১. রহিমা খাতুনের আজ আনন্দের সীমা নেই । এই রকম আনন্দ তিনি জীবনে আর পান নি। নাহ, পান নি বললে ভুল হবে। জীবনে আর একদিন তিনি এরকম আনন্দ পেয়েছিলেন । আর সেই দিনটি ছিল তার ছেলে সৈকতের জন্মদিন । তার ছেলের জম্মই তার জন্য নিয়ে এসেছিল অনাবিল আনন্দের জোয়ার, খুশির জোয়ার। আজ দ্বিতীয় বারের মত তিনি সেই দিনের মত আনন্দিত হলেন । তার আনন্দের অন্যতম কারণ হল তার ছেলে আজ আবার তার কাছে ফিরে এসেছে। হোক সেই পঙ্গু । তার বুকের ধন তার কাছেই ফিরে এসেছে, এতেই তিনি খুশি। ২. রহিমা খাতুনের স্বামী যখন মারা যায় তখন সৈকতের বয়স এক বছর। স্বামী মারা যাবার পর এক বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে তিনি দুইচোখে অন্ধকার দেখা শুরু করলেন। কিন্তু সন্তানের কথা ভেবে নতুন করে সংসারের হাল ধরলেন। রহিমা খাতুনের মাবাবা, ভাইয়েরা নতুন করে বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করলেন , কিন্তু একমাত্র ছেলের মুখের দিকে চেয়ে তিনি রাজি হন নি । ছেলের মুখের দিকে থাকিয়ে শুরু করলেন কঠিন সংগ্রাম। বাড়ির চারদিকে শাকসবজির চাষ করলেন। রাত জেগে শীতল পাটি বানান , জাল বুনেন, হাত পাখা বানান। এভাবে অনেক দু:খ কষ্টে সংসার চালান। ছেলেকে লেখাপড়া শিখান। নিজে খেয়ে না খেয়ে ছেলের পড়ালেখা চালিয়ে নেন। এভাবে মায়ের সুযোগ্য সংস্পর্শে ছেলে পড়ালেখায় মেধাবী হয়ে উঠে। এসএসসি, এইচএসসি শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেয়। লেখাপড়া শেষ করে বড় চাকরীতে যোগদান করে। রহিমা খাতুনের আশা পূরণ হয়। তিনি ভাবেন তার এতদিনের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে। তার ছেলে চাকরী পেয়েছে, তাকে আর কষ্ট করতে হবে না । কিন্তু তার সেই আশায় গুড়ে বালি । চাকরী প্রাপ্তির কিছুদিনের মধ্যেই ধনীর এক ললনাকে বিয়ে করে বসে সৈকত । এর পর আর গ্রামেই আসে না ,পুরাদস্তুর শহুরে হয়ে উঠে। মাসে মাসে মায়ের কাছে অল্প কিছু টাকা পাঠিয়ে তার দায়িত্ব শেষ করে । রহিমা খাতুনের মন আনচান করে একমাত্র ছেলেকে দেখার জন্য । কিন্তু ছেলের নাকি অনেক কাজ সেজন্য আসতে পারে না। তিনি মাঝে মাঝে ফোনের দোকান থেকে ফোন করেন । কিন্তু ফোনে কথা বলে কি আর মায়ের মন ভরে? তার ইচ্ছা হয় ছেলে-বৌমাকে কাছে পেতে । কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পূর্ণ হয় না । ৩. কোনো রকমে কেটে যাচ্ছিল রহিমা খাতুনের দিন । কিন্তু ছেলের দুর্ঘটনায় উলটপালট হয়ে যায় তার জীবন । ছেলের দুর্ঘটনার কথা শুনে তিনি ছুটে যান হাসপাতালে। দেখেন দুর্ঘটনায় পঙ্গু তার ছেলেকে । এরপরের ঘটনা অতি সাধারণ । পঙ্গু একজনের সাথে সংসার করতে পারি না -এই বলে সৈকতকে ডিভোর্স দেয় তার স্ত্রী । সৈকত ফিরে আসে তার মায়ের কোলে। আবার শুরু হয় রহিমা খাতুনের জীবন সংগ্রাম । পঙ্গু বলে ফেলে দিতে পারেন তিনি তার সন্তানকে। কারণ, তিনি যে মা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।