।
রুবিনা বেগম ছেলের কথা শুনে বলল, কেন ? তোকে এই আংটি গিফট করব কেন ?
-এমনি। আমিও আমার মায়ের স্মৃতি রাখতে চাই।
-আমি মরে যাচ্ছি নাকি ? যে তোকে এখনই কিছু দিয়ে যেতে হবে। যা দেখে তুই আমাকে স্মরণ করবি।
তারপরেও ছেলের আবদার শুনে রুবিনা বেগম বলল-
-হুম ।দিতে পারি যদি তুমি ষষ্ঠ শ্রেণীতে প্রথম হও।
-ঠিক আছে মা । এই কথা রইল। দেখা যাক কপালে কি আছে।
বছর ঘুরে কবির ও খবির শ্রেষ্ঠ শ্রেণীতে উঠে গেল। খবির এর রোল নম্বর দুই আর কবির নয় নম্বর। কবির তার মাকে বলে মা, তুমি বলেছিলে আমি ভালো রেজাল্ট করলে তুমি আমাকে আংটি গিফট করবে । আমি দশের মধ্যে আছি তুমি আমাকে আংটি দাও। সোনার আংটি।
কবিরের মা বলল, না কথা ছিল তুমি প্রথম হলে তোমাকে আন্টি দিব যেহেতু তুমি প্রথম হতে পারোনি তাই আংটিটি পাবে না।
কবির এই কথা শুনে খুবই মন খারাপ করে। তার প্রত্যাশা ছিল সে যেহেতু আগের তুলনায় অনেক ভাল রেজাল্ট করেছে তার মা খুশি হয়ে তাকে আংটি দিবে।
ছেলের মনমরা অবস্থা দেখে রুবিনা বেগম বললেন বাবা শোন, ছেলেদের সোনার আংটি ব্যবহার করা ইসলাম ধর্মে নিষেধ রয়েছে। ছেলেদের সোনার অলংকার ব্যবহার করা গুনার কাজ তাই আমি তোমাকে আংটি দেইনি।
মায়ের কথা শুনে কবিরের মন তেমন একটা ভালো হয়নি তবুও সে মনের ভিতর প্রত্যাশার বীজকে কবর দিয়েছে। সে অভিমান করে প্রতিজ্ঞা করল-জীবনে আর মায়ের কাছে কিছু চাইবেনা।
বড় হয়ে যখন কামাই রোজগার করবে তখনই সে সোনার আংটি কিনে ব্যবহার করবে তার আগে নয়।
রুবিনা বেগম শেষ পর্যন্ত বাবার দেওয়া স্মৃতিটি রাখতে পারেননি। বোনের মেয়ের বিয়েতে বোনঝিকে উপহার দিয়েছেন কারণ তখন হাতে টাকা পয়সা ছিলনা। সংসারে চলছিল টানাটানি। কিন্তু খালা হিসেবে তার মান সম্মানতো রক্ষা করতে হবে। তাই তার সাধের আংটিটি হাত ছাড়া করতে হয়েছে।
অনেক অনেক বছর পরের কথা কবির আর খবির বড় হয়েছে। ভালো চাকরি করছে। ততদিনে তাদের বিয়ে-শাদী হয়ে গেছে এবং তারা ছেলে মেয়ের বাবাও হয়েছে।
বহু বছর আগে কবির যে আংটির জন্য মনের ভিতর তার প্রত্যাশার কবর রচিত করেছিল এত বছর পরেও সে সেটা ভুলে যায়নি। তার হাতে এখন প্রচুর টাকা। ইচ্ছে করলেই পাঁচ আঙ্গুলে সে পাঁচটি সোনার আংটি পড়ে থাকতে পারে। কিন্তু কেন জানি দার আর আংটির প্রতি কোন ফিরিংস নেই। তাইতো সে কখনো আঙ্গুলে পড়েনি। আংটি দেখলেই তার সেই পুরোনো দিনের কথা মনে পড়ে যায়।
কবির বিয়েতে তার শশুর এর কাছ থেকে যে সোনার আংটি পেয়েছে সেটি মাঝে মাঝে বের করে দেখে। নাড়াচাড়া করে কিন্তু আঙ্গুলে পড়ে না। তারপর আবার যত্ন করে বাক্স বন্দী করে রেখে দেয়।
শৈশবে একটি সোনার আংটি না পাওয়ার কষ্ট তাকে আর কোনদিন আন্টি পড়তে উৎসাহিত বা অনুপ্রাণিত হতে দেখা যায়নি।
বিয়ের পর পর তার আংটিটি একবার হাত থেকে পড়ে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিল। অনেক খোঁজাখুঁজির পর সে সেই আংটিটি পেয়েছে।
কবির ভাবে যদি মা আজ বেঁচে থাকতো তবে জিজ্ঞেস করত- কেন আমি সোনার আংটি পড়িনা। তাকে তখন বলতাম তুমি সেদিন আংটি দাওনি তাই আর কোন দিন আমার আংটি পড়া হলনা। মা যদি জানতের ভবিষ্যতে এমন ঘটনা ঘটবে তবে তিনি আংটিটি না দিয়ে পারতেননা।
আসলে এ জীবনে অনেকের অনেক প্রত্যাশাই পূরণ হয় আবার কিছু কিছু প্রত্যাশা অধরা থেকে যায়।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
বিষণ্ন সুমন
সব প্রত্যাশা পূরণ হয়না বলেই মানুষ আশা নিয়ে বেঁচে থাকে। সুন্দর গল্প।
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
একজন কিশোরের আংটি না পাওয়া ও পরবর্তী জীবনে আংটি না পড়ার কাহিনী।
২৪ আগষ্ট - ২০২০
গল্প/কবিতা:
৯৮ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৪৭
বিচারক স্কোরঃ ১.৮৭ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৬ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।