নবান্নের উৎসব শেষ হতে না হতেই উত্তরের হিমেল হাওয়া ভর করে শীত নেমে আসে বাংলা প্রকৃতির মাঝে।কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে হাড়কাপুনি শীত পড়ে।রাতে কুয়াশা যেন বাড়তে থাকে।তখন ও রাত এগারটা বাজে নি।আামার গায়ে মোটা সুয়েটার,হাতে পায়ে মৌজা থাকার সত্বেও শীত লাগছে।আাস্তে আস্তে গ্রামের মেঠো পথ ধরে বাড়ির দিকে যাচ্ছি।চারদিক যেন কুয়াশা বেধ করে রেখেছে।গাছের পাতায় জমে থাকা কুয়াশার পানি ঝরে,গায়ের কাপড় মনে হয় ভিজে যাচ্ছে।কুয়াশার জন্য কিছুই দেখা যাচ্ছে না।রাস্তায় কোন লোকজন নেই।আমার হাতের কাছে একটি মেস লাইট ছিল। তা দিয়ে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু সাদা ধোয়া দেখা যাচ্ছে। সামনেই এগুতেই গ্রামের মস্ত বড় জঙ্গল।জঙ্গলের পাশ দিয়েই রাস্তা।শীতে অন্ধকার রাস্তায় প্রবেশ করার সাথে সাথেই দাদুর বলা সেই ভুত-প্রেত্নীর কথা মনে পড়ে গেল।তাই পা যেন আর চলছে না।মনে হয় কে যেন আামার পিছু পিছু হাটছে। মনে তখন বিষণ ভয় লাগছে।এই বুঝি আমায় কেউ ধরে ফেলল।তাই একবার দৌড় দিব ভাবছি,কিন্তু না আমি যেন পারছিনা পা মাটির সংঙ্গে আটকে যাচ্ছে।।তবু কোন রকমে নিজেকে সাহস জাগিয়ে এগুতে থাকলাম। জঙ্গলের রাস্তা শেষ হল।এই জঙ্গল স্বাভাবিক ভাবে পাড় হতে ৪/৫ মিনিট লাগে। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিল যেন,এই জঙ্গলের রাস্তা পাড় হতে ঘন্টা খানেক লেগেছিল।জঙ্গল পার হতে না হতেই কে যেন আমাকে বলল "কি বেডা তুই কোনহান হইতে আইসচ"। আামর তখন শরীরের সকল লোম দাড়িয়ে গেল।বুক তরতর করছে।এই জনশূন্য রাস্তায় কে হতে পারে।আমি জিজ্ঞেস করলাম কে কে ঐখানে? তুই আমারে চিনস নাই। আমি মকবুল হাহাহা!
মকবুল নামটা শুনে একটু যেন সত্ত্বি পেলাম। মকবুল আমাদের গ্রামের বুড়ো আবুলের ছেলে। তাকে গ্রামের সবাই মকবুল পাগলা বলে ডাকে। সে অনেক দিন ধরেই পাগল। তার বুড়ো মা-বাবা অনেক চিকিৎসা করেও লাভ হয়নি কোন। আমি হাটতে থাকলাম, বুঝতে পারছি যে মকবুল পাগলও আমার পিছো পিছো আসছে।আমি বাড়ি এসে আারও অবাক হলাম যখন মা বারান্দার বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালালেন তখন। কারন মকবুল পাগলা পরনে শুধু একটা জরজীর্ণ ছেড়া লুঙ্গি ছাড়া আর কিছুই নেই।আর আমি এত মোটা সোয়েটার পড়েও শীতে কাপুনি হয়ে যাচ্ছে।এদিকে মকবুল পাগলার কোন শীতের অবকাশ নেই।পাগলদের বুঝি শীত লাগে না। তার জন্য আামার খুবই মায়া হতে লাগল, তাই ঘর থেকে একটা সুয়েটার নিয়ে আসি, কিন্তু এসে দেখি মকবুল পাগলা চলে গেছে।তার জন্য সারারত ভালে করে ঘুমাতেও পারিনি, কেমন জানি লেগেছে। পরদিন সকালে হাটতে বের হয়ে দেখি আামাদের গ্রামের মস্ত বড় বটগাছের চারিদিকে মানুষ দাড়িয়ে আাছে।আমিও গেলাম সেখানে,গিয়ে দেখি মকবুল পাগলা পড়ে আছে মাটিতে লুটিয়ে। সে আর নেই চলে গেছে পরলোগমনে। আমার যেন বিশ্বাস হচ্ছে না।
তারপর আমি হাউমাউ করে কেদে ফেললাম। আমার বন্ধু টিটু মিয়া বলল তুই কাদছিস কেন? পাশের রুম থেকে সোহাগ বলল মেসে কান্নার আওয়াজ কিসের? তারপর কিছুক্ষণ নিরব হয়ে, বসে থেকে বুঝতে পারলাম আমি যা দেখেছি সবই ছিল স্বপ্ন।তবু যেন নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছি না।বাকি রাত আর ঘুম হল না কেমন জানি ঘুরপাক খাচ্ছে।পরদিন সকালে আমি সত্যিই চলে যাই আমার গ্রামের বাড়ি। এবং সাথে সাথেই মকবুল পাগলার বাড়ি যায়।গিয়ে দেখি তার বুড়ো মা কাদছে। আমি বললাম চাচী কাদছেন কেন,মকবুল ভাই কোথায় তাকে যে দেখছি না।তার বুড়ো মা কেদে কেদে বলছে আমার মাকবুল কোথায় গেল একসপ্তাহ ধরে খুজে পাছছিনা। আামার মকবুলকে গ্রামের সাবাই পাগল বলত। কিন্তু আমার কাছে পাগল ছিল না। কাদতে কাদতে আরও বলতে লাগল আমার মকবুল কোথায় আছে,এই শীতে মধ্যে আল্লাই ভালো জানে।এইদিকে তার বুড়ো বাবা অনেক খুজাখুজি করল। আমিও অনেক খুজাখুজি করলাম পেলাম না মকবুল কে।
কিছুদিন পর শুনলাম মকবুলের বুড়ো মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। আমি রাতে গেলাম চাচিকে দেখতে। চাচি চোখ দিয়ে পানি ঝরছে,এবং আামার হাত ধরে বিড়বিড় করে বলতে লাগল আমার মকবুলকে দেখছ তুমি।আমি কিছুই বলতে পারলাম না শুধু মাথা নাড়ালাম। চাচির এই অবস্থা দেখে আমার নিজের অজান্তেই চোখে পানি এসে গেল।মাথা নিচু করে চোখের পানি মুছলাম। চাচি অবস্থা ভাল না দেখে গ্রামে অনেক লোক আসল।আমিও থাকলাম চাচির বাড়ি।রাত বাড়ছে।চারিদিক নিরব নিস্তব্ধতা হয়ে এসেছে। রাত২.১৫ মিনিটে মকবুলের মা শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।শীতের রাত আস্তে আস্তে কমতে থাকল। মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি আসছে ।মনটা আজকে চাচির জন্য অনেক খারাপ লাগছে। বুকের ভিতর কেমন জানি চিন চিন করছে।নিজেকে নিজের কাছে অসহায় মনে হচ্ছে।তাই আজ ফজরের নামাজ পড়ার জন্য পুকুরে গেলাম অজু করতে।তারপর মসজিদে গিয়ে নামাজ পরলাম। নামাজ শেষ করে দোয়া করার জন্য হাত উঠালাম। আপনা আপনিই আজ চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। তারপর সকালে চাচিকে পুকুরে পূর্ব পাশে ডালিম গাছে নিচে কবর দেওয়া হল। এইদিকে দিনের পর দিন,মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কেটে গেল মকবুল পাগলা আর ফিরে আসেনি গ্রামে।চাচা এখন একা হয়ে গেছেন। শীতের আর্তনাদের হাওয়া বহন করার জন্য এই পৃথিবীতে তিনিই রয়ে গেছেন।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
এই শীতে মকবুল পাগলের একটি কাহিনি লেখা হয়েছ।এই শীতের মধ্যে পাগলদের কোন শীত থাকে না শরীরে। এই মকবুল পাগলা নিজেই কোথায় জেন হারিয়ে গেলেন। তার বুড়ে মা তার আশায় থাকতে থাকতে সেই চলে গেলেন পৃথিবীকে বিদায় জানিয়ে। তার বুড়ো বাবাই রয়ে গেল শীতের আর্তনাদের হাওয়া বহন করার জন্য এই পৃথিবী!
২৪ ডিসেম্বর - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
২ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
বিজ্ঞপ্তি
“জানুয়ারী ২০২৫” সংখ্যার জন্য গল্প/কবিতা প্রদানের সময় শেষ। আপনাদের পাঠানো গল্প/কবিতা গুলো রিভিউ হচ্ছে। ১ জানুয়ারী, ২০২৫ থেকে গল্প/কবিতা গুলো ভোটের জন্য উন্মুক্ত করা হবে এবং আগামি সংখ্যার বিষয় জানিয়ে দেয়া হবে।