সাপে-নেউলে

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

  • ৩১৭
তুই ক্লাসে যা, আমি আসছি,"বলেই হনহন করে হাটা শুরু করলো করলো পল্টু। ওকে ডেকে কোনো লাভ হবে না তা খুব ভালো করেই জানতাম আমি। তাই কিছু না বলে ক্লাসরুমের দিকে এগোতে শুরু করলাম।
"কিরে,পল্টু আসেনি?" একটা চিপস হাতে এগিয়ে আসতে আসতে সাদমান বললো।আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে মোটা হওয়ায় তাকে সবাই পাতলা সাদমান বলে ডাকতো। সবসময় কিছু না কিছু সে খেতেই থাকে।
"জানিনা, আমার সাথে ওর কথা হয় নি" পল্টুর জন্য এরকম মিথ্যা আমার প্রায় বলা লাগে। স্কুল ফাঁকি দিয়ে সিনেমা দেখতে যায় ও আর মিথ্যা বলে হয়রানি হতে হয় আমাকে।ক্লাসরুমে ঢুকেই দেখি প্রকান্ড এক গাইড সামনে নিয়ে অংক করছে মিতু। "কিরে বাড়ির কাজ এখন করছিস"?
"না,বাড়ির কাজ আমি বাড়িতেই করি, বাড়তি কিছু অংক করছি স্যারকে দেখাবো।"
গত দু'বছর ধরে সে ক্লাসে ১ম হয়ে আসছে। তাই তার এই কর্মকান্ডে আমরা কেউ অবাক হলাম না। দিলু স্যার অংক না পারলে খুব মারধোর করে সেই ভয়েই আমি বাড়ির কাজ টা করে আসি।দিলু স্যারের বদলে আজ বাংলা স্যার আসলেন ক্লাস নিতে । তার কাছ থেকে জানতে পারলাম চেয়ারম্যান চাচা এসেছেন, তার সাথেই দিলু স্যার কথা বলছেন। বেশ কিছুক্ষণ পর একরম ছুটে আসলেন দিলু স্যার। উত্তেজিত কন্ঠে বললেন"ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচের তারিখ পড়েছে আগামী পরশু, আমাদের মাঠেই খেলা অনুষ্ঠিত হবে।কাল স্কুল ছুটি দেওয়া হচ্ছে, কিন্তুু তোরা আসবি, মাঠ সাজাতে হবে"।স্যারের কথা শেষ হওয়ার আগেই হইচই শুরু হয়ে গেলো।পরের ক্লাসগুলোতে আর মন বসলো না ঠিকমতো।
",এই অয়ন", ডাক শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।তাকিয়ে দেখি পল্টু একটা ফুটবল হাতে দাড়িয়ে আছে।
"এই দুপুরে বেলা ফুটবল খেলবি ?" ঘুম ঘুম চোখে বললাম।
"আরে ফুটবল কি কেরাম খেলার মতো যে তাড়াতাড়ি শেষ হবে?সময় নিয়ে খেলতে হয় বলেই তো আগে আগে চলে আসলাম,তাছাড়া পরশু ম্যাচ,প্রস্তুতি নিতে হবে না!"
ক্লাস ফাঁকি দিলেও খবর পেয়ে গেছে পল্টু। আমি আর কথা না বাড়িয়ে মা কে বলেই বেরিয়ে পড়লাম।
"কিরে মাঠ তো ঐদিকে। এদিকে কৈ নিয়ে যাচ্ছিস?"
"বেশি কথা না বলে দ্রুত পা চালা তো, হালকা রেগে পল্টু বললো"।
আমিও আর কিছু না বলে ওর পিছু পিছু হাটতে থাকলাম।
"ঐ যে আমগুলো দেখেছিস,পেকে হলুদ হয়ে গিয়েছে একদম" ফিসফিস করে ও বললো।
চোখভরা ভয় নিয়ে বললাম"এটা দিলু স্যারের বাসা না "
"চিন্তা করিস না,খবর আছে স্যার পরিবারসহ বেশ কিছুক্ষন আগে কোথায় যেন বেরিয়েছেন"
"কিন্তুু তার পরও, স্যার জানতে পারলে খবর আছে।এমনিতেই একটা অংক ভুল করায় আজ ধোলাই খেয়েছি।"
আরে ওরকম ধোলাইয়ে কিছু হয় নেকি বলতে বলতেই পল্টু গাছে উঠে পড়ল।
কান ধরে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আমার পাশেই কান ধরে ওঠাবসা করছে পল্টু। আম চুরির অপরাধে প্রাথমিকভাবে দুজনকে একশো বার কান ধরে ওঠাবসা করার নির্দেশ দিয়েছেন দিলু স্যার। তিনি কথা দিয়েছেন, জোড়া বেত দিয়ে পরের দিন স্কুলে উপযুক্ত শাস্তি তিনি আমাদেরকে দিবেন।
"নাহ! রায়হান কিন্তুু কাজ টা ঠিক করে নি!"
বেশ রেগে গিয়েছে পল্টু।
রায়হান আমাদের ক্লাসের অন্যতম অঘা ছাত্র। পল্টুর সাথে ওর সাপে-নেউলে'র সম্পর্ক।
"কেন খবর টা কি ও ই তোকে দিয়েছিলো? "
"আরে ও আমাকে বললে তো আমি বিশ্বাস করতাম না। ঘটনাটি ছিলো এরকম,
তোদের বাসায় আসার সময় রায়হানকে দেখলাম ওর কিছু বন্ধুদের সাথে দিলু স্যার এর বাসায় আম পাড়তে আসার কথা আলোচনা করছে।ওরাই বলাবলি করছিলো যে স্যাররা আজ দুপুরে বের হবে আর বিকালে ওরা গাছ ফাঁকা করে দিবে। ওদের এই কথাগুলো আড়িপেতে শুনে আমি ভাবলাম ওদের আগেই আমি আমগুলো পেড়ে ফেলবো। এখন বেশ বুঝতে পারছি আমাকে আসতে দেখেই ওরা এই নাটকটি সাজিয়েছিল।"
পরের দিন স্কুলে গিয়ে বন্ধুরা মিলে পুরো মাঠ সাজিয়ে ফেললাম। ফাইনাল ম্যাচের প্রস্তুতির জন্য বিকালে নিজেদের মধ্যে একটি ম্যাচ খেলার নির্দেশ দিলেন দিলু স্যার।
বল্টুকেই স্যার বরাবরের মতো অধিনায়ক বানিয়েছেন। গত ম্যাচে সে গোল করতে না পারলেও অসাধারণ নেতৃত্ব দিয়েছে। রায়হান স্যারের কানে এটা ওটা বলেও কোনো কায়দা করতে পারে নি।
"নতুন বলটা আনিস নি ক্যানো?"পল্টুকে রায়হান বললো।
"নতুন বল স্যার নামাতে নিষেধ করেছেন। ওটা দিয়ে কাল খেলতে বলেছেন।"
আগামিকাল ফাইনাল খেলা, সেই উপলক্ষে স্যার নতুন ফুটবল কিনে আজ সকালে পল্টুর হাতে দিয়ে বলেছেন" এটা কালকেই মাঠে নামাবি,চেয়ারম্যান সাহেব এসে উদ্বোধন করে দিবেন এই বল দিয়ে "
"আগের বল দিয়েই বেশ প্রাকটিস হবে", ওদের দুজন কে বলার পর আমি খেলা শুরু করতে বললাম সবাইকে।
বল্টু আর রায়হান দুই দলের অধিনায়ক হয়ে খেলা শুরু করলো।
প্রায় এক ঘন্টা হওয়ার পরও কোনো দল একটাও গোল দিতে পারলো না।
"ওটা ফাউল ছিলো, পেনাল্টি হবে!"চেচিয়ে বললো পল্টু।
"একদমই না,তোর প্লেয়ার ইচ্ছা করে পড়ে গেছে",
রায়হান আর পল্টু ঝগড়া করছে। পল্টু কর্নার কিক করলে সামির হেড দিতে গিয়ে ওদের দলের কার সাথে ধাক্কাধাক্কি হয়।কোনো রেফারি না থাকায় বিষয়টা মিমাংসা করা যাচ্ছে না। আর ওরাও কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছে না।
ঝগড়ার একপর্যায়ে ওরা মারামারি শুরু করে, আমরা অনেক কষ্টে ওদেরকে থামিয়ে নিয়ে আসি।
"না, মারামারি করাটা ঠিক হয় নি তোদের, স্যার জানলে কী হবে বলতো?" বিরক্তি নিয়ে পল্টুকে বললাম।
"আরে ওই তো আগে আমাকে ধাক্কা দিলো "
"আচ্ছা বাদ দে,প্রস্তুতি অনেক হইছে এবার চল বাসার দিকে যাই"
তুই যা, আমি আসছি বলেই নদীর দিকে হাটতে শুরু করলো পল্টু।মন খারাপ হলে ও ঐ জায়গায় গিয়ে বসে থাকে।
তাই ওকে আর না ডেকে বাড়িতে চলে আসলাম আমি। পরের দিন ভোর হতে না হতেই দিলু স্যার আমাদের বাসায় এলেন।
"ঘটনাকি কিছু যানো অয়ন?"
"না তো স্যার",
ভয় ভয় চোখে স্যার বললো,"অয়নকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। কাল নাকি ও আর বাড়িতে যায় নি,"
পরিস্থিতি সামলে নেওয়ার পর শুকনো গলায় বললাম,"স্যার কাল বিকালেও তো ও আমার সাথেই ছিলো, খেলা শেষে চলে আসার সময় ও নদীর দিকে যায়। আমি তখন চলে আসি।"
স্যার কিছুই বললেন না।হতাশ হয়ে বসে থাকলেন।
কিছুক্ষণ পর বললেন, "শোনো অয়ন, তুমি চিন্তা করো না আমি পুলিশকে খবর দিয়েছি তারা খোঁজার কাজ শুরু করে দিয়েছেন।আর ফায়নাল ম্যাচটায় আমাদের জেতার সম্ভবনা দেখছিনা। ওকে খোঁজার কার্যক্রম চলুক,
ঠিক সময়ে তোমরা মাঠে নেমো।
কিন্তুু স্যার, ওকে ছাড়া কীভাবে কী করবো কিছুই বুঝছি না। "
"চিন্তা করো না,একটা উপায় বের করা যাবে"।
সকাল নয়টা বাজে, প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা সবাই চলে এসেছে। ওদের অধিনায়ককে বেশ লাফালাফি করতে দেখা যাচ্ছে। একটুপর চেয়ারম্যান চাচা আসবেন।এদিকে আমাদের চিন্তা বাড়ছে, পল্টু মতো ভালো স্ট্রাইকার খেলছে না, ওইদিকে রায়হানও এখনো মাঠে আসে নি। দিলু স্যার মুখে হাত দিয়ে বসে আছেন। একটু পর চেয়ারম্যান চাচাও চলে আসলেন। রেফারি বাঁশি দিয়ে সব খেলোয়াড়দের মাঠে নামতে বলছেন।আমরা জেতার আশা ছেড়ে দিয়ে সৌজন্য খেলা খেলবো বলে মাঠের দিকে যাওয়া শুরু করবো ঠিক এমন সময় দেখি পল্টু আর রায়হান হাত ধরে মাঠের দিকে আসছে।
"কিরে চল নামবি না",পল্টু আমাদের সবাইকে বললো।
আমরা সবাই হতভম্ব, দিলু স্যার খুশুিতে কি করবেন বুঝতে পারছেন না।
আরো যেই বিষয়টায় সবাই অবাক হয়ে গেলাম সেটা হলো ওরা এখন বন্ধু হয়ে গিয়েছে, যাদের সবসময় ঝগড়া লেগেই থাকতো।
"কোথায় ছিলি তোরা,আর পল্টু তুই কাল থেকে কোথায় ছিলি?"দিলু স্যার বললো।
স্যারের কথার উত্তর দেওয়ার আগেই রেফারি ডেকে সবাইকে মাঠে নিয়ে যায়।
খেলার মাঝের বিরতিতে রায়হান আমাদেরকে ঘটনাটি বলা শুরু করে,"গতকাল পল্টুর সাথে মারামারি হওয়ার পর সন্ধার দিকে আমি চা খেতে যাই। ওখানে ঢুকতেই দেখি পল্টু বিরোধী দলের অধিনায়ক মোরশেদ এর সাথে কথা বলছে।কৌতুহল বসতই আমি আড়াল থেকে ওদের কথা শুনতে থাকি।ও পল্টুকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যেতে চায় আর পল্টুও রাজি হয়ে যায়।আমি কী ভেবে ওদের অনুসরণ করতে থাকি। সিনেমাহলে যাওয়ার পথে যে গলি টা পার করতে হয় ঐ খানে যেতেই বেশ কয়েকটা ছেলে এসে পল্টুকে জোর করে ধরে গলির শেষের বাড়িটায় নিয়ে যায়। আমিও ওদের পিছুপিছু বাড়িটায় ঢুকি।আড়াল থেকে দেখি পল্টুকে ছোট্ট একটা রুমের মধ্যে নিয়ে গিয়ে চেয়ারের সাথে বেধে রাখে। আমার হাতের ধাক্কা লেগে একটা ফুলের টব নিচে পড়ে যেতেই টের পেয়ে যায় ওরা, পল্টুর সাথে ওরা আমাকেও বেধে রেখে চলে যায়। সকালের দিকে দুইজন আমাদের খাবার দিতে আসে আর বাধন খুলে দেয় ধারালে অস্ত্র হাতে নিয়ে।কিন্তুু ওরা জানতো না মারপিটে আমরা বেশ পারদর্শী ছিলাম, তখন অনেক জনের সাথে পেরে উঠেছিলাম না। কিন্তুু এখন ওরা মাত্র দু'জন।ওদের দুজনকে ভালোমতো ধোলাই দিয়ে আমারা সোজা এখানে চলে আসলাম।"ঘটনাটি রায়হানের বলা শেষ হতে না হতেই রেফারি বাশি দিলো।বিরতি শেষ,সবাই মাঠে নামতে শুরু করলাম।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
রুহুল আমীন রাজু বেস লাগল, শুভকামনা
ফয়জুল মহী নিপুণ  রচনাশৈলী ভীষণ ভালো লাগলো।

০৫ জুলাই - ২০২০ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী