# কথা বেশী বাড়াইয়ো না । যেমন আছ, তেমন থাকো । আচ্ছা বলোতো,--- তোমার সাথে আমার সর্ম্পকটা কি ? ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবী, প্রেমিক-প্রেমিকা,------- নাকি অন্য কিছু ? তুমি তো একে একে সব সর্ম্পককে গলা টিপে হত্যা করেছ । এখন শুধু গুরু-শিষ্যের সর্ম্পকটাই বাকী । কী,- গুরু মানবে ? যদি মানো,- তাহলে তোমাকে প্রেমের চাবুক মারার কৌশলটা শিখিয়ে দিব ।
" যশে কাজ নাই, নাই চাও খ্যাতি, চেয়ো নাকো ধনমান ।
মোর স্তরের যোগ্য করিয়া শিথাইয়া দিমু তোরে গান ।। "
কথা হচ্ছিল,-- বন্ধু , বন্ধুত্বের মর্যাদা ও বন্ধুত্বকে ধরে রাখার উপায় সর্ম্পকে । আর তুমি কিনা প্রেমের চাবুক নিয়ে টানাটানি শুরু করে দিলে ?
বন্ধু সর্ম্পকে জানতে চাও ! শুনো তাহলে--------,
" কে আছে বলো , বন্ধু আমার
দুঃখ-সুখের কথা শুনার ,
কে আছে বলো গাইবে এ গান -
রাঙিয়ে দিবে আমার প্রান । " -----এই জাতীয় গানের ভাষা কি কিছু বুঝো ? তোমার জ্ঞানই বা কতটুকু ? তুমি তো ভবিষ্যৎ জানো না , অতীত ভুলে যাও , আর বর্তমানে ভুল করো ।
শুনো,---- আমাদের সাহিত্য- গানে, কবিতা- গল্পে, লোককথা ও লোকমুখে অনেক রকম বন্ধুর সন্ধান পাওয়া যায় । তাদের বাহারী ঘটনা প্রবাহ সুখ-দুঃখের ঢেউ তুলে আনন্দ-বেদনার বেলাভূমিতে যে নব তরঙ্গের সৃষ্টি করে তার মাদকতায় মাতোয়ারা হতে থাকে অনেক কবি, অ-কবি ।
গাড়িয়াল বন্ধু , মাহুত বন্ধু, মৈশাল বন্ধু, ভালো বন্ধু, জ্ঞানী বন্ধু, প্রেমো বন্ধু, বানিয়া বন্ধু, রসিয়া বন্ধু, চেংড়া বন্ধু ,------- আরো কত রকম বন্ধুর কথা শুনবে ? তাতে কি তোমার মন ভরবে ?
গানে গানে বন্ধুর কথা শুনে কত প্রান যে ব্যাকুল হয়েছে ,-- তার খবর কেহ কি রাখে ?
অত খবরা-খবর আর মন ভরার কি আছে ? যদি জানো তহলে আরো বলো,----
আরে বলবো , বলবো । মনে হচ্ছে দেরিতে হলেও কিছুটা বুঝতে পেরেছ । শুনার ইচ্ছা যদি থাকে তাহলে ঢং না করে ভালো করে শুনো---- ।
(১) বন্ধু আমার কালা কাইসা / এক তরফা ভালবাইসা /
(২) বন্ধুর বাশী বাজে-রে , আমার প্রানে প্রানে /
(৩) বন্ধু যখন বউকে লইয়া, আমার বাড়ীর সামনে দিয়া/
(৪) শোনো বন্ধু শোনো , প্রানহীন এই শহরের ইতিকথা /
(৫) নাই টেলিফোন , নাইরে পিয়ন , নাইরে টেলিগ্রাম / বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম ?/
(৬) বন্ধু তোর বরাত নিয়া আমি যাব /
-------- এই জাতীয় অনেক গান আমাদের সাহিত্যের ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে ।
তাতে কি হয়েছে ? ভাল বন্ধু কিভাবে পাওয়া যাবে---, সেই কথা বলো । না হলে চুপ থাকো । বেশী বক বক করো না ।
হায় বিধি নিদয়া---! যেমন তেমন বন্ধুই পাওয়া যায় না । আবার ভাল বন্ধু চায় ! --- এ কেমন কথারে শ্যাম ।
শুনো---, " ভ্রমর ছোয়ায় ফুল ফোটে , আর মনের মায়ায় বন্ধু জোটে । "---- আগে মনটাকে বড় করো , পরিষ্কার করো ।
মন বড়ও আছে , পরিষ্কারও আছে । কপট বন্ধুদের খপ্পর থেকে বাঁচার উপায় কি ? জানলে সেইটা বলো ।
উপায় আছে, মন লাগাইয়া শুনো,-----
" জীবনের জয়গানে,
রম্য-মঞ্চ মাতাইয়ে চলে--
সাধু বেশী শয়তানে । "
---- এ বিশ্বটা অনেক বড় । লাখো-কোটি মানুষের কোলাহলে মুখরিত । মনটাকে বড় করে সবাইকে ভাবতে শেখা উচিত,---- " সমস্ত পৃথিবী নিজের বাড়ী এবং প্রতিজন মানুষই তার বন্ধু " । কিন্তু স্হান-কাল-পাত্র ভেদে বন্ধুত্বের ভিত্তি কেমন হবে ? --- তা নিজেকেই নির্ধারণ করতে হবে ।
সত্য সুন্দর ও পবিত্রতার ভিত্তির উপর বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে ছলনা ও কপটতার মুখোশধারী বন্ধুরা বেশীদিন টিকতে পারবে না । বুঝলে ---- ।
বাহ্ । বাহ্ । বাহ্ । চমৎকার সংলাপ । অপূর্ব যুক্তি । দারুন ইশারা----- ।
কিসের ইশারা ?
না, না , কিছু না । বলো , আরো বলো । শুনতে ভালই লাগছে । তুমিই তো আমার প্রকৃত বন্ধু ।
মশকরা করো না । ভালো করে শুনো,---- মানুষে মানুষে যত সর্ম্পক আছে--- । কোনো সর্ম্পকই বন্ধুত্ব ও প্রেমের সর্ম্পককে পাশ কাটিয়ে গতিশীল হতে পারে না । বন্ধুত্ব ও প্রেমের সর্ম্পককে উসকিয়ে দিয়ে যদি উতালা হতে চাও,---- তাহলে অবশ্যই মনটাকে বড় করতে হবে ।
তোমার কথা যতই শুনছি , ততই অবাক হচ্ছি । মনে হচ্ছে , তুমি যেনো বদলে গেছো । আগের অবস্হানে আর নেই । আচ্ছা তুমি কি আমাকে উত্তম বন্ধু , শ্রেষ্ঠ বন্ধুর সন্ধান দিতে পারো ? যার সাথে বন্ধুত্ব হলে কোনরুপ ঝুঁকি বা বিপদের সম্ভাবনা থাকবে না । আনন্দ খুশীর হিল্লোল বয়ে যাবে । শান্তির পরশে দেহ-মন সতেজ হয়ে উঠবে । সাফল্যের কুঁড়িগুলি সুন্দর ভাবে পল্লবিত হতে থাকবে ।
তোমার কথা শুনে অবাক হলাম । চিন্তাকে এত দূর নিয়ে গেলে কিভাবে ? অন্তরের অনন্ত পিপাসায় কাতর হয়ে যার আকাংখা তুমি করছো ,-- তার সন্ধান পেলে দিশেহারা হয়ে যাবে না তো ? তোমার কামনা-বাসনার স্রোতধারা যে মোহনায় যেয়ে মিলিত হতে চায় ,-- তা হলো ,
" স্রষ্টার সাথে বন্ধুত্বের সর্ম্পকের স্তর বা মনজিল " । স্রষ্টার সাথে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন-ই তোমাকে শ্রেষ্ঠ বন্ধুর সন্ধান দিতে পারে ।এ পথে সত্যের সাধনায় এগুতে হয় ।
থামো , থামো । আর বলতে হবে না । এতক্ষণ সব ভাল বললে । এই শেষে এসে গোলমাল বাঁধিয়ে দিলে । তোমাকে অনেক জ্ঞানী মনে করেছিলাম । তোমার উপর অনেক বিশ্বাস আর ভরসা ছিল । কিন্তু সব ভেঙ্গে খান খান হয়ে গেল । " স্রষ্টার সাথে ইনসানের বন্ধুত্বের সর্ম্পক স্হাপন সম্ভব "--- আমাকে এই কথাও বিশ্বাস করতে হবে ? হায়রে কপাল আমার ---।
না , না , না । তোমাকে কিছুই বিশ্বাস করতে হবে না । ধর্ম শাস্ত্রের অক্ষর গুলো এখনো অক্ষত আছে । দেখে , শুনে , বুঝে জানার চেষ্টা করো ।
ইব্রাহীম নবীর সাথে স্রষ্টা তার বন্ধুত্বের সর্ম্পককে "খলিল" শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন । এর একরকম ব্যাখ্যা আছে ।
শেষ নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সাথে স্রষ্টা তার বন্ধুত্বের সর্ম্পককে "হাবীব" শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছেন । এর অন্যরুপ ব্যাখ্যা সৃষ্টি হয়েছে ।
সাধারণ মানুষের সাথে স্রষ্টা তার বন্ধুত্বের সর্ম্পককে "আউলিয়া" শব্দের দ্বারা ব্যক্ত করেছেন । এর ব্যাখ্যা আরেক রকম ।
স্রষ্টার সাথে সাধারণ মানুষের বন্ধুত্বের সর্ম্পক যে হতে পারে ----, এটা ঐশী কিতাব-, বিশেষ করে কুরান দ্বারা প্রমানীত ।
থাক্ । আর প্রমানের দরকার নেই । অনেক হয়েছে । জ্ঞান-বিজ্ঞানে , জীবন-দর্শনে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে হু হু করে । আর কোন্ কালের কোন্ কেতাবের কি কথা নিয়ে তুমি এখনো পরে আছো ? আমি বাস্তববাদী , আমি আধুনিকতা ও প্রগতির পুজারী । আমাকে অত সহজে এই সকল বলে ভুলানো যাবে না । তোমার জন্য করুনা হয়----। এখন মনে হচ্ছে,- তোমার সাথে বন্ধুত্ব হওয়াটাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল । তোমার জ্ঞান আর সততার উপর ভরসা করে বড়ই কুকর্ম করিয়াছি । বিশ্বাসের জায়গাটা বড় বেশী নড় বড়ে হয়ে গেল ।
বিশ্বাস-অবিশ্বাসের তর্কটা থাক্ । আমাকে আর কিছু বলো না । তুমি তোমার স্রষ্টাকে জিজ্ঞাসা করো । তিনি তার ধর্ম-গ্রন্থ কুরানে এই জাতীয় কথা বলেছেন কিনা ? যদি বলে থাকেন---, আর সেটা বিশ্বাস করতে ও মানতে তোমার কষ্ট হয় তাহলে নষ্ট মন নিয়ে মাতামাতি করো না । অভিশাপ দিয়ো না । সত্যকে আড়াল করো না । নিজেকে হারাইয়ো না । তোমার পথে তুমি চলে যাও --- ।।
[ নদী কুল ভেঙ্গ যায় আপন মনে / আশা গুলো নিরাশায় কাঁদে গোপনে // ]