সকাল থেকেই আকাশটা অন্য রকম । হাওয়া মিটাইয়ের মত মেঘগুলো এদিক থেকে ও দিকে যাচ্ছে বাতাস বইছে গাছপালা দুলছে । ক্রমে বাতাস বৃদ্ধি পাচ্ছে । যেন এক বিরাট দৌড় খেলার প্রস্তুতি চলছে । যেমনটি করে ছেলেরা দৌড় খেলার আগে পেশি সঞ্চালনের জন্য । তবে গ্রীস্মের তাপদাহ কিছুটা হলেও কমেছে ।
সবার মনেই একটা আতংক । রেডিও টেলিভিশনে প্রচার করা হয়েছে যে এ ঝড়ে বাংলাদেশ সহ আরো কয়েকটি দেশ বেশ ক্ষতি গ্রস্থ হবে ।দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তো সরকার কর্তৃক জনণের নিরাপদে আনার আয়োজন চলছে ।
মহামারি করোনা ভাইরাসের আক্রমন থেকে বাঁচার জন্য লক ডাউনের কথা মানুষ ভুলে গিয়ে প্রাণ বাঁচানোর তাগিদে আশ্রায়াগার গুলোতে জমায়েত হয়েছে । যেন কেয়ামতের পরে হাসরের ময়দান । সবার মনেই হাহাকার । ইয়া নফসি ইয়া নফসি ভাব ।
গভীররাতে বেড়ে গেল ঝড়ের বেগ আর থামায় কে ? গাছপালা উঠছে নামছে কড় কড় মড় করে ভেঙ্গে পড়ছে । অনেকের ঘরের চালার হদিসেও মিলে না ।
আজ আর মানুষের বেশি কিছু চাওয়ার নাই চাওয়া শুধু নিজের জীবণটায় ।জীবণে যে কখনো সৃষ্টি কর্তাকে না ডেকেছে সেও প্রাণভরে ডাকছে ।
হঠাত নিরবের কানে এক করুন আর্তনাদ গেল । সে ভালোকরে শুনলো এ আর্তনাদ পাশের বাড়ির নিশির । আহা নিশিদের কোন বিপদ হয়নি তো ? বাড়িঘর ভেঙ্গে যায়নি তো ?চমকে উঠল নিরব ।
সে তাড়াতাড়ি একটা গামছা মাথায় দিয়ে নিশিদের বাড়ির দিকে রওয়ানা হলো ।দেখে সে কি করূণ দৃশ্য। ঘরের চাল উড়ে যাচ্ছে ওরা মা মেয়ে তা টেনে ধরে আছে । যেন কোন ছিনতাইকারী হাত থেকে কোন জিনিস নিচ্ছে । কিছুতেই তারা তা রুখতে পারছে না ।
নিরব তাড়াতাড়ি গামছাটা দিয়ে তা খুটির সাথে বেধেদিল । তারপর দড়ি সংগ্রহ করে শক্ত করে বেঁধে দিল । নিশির মাকে বলল – চাচি মা আমার ফোন নাম্বার টা নিন দরকার হলে ফোন দিয়েন । আমি ওদিকটায় যাই মনে হচ্ছে কে যেন চিতকার করছে । বলে সে চলে গেল ।
নিশি তার যাওয়ার পথে চেয়ে রইল । মনে মনে ভাবল খুব ভাল ছেলে । ও না এলে কি দূর্দশাটায় না হত !
ক্রমে ঝড় বাড়ল রাতের অন্ধকারটাও বাড়ল ।নিশিদের বিছানা বালিশ ভিজে আধ ভিজা হয়ে আছে । সূয়ে আর ঘুম আসে না । ঘুম আসবে কি করে বাইরে বাতাসের কী বিকট হু হু শব্দ যেন মনে হয় ঘরের ও পাশে কেউ কারো মাথা কেটে নিয়েছে সে উ-উ-করে কাঁদছে । ভয়ে নিশি উঁকি মেরে দেখার সাহস পায়না । সে মাকে ঝাকি দিয়ে জাগাল । বলল – মা শোন কে যেন কাউকে মেরেছে এরকম শব্দ হচ্ছে ।
মা কান পেতে শুনল । বলল চল তো দেখি। ওরা জানালা দিয়ে কিছুই দেখত পেল না ।
মা বলল- বাতাসে ধাক্কায় এমন শব্দ হচ্ছে ঘুমাও ।
একটু পরেই মা আবারো ঘুমিয়ে পড়েছে কিন্তু নিশির চোখে ঘুম নাই । এই জন্যই তো ওর নাম নিশি ও ছোট্টবেলায় রাতে মাকে খুব বিরক্ত করত ঘুমাত না তাই নানী ওর নাম নিশি রেখেছে । রাতের বেলা সারারাত কান্না করত আর দিনে ঘুমাত ।
মা আবারো ঘুমিয়ে পড়ল । মায়ের ঘুম গভীর হলো আর বাতাসটাও বেড়ে গেল নিশি আরো জোরে শব্দ শুনতে পেল ।
ও জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়াল । নাহ কোথাও কিচ্ছু নাই । হঠাত তার চোখ পড়ল এক ঝোপের দিকে । সে ভুত ভুত করে চিতকার দিয়ে উঠল । সে কি কান্না । মা থতমত করে জেগে উঠল ।
কান্নার কারণ মা জানতে চাইলে সে কিছুতেই বতে পারছে না । একটু আসস্ত হয়ে বলল ভু---ত ।
মা দোয়া কলেমা যা জানে তাই বলেই ফুক দিতে লাগল ।
মা বলল _ কই ?
নিশি বলল- আমি জানালা দিয়ে দেখছি হিন্দুদের কালীর মত চার হাত ছড়িয়ে দিয়ে জিবা বের করে দাঁড়িয়ে আছে ?
নিশি সিদ্ধান্ত নিল নিরবকে ফোন দিবে কিন্তু দু দিন থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন থাকায় মোবাইল খুলল না ।
পরের দিন সকালে নিশির ঘুম ভাঙ্গল মায়ের ডাকে । মা বলল- আমগুলো কুড়িয়ে আনি চল আচার বানাব ।
নিশি – নিশি ভয়ের চোটে আচারের মোহ ছেড়ে বলল- ওরে বাপরে আচার না খাইতে দাও তাও ভালো আমি যাব না বলে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল ।
দুপুরের দিকে ঝড় কিছুটা কমল । নিশি চারপাশটা দেখার জন্য বেরিয়ে এল । রাতে যেখানটায় সে ভুত দেখেছিল সে দিকে সে তাকাল ।সে বুঝতে পারল যে সে রাতে একটা মাথা ভাঙ্গা গাছ দেখে ভুত ভেবেছিল । কী কান্ডটায় না ঘটেছিল ।
গল্পের সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যঃ মহা প্রলংকারী আমপান ঝড়ের পরিপেক্ষিতে মানুষের মনে যে ভয়ের সঞ্চার হয় তাই লেখা হয়েছে
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।