মাধবীলতা

প্রত্যাশা (আগষ্ট ২০২০)

modina
  • ৩৭৫
মাধবী যেন আজকাল কেমন হইয়া গিয়াছে! এক দন্ড ঘরে থাকিতে চাহে না, সারাক্ষন পুষ্করিণীর পাড়ে বসিয়া থাকে। এ গাছের ডালে চড়িয়া, ওই গছের পাতা ছিড়িয়া, কখনো বা ঘাটের পাড়ে বসিয়া পনিতে অর্ধেক পা ডুবাইয়া নাড়াচাড়া করিতে থাকে। আবার কখনো বা একা একা কথা কয়, হাসে, কখনো বা গুরুগম্ভীর বদনে নির্বাক বসিয়া থাকে, যেন গভীর ভাবনায় মগ্ন হইয়া তপস্যা করিতেছে মনোস্কামনা পূর্ণ করিবার হেতু এক তপস্বী রাণী, যদিওবা বয়স এখনো পনের পেরোয়নি।

এ কালটা এমনই, চঞ্চল আর বিপজ্জনকও বটে! এ কালেই ভুল হইবার সম্ভাবনা অন্য কালের চাইতে অধিক হইয়া থাকে। এ কালে আবেগ হইয়া পড়ে নিয়ন্ত্রনহীন, যাহা সামলাইবার বল থাকেনা অধিকেরই। ইহারা ভাবে, যাহা করিতেছে তাহাই ঠিক, যাহা ভাবিতেছে, তাহাই সঠিক, মতের বিপরীতে কিছুই ইহারা মানিয়া লয়না। পুত্র কন্যাদের লইয়া এই কালটাতেই মাতা-পিতা অধিক চিন্তায় প্রতিটা প্রহর অতিবাহিত করিয়া থাকেন। পথ চলিতে চলিতে জীবনের এ কালটায় এমন স্থানে আসিয়া উপনীত হয়, যেখানে এতদিনকার চলার একমাত্র পথটি সমাপ্ত হইয়া, দু মাথা বিন্যস্ত করিয়া দু’দিকে বাঁকিয়া গিয়াছে; ইহার একটি ভাল আর অন্যটি মন্দের পথ। সকলের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটিয়া থাকে, অথচ ইহাদের বিবেক তখনো অতটা পোক্ত হইয়া গড়িয়া ওঠেনা যে, ভাল মন্দের উপযুক্ত বিশ্লেষণ করিতে পারে। ইহাদের অপূর্ণ বিবেক যা’কে উপযুক্ত বলিয়া মানে, সেই পথকেই মনে প্রানে ধারণ করিয়া লয়। আর এ হেতুই সকল মাতা-পিতার অন্তহীন চিন্তার কারণ হইয়া পড়ে।

অন্যদের ক্ষেত্রে সচরাচর যেমনটি ঘটিয়া থাকে, মাধবীর বেলায়ও তেমনই ঘটিয়াছে। বিচার বুদ্ধি যতটা পাকিয়াছে, পাকামো হইতেছে তাহার অধিক। নির্জনে ভাবে, যথেষ্ঠ জ্ঞান লাভ হইয়াছে, বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতাও অধিক, জগতের যাবতীয় সমস্যার সমাধান আজিকার দিনে নিজেই করিতে সক্ষম; ইহার জন্য কাহারও সহায়তার প্রয়োজন নাই। নিজের কল্যাণ বুঝিয়া চলিবার মত যথেষ্ট জ্ঞান বুদ্ধি তাহার মস্তিষ্ক বহন করিতেছে! জগতে আর কাহারও দ্বারস্থ হইবার আবশ্যকতা নাই।

পড়শীরা মাধবী’র সঙ্গে লতা’কে যোগ করিয়া মাধবীলতা বনাইয়াছে। এখন সে আর কেবল মাধবী নয়, মাধবীলতা। অবশ্য, মাধবীর সঙ্গে লতাকে সংযোগ করিলে অর্থটা কি দাড়ায় তাহা সে ভাবিয়া পায়না। এমনকি, যাহারা এ নাম দিয়াছে, তাহারাও এর কোন অর্থ খুঁজিয়া পায়না, কেবলই খেয়ালের বসে এমন নামকরণ! মাধবী নিজেও অনেক ভাবিয়াছে, ভাবিয়া ভাবিয়া বহু সময় পন্ড করিয়াছে, কিন্তু কোনই অর্থ খুঁজিয়া পাইল না। তাহাতে কি! কালটা যে না হারিবার! জগতের বহু জটিল সমস্যার সমাধান সে ইতোমধ্যে করিয়া ফেলিয়াছে! আর কিনা; নেহাতই একটা নামের কাছে হারিয়া যাইবে! তাহা হইতে পারেনা, জগতে অজানা তাহার আর কিছুই নাই। পছন্দসই একখানা অর্থ নিজেই উদ্ভাবন করিয়া তাহাই বলিয়া বেড়াইতে লাগিল। ভাবখানা এমন, যেন জ্ঞান ভান্ডার তাহার পরিপূর্ণ।

নিত্যদিন বৈকেলে পাড়ার কিশোরী-যুবতীরা আসিয়া পুষ্করিণীর পাড়ে জড়ো হয়। সময় গড়াইবার সঙ্গে সঙ্গে আসর জমিয়া ওঠে, বিকেল গড়াইয়া সন্ধ্যা যায় যায়, তথাপি বিরাম নাই, ক্লান্তি নাই। বাদ যায়না কিছুই; খেলাধুলা, খুনসুটি, ঝগড়া, হাসি, ঠাট্টা আরও কত কি! কত যে স্বপ্ন তাহাদের মানের গহীনে উঁকিঝুঁকি মারে তাহার ইয়ত্যা নাই! কোন কোনটা আবার বর্ণনার অযোগ্য! যাহা বুঝাইয়া বলা যায়না, বুঝিয়া নিতে হয়; সভ্য লোকের নিকট তাহা হয়তো অশ্লীল শুনাইবে! কাহারও ভাবনা স্বামী সংসার নিয়া, কাহারও ভাবনা কেবলই নিজেকে নিয়া, কাহারও বা দেশ নিয়া আবার কাহারও সম্মিলিত। কেহ পাইতে চায়, কেহ দিতে চায় নিজেকে উজাড় করিয়া, কেহবা উভয়ই! এক এক দিন এক একটা টপিক হইয়া ওঠে উহাদের আলোচনার বিষয়বস্তু। আজকের টপিক বিবাহ নিয়া।
মোহিনী বলে ‘আমার পছন্দ ব্যতিরেকে কিছুতেই বিবাহ করিব না, প্রয়োজন হইলে কুমারী হইয়া থাকিব’।
‘আমিও’ মোহিনী’র সঙ্গে লাবনী’র সখ্যতা বেশি, ওর সঙ্গে কোন বিষয়ে দ্বিমত নাই।
‘মা যাহার হাতে তুলিয়া দিবে তাহার নিকটেই নিজেকে সপিয়া দিব’ মা ভক্ত খেয়ালী আঁখি’র ভাবনা অন্যদের হইতে আলাদা।
‘আমার সকল সাধ পূর্ণ করিলে তবেই ভালবাসা মিলিবে’ নিজের রুপ নিয়া কাজলের বড়ই অহংকার। পাড়ার উঠতি যুবকেরা তাহার বাড়ির আশপাশ দিয়া ঘুরঘুর করিয়া বেড়ায় এক পলক দেখিবার প্রয়াসে। ওদের প্রতি টান অনুভুত না হইলেও একপ্রকার আমোদে মজিয়া থাকে সারাক্ষণ। ‘অনেকের নিকটই সে আকাঙ্খিত’ এ ভাবনাতেই নিজেকে পুলকিত করিয়া রাখে রাত দিন। সে আবার সিনেমার পোকা। আহার, নিদ্রা আর আড্ডা ব্যতিরেকে, সিনেমাতে মজিয়া থাকাটাই তাহার একমাত্র কাজ; সিনেমায় গানের দৃশ্যে নায়িকার স্থলে নিজেকে সাজাইয়া কল্পনার রঙ্গিণ জগতে হারাইয়া যাওয়াটা তাহার নিত্যদিনকার কর্মে পরিণত হইয়াছে।
‘অন্তরের সমস্ত সাধ পুরণ করিবার মানুষটি যাদি বর না হইয়া অন্য কেহ হয়?’ জুলেখা আবার বইয়ের পোকা। জুলেখার এমন প্রশ্নের একাধিক জবাব ঝড়ের বাতাসে পাকা আমের ন্যায় যেন ঝড়িয়া পড়ে একত্রে।
‘মনের মিল না হইলে মিলনে সুখ নেই! আমি তাহাকেই দেহ মন সপিয়া দিব, যে আমার সমস্ত সাধ পুরণ করিবে’ আত্মকেন্দ্রিক কাজলের মনের ছোট্ট জগতে নিজ ব্যতীত অন্য কাহারও জন্য ভাবনার পরিসর নাই।
‘মানিয়া লইব! মনের সকল ভালবাসা তাহাকে উজাড় করিয়া দিয়া যদি তাহার সাধ পূরণ করিতে পারি, তবে সে আমাকে নিরাশ করিবে না’ ইহা মা ভক্ত আখিঁ’র ভাবনা।
‘ভালবাসা পাইতে হইলে আগে মূল্য পরিশোধ করিতে হইবে, ইহার পর আমারটা মিলিবে’ সুন্দরী কাজলের ভাবনা। রুপ ব্যাতীত গর্ব করিবার মতন আর কি কি গুন আছে নিজের মধ্যে, ইহা সে নিজেও ভাবিয়া পায়না।

মাধবী পুস্করিণীর সান বাঁধানো ঘাটের চাতালে চুপচাপ বসিয়া পা দোলাইতেছে। হাতে কয়েকটি মাটির টুকরো লইয়া, একটি একটি করিয়া পুকুরে ছুড়িয়া মারিলে, তাহা হইতে সৃষ্ট ঢেউয়ের মৃদু আন্দোলন ধীরে ধীরে প্রসারিত হইয়া কিভাবে সারা পুকুরময় ছড়াইয়া পানিকে আন্দোলিত করিতেছে; তাহা দেখিয়া সে খুবই পুলক অনুভব করিতে লাগিল! পুকুর পাড়ে কয়েকটি শাপলা লাল পেখম মেলিয়া ধরিয়াছে, যাহার চারিপাশে কিছু জলজ প্রাণি ঘুরিয়া বেড়াইতেছে মানের আনন্দে, সেই জলজ প্রাণির লোভে কিছু মাছ জড়ো হইয়াছে সেখানে; অনেক চেষ্টার পর মাঝে মধ্যে দু-একটি ধরিতে পারে বটে। এদিকে অদুরে একটি ক্ষুধার্থ মাছরাঙ্গা ভেঙ্গে পড়া আম গাছের ডালের উপরে শিকারি দৃষ্টি ফেলিয়া অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনিতেছে, মোক্ষম সময় উপস্থিত হইলে অমনি ছো মারিয়া ধরিয়া নিজের উদর পূর্তি করিবে এই আশায়।
রানী চাপিয়া ধরে তাহাকে, ‘তোর কি ভাবনা?’। সহসা এ প্রশ্নের জবাব মেলেনা; জবরদস্তি করিয়া জবাবটা বাহির করিতে হইল, ‘সুন্দর মন চাই’ দৃষ্টি আকাশের পানে, যেখানে দিগন্তে অবনত হইয়া রহিয়াছে। বক উড়িয়া যায় কয়েকটা, হয়ত ঝড় হইবে, প্রচন্ড!

ওই প্রান্তে কাহারও চোখে তখন জল, ‘হলো কি?’
‘মালতীর চোখে ধুলো গিয়াছে’। অমনি একপ্রকার লাফাইয়া ঝাপাইয়া পড়ে সকলে মালতীর উপর। অবশেষে আবিষ্কার হইলো ওটা ধুলো না, ছিল মাজরা পোকা। যতক্ষণ উদ্ধার হইল, ততক্ষণে মালতীর অবস্থা প্রচন্ড যুদ্ধ শেষে আহত ক্লান্ত বিদ্ধস্ত সৈনিকের ন্যায়, মনে হইল ‘পোকাই ভাল ছিল’।
এইবারে কবে, কাহার চোখে পোকা পড়িয়াছিল? কি রুপে নিস্কৃতি মিলিয়াছে? ওইভাবে না হইয়া এইভাবে হইলে আরও ভাল হইত, এইরুপে চলিতে চলিতে এক সময় সন্ধ্যায় আসিয়া উপনীত হয়, তবুও তাহাদের হযবরল আলাপন বিরামহীন চলিতেই থাকে। পূর্ব আকাশের ঘন কালো মেঘ তখন ভারী হইয়া ঝড়িয়া পরিবার অপেক্ষায়, পাখিকুল ছুটিতেছে, দিগন্তে কালো মেঘের কোল ঘেষিয়া আবারো কয়েকটা সাদা বক উড়িয়া যাইতেছে যেন শিল্পীর ক্যানভাসের কালো দেয়ালে অসাবধানতাবশত ছিটকে পড়া কয়েক বিন্দু সাদা রং।
এইবারে সাক্ষাৎ যম হইয়া আসিলেন মায়েরা, ‘ঘরে কাম কাজ কি কিছু নাই? সারাদিন এইহানে পইরা থাকলে কেমনে চলে?’
এক মায়ের পালা শেষ হইতে না হইতেই আরেকজন, ‘আক্কেল কবে হইব পোড়ামুখী! বাড়ি চল, আইজকা আহুক তোর বাপ, সব কমু!’
‘আর পারিনা বাপু’
‘গিলনের সময় এক হাড়ি গিলস, বুড়া মায়ের লগে ঘরের কামে হাত লাগাইবার কালে হাতে ঠাডা পরে!’
মোহিনীকে কানে ধরিয়া, লাবনীর চুলের মুঠি পাকড়াইয়া, মালতীকে ঘাড় ধরিয়া চড়াইতে চড়াইতে লইয়া গেলেন। সাক্ষাৎ যুদ্ধাংদেহী দেবী মূর্তীর সামনে এখনে আর পড়িয়া থাকা চলেনা। সেদিনের মত আসরের ইতি ঘটে, পরদিন যথারীতি আবার একইভাবে; এইভাবেই চলিতে থাকে দিনের পর দিন।

পাড়ার উঠতি ছেলেপুলেদের পদচারনা বাড়িতে থাকে। প্রথমে একজন, পরে দুইজন, তাহার পরে তিন, এইভাবে দিনে দিনে বাড়িতে থাকে ইহাদের সংখ্যা। প্রথম দিকে সাদামাটা ভাবে আসিলেও, দিন যতই গড়াইতে থাকে ততই তাহাদের সাজ সজ্জা বাড়িতে থাকে। নিত্যনতুন পোষাক, নিজের নেই তো কি হইয়াছে? বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করিয়া হইলেও নিত্য নতুন পোষাক চাই! প্রথম কিছুদিন কেবলই পুষ্করিণীর আশেপাশে ঘোরাফেরা, কখনো সুযোগ আসিলে একটু চোখাচুখি, কিছুদিন পরে এক আধ খানা অসমাপ্ত বাক্য বিনিময়, ক্রমে পাশে বসা, হাতে হাত, চোখে চোখ রাখিয়া নিষ্পলক চাহিয়া থাকা; এইভাবে অজানা অচেনা ধুলায় পরিপূর্ণ প্রায় অদৃশ্য এক ঝাপসা পথ ধরিয়া ওরা সমুখের পানে চালিত লাগিল। কিছুদিনের মধ্যে প্রত্যেকেরই একজন করিয়া মনের মানুষ জুটিয়া গেল।

কিছুদিন পর
মনের মানুষের একান্ত সঙ্গাভাব দু পক্ষই প্রচন্ড ভাবে অনুভব করিতে লাগিল, ক’দিনের মধ্যেই প্রত্যেকে নিজেদের মত করিয়া নিরাপদ আশ্রয় খুঁজিয়া লইল, যেথায় কোন বাঁধা বিঘœ নাই, অবলীলায় বিচরণ করিয়া বেড়াইতে পারিবে সর্বত্র, করিতে পারিবে যাহা খুশি তাহাই।
অবশিষ্ট রহিল কেবল মাধবীলতা, এখনো সে একাকী পুকুর ঘাটে বসিয়া থাকে। সখিরা নাই তো কি হইয়াছে! সখাদের কমতি রহিল না, তাহাদের সংখ্যা উত্তরোত্তর বাড়িতেই লাগিল। তবে ইহাদের মধ্য হইতে কাউকেই মনে ধরেনা মাধবীলতার। পছন্দের গুনগুলো আলাদা আলাদা করিয়া প্রত্যেকের মাঝে বিরাজমান থাকিলেও এককভাবে সবগুলো গুনের সমন্বয় নাই। এইভাবে পুকুরঘাটে বসিয়া, পা দোলাইয়া, দিগন্তের পানে চাহিয়া থাকিয়া দিন পার করিতে লাগিল।
একদিন হঠাৎ করিয়া খবর আসিল, কাজলকে কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না! দিনভর অনুসন্ধান চলিল সর্বত্র, কিন্তু কোথাও পাওয়া গেলনা। দু দিন পর লোকমুখে কানাঘুষা চলিতে লাগিল, পাশের গ্রামের একটি ছেলের সঙ্গে পালাইয়া গিয়াছে সে। এরপর হইতে পুষ্করিনীর পাড়ে ওদের মিলন মেলার হাট বন্ধ। তা আগেই হইয়া ছিল, তথাপি যা একটু ছিল তাতেও মায়েদের কড়া হুকুম জারি হইল, নজরদারি বাড়িল প্রত্যেকের উপর। নিয়মমত খাওয়া, পড়া, গোসল, ঘুম যেন সর্বত্র এক কঠিন শৃঙ্খলিত অনুশাসন চলিতে থাকে মায়েদের।

নিয়মের বেড়া জাল দিনে দিনে বড়ই অসহ্য হইয়া উঠিল, সময় যেন থমকে আছে। কদিন টিভি দেখিয়া সময় পার করা গেলেও এখন তাহার উপরও নিষেধ আরোপিত হইয়াছে।
‘এই যন্ত্রটিই যত নষ্টের গোড়া’ মাধবী তখন টিভির সম্মুখে বসিয়া আছে। জননী টিভিটা বন্ধ করিয়া দিলেন, ‘এসব ছাইপাস দেখে দেখে আজকালকার মেয়ে ছেলেরা সকলে অধঃপাতে গেল’ জননী এই যন্ত্রটার উপর বিশেষ বিরক্ত, তিনি চান সংসারের কাজে কন্যা তাহাকে টুকটাক সহযোহিতা করুক। কিন্তু মায়ের এমন আচরনে মাধবী লতার তেমন ভাবান্তর হইল না দেখিয়া জননী আরও বিরক্ত হইয়া বলিলেন ‘আসছে মাসেই লাইন কাটিয়া দিতে বলিব’। সময় কাটাইবার এ পথ বন্ধ হইলে আবার সেই পুষ্করিনীর পাড়ে আসা যাওয়া চলিতে থাকে, তবে একা একা, সখিরা কেউ এদিকটায় আসেনা, হয়ত আসিতে দেয়না।

পুষ্করিণীর সম্মুখ দিয়া গঞ্জের দিকে যে পথটি গিয়াছে, সেই পথে এক কিশোর প্রায়ই চলাচল করিত। প্রথমদিকে দিনে দু এক বার দেখা গেলেও সময়ের সাথে সাথে তার চলাচল বাড়িতে লাগিল। মাঝেমধ্যে দু এক বার চোখাচুখিও হয়, মাধবী যেন দেখিয়াও দেখেনা। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ একদিন মাধবীর নাম জানিতে চায়! উৎপাত ভাবিয়া সেদিন বিনা বাক্যে হন্ হন্ করিয়া চলিয়া আসে ঘরে। এরপর সাত দিন গত হইল; এই সাত দিনেও ছেলেটাকে সে বেশ ক’বার দেখিয়াছে, যে পথ দিয়া সে স্কুলে যাতায়াত করিত, সেই পথের ধারে তাহাকে দাড়াইয়া থাকিতে দেখিয়াছে। ক’বার কথাও বলিতে চাহিয়াছে মাধবীর সঙ্গে, কিন্তু মাধবীর নিকট সে এখনো কেবলই উৎপাত বটে। সময় গড়াইতে থাকে, ছেলেটাও নিয়ম করিয়া পথের ধারে দাড়াইয়া থাকে। রাগ করিয়া ক’দিন মাধবী স্কুলে যায় নাই, সে ক’দিন ছেলেটা পুস্করিনীর পাড়ে দাড়াইয়া ছিল, আড়াল হইতে মাধবী তাহা লক্ষ্য করিয়াছে। ধীরে ধীরে মাধবী আবিষ্কার করিল যে, ছেলেটাকে এখন আর আগের মত উৎপাত বলিয়া মনে হইতেছে না! তাহার জন্য একপ্রকার মায়া অনুভব করিতে লাগিল, চৌদ্দ বসন্ত পার হইয়াছে, এই প্রথম কেউ তাহার জন্য এমনি করিয়া দিনের পর দিন পথের ধারে দাড়াইয়া, এক পলক দেখিবার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনিয়াছে, এ কথা ভাবিয়াই পুলকিত হয়! প্রথমদিকে তাহা কেবল ক্ষনিকের জন্য হইলেও সময় যতই গড়াইতে থাকে ততই তাহা বাড়িতে থাকে, ভাল লাগার এ অনুভুতি সর্বাঙ্গে ছড়াইয়া পড়ে ধীরে ধীরে। এক অদৃশ্য শক্তি পা দুটোকে শক্ত করিয়া ধরিয়া টানিয়া নিয়া যায় পুষ্করিণীর পাড়ে! সে শক্তিকে উপেক্ষা করিবার ক্ষমতা নাই, সে শক্তির এ বাড়াবাড়িকে উৎপাত বলিয়া মনে হয়না মাধবীর!
‘কেন হয়?’ নিজেকে প্রশ্ন করে মাধবী, কোন জবাব আসেনা। দিন যতই গড়ায় ততই ব্যকুলতা বাড়িতে থাকে, তাহার সঙ্গে কথা বলিতে, শ্রবন করিতে, চোখে চোখ রাখিয়া তাকাইয়া থাকিতে ইচ্ছে হয়।
আজও মাধবী আসিল, দুটি নিষ্পলক আঁখি মিলিত হইল একবার, দৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থির রাখিতে পারিল না, লজ্জায় অবনত হইয়া পায়ের বুড়ো আঙ্গুল দিয়া মাটি আচড়াইতে আচড়াইতে বলিল, ‘সবাই মাধবীলতা বলিয়া ডাকে’। অপর পক্ষের কথা শ্রবন করিবার ব্যাকুলতা থাকিলেও জোরে পা চালাইয়া চলিয়া আসিল সেদিন।

আজ সে মনের মানুষের দেখা পাইয়াছে। কল্পনার রংয়ে সাজানো স্বপ্নের মানুষটির সঙ্গে বাস্তবের মিল খুঁজিয়া পাইয়াছে। যেইটুকু মেলেনা, সেইটুকু মিলাইয়া লয়! পাখায় ভর করিয়া স্বপ্নের রঙ্গীন আকাশে উড়িয়া বেড়ায়, চারিদিকে কেবল তারার ঝলকানি; সুখ স্বপ্নের অনুভুতিতে পুলকিত হয়, ঘটিতে থাকে সবক্ষেত্রে অনিয়ম; নাওয়া, খাওয়া, ঘুম, পড়াশোনা সব ক্ষেত্রেই। কেবল একটা কাজেই কোন অনিয়ম হয়না! স্কুলে যাওয়া আর স্কুল থেকে ফিরে পুষ্করিণীর পাড়ে গিয়া বসিয়া থাকা। ক’দিনেই দেহ মন বাড়তি চাপে নিষ্পেষিত হয়। মেয়ের আকষ্মাৎ এ পরিবর্তন জননী আঁচ করিতে পারিয়া ক’দিন থেকেই মেয়েকে চোখে চোখে রাখছেন।
‘কি হইল তোর?’ একরাতে মেয়েকে কাছে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন। মাধবী নিরব বসিয়া থাকে, কিন্তু জননী বসিয়া নাই, ডাক্তার ডাকা হইল, তিনি দেখিয়া শুনিয়া কিছু ঘুমের বড়ি আর ভিটামিন সেবন করিতে দিলেন। কিন্তু মেয়ের কোন পরিবর্তন হয়না; জননী চিন্তিত হইয়া পড়েন, ‘মেয়ের এ কি হল?’
‘সুবিধের মনে হচ্ছেনা গো, জলদি বিদেয় কর’ জননীর সঙ্গে সদ্ভাব থাকিলেও ‘বিদেয় কর’ শব্দটা যে মোটেই ভাল লাগেনি তাহা তিনি চাহনীর ভঙ্গিতে বুঝাইয়া দিলেন। চতুর রাহেলা নিজেকে সুধরাইয়া নিলেন দ্রুতই, ‘বিয়া যহন দেওনই লাগব, আগে ভাগেই দিয়া দাও, নইলে পরে পস্তাইতে হইব’।
জননীর কপালে চিন্তার ভাজ স্পষ্ট হইল, ‘এতটুকুন মেয়ে, ভাত বেড়ে খাওয়াটা পর্যন্ত শেখেনি এখনো’।
‘শিখে নিতে কতক্ষণ’ নীরবতাকে সম্মতির লক্ষণ ধরিয়া লইয়া শুরু হইল পাত্র দেখা। মাধবীলতা গুনে না হইলেও রুপে অনন্যা, পাত্রের অভাব হইল না। শেষে অবস্থা এমন দাড়াইল যে কোনটা ছাড়ি কোনটা ধরি তাহা নিয়া নতুন ভাবনার উদয় হইল। সবাইকেই মনে ধরে, কিন্তু মেয়েকে তো আর সকলের হাতে তুলিয়া দিতে পারিবেন না। অবশেষে অনেক কাঠখড় পোহাইয়া মেয়ের জন্য যোগ্য পাত্রটিকে বাছিয়া লইলেন। ছেলে সরকারী চাকুরে, দেখতে শুনতে মন্দ না, আচার ব্যবহারে যারপরনাই মুগ্ধ, ‘ইহা মন্দ নয়’।
‘মন্দ কি! বল লাখে একটা’ রাহেলার মুখে তখন কপট হাসি, সম্বন্ধটা পাকা করিতে পারিলে ভাল বকশিসের আশ্বাস মিলেছে। মাধবীকে ওদের পছন্দ হইয়াছে, ছেলের তো চাই-ই, সে বড়ই ব্যকুল হইয়া পড়িয়াছে, কিছুতেই বিলম্ব করিতে সে রাজী নয়। অবশ্য এজন্য অসংখ্য মিথ্যের আশ্রয় লইতে ইয়াছে রাহেলাকে।
একরাতে মেয়ের মাথায় হাত বুলাইয়া দেয়ার ফাঁকে জননী বলিলেন, ‘বড় সাধ ছিল উনার, কন্যার বিবাহ ধুমধাম করিয়া দিবার! আজ যদি তোর বাবা বাঁচিয়া থাকিত!’ জননী যেন কোথায় হারাইয়া গেলেন; জবাবে পিনপতন নীরবতার মাঝে ছোট্ট করিয়া দীর্ঘশ্বাসের শব্দই ভেসে এল কেবল; অন্য খেয়ালে বিভোর জননীর কান অবধি সে শব্দ পৌছায় না।
জননী আজ বেজায় খুশি, মনের মত পাত্র জুটিয়াছে! এখন কেবল ভালয়ে ভালয়ে তুলিয়া দিতে পারিলেই হইল; কন্যার মতের আবশ্যকতা নেই! মতের বাইরে এক পা নড়িবে না, ধন্যি মেয়ে তার! কন্যার প্রতি জননীর প্রত্যাশার ব্যাপ্তিটা অসীম।

পরদিন তিলক’কে খুলিয়া বলিল সব, ‘কিছু একটা কর, নইলে...’ গলা জড়াইয়া আসে, চোখে রাজ্যের ব্যাকুলতা। ভাবনায় পড়িয়া যায় তিলক। বাবার ইচ্ছা, ছেলেকে সে ডাক্তার বানাইয়াই ছাড়িবে! নিজে ডাক্তার হইতে পারে নাই, সেই ক্ষতটা ছেলেকে দিয়া পুষাইয়া নিবে; বাবার সমস্ত মনযোগ এখন ওইদিকে, এক্ষন বিয়ের কথা তুলিলে নির্ঘাত অঘটন ঘটিয়া যাইবে। মাধবীর জোর তাগিদসত্বেও সে চুপ করিয়া থাকে, কি বলিবে? কি করিবে? কি বলা উচিত? কি করা উচিত? কিছুই বুঝে আসিতেছে না। এতটা চাপের মুখে তাহাকে কখনো পড়িতে হয় নাই; সত্যি বলিতে! চাপ সামলাইবার মত যথেষ্ট বয়স তাহার এখনো হয় নাই। মাধবীকে ছাড়িতে পারিবেনা! একথা যেমনি সত্য, বাবা কোনভাবেই মাধবীকে মানিয়া লইবেনা, একথাও তেমনি সত্য!

এদিকে পাত্রপক্ষ জোড় তাগিদ দিচ্ছে,
‘সাত দিনের ছুটি, এর মধ্যেই হওয়া চাই’। বিয়ের পর মাধবীকে ঢাকায় লইয়া যাইবে, এটাই ছেলের ইচ্ছা।
‘কি-গো মা, পারবে তো ঢাকায় থাকতে?’ মাধবীর চিবুক নাড়িয়া বলেন এক বয়স্ক মহিলা, সম্পর্কে উনি পাত্রের খালা হন।
‘মেয়ে আমাদের জগৎলক্ষী, সব জায়গাতেই নিজেকে মানাইয়া নিতে পারিবে’ রাহেলা মাধবীর চিবুক নাড়াইয়া বলিলেন। অবশেষে আংটি পড়াইয়া, শরবত পানের মধ্যে দিয়ে, ছোট্ট কুটিরে জনা পাঁচেক লোকের উপস্তিতিতে, আক্দ এর পর্ব সমাপনান্তে সম্বন্ধ পাকাপোক্ত হইয়া গেল। মাধবী একটি কথাও না বলিয়া যেমনি আসিয়াছিল তেমনি চুপচাপ ফিরিয়া গিয়া দরজা বন্ধ করিয়া দিল!

বিয়েতে জননী চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেন নাই। ইচ্ছে ছিল, ঢাকঢোল পিটাইয়া, গায়ের লোককে জানান দিয়া তবেই মেয়েকে তুলিয়া দিবেন। মাধবীর বাবা বাঁচিয়া থাকিলে হয়তো তাহাই হইত; তিনি অকালে চলিয়া গেলেন! এক মাত্র মেয়েকে ছাড়া বলার মত আর কিছুই রাখিয়া যান নাই! জমি জিরত যেটুকুন ছিল, তাহা এখন থাকিয়াও নাই; দেবর ভাসুরেরা বর্গা চাষের নাম করিয়া সব নিজের করিয়া লইয়াছে। সেখানে এখন জননীর প্রবেশাধিকার নাই; করুনাবশতঃ সামান্য যেটুকুন দেয় তাহাই হাত পাতিয়া লয়। তবে কাজ করাইয়া ইহারও উশুল কড়ায় গন্ডায় আদায় করিয়া লয় তাহারা। নিরুপায় হইয়া জননী বাড়ির চারি পাশের ঝোপঝাড় পরিস্কার করিয়া সবজ্বি ফলাইয়া, তাহা দিয়া যে কিভাবে এতটা পর্যন্ত টানিয়া নিয়া আসিয়াছেন, তাহা মনে হইলে এখনো বিষ্ময়ে বিমুঢ় হইয়া পড়েন। তথাপি কন্যার গায়ে কখনো একটা আচঁড় পড়িতে দেন নাই। সাধ্য কি! মায়ের ইস্পাত কঠিন আবরন ভেদ করিয়া সন্তানের গায়ে আচঁড় কাটার। চোখের সামনে আদরের ধন একটু একটু করিয়া বড় হইয়াছে, আর দিনে দিনে জননীর প্রত্যাশার গলিত ইস্পাত একটু একটু করিয়া জমাট বাঁধিয়া তাহা দৃঢ় হইয়াছে।

দেখিতে দেখিতে বিয়ের ক্ষন উপস্থিত হইল, আর মাত্র একটি দিন বাকি। আয়োজনে আহামরি কিছু না থাকিলেও সাধ্যের শেষ বিন্দুটি পর্যন্ত নিঃশেষ করিয়া দিয়াছেন। ক’দিন এতটাই ব্যাস্ততার মধ্য দিয়া পার হইয়াছে যে, কন্যার দিকে নজর ফিরাইবার সুযোগটাও মেলেনি। কন্যাও তেমনি, গুমোট ভাব করিয়া পরিয়া থাকা, বলা নেই কওয়া নেই, যখন তখন ঘরের বার হইয়া যাওয়া, যখন তখন ফিরিয়া আসা, নাওয়া খাওয়া ঘুমে অনিয়ম হইতেছে পুর্বেকার মতই। জননী ভাবিলেন, বিচ্ছেদের ভাবনা তাহার মত কন্যাকেও তাড়াইয়া বেড়াইতেছে। জানালার ফাঁক গলিয়া জোৎস্নার আলো আসিয়া পড়িয়াছে কন্যার মুখের উপর। কতক্ষন এভাবে কাটিল তাহা অজানা, তবে অনেকক্ষন! এক সময় জননীর চোখ ঝাপসা হইয়া আসিল! মেয়েকেও এখন আর স্পষ্ট দেখিতে পাইতেছেন না, ভেজা চোখ মুছিবার বৃথা চেষ্টাও করিলেন না, চোখের পানিও আর শুকাইলো না!

পরদিন সকালে বাড়িতে শোরগোল পড়িয়া গেল, মাধবীকে কোথাও খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছে না! সব ঠিক আছে, কেবল মাধবী নেই! সে চলিয়া গিয়াছে! কন্যাকে লইয়া মায়ের পাহাড় সমান প্রত্যাশাকে পায়ে মাড়াইয়া সে চলিয়া গিয়াছে অজানা পথ ধরিয়া; মায়ের জন্য রাখিয়া গিয়াছে চার শব্দে লেখা একখানি চিরকুট ‘আমাদের ক্ষমা করিয়া দিও’!

এরপর যাহা হইবার তাহাই হইল; পাড়া প্রতিবেশি আত্মীয় স্বজন যে যা খুশি তাহাই বলিয়া গেল! জননী যেমনটি ফিট হইয়া পড়িয়াছিলেন, তেমনি পড়িয়া রইলেন অনুভুতিহীন এক পাথরের মূর্তীর ন্যায়! যে কটা দিন বাঁচিয়া ছিলেন! এমনই ছিলেন! নিঃসঙ্গ, একাকী; শোকে নিন্দুকেরাও তখন আড়ালে চোখের পানি ফেলিয়াছে।

মরার আগেও সন্তানের মুখটি একবারটি দেখার বাসনায়, একটিবার বুকে জড়াইয়া ধরিবার আশায় ফ্যাল ফ্যাল করিয়া তাকাইয়া ছিলেন পথের ধারে; ঝাপসা চোখে কতজনকে নিজের ধন ভাবিয়া দৌড়াইয়া গেলেন তাহার ইয়ত্যা নাই। কিন্তু তাহার সেই আসাটি আর পূরণ হইল না! পাহাড় সম প্রতাশ্যা জলাঞ্জলী দিয়া অতৃপ্তি নিয়াই ইহধাম ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন!

এদিকে মাধবী জননীর প্রতাশাকে পায়ে মাড়াইয়া যাকে নিয়ে সুখের প্রত্যাশা করিয়াছিল, সে মানুষটিই কিনা আজ নিজ হাতে সকল প্রত্যাশার কবর রচনা করিয়া স্বপ্ন ভঙ্গের প্রতীক হইয়া উঠিয়াছে! প্রত্যাশার কবর সমাপনান্তে নীরব কান্নাই এখন তাহার একমাত্র সঙ্গী! কেন এমন হইল?

শোভনকে জিজ্ঞাসা করিয়া কোন লাভ নাই, জবাব মিলিবেনা! তাহার নিকট মাধবী এখন বড় বোঝা! যে অৃমতের স্বাদ আস্বাদনের জন্য সব কিছু ত্যাগ করিয়া পাড়ি জমাইয়াছিল স্বপ্নের জগতে, ভাবিয়াছিল সারাজীবন এ অমৃতের স্বাদ উপভোগ করিয়া পার করিয়া দিতে পারিবে অনায়াসে, প্রেয়সীর ভালবাসাই তাহার জীবনে সবকিছুর উর্দ্ধে! কিন্তু জীবনকে ছকে বাঁধা নিয়মে আটকান যায় না, কল্পনার সরল সমীকরন দিয়ে বাস্তাবের হিসাব মেলেনা। বাস্তবতা বড়ই কঠিন আর রহস্যময়তায় ভরা। এতদিনে মাধবীর সমস্ত ভালবাসা পাওয়া হইয়াছে, এখন আর মাধবীর নিকট হইতে কিছুই নিবার নাই, তাহারও আর অবশিষ্ট কিছুই দিবার নাই; মাধবীর ভালবাসাকে উপরাইয়া আপনজনের বিচ্ছেদ, সেই সাথে অনিশ্চিত এক ভবিষ্যতের ভাবনা তাহাকে ব্যাকুল করিয়া তুলিতে লাগিল সারাক্ষণ! প্রিয়তমার মাঝে এখন আর অমৃতের স্বাদ খুঁজিয়া পায়না, সেখানে এখন তিক্ততা ভর করিয়াছে!

কোথাও স্থান নাই, সর্বত্রই কেবল অপমান, গঞ্জনা, বঞ্চনা আর তিরস্কার। ফিরিয়া যাইতে সাধ হয় সেই দিনগুলিতে যাহা অতীত হইয়াছে; অতীতের কথা মনে করিয়া নিভৃতে অশ্রু ঝড়ে, অনুতাপের দহনে জ্বলিয়া পুড়িয়া অংগার হয় প্রত্যাশার বাতিঘর; শন্তির পরশ নেই কোথাও!

সমাপ্ত
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী মনোমুগ্ধকর কথামালায় প্রতিশ্রুতিশীল লেখা । কোমল পরশে শ্রুতিমধুর  চয়ন।
প্রেরনাদায়ক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ...

২০ জুন - ২০২০ গল্প/কবিতা: ১ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

বিজ্ঞপ্তি

“মে ২০২৪” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ মে, ২০২৪ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।

প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী