স্বাধীনতার সূর্য্য উদয়

স্বাধীনতা (মার্চ ২০২০)

Omor Faruk
  • ১৩
১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়।
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং উর্দুভাষী বুদ্ধিজীবীরা বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু।
অন্যদিকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে দাবি ওঠে, বাংলাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।
কিন্তু পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলা ভাষার এ দাবিকে সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষা করে।
পরের বছর ২৩ ফেব্রুয়ারি করাচিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশনে পরিষদ সদস্যদের উর্দু বা ইংরেজিতে বক্তৃতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ একটি স্মরণীয় দিন।
গণপরিষদের ভাষা-তালিকা থেকে বাংলাকে বাদ দেওয়া ছাড়াও পাকিস্তানের মুদ্রা ও ডাকটিকেটে বাংলা ব্যবহার না করা
এবং নৌবাহিনীতে নিয়োগের পরীক্ষা থেকে বাংলাকে বাদ দিয়ে উর্দুকে রাখা হয়েছে ,
ছাত্রজনতা : আজ পশ্চিম সরকার যে ভাবে আমাদের মাতৃভাষাকে উপেক্ষা করতেছে আমরা এর নিন্দ্রা ও প্রতিবাদ জানাই।
সেই সাথে আজ ঢাকা শহরে সাধারণ ধর্মঘট পালিত হবে।
আমাদের দাবি বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা এবং পূর্ব পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করা।
পুলিশ : শওকত আলী, কাজী গোলাম মাহবুব, শামসুল হক, অলি আহাদ,
শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াহেদ দেশে অস্থিতিশীলতা পরিবেশ তৈরি জন্য আপনাদের গ্রেপ্তার করা হলো।
খাজা নাজিমুদ্দীন : শেখ মুজিবুর রহমান, আবদুল ওয়াহেদ তোমরা যে দাবি গুলোর জন্য
আন্দোলন করতেছো সেই গুলোর কিছু দাবির সাথে আমি একমত ।
তবে বাংলা ভাষা কে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না , তার পর ও
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ সাথে কথা বলে দেখবো বিষয়টা নিয়ে কি করা যায় ।
১৯৪৮ সালের ১৯ মার্চ পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তান সফরে আসেন।
জনসভা ভাষন চলা কালে উপস্থিত ছাত্রজনতাকে উদ্দেশ্য করে ।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ : পুর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু ,
আপনারা যে দাবি করতেছেন সেটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না ।
ছাত্রজনতা : উর্দ্দুকে রাষ্টভাষা মানি না , মানবো না ।
১৯৫০ সালের ১১ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়; এর আহবায়ক ছিলেন আবদুল মতিন।
১৯৫২ সালের শুরু থেকে ভাষা আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিতে থাকে।
এ সময় জিন্নাহ ও লিয়াকত আলী খান উভয়েই পরলোকগত।
লিয়াকত আলী খানের জায়গায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন খাজা নাজিমুদ্দীন।
মাওলানা ভাসানী : পশ্চিম পাকিস্তান সরকার আমাদের সাথে যে ব্যবহার করতেছে ,
আমি চাই মুসলিম লীগ থেকে আমরা বের হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ
হিসাবে গঠন করবো আপনারা কি আমার সাথে একমত আছেন।
রাজনীতি নেত্রীবৃন্দ : হ্যা আমরা আপনার সাথে এক মত ।
১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমুদ্দীন করাচি থেকে ঢাকায় আসেন।
তিনি পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন
নাজিমুদ্দীন : প্রদেশের সরকারি কাজকর্মে কোন ভাষা ব্যবহূত হবে তা প্রদেশের জনগণই ঠিক করবে।
কিন্তু পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে কেবল উর্দু।
ছাত্রজনতা : মানি না , মানবো না , ‘রাষ্টভাষা বাংলা চাই’ ।
৩০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট পালিত হবে।
মওলানা ভাসানী : আমি বিভিন্ন রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা বসতে চাই ।
রাজনীতিবিদরা : আমরা আপনার সাথে আলোচনা বসতে রাজি , নতুন কোন সিদ্ধান্ত দিবেন নাকি ?
মাওলানা ভাসানী : হ্যা আমি আপনাদের কে নিয়ে ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করতে চাই ।
রাজনীতিবিদরা : ঠিক আছে কিন্তু আমরা এখন কি করবো ।
মাওলানা ভাসানী : ২১ ফেব্রুয়ারি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে হরতাল, জনসভা ও বিক্ষোভ মিছিল হবে।
নাজিমুদ্দীন : রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের এসব কর্মসূচির কিছুতেই পালন করতে দেওয়া যাবে না ।
তাই ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হলো এবং সমাবেশ-শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
শিক্ষকবৃন্দ : আপনার জানেন পশ্চিম পাকিস্তান পুরো ঢাকা শহরে ১৪৪ করে রেখেছে ।
তাই আপনাদের কাছে অনুরোধ কোন কিছুতেই ১৪৪ ভাঙ্গা যাবে না ।
ছাত্রজনতা : আমরা কিছুতেই পিছু হঠবো না , আজ যদি না পারি , আগামি কাল সকাল ১১টায়
ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাংশে অবস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্রদের সভা হবে।
শিক্ষকবৃন্দ : সভা করতেছেন ভাল কথা তবে আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ ১৪৪ ভঙ্গ করা যাবেনা ।
নেতৃবৃন্দ : আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের এমন সিদান্ত কিছুতেই মানি , প্রয়োজন হলে জীবন দেবো ।
রাষ্টভাষা বাংলা চাই রাষ্টভাষা চাই উর্দ্দুকে রাষ্টভাষা মানি না মানবো না ।
পুলিশ : ছাত্রছাত্রীরা ১৪৪ ভঙ্গ করেছে আর বসে থাকা যায় না লাঠি চার্জ করতে হবে ।
পুলিশ : বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের সামলাতে পারতেছিনা তারা তো গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে কি করবো স্যার।
পুলিশ অফিসার : গুলি চালাও কিছুতেই তারা যেন ,গণপরিষদ ভবনের দিকে অগ্রসর হতে না পারে ।
পুলিশ : টুস টুস টুস গুলিতে চালাতে লাগলো এতে রফিক উদ্দিন আহমদ, আবদুল জববার, আবুল বরকত নিহত হয়।
বহু আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং তাঁদের মধ্যে সেক্রেটারিয়েটের পিয়ন আবদুস সালাম মারা যায়।
এ সময় গণপরিষদের অধিবেশন বসার প্রস্ত্ততি চলছিল।
মওলানা তর্কবাগীশ : পুলিশ আমাদের ছেলেদের উপর গুলি চালিয়েছে এই মূহুতে আমি সংসদ অধিবেশন সভাকক্ষ
ত্যাগ করেছি আপনারা ছাত্রদের পাশে দাঁড়ান।
অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নূরুল আমীন বাংলা ভাষার দাবির বিরোধিতা অব্যাহত রেখে বক্তব্য দেন।

ছাত্রজনতা : আমাদের মিছিলের উপর পুলিশ র্নিবিচারে গুলি চালিয়ে আমাদের ভাইদের হত্যা করেছে
আমরা আগামি কাল 22 ফেব্রুয়ারি এ পুলিশী র্নিযাতনের বিচার চাই ।
আমার ভাই মরলো কেন জবাব চাই জবাব চাই ।
মিলিটারি : এই নে তোদের জবাব টুস টুস পুনরায় লাঠি, গুলি ও বেয়োনেট চালায়।
এতে শফিউর রহমানসহ কয়েকজন শহীদ হন এবং অনেকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হন
ছাত্রজনতা : আমাদের ভাইয়েরা যে স্থানে গুলির আঘাতে নিহত হয়েছে সেখানে ২৩ ফেব্রুয়ারি একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে।
১৯৬৩ সালে এই অস্থায়ী নির্মাণের জায়গায় একটি কংক্রীটের স্থাপনা নির্মিত হয়।
খাজা নাজিমুদ্দীন : পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ যে ভাবে বাংলাভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি
দেওয়ার জন্য বিক্ষোভ করতেছে এতে বাংলা ভাষাকে রাষ্টভাষা স্বীকৃতি ,
না দিয়ে অন্য কোন উপায় নাই । অবশেষে সবার সম্মতি নিয়ে সংসদে একটি বিল পাস করে।
১৯৫৬ সাল পর্যন্ত ভাষা আন্দোলন অব্যাহত ছিল।
১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা প্রস্তাব
এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি গৃহীত হয়।
১৯৫৩ সালের নভেম্বর মাসে মুসলিম লীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুক্তফ্রন্ট নামে একটি নির্বাচনী জোট গঠন করা হয়।
আওয়ামী লীগ, কেএসপি, নেজামে ইসলাম এবং গণতন্ত্রী দলের সমন্বয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট।
১৯৫৪ সালের ১১ মার্চ পূর্ববঙ্গে অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগকে সম্পূর্ণ পর্যুদস্ত করে জয়লাভ করে।
কৃষক শ্রমিক পার্টি প্রধান এ.কে ফজলুল হক পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
পুলিশ : আপনাদের কে গ্রেফতার করা হলো ।
শেখ মজিব : কেন ? আমাদের অপরাধ !
পুলিশ : আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আপনি এবং এ.কে ফজলুল হক পূর্ববঙ্গকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।
আইয়ুব খান : আজ থেকে সামরিক আইন জারী করা হলো , আমি সকল রাজনৈতিক নেতাদের
নির্বাচনে প্রতিযোগিতার অযোগ্য বলে ঘোষণা করছি ।
আইয়ুব খান : শেখ মজিব আমি পশ্চিম পাকিস্তানের বিরোধী দলের নেতৃবর্গসহ লাহোরে একটি জাতীয় কনভেনশন আহবান করেছি।
আপনি পূর্ব পাকিস্তানের নেতাদের নিয়ে কনভেনশনে আসেন।
শেখ মজিব : আমি ছয়দফা দাবি উপস্থাপন করছি ।
আইয়ুব খান : ৬-দফা দাবি একটি উদ্ভট প্রস্তাবি এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না ।
তুমি একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা তুমি পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব-পাকিস্তানকে আলাদা করতে চাইতেছো ।
শেখ মুজিব : তাহলে আমি সম্মেলন বয়কট করছি আজই ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করতেছি।
পুলিশ : আপনাদের গ্রেফতার করা হলো ।
শেখ মুজিব : কিন্তু কেন ?
পুলিশ : আপনারা সশস্ত্র অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পূর্ব-পাকিস্তানকে স্বাধীন করতে চাইতেছেন।
আইয়ুব খান : পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ যে, উত্তেজিত হয়ে উঠেছে তাতে শেখ মজিব
ও অন্যান্য নেতাদের মুক্তি দেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই ।
পুলিশ : আপনাদের মুক্তি দেওয়া হলো আপনাদের বিরুদ্বে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে ।
আইয়ুব খান : রাওয়ালপিন্ডি গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করছেছি আপনি আসেন।
শেখ মুজিবুর : আমি পুনরায় ছয় দফা দাবি দফা পেশ করছি।
পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য একটি ছদ্মকৌশল বলে আখ্যায়িত করেন।
২৫ মার্চ গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় এবং আইয়ূব বিরোধী আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য গতিতে চলতে থাকায়
ফিল্ড মার্শাল আইয়ূব খান পদত্যাগ করে জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
সামরিক আইন জারী করা হয়। জাতীয় এবং প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ইয়াহিয়া খান একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করেন।
২৩ নভেম্বর পল্টন ময়দানের এক জনসভায়
মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী : আমি মনে করি অতীতের ঘটনাবলি এবং ১২ নভেম্বরের ঘূর্নিঝড় দুর্গত মানুষের প্রতি
পাকিস্তান সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক উদাসীনতা থেকে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে,
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান অবাস্তব এবং লক্ষ্যহীন হয়ে পড়েছে।
পূর্ব-পাকিস্তানের জনসাধারণকে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার
এবং এ ভূখন্ডকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত করার দাবি জানাই। বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ ‘পূর্ব পাকিস্তান জিন্দাবাদ’।
২৬ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় দুর্গত এলাকা সফর শেষে ঢাকায় ফিরে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে
শেখ মুজিবুর রহমান : আমি মনে করি অতীতের ঘটনাবলি এবং ঘূর্নিঝড় দুর্গত মানুষের প্রতি
পাকিস্তান সরকারের ষড়যন্ত্রমূলক উদাসীনতা থেকে এই বিশ্বাস জন্মেছে যে,
রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান অবাস্তব এবং লক্ষ্যহীন হয়ে পড়েছে।
এটা যত না ক্ষমতাসীন সরকারের ব্যর্থতা তার চাইতে বড় ব্যর্থতা খোদ পাকিস্তান রাষ্ট্রের।
পূর্ব-পাকিস্তানকে সম্ভব হলে ব্যালটের মাধ্যমে এবং প্রয়োজন হলে বুলেটের দ্বারা স্বায়ত্তশাসন অর্জন করতে হবে।

মওলানা ভাসানী : আমি পশ্চিম পাকিস্তানের সরকারে কাছে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দাবি জানাই।।
এই জনসভায় বক্তৃতাকালে আতাউর রহমান খান এবং পীর মুহসিনউদ্দীনও মওলানা ভাসানীর এ প্রস্তাবের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন।
1970এবং ১৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। জনগণ ৬-দফা এবং ১১-দফা কর্মসুচির সমর্থনে ভোট দান করে।
আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৮ আসনে এবং জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে জয়লাভ করে।
১২-১৩ জানুয়ারি জেনারেল ইয়াহিয়া ঢাকায় আসেন এবং শেখ মুজিব ও
অন্যান্য নেতার সঙ্গে রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন।
শেখ মুজিব : আমার এবং ইয়াহিয়া খানের মধ্যে আন্তরিক ও সন্তোষজনক আলোচনা হয়েছে।
ইয়াহিয়া খানও ঢাকা ত্যাগের সময় একই অভিমত ব্যক্ত করেন এবং শেখ মুজিবকে
‘পাকিস্তানের ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ বলে সম্বোধন করেন।
মুজিব : আমি ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ঢাকায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন আহবানের দাবি জানাই।
ইয়াহিয়া খান : ঢাকায় জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হবে ৩ মার্চ।
ভুট্টো : আমার রাজনৈতিক দল ৬-দফা ইস্যুতে পূর্বাহ্নে
একটি সমঝোতায় উপনীত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দল ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশনে যোগদান করবে না।
ইয়াহিয়া খান : আমি এই মূর্হুতে মন্ত্রিসভা ভেঙ্গে দিচ্ছি মিলিটারি জেনারেলদের সাথে আলোচনায় বসতেছি ।
২৪ ফেব্রুয়ারি রাজনৈতিক দৃশ্যপটে নাটকীয় পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু একটি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেন।
শেখ মুজিবুর রহমান ঃ আমি জনগণকে স্মরণ করতে বলতে চাই কিভাবে সেনাবাহিনী
১৯৫৪ সাল থেকে এদেশের মাটিতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে শেকড় গাড়তে বাধা প্রদান করেছে।
আমি ঘোষণা যে, জনগণ তাদের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার রক্ষা এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যায়।
ইয়াহিয়া খান : ৩ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের নির্ধারিত অধিবেশন হচ্ছে না।
ছাত্রজনতা : পাকিস্তান সরকার কিছুতেই আমাদের স্বাধীন দিবে না ,
আপনি অবিলম্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করুন।
শেখ মজিব : আপনারা সংযত থাকেন এবং ৭ মার্চ পর্যন্ত প্রতিবাদ কর্মসূচি চালিয়ে যান ।
আমি ৭ মার্চ জাতির উদ্দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি নির্ধারণী ঘোষণা করবো ।
৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ঘোষণা দেন যে, ঢাকায় জাতীয় পরিষদ অধিবেশন বসবে ২৫ মার্চ।
৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বক্তব্য শোনার জন্য রমনা রেসকোর্সে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগম।
বেশিরভাগ লোকের হাতে ছিল প্রতিরোধের প্রতীক লাঠি।
৯ মার্চ পল্টন ময়দানে একটি বিশাল জনসভায় মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ও আতাউর রহমান খান স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
মওলানা ভাসানী : আমি শেখ মুজিবকে প্রধান করে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করার জন্য জেনারেল ইয়াহিয়ার প্রতি আহবান জানাই।
২৪ মার্চ যশোরে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর)-এর হেডকোয়ার্টারে
সিপাহীরা জয়বাংলা শ্লোগান দেনএবং বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে অভিবাদন জানান।
২৫ মার্চ মধ্যরাতে ঘুমান্ত বাঙ্গালিদের ওপর পাকিস্তান বাহিনী গনহত্যা মেতে ওঠে, সেই রাতে শেখ মজিব রহমানকে গ্রেফতার করা হয় ।
শত মানুষ দিশে হারা হয়ে পড়ে ,সেই দিশে হারা মানুষকে 26 মার্চ চট্টগ্রাম
কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর হয়ে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন ।
জিয়াউর রহমান :আমি মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির অস্থায়ী প্রধান সেনাপতি.
এতদ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।
‘আমি আরও ঘোষণা করছি, আমরা ইতোমধ্যে শেখ মুজিবের নেতৃত্বে একটি সার্বভৌম ও বৈধ সরকার গঠন করেছি,
যে সরকার আইনবিধান ও শাসনতন্ত্র অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনায় অঙ্গীকারাবদ্ধ।
নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোটনিরপেক্ষ নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এই সরকার সব দেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার এবং আন্তর্জাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে।
আমি সকল দেশের সরকারকে বাংলাদেশে নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের নিজ নিজ দেশে জনমত গড়ে তোলার আহবান জানাই।
শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম ও বৈধ সরকার
এবং এ সরকার বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য।’
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী, বিমান ও নৌবাহিনী বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে
একটি সম্মিলিত আক্রমণ শুরু করেছে এবং নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে।’
আমি এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ এবং আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য জাতিসংঘ ও বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
ফয়জুল মহী অসামান্য ভাবনায় নান্দনিক লেখনী ।

লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য

উক্ত গল্পটিতে বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ,পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙ্গালিদের সাথে কিভাবে , বিশ্বাস ঘাতকেরা করেছে তা তুলে ধরা হয়েছে । বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অপরিসীম । গল্পটি লিখতে গিয়ে কিছু স্থান ,সময় এবং ব্যাক্তিগন হয়তো , রহিত হতে পারে, আশা করি পাঠকবৃন্দ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেবেন ।

২৫ নভেম্বর - ২০১৯ গল্প/কবিতা: ২৭ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪