কিছুই অর্জন করতে পারে নি বলে গোপলার খুব দুঃখ। বি এ পাশ করেছে ঠিকই তবে তা লাখো লাখো ছেলে মেয়ে যেমন করে ঠিক সে রকম। মোটর সাইকেল তো দূরের কথা সাইকেল চালানো ভাল শিখতে পারে নি। যাই হোক করে ঠকমকিয়ে চলে। তখন ডিঙি ছিল নৌকা ছিল তাও ভালো করে চালাতে পারে নি।
এটুকু পড়ায় কোন জুটাতে পারে নি। এর ওর বাড়ি ফাইফরমাস খাটে। নয়তো মাঠে ঘাটে ফসলের কাজ করে। নয়তো পাকা বাড়ি তৈরিতে যোগালির কাজ করে। তাও এসব কাজ করতে গিয়ে কেমন যেন ছড়িয়ে ফেলে। নষ্ট করে।
দাদা বলল - দেখ জেনারেল লাইনে পড়াশুনা করে কোন কিছু কাজ পাবি না। তার চেয়ে হাতে কলমে বিদ্যা শিখে নে।
সে সব চেষ্টা করেও কিছু শিক্ষা অর্জন করতে পারে নি গোপলা। ঢুকেছিল বেরোতে পারে নি। তবু আশেপাশে কারুর শরীর খারাপ করলে, কারু বাড়িতে অনুষ্ঠান হলে, কেউ ঝগড়াঝাটি করলে, কারু ছেলেমেয়ে কথা না শুনলে গোপলা এক পায়ে খাড়া। সেখানে উপস্থিত হবেই হবে। হাসি মুখ করে এমন ভাবে বলবে যে , গোপলার সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিটি গলে জল হয়ে যাবে।
সেদিন রাস্তা দিয়ে এক ঠাকুমা যাচ্ছিল। গোপলা তার হাতের ব্যাগ নিয়ে বলল - চলুন ঠাকুমা। অটো স্ট্যাণ্ড পর্যন্ত এগিয়ে দিই।
এক পা এক পা করে লাঠি ঠুকে ঠুকে চলছে ঠাকুমা। অটো স্ট্যাণ্ডে উনি দাঁড়ালেন না। বললেন বাস স্ট্যাণ্ডে যাব। তা যেতে হল। ঠাকুমাকে বাসে তুলে দিয়ে যখন পাকা বাড়ির কাজে গেল কণ্টাক্টর বলল - এত দেরি করলে হবে না। কালকে কাজে আয়। তোকে না নিলেও আমার চলবে। বাড়ি ফিরতে মা আর বউ মিলে চেপে ধরল। কাজে গেলে না কেন?
গোপলা বলতে পারে না। সত্যি বলে লাভ নেই। শুধু শুধু মিথ্যেও বা বলবে কেন? তার চুপ থাকাই শ্রেয়। ঐ জন্য গোপলার বউ একদম দেখতে পারে না। মাঝ রাতে গোপলাকে বলে - এ এক মস্ত গুণ । বাঘের বাচ্চা বাঘ হয়। গাদার বাচ্চা গাধা। তারা কেউ কিছু অর্জন করে না। কিন্তু মানুষ জীবনে চলার পথে কত কি অর্জন করে তাই তারা অনেকেই হয়ে কেউকেটা। কিন্তু মানুষের সাধারণ গুণ হারিয়ে ফেলে। তোমার মধ্যে তা আছে।
কিন্তু সবার সামনে চিৎকার করে আমার জীবনটা জল করে দিল গো। জল করে দিল। কি কুক্ষণে যে এ রকম লোকের হাতে পড়েছি কে জানে? তবু তো গোপলার আজও বলে নি যে রাইহান যখন সুইসাইট করবে বলে গাছতলায় পৌঁছেছিল তখন গোপলা দেখতে পেয়ে সেই গাছতলায় দুজনে বসে শীতল বাতাস খেয়েছিল।
রাইহান আজও বিদেশ থেকে ফিরে গোপলাকে দেখে। গোপলাও সেই হাসিটি হাসে। যে হাসি ছাড়া তেমন কিছু গোপলা অর্জন করতে পারে নি। রাইহানের দাদু মারা গেল। ঝড় বৃষ্টির রাত। অনেকের সঙ্গে গোপলাও গিয়েছিল। রাইহান বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছিল।
এ রকম আরো দেখেছিল যখন ওদের বাড়ির পাশে হঠাৎ এক বৃদ্ধা ড্রেনে পড়ে যায়। কতজন দাঁড়িয়ে ছিল। একি এগিয়ে আসে নি। এমন কি ক্লাবের প্রেসিডেণ্ট যে প্রায় কথায় কথায় গোপলাকে অকর্মন্য ফালতু বলে বকাঝকা দেয় সেও দাঁড়িয়েছিল কিন্তু গোপলা এগিয়ে গেল। ড্রেন নোংরা জল কাদা গায় মেখে সেই বৃদ্ধাকে তুলেছিল। রাইহান ভাবল, আমরা ক'জন সব কিছু উপেক্ষা করে ও রকম ঝাঁপিয়ে পড়তে পারি। কিন্তু এটাই তো মানবিক গুণ যা কাওকে অর্জন করতে হয় না। মানুষের নিজের মধ্যে থাকে। যা আমরা বরং ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার প্রফেসর মাস্টার কেরাণি অফিসর ইত্যাদি অর্জন করতে করতে ভুলে যাই।
একদিন পুকুর ধারে বসে গোপলা সকালে দাঁত মাজছে। আমি গিয়ে বসলাম পাশে। জিজ্ঞেস করলাম - দুঃখ হয়।
আমার মুখের দিকে তাকিয়ে এমন একটা হাসল যে আমি দুঃখ ভুলে হাসতে লাগল। কত বড় অফিসার হয়েও আমি এটুকু অর্জন করতে পারি নি। তো কিসের মানুষ হলাম!
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
একটি অর্জন
২৬ মে - ২০২০
গল্প/কবিতা:
২৬ টি
সমন্বিত স্কোর
৪.৭
বিচারক স্কোরঃ ২.১ / ৭.০পাঠক স্কোরঃ ২.৬ / ৩.০
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।