লীলাবতী হলো শীলাদেবীর ছোট বোন । হঠাৎ একদিন বদমায়েশীর ছলে সে বলল ,-- আপনাকে আমার ভিষন ভাল লাগে । আপনাকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি । সেই সাথে হালকা আওয়াজে এমন একটা হাসি দিল যে , আমি বিব্রত হলাম । তাড়াতাড়ি নিজেকে সামলিয়ে নিয়ে বললাম ,--- তোকে আর ভালবাসা বিলাতে হবে না । বরং আমিই তোকে ভালবাসা উপহার দিব । I love you . --- এতে হাসির মাত্রা আরো বেড়ে গেল । ঘটনাটা এখানেই শেষ হতে পারত । কিন্তু শীলা দেবী এটাকে ভাল মনে মেনে নিতে পারল না । আর সেটা বুঝা গেল অনেক অনেক পরে ।
গভীর দুঃখ-বোধের মধ্য দিয়ে শীলা দেবীর সাথে সর্ম্পকটা এত বেশী দৃঢ় ও মধুময় হয়েছে যে , তা মানব কল্পনার বাইরে । পারস্পরিক শ্রদ্ধা , ত্যাগ ও দয়া একে আরো মোহনীয় করে তুলেছে ।
গুরুমাতা ভরকে গিয়েছে । ভিন্ন গ্যালাক্সীর অশুভ শক্তি যখন লীলাবতীকে সাপের মত কামড় দিয়েছিল , তখনো তিনি এতটা বিচলিত হন নাই । শীলা দেবীর এবারের জ্বর খুবই মারাত্মক । কোনো ভাবেই কমছে না । শীলা দেবী অশ্বিনী নক্ষত্রের জাতিকা । তার হাতের ছোয়ায় অনেকেই সুস্হ্য হয় । আর আজকে কি'না তারই এ অবস্হা !
একটি ঘটনা অনেকটা এরকম । রমজান মাস শেষের দিকে । হাফেজ সাহেবের বুকে ব্যথা । খতম তারাবীহ পড়াতে পারবেন কি'না--- সন্দেহ । তাকে এক ডাক্তার বন্ধুর কাছে নিয়ে গেলাম । ঔষুধ খেয়ে তিনি সুস্হ্য হলেন । খতম তারাবীর দিন , মানে সাতাইশের দিন খতম শেষে লোকজন তার কাছে দোয়া নিল । পানি পড়া নিল । লুকি লুকি হাদিয়াও দিল । আমি ভাবলাম--- এরা আপদ-বিপদ , রোগ-ব্যধি থেকে বাঁচার জন্য হুজুরের কাছে পানি পড়া নেয় । আর হুজুর আমার ডাক্তার বন্ধুর কাছ থেকে ঔষুধ খেয়ে সুস্হ্য হয় । আসলে বুজুর্গ আর বুজুর্গী অন্য জিনিস । এটা সহজে রপ্ত করা যায় না ।
আজরাহা গুরু , লীলাবতী সহ আরো অনেকেই শীলাদেবীর দেখা-শুনার জন্য নিয়োজিত আছে । গুরুমাতাও খুব তৎপর । ডাক্তার , কবিরাজ , ঝাড়-ফুক , আর্য়ুবেদীয় , হোমিওপ্যাথী সহ সব চিকিৎসাই মোটামুটি হয়ে গেছে । কিন্তু কিছুতেই জ্বর কমছে না । অনেকেই ধারনা করছে এটা জ্বীন-যাদুর ব্যপার হতে পারে ।
হঠাৎ করে রানীমাতা কেন যে বেঁকে বসল--- তা বুঝা গেল না । সামান্য কারনে এমন হওয়ার কথা নয় । অহংকারী আর জেদী হলেও রানীমাতার আছে একটা সুন্দর মন । আর তার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান । তার কাছ থেকে জ্ঞান চুরি করা সহজ নয় । রানীমাতা এবার আসল রুপেই ফিরে এলো । আধো আধো বিকশিত কৃঞ্চ-কলি ফুলের মত অপরুপা সুন্দরী সে । কালো-হীরার মত তার মুখ-অবয়বে আলোর নাচন । তাকে Love you বলার মজাই আলাদা ।
এরকম কঠিন পরিস্হিতিতে শীলাদেবীর কাছে দিনের বেশীর ভাগ সময় থাকতে হচ্ছে । এরপরও গুরুমাতা সার্বক্ষনিক মিথ্যা মহলে তার কাছে থাকার জন্য বলে দিলেন । লীলাবতী যেন এমনটাই চাইছিল । অনেকটা " আজ পাশা খেলবোরে শ্যাম " -- এর মত ।
একেতো শীতের লম্বা রাত । তার উপর শৈত্য প্রবাহ । আমি মাটির পাতিলে কাঠ-খড়ি দিয়ে আগুন জ্বালাবার ব্যবস্হা করলাম । লীলাবতী দাত বের করে বলছে ,-- ভাইয়া , সবাই মিলে মদ খাই । রিলাক্সও হবে , শরীরও গরম হবে । আমি হাসি সহ রাগটাকে লুকালাম । শীলাদেবী কটমট করে দেখে নিয়ে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল ।
লীলাবতী বলছে ,-- জানেন ভাইয়া ! আমি শুনেছি----, কোনো এক নবাব না'কি বিভিন্ন রকম মশলা ও মাদক দিয়ে পান খেতেন । এতে তার শরীর খুব গরম হয়ে যেত । এ ধরনের পান খেয়ে সে তীব্র ঠান্ডায় ঘেমে যেত । একদিন নবাব পান খেয়ে পিক ফেলে চলে গেলেন । এক মেথর সেই পিক চুষে খেয়ে মাথা ঘুরে পরে গেল । মেথরও মদ খায় , নবাবও মদ খায় । কিন্তু নবাবের মদের তীব্রতা সহ্য করার ক্ষমতা মেথরের নাই । নবাব কড়া মাদক সেবন করেও নবাবী করে যায় । আর মেথর অনেক হালকা নেশা করেও মেথর হয়েই পরে থাকে । গলদটা মাদকের না'কি মানসিকতার ? এখনকার ছেলে-ছোঁকড়ারা যে কি নেশা করে , বুঝা মুশকিল । এদের অবস্হা দিন-দিন মেথরের চেয়েও নিচে নেমে যাচ্ছে ।
রাত অনেক হয়েছে । জ্বরের তীব্রতার সাথে শীলাদেবীর মাথার ব্যথা অনেক বেড়ে গেছে । চাদরে ঢাকা থাকায় চাওয়া- মাত্র লীলাবতী ওড়নাটা দিয়ে দিল । সেটা দিয়ে শীলাদেবীর মাথাটা পেঁচিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিলাম । মনে হয় কিছুটা আরাম পেল । পরের দিন বিভিন্ন জায়গার পানি নিয়ে এসে একত্রিত করে শীলাদেবীকে খাইয়ে দিলাম । অতি দ্রুত সে সুস্হ্য হতে থাকল ।
ঝড়ে বক পরে আর ফকীরের কেরামতী বাড়ে । আমারও যেন কেরামতী বেড়ে গেল । মিথ্যা-মহলে এখন আমার একটা অন্য রকম অবস্হা সৃষ্টি হলো । শীলাদেবী ভাবছে --, সাধনার পথে আমি বুঝি অনেক দুর এগিয়ে গেছি ।
পৌষের প্রভাত । হালকা ঝলমলে আলো । শীলাদেবীকে বেশ সতেজ লাগছে । চা-মুড়ি খেতে খেতে শীলাদেবী হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করেছিল---, কি মন্ত্র পড়ে ফুঁক দিয়ে তাকে পানি খাইয়েছিলাম ? আমি বললাম ,-- না , কোনো মন্ত্র পড়ি নাই । সে বলল---, তাহলে কোথা থেকে কি এমন পানি আনলে ? যেটা পান করে আমি সুস্হ্য হয়ে গেলাম । এই পানির রহস্যটা কি ?
আমি বললাম--, রহস্য তেমন কিছুই নাই । তবে যে ধারনায় বারিত হয়েছি---, তা হলো ---,
" নরক একটি । এর স্তর সাতটি । সবচেয়ে নিম্ন স্তর হতে জাক্কুম বৃক্ষ উদগত । নরকের এক অংশ খুবই উত্তপ্ত আর এক অংশ খুবই শীতল । এই দুই অংশের বিরোধের জের ধরে একবার চরম অবস্হার সৃষ্টি হয়েছিল । নরকের উঞ্চতা ও শীতলতা হতে স্রষ্টা জ্বর সৃষ্টি করেন । নবী মুহম্মদ (সাঃ) জ্বর হলে সাত কুয়ার পানি দিয়ে গোছল করিয়ে দিতে বলেছেন । এই ধারনা হতে আমি সাত জায়গা হতে সাত স্তরের পানি এনে আপনাকে দিয়েছিলাম ।
শীলাদেবী ঃ আর আপনি আপনি করতে হবে না । এত ফালতু কথা কোথায় পাও ? নরক একটা ! আর জ্বর নিয়ে এমন গাঁজা-খুরী কথা তোমার মুখে মানায় না ।
আমি বললাম ঃ কুরান-হাদীসে অনেকটা সেরকমই আছে । চাইলে দেখতে পারেন ।
লীলাবতী বলছে ঃ আপু--, ভাইয়া ফালতু কথা সচরাচর বলে না । সাহস থাকলে প্রমান চাইতে পারো । তুমি সুস্হ্য হয়েছ,--- এটাই অনেক বড় কথা । আর সবচেয়ে বড় কথা হলো,-- ভাইয়ার দেয়া পানিই তোমার সুস্হ্যতার আসল রহস্য । -- এটা ভুললে চলবে না ।
এমুখ--ওমুখ হয়ে কথা গুলো গুরুমাতার কানে চলে গেল । গুরুমাতা জানতে চাইলে আমি বললাম---,
হোমিওপ্যাথীতে প্রায় একশত জ্বরের বর্ননা আছে । এলোপ্যাথীতে জ্বর কোনো রোগ নয় , উপসর্গ মাত্র । আর্য়ুবেদীয় শাস্ত্রে পিত্ত , বায়ু , কফ----- মানুষের এই ত্রি-দোষ আছে । পিত্তের উঞ্চতা বাড়া-কমার ফলে শরীরের তাপমাত্রার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটে । ধর্মীয় শাস্ত্রেও জ্বর সম্পর্কে অনেক বর্ননা আছে ।
শৈত্য প্রবাহ চলছে । বাইরে কনকনে শীত । আজকের রাত গুরুমাতার সাথে অন্যান্যদের মত সাধনায় কাটাতে হবে । সেই আয়োজন চলছে ।
শীলাদেবী এসে বলছে ঃ তুমিতো এখন বড় সাধক হয়ে গেছ । গুরুমাতার ঘর পর্যন্ত আসতে পেরেছ । কিন্তু সাবধান । অহেতুক love you বলতে যেয়ো না ।
[ আগের গল্প গুলো পড়া থাকলে এই লেখাটি বুঝা সহজ হবে । ]
১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১
গল্প/কবিতা:
৬২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪