ক্ষুধার সাধনা

ক্ষুধা (সেপ্টেম্বর ২০১১)

F.I. JEWEL N/A
  • ৫৭
  • 0
  • ৪৯
সে সব সময় কাছে থাকতে চায় । জীবনের সাথে গভীর ভাবে জড়াতে চায় । তার চুমুর হালকা পরশ ধীরে ধীরে তীব্র হতে থাকলে অসহ্য মনে হয় । আর যদি সজোড়ে চেপে ধরে তাহলে দেহ-মন অস্থির হয়ে উঠে । তার প্রেমের প্রভাব বেশী হলে আর সহ্য করা যায় না । সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে মৃত্যুও হয়ে যেতে পারে । এর থেকে রেহাই পেতে যার সাথে খাতির জমাতে হয় , তার সাথে মহব্বত বেশী হলে আবার আর এক বিপদ । এই দুইজনের সাথে প্রেমের ভারসাম্য রক্ষা করে চলা খুবই কঠিন ব্যাপার । এদের প্রেমের মায়াবী ছোঁয়া জীবনের সাথে এমন ভাবে জড়িত যে , তা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব নয় । এই দুই জনের আবার একদম মিলে না । কেউ কাউকে সহ্য করতে পারে না । এটা আর এক বিপদ । এদের মন রক্ষা করে দু'জনের সঙ্গে একই সাথে প্রেম করা কিন্তু সহজ ব্যাপার নয় । পাকা প্রেমিকরা পর্যন্ত হিমশিম খেতে বাধ্য হয় ।

" ক্ষুধা , খাদ্য ও জীবন " ------ এই তিনের একটা রহস্যময় সুন্দর সমীকরন আছে । আধ্যাত্মিকতার সবকের প্রথম দিনে শীলা দেবী অনেকটা হালকা চালে এর একটা মারাত্মক ব্যাখ্যা দিয়েছিল । তার ভাব আর ভাবনার সাথে রসিকতা করে বলেছিলাম ,---- " ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় , পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি ।"--- তুমি কি জানো , এটা কার কথা ?

সে বলেছিল ,--- অত কিছু জানার দরকার নেই । তবে কথাটা ভাল । এর মধ্যে কিছুটা রোমাঞ্চ আছে । কিন্তু জীবনের রোমাঞ্চের অভিমূখ অন্যদিকে । সেটা আধ্যাত্মিকতার পথ ধরে চলতে থাকে । এ পথে রয়েছে বিভিন্ন রকম প্রেমের মনোরম মিতালী । এরপর সে আমাকে Love you বলে দিয়ে একটা অন্য রকম হাসি হাসে । কিন্তু আমি Love you বলাতে সে খানিকটা অন্যরকম হয়ে যায় । সে বলতে থাকে ,--- কাকে , কিভাবে , কি বলছো তুমি ? তুমি কি এটা বলার যোগ্য হয়েছো ? জ্ঞানসহ ধ্যান রপ্ত না করা পর্যন্ত এখানে প্রেম শিখতে থাকো । প্রেম নিবেদনের দুঃসাহস করো না ।


ভরা দুপুর । আকাশে প্রখর রবি । উত্তপ্ত বালুকনা । কোনো এক রমজান মাসে নদীর ধারে ক্ষুধার রাণীর সাথে আচমকা দেখা হয়েছিল । তাকে খুব মোহনীয় লাগছিল । তাকে নাকি বেশী ভালবাসা হয় না ,---- এই তার অভিযোগ । কিন্তু তাকে বিশ্বাস করাবার জন্য বার বার Love you বলে বলে মুখে ফেনা তুলতে হবে নাকি ?
বুঝলে বুঝুক, না বুঝলে নাই ।

" লাভ নেই প্রিয়া প্রেম আশা করি মনে ,
আমার মত ভ্রান্ত কে বলো ? ভব এ ভূবনে ।"

এবার ক্ষুধার রাণী নরম হয়ে বলতে থাকে ,--- তুমিতো সওয়াবের আশায় এই ক্ষুধার যাতনা মেনে নিয়েছ । আমাকে ভালবেসে নয় । আর সন্ধা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত খাদ্য দেবীর সাথে যে অন্তরঙ্গতা আর মাখামাখি চলতে থাকে ,-- সেটা মেনে নেয়ার মত নয় । এ রকম Love you তো আরো অনেককেই বলো ।

সেটা প্রয়োজন হলে বলতে হয় । তাতে তোমার অসুবিধাটা কোথায় ? আচ্ছা বলোতো ,--- ক্ষুধার খাদ্য কি । এই কথা বলার সাথে সাথে ক্ষুধার রাণী এক ঝটকায় দূরে সরে গেল । মনে হলো , তার গায়ে যেন আগুন লেগে গেছে । আর থাকা যাবে না । চলে যেতে হবে । পরে কথা হবে । এখন বিদায় ।

সে কেন এসে কেন গেল ? শুধু শুধু হালকা প্রেমের ভাব জমাল । সন্ধা ঘনিয়ে এলো । ফিরে এলাম শীলা দেবীর আঁখড়ায় ।

যদি ভাতের অভাব = হা-ভাত হয় । আর খাদ্যের অভাব = দূর্ভিক্ষ হয় । তাহলে ক্ষুধার অভাব = কি হবে ?
হালকা হাসির পরশ মেশানো শীলা দেবীর স্পষ্ট আওয়াজ " ধ্বংস " । মানে ক্ষুধা না থাকলে নিথর, নিস্তব্ধ প্রকৃতিকে ধ্বংসের মোহনায় মিলিত হতে হবে । ক্ষুধা ও খাদ্যের ভারসাম্যে হের-ফের হলে বির্পযয় অনিবার্য । ঐশী গ্রন্থের ধারনা অনুযায়ী,--- স্বপ্নে পাওয়া মিশর অধিপতির সময়ে ইতিহাস কাঁপানো দূর্ভিক্ষের মোকাবেলায় ইউসুফ নবীর বুদ্ধিভিত্তক খাদ্য নিরাপত্তার সু-ব্যবস্হাপনা----, আজো বিশ্ববাসীর বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছে । অবাক ব্যাপার হলো , পৃথিবীতে মহা মহা দূর্ভিক্ষগুলোর সময়ে খাদ্যের মজুদ কিন্তু কম ছিল না । শুধু সু-ব্যবস্হাপনার অভাবে ক্ষুধার রাণী বেহায়া নৃত্যের তালে তালে বেসামাল করার সুযোগ পেয়েছিল ।


ক্ষুধার রাণীর সাথে দেখা হয়েছিল , ---- একথা শুনামাত্র শীলা দেবী অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে আমাকে কাছে টেনে নেয় । তারপর সব কথা শুনে অপূর্ব মধুময় একটা চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলতে থাকে ,--- সাধনার সব সুরে একই সাথে ঢেউ তুলতে না পারলে ক্ষুধার রাণী সাধারনত অমন করে দেখা দেয় না । তুমি অনেকটা সফল । সাধনা করতে থাকো । আরো সফল হতে পারবে । এখন যা বলি ভালো করে শুনো ,------ স্রষ্টার উদ্দেশ্য সাধন ও পূর্নতার পথে চলার জন্য সময় ও স্হান ভেদে আত্মার জন্য বিভিন্ন রকম বাহন বা সওয়ারীর প্রয়োজন হয় । ইহকালে ইহজগতে আত্মাকে এই দেহরুপী বাহন দিয়ে চলতে দেয়া হয়েছে । দেহ ও আত্মার বিভিন্ন রকম ক্ষুধা নিবারনের জন্য বিভিন্ন রকম খাদ্যের ব্যবস্থা করা আছে । ক্ষুধা ও খাদ্যের প্রভাবে এই ধরার বুকে আত্মাসহ দেহ সজীব ও সচল থাকে । ক্ষুধার সাথে ভালবাসা কম-বেশী করা যেতে পারে । কিন্তু একেবারেই ছিন্ন করা ঠিক নয় ।
আরো বলি শুনো ,---- একবার খলিফা হারুনর রশীদ ভারত, ইরাক, রোম ও আবিসিনিয়া-- এই চার দেশ হতে চারজন খ্যাতনামা চিকিৎসককে একত্রিত করে বললেন ,--- এমন ঔষধের কথা বলুন যাতে কোনো রোগ হয় না । ভারতীয় চিকিৎসক হরিতকী , ইরাকী চিকিৎসক তেরাতীযক, রোমীয় চিকিৎসক গরম পানির কথা বললেন । তাদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ছিলেন আবিসিনিয়ার চিকিৎসক । তিনি বললেন , -- হরিতকী পাকস্থলী সংকীর্ন করে । তেরাতীযক পাকস্থলী নরম করে । গরম পানি পাকস্থলী দূর্বল করে । তার মতে খাদ্য তখন খাওয়া উচিত যখন ক্ষুধা প্রবল থাকে এবং খাওয়া তখন শেষ করা উচিত যখন ক্ষুধা কিছুটা বাকী থাকে । যদিও মানব জীবনে জ্বীন ,যাদু ও গ্রহ-নক্ষত্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে , তবুও এটা সকল রোগ থেকে দেহ-মনকে নিরাপদ রাখতে অনেকটা কার্যকরী । ---- এই বর্ননায় ক্ষুধা , খাদ্য ও জীবনের সমীকরনের সুন্দর একটা উপমা পাওয়া গেল ।

রাত গভীর হয়েছে । আমি চলে যেতে চাইলে শীলা দেবী বলল ,--- না , যাবে না । আজ সারারাত আমার সাথে থাকবে ।
ঐ দেখো পূর্ণিমার চাঁদ কি হাসিটাই না হাসছে । আজকে আকাশের যে জায়গায় এই চাঁদ ডুববে ,-- তখন সেখানে সুবে কাজেব ও সুবে সাদেকের আসা-যাওয়ার দ্বন্দ্ব এবং প্রকৃতির সাথে মিতালীর অপরুপ দৃশ্যটা তোমাকে দেখাব । আর এখান থেকে শুরু হবে তোমার সাধনার পরের স্তরের পথ চলা ।

এবার সুযোগ পেয়ে বললাম ,---- তাহলে তখন কি আমি তোমাকে Love you বলতে পারব ?

ঠোঁটের কোনে হাসি লুকিয়ে শীলা দেবী বলল ,--- পারবে । কিন্তু সেই Love you এর তীব্রতা সহ্য করার অবস্থা তখন হয়ত আমার থাকবে না ।

কেন ?

আমার সাধনার গতি যেখানে শেষ , তোমার পথচলা সেখান থেকে শুরু । রাত পোহাবার সাথে সাথে তুমিই আমার গুরু হয়ে যাবে । তখন শুধু তোমার ভালবাসা নেয়া যাবে কিন্তু দেয়ার উপায় থাকবে না । আধ্যাত্মিকতার পথে তোমার সাথে চলতে থাকা আলোর নাচন দেখে আমি শুধু মুগ্ধু হব ।
চেয়ে চেয়ে দেখব আমি অপূর্ব ঐ তোমার চোখে ,---- অন্তরের ঈষদ হাসি ,
যেন গন্ডে বিকশিত ।
শরতের চন্দ্র যেন
ত্রিলোক মোহিত ।।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
নিলাঞ্জনা নীল অন্যরকম, ভালো লাগলো
নমিতা সুপ্তি যেন গন্ডে বিকশিত । শরতের চন্দ্র যেন ত্রিলোক মোহিত ।।
Harun or-rashid অনেক ভালো ........
ইরতিয়ায দস্তগীর ভালো লিখেছেন। তবে, ভব এ ভূবনে একটু খটকা থেকে গেল।
Sujon অস্পষ্ট ক্ষুধা
বিন আরফান. N/A Love you এর বন্যা বসিয়ে দিয়েছেন. তারপরেও অনেক সুন্দর লিখেছেন. বেশ ভালো লাগলো.
জীবন আহম্মেদ খুব ভালো লাগলো।আপনার জন্য শুভ কামনা।
এম এম এস শাহরিয়ার অনেক সুন্দর , অনেক প্রয়োজনীয় একটা লিখা .দুঃখের বিষয় হলো অনেকেই এর মর্ম কথা বুঝতে পারেনি .আমাকে হয়ত প্রশ্ন করবেন আমি বুঝলাম কিভাবে ? তা হলো যারা পড়েছেন তাদের মন্তব্যে তা ফুটে ওঠেনি .

১৩ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৬২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "আতঙ্ক”
কবিতার বিষয় "আতঙ্ক”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ অক্টোবর,২০২৫