রশিদের মা

কষ্ট (জুন ২০২০)

শাহনাজ বেগম
  • ৩০

একে তো মিকচার মেশিনের ঘর ঘর ঝর ঝর শব্দ তাতে আবার ধিরিং ধিরিং বক্সের তাল যেন কান পাতা যায় না । ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বক্সের তালে তালে নাচছে ।রশিদের মায়ের মুখে চোখে সেকি  হাসির ঝলকানি ।সাতটি ছেলের বৌ লাল লাল শাড়ি পরে উঠানে তার ঘোরা ফেরা করছে ।সবাই নানা কাজে ব্যাস্ত । গ্রামের দু চার জন মান্যগন্য ব্যক্তিকেও  দাওয়াত করেছে।


রশিদের মা  বড় হাঁড়িতে চুলায় রান্না চড়িয়েছে আর । মাংস কসছে আর ছোট ছেলে রশিদের ঘরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । আর এই তো এই ! আরেকটু হলেই ছাঁদ দেওয়া শেষ হবে । হায় আল্লাহ ! সিমেন্ট কি বালু কমে যাবে নাকি ? আল্লাহ করে না কমে । আর একটি টাকাও নাই । ছেলে তার কাল কাজে গেলে তারপর কিছু টাকা আসবে । তা দিয়ে নুন তেল কিনতে হবে ।


মোড়ল সাহেব উপস্থিত হল । বলল - কই রশিদের মা রান্না আর কদ্দদুর ?


রশিদের মা – আরেক টু ভাই! ভাত হয়ে গেছে গোস্ত টা হলেই হয় ।


রশিদের মা ব্যাস্ত হয়ে বসতে দেয় ।


মোড়ল ঘরের দিকে তাকিয়ে বলল – খুব সুন্দর! রশিদের ঘর খুব সুন্দর হয়েছে । আল্লাহ দেন তো ওর ছেলে তার ছেলেও হজম করতে পারবে না ।


রশিদের মা বলল - আপনাদের দোয়ায় আল্লাহ দিক হোক ।


  দেখতে দেখতে কাজ শেষ হল । সবাই পুরাতন ভাঙ্গা জরাজীর্ন ঘরটি পিছনে করে খেতে বসল । তারা একবার করে খাবার মুখে দেয় আর নতুন ঘরের দিকে তাকায় । ওই ঘর উপলক্ষেই তো এই আয়োজন ।


 রশিদ উদাস মনে তার ঘরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । ভারি কষ্টের এই ঘর ।আজ মায়ের আশা তার পূরণ হয়েছে ।


  রশিদের ছয়টি ভাই ও দুইটি বোন আছে । বছর সাতেক হল বাবা মারা গেছে । বাবা ছিল পাগলের মত পুরোপুরি পাগল নয় আবার চালাকও নয় । লোকে বাবাকে পাগলা বলেই ডাকত । এতে বাবা রেগে যেত না কেননা বাবা জানত যে পাগল সেই পাগলকে পাগল বলে ডাকে ।


 মা যে কত কষ্টে আট ভাইবোনকে মানুষ করেছে রশিদ সব গুলো না দেখলেও আন্দাজ করতে পারে ।মাঝে মাঝে মায়ের মুখে গুল্প শুনেছে ।


বড় ভাইয়েরা একটু কামায় রোজগার করা শিখেছে আর বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছে । কিন্তু রশিদ তা করে নি । সে মায়ের মুখে যে করে হোক হাসি ফোটাবেই ।  


    দুই


 রশিদের মায়ের নাম মজিদা । মজিদা এগারো বারো বছর বয়সে মনছের  পাগলার চার নম্বর স্ত্রি হয়ে তার ঘরে  আসে । সেই থেকে মজিদার শুরু হয় কষ্টের দিন গুলি । যদিওবা কোন সতিন বা সতিনের কোন ছেলে মেয়ে ছিল না ।


  মনছের পাগলার কোন জমি জায়গা বা ভিটামাটি ছিল না । পরের মাটিতে একটি মাত্র বেড়ার ঘর ।


     মজিদা পরের বাড়িতে কাজ করত  । সারাদিন খাটুনির পর যা পেত  তা নিয়ে এসে স্বামি স্ত্রি খেত  ।স্বামি চিরোদিনেই এজমা রোগি ছিল । কিন্তু স্বামি তার স্বামি  হিসাবে আস্ফালন দেখাতে বেশ বাহাদূর ছিল  । বলত-   আর চারটি গেছে তুইও যা তোর দরকার নাই । পান থেকে চুন গেলেই এই কথা ।কিন্তু যাবে কোথায় তার তো আর মা বাবা নেই । মা বাবা থাকলে কি আর মনছের পাগলার সাথে বিয়ে হয় । 


 এরেই মধ্যে বছর বছর কোলে আসতে থাকে একটি করে সোনার চান্দের মত ছেলে । একে একে চারটি ছেলে হয় তার । তারপর দুইটি মেয়ে আবারও  ছেলে ।


মাঝে মাঝে মজিদার ইচ্ছা হত  এত কষ্ট  আর ভালো লাগে না যে দিকে দু চোখ যায় সে দিকে যাবে কিন্তু যাবে কোথায় ? কোলের ছেলে মেয়েরায় মা কোলের ছেলেমেয়েরায় বাবা । এক দিন ওরা বড় হবে । সোনার সংসার গড়বে।  আর এই তো এই আর কটা  বছর ।


তিন


জেলের জালের ফাঁদে মাছগুলি ধরা পড়ে কিন্তু পানিগুলি বেরিয়ে যায় । মজিদারও   কষ্টের দিনগুলি চলে গেছে ঠিকই কিন্তু স্মৃতিগুলো আকাশের নক্ষত্রের মত জ্বলজ্বল করে । লোকে বলে কষ্টের দিন ভোলা যায় না কথা ঠিকই ।


সে পাকা ঘরে শুয়ে থাকে আর ভাবে ছিল কি আর হল কি । অতীতের প্রতিটি মূহূর্ত তাকে খিচ খিচ করে দংশন করে । কখনো কখনো হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করে ।


মা যে তার কেমনছিল মনে পড়ে না তবে দাদীর মুখে শুনেছে মা নাকি ওর মতই ছিল ।  যখন সে হামাগুড়ি দিত তখন মা মরেছে । সেই থেকে সৎ মায়ের কাছে মানুষ ।


বাবা তার দেখাশোনা করত কিন্তু কপালে সইল না সাতটি বছর হতে না হতেই সেও মারা গেল ।বাকি রইল দাদি আর নানি ।


দাদির সাথে বাড়ি বাড়ি ভিক্ষা করতে হয়েছে । উঃ ভিক্ষা করা কি যে কষ্ট আর লজ্জা মনে হয়ে তার শরীর শিউরে ওঠে ।


নানির বাড়িতে অবশ্য ভিক্ষা করতে হতনা কিন্তু মামিদের সাথে কাজ কি করতে হত কম ?


ঢেকিতে ধান ভানা ,  ইন্দিরা থেকে পানি আনা ,  মামিদের ছেলে মেয়েকে কোলে করে থাকা ।


একদিন একটা ঘটনা ঘটেছিল । মামাত ভাই লিখন কে কোলে করেছিল আর হুড়মুড় করে চুলার উপরের গরম কড়াইয়ে পড়েগিয়েছিল । ফর্সা হাতের চামড়ায় এখনও তার দাগ আছে । ভাগ্যিস লিখনের কিছু হয় নি ।

আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অপরিসীম ভালো লাগলো।

১২ ডিসেম্বর - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ১০ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪