দূরে রাতশেষের ঘন্টা বাজছে,  চারপাশ এখনো  গভীর ঘুমে মগ্ন। কেবল ঘুমহীন চোখে জেগে আছেন আজমল চৌধুরী।  নিস্তব্ধ   ঘরটাতে একা একা  জেগে ভাবতে লাগলেন, এই ঘরটার কথা, এই বাড়িটার কথা, খোকা, বউমা, ছোট্ট নাতিটা-----। সব ছেড়ে  চলে যেতে হবে, আজকের পর কখনো থাকা হবেনা এই বাড়িতে। তার আর রেনুর কত স্মৃতি জড়িয়ে থাকা এই ঘরটাতে আজই তার শেষদিন।
আজমল সাহেব পুরোনো দেয়াল আয়নায় নিজেকে দেখলেন বহুদিন পর—
বড্ড বুড়ো হয়ে গেছেন তিনি, শরীরটাতো জীর্ণ হয়ে গেছে বহু আগেই, রেনুর চলে  যাওয়াতে  তার শক্তসমর্থ মনটাও  কখন যে বিকল হয়ে পড়েছে আজমল সাহেব জানতেও পারেননি। আয়নায় প্রতিফলিত ওই চেহারাকে তাই                                                                                                    অতীতের ধনী, দাম্ভিক, দুর্দান্ত আজমল চৌধুরীর অপচ্ছায়া বলে মনে হয়।
আজমল সাহেব আপনমনে হাসলেন, ভালোই হল রেনু চলে গেছে, নইলে আজকের দিন দেখলে  সে কিছুতেই সহ্য করতে পারত না।
শয্যাশায়ী হয়ে যাবার পরেও সে  ছেলে- ছেলের বৌকে ডেকে কতবার বলেছে, বুড়ো বাপটাকে দেখিস খোকা, আমি তো চললাম। ও বৌমা তোমার শ্বশুরটাকে একটু দেখো- ভালো হবে তোমার।
শুধু তার চিন্তাতেই রেনুর  প্রানটা  যেন বেরোতে চাইছিল না। আজমল সাহেবকে বলতেন, ওগো শরীরের কষ্ট আর যে সহ্য হয়না, তবু যখন ভাবি তোমাকে দেখার কেউ থাকবেনা তখন মরতেও ভয় লাগে।
আজমল সাহেব চোখের জল  মুছে নিলেন। অবশ্য মুছে নেবার  কোনো দরকার ছিলনা  ঝরতে দিলেই হত, কেই-বা দেখবে  কার কাছ থেকে দুঃখ লুকাবেন, এরা দুঃখ পাচ্ছে জেনেই আঘাত করতে ভালোবাসে।
উপরের ঘরে ছেলে আর তার বৌ ঘুমুচ্ছে, নিরুদ্বেগ শান্তির ঘুম।  রেনু চলে যাওয়ার পর বাপের প্রতি কর্তব্য আর যত্নে  আস্তে আস্তে উদাসীনতা ভর করলো। ছেলের অফিস। বৌমার অফিস, ক্লাব এই করে করে তার খোঁজ খবর নেওয়ার ঘাটতি হতে লাগলো। এরপর যখন নাতিটা হল তখন তো বৌমা তার বাপের বাড়ি গিয়ে উঠলো ছেলেও মাঝে মধ্যে ওখানে কাটাতে লাগলো অসুস্থ বাপের দায়িত্ব বাড়ির কাজের লোকের উপর দিয়ে। 
আজমল চৌধুরী এমন কিছু অসমর্থ লোক নন। এককালে হাঁকডাকে যথেষ্ট প্রতাপ ছিল তার। এদের সাহায্য ছাড়াই  হয়তো চলতে পারতেন। কিন্তু হঠাৎ শরীরটাই বিশ্বাসঘাতকতা করলো। চিরদিনের হাঁপানি তো কাবু করলোই দেখা দিলো আরো নানা উপসর্গ। এ এক আশ্চর্য সময় কাটছিলো এ বাড়িতে। ঘরভর্তি মানুষ লোকজন , ছেলে বৌ নাতি বেয়ান তাদের আত্মীয় অথচ তাকে দেখবার তার খোঁজ নেওয়ার কেউ নেই। এক  গ্লাস জল চাইলেও যেন সবাই বিরক্ত হয়। কাজের লোকটিও আড়ালে গালি দেয়। সত্যিই তো তার পিছনে সময় নষ্ট করে কি পাবে ওরা?
সেদিন ছেলের বন্ধু ও বন্ধুর বৌ এলো তাকে দেখতে। তারাই বলল হঠাৎ ,বন্ধুর বৌটি একটি প্রবীণ নিবাস বানিয়েছে। সেখানে আজমল সাহেবের মতো অসমর্থ লোকেদের অনেক সুবিধা। বন্ধুটা বললো যাবেন নাকি চাচা সেখানে ? অনেক ভালো থাকবেন। আপনার বয়স এর লোকজন আছে। গল্প করলে কথাটথা বললে অনেক ভালো লাগবে। এখানে তো এই একা থাকা -  
আজমল  সাহেব উত্তর না দিয়ে ছেলে কে দেখছিলেন এক দৃষ্টিতে। তার ছেলে কোনো উত্তর দিতে পারছিলো না।  অবশেষে তার বৌ - ই তাকে বাঁচিয়ে দিলো।  বললো,  হ্যা , বাবা যাবেন নিশ্চয় যাবেন।  নয়তো এখানে বাবার ও কষ্ট হচ্ছে আমাদের ও কষ্ট হচ্ছে। আমার ছোট বাচ্চা অফিস সামলে বাবাকে দেখবার সময় পাই না।  কাজের লোক  রাখলে ওরা তো সারাক্ষন ই এক্সট্রা চার্জ দাবি করে। বলে কিনা বুড়োর গু - মুত ঘাটতে হয়। 
তাহলে ব্যবস্থা করি আমরা ? কি বলিস ? বন্ধু এই কথা বলাতে ছেলে মাথা নেড়ে ছিল। তার দিকে তাকাতে পারেনি আর , ছেলের বৌ উপযাচক  হয়ে বলে যাচ্ছিল, মন খারাপ করবেন না বাবা, দেখছেন  তো  আপনার ছেলের অবস্থা, আমার অবস্থা। জায়গা টা এমন কিছু দূর নয় আমরা রোজ যাবো আপনাকে দেখতে।  কি বলেন বাবা ? 
আজমল সাহেব ছেলের বৌ নয় ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, যা ভালো বোঝো তোমরা।  
আহা ! রেনু যে কত ভরসা করতো ছেলের উপর ! আজমল সাহেব মনে মনে বললেন রেনু তুমি দুঃখ পেওনা।
কি একটা পাখির আওয়াজে আজমল সাহেবের চিন্তা অতীত থেকে বাস্তবে নেমে এলো।  চেয়ে দেখলেন , ভোর হয়ে এসেছে। আজ থেকে শুরু হবে চির একাকিত্বের যাত্রা।  আজমল সাহেব বিষন্ন মনে ভোর দেখতে লাগলেন।  যে ভোরে শুধুই শুন্যতা মাখা।            
                        
            
            
            
                        
            
            
                        
            
         
        
               
   
    
                    
        
        
            
            
                 ২১ মে  - ২০২০ 
                                        
                            গল্প/কবিতা:
                            ৬ টি
                        
                    
            
            
                    
                        সমন্বিত স্কোর
                        ৫.১৭
                        
                            বিচারক স্কোরঃ ২.১৭ / ৭.০
                            পাঠক স্কোরঃ ৩ / ৩.০
                        
                     
            
         
     
    
        
বিজ্ঞপ্তি
        এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
    
    
        প্রতি মাসেই পুরস্কার
        
            বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
        
        
            লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
            
                - 
                    
                    
                        প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
                        প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
                     
- 
                    
                    
                        তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
                     
 
     
    
        
        বিজ্ঞপ্তি
        “নভেম্বর ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ নভেম্বর, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।
        প্রতিযোগিতার নিয়মাবলী