অলৌকিক

বন্ধু (জুলাই ২০১১)

তৌসিক খান tonmoy
  • ২৫
  • 0
  • ৫৭
অলৌকিক
তৌশিক খান তন্ময়

এ গল্পটির শুরুতে কিছু কথা বলার প্রয়োজন অনুভব করছি।গল্পটি আমার বিম্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে লেখা। তখন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। সেমিস্টারের মাঝামাঝি এক সময় চলছে। পদার্থবিজ্ঞানের ইলেকট্রিক ফিল্ড, ক্যাপাসিটার, ম্যাক্সওয়েলের সমীকরন ইত্যাদিতে আমার মাথা গন্ডগোল। এমন মুহর্ূতে বান্ধবী নাফিসা একদিন আমাকে বলল, তুমি ভয়ের গল্প লিখো না কেন? একটা ভয়ের গল্প লিখো পিস্নজ।
আমি বললাম, আমি নিজেই ভীতু টাইপের মানুষ। আমার ভয়ের গল্প পড়ে পাঠকরা ভয় পাবে না ঠিকই, কিন্তুু আমি লিখে নিজেই ভয়ে অস্থির হয়ে থাকবো।
নাফিসা বলল, আহা! তোমাকে তো ভূতের গল্প লিখতে বলছি না। তুমি ভয় পাওয়ানো কোনো গল্প লিখবে।
আমি বললাম, ভীতু লেখকরা এসব গল্প লিখতে পারে না। আমি একজন ভীতু লেখক। আমাকে দিয়ে ভয় পাওয়ানো গল্প লেখা সম্ভব না।
নাফিসা কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বলল, আচ্ছা শোন, তুমি তোমার মামার যে গল্পটা আমাকে বলেছিলে, সেটা তো সত্যি ঘটনা, তাই না?
আমি বললাম, হু। মামা তো তাই দাবি করেন।
নাফিসা বলল, তাহলে ওই ঘটনাটায় গল্পের আদলে লিখ। পিস্নজ। তোমাকে লিখতে হবেই। আমি কোনো কথা শুনবো না। গল্পের শেষে লিখবে- 'সত্য ঘটনা অবলম্বনে'।
আমি নাফিসার আবদার ফেলতে পারলাম না। ফেলা আমার পক্ষে সম্ভবও না। গল্পটি লিখে আমি যথেষ্ঠ আনন্দ পেয়েছি। আমার সামনে বসে নাফিসা পড়েছে বলে সেও যে মন থেকে আনন্দ পয়েছে তাও বুঝতে পেরেছি। তবে এটি ভয় পাওয়ানো কোনো গল্প হয়েছে বলে মনে হয় না। কিছু রং গল্পতে মাখিয়ে দিলে তা অবশ্যই খুব ভয়ের গল্প হতো। কিনত্দু আমার তা করতে ইচ্ছে হয়নি। কেননা তখন এটা আর সত্য ঘটনার অবলম্বনে তৈরি কোনো গল্প হতো না।
গল্পটিতে একটি বিষয় উলেস্নখ করা হয়নি _ তা হলো ঘটনার স্থান ও সময়। এখন তা জানিয়ে দিচ্ছি।
ঘটনার স্থান: মাগুরা।
ঘটনার সময়: ১৯৮৯ সনের নভেম্বর মাস।
উলেস্নখ্য, ঘটনাটি বিশ্বাসযোগ্য কিনা এ তর্কে আমি যাব না। শুধু এতটুকু বলি, ঘটনার নায়ক আমার মামা। আমার জানা মতে, তিনি মিথ্যা কথা বলেন না। তিনি যেমন মেধাবী তেমনি ধার্মিক। বর্তমানে তিনি জাপান থেকে পি.এইচ. ডি করে এসে বুয়েটে শিক্ষকতা করছেন। সঙ্গত কারনেই উনার নাম উলেস্নখ করছি না। আর কথা না বাড়িয়ে এবার গল্প শুরু করা যাক। গল্পটিকে গুরত্বের সাথে না নেওয়ায় মঙ্গল।


আফতাব বিরক্ত হয়ে বলল, ধুৎ! বন্ধ কর ব্যাটা ! কী দেখিস এইসব?
মকবুল হতাশ হওয়া গলায় বলল, ঠিকই বলেছিস। এই ভূতের ছবি দেখার চেয়ে না দেখা অনেক ভালো।
আফতাব দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল, কতদিন যে ভালো ভূতের ছবি দেখি না!
মকবুল কম্পিউটারে চলা ছবিটি বন্ধ করতে করতে বলল, এ ছবি হার্ডডিস্কে রাখবো না ডিলিট করে দিব?
ডিলিট কর। এক্ষুনি ডিলিট কর। এসব পঁচা ছবি কম্পিউটারে রাখলে আমার কম্পিউটাই পঁচে যাবে।
মকবুল হাসতে হাসতে বলল, তোর কাছে ছবিটা এতই খারাপ লেগেছে?
এর মধ্যে তুই ভালোটা কী দেখলি?ভূতটা যখন খুশি মানুষ হয়ে নায়িকার সাথে প্রেম করছে। আবার যখন ইচ্ছা তখন ভূত হয়ে একে ওকে ভয় দেখাচ্ছে। মন চাইলে যার তার পেটের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে নাড়ি ভুড়ি সব বের করে খাচ্ছে। নায়িকাও তখন তার ভূত প্রেমিকের ভয়ে হাতে ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। টয়লেটে গেলেও হাতে থাকে ছুরি।
মকবুল আফতাবকে থামিয়ে বলল, থাক বাদ দে এসব। আমি ইন্টারনেট ঘেটে দেখি ভালো কিছু পাই কিনা?
আফতাব বলল, আর যাই করিস এইরকম বসত্দাপচা ছবি ডাউনলোড করবি না। এগুলো না হরর ছবি, না কমেডি ছবি, না রোমান্টিক ছবি। এসব ছবি দেখার চেয়ে আমাদের দেশের রসগোলস্না মার্কা ছবি দেখা ভালো। যেসব ছবিতে নায়করা হাফপ্যান্ট পরে নাচে আর নায়িকারা পেটের ভুড়ি বের করে রেখে, হাটুর ওপর কাপড় তুলে নাচে।
মকবুল প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলল, তোর পস্ন্যান কী? তুই কী কালকে গ্রামে যাচ্ছিস?
হু যেতে তো হবেই। আপুর ছেলের সুন্নতে খৎনা। আমি না গেলে আপু ভীষন রাগ করবে।দেখা যাবে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। তার তো কিছু হলেই কথা বলা বন্ধ।
ফিরবি কবে?
পরশু দিনই ফিরবো। তুই যাবি?
না। তুই যা।
কেন ? চল না। তুই গেলে অনেক মজা হবে।
থাক। মজা পরে করা যাবে। এই শীতের মধ্যে গ্রামে গেলে আমার অবস্থা টাইট। তাছাড়া কয়দিন পর পরীক্ষা। আমি তো তোর মতো ভারৌ ছাএ না যে পরীক্ষার আগের রাতে পড়লৈই সব পারবো।
আফতাব উদাস গলায় বলল, শোন, আমি ভেবে দেখছি, পড়াশোনা করলেও যা, না করলেও তা, সবই এক। এর সাথে ভালো খারাপ ছাএ হওয়ার কোনো সমর্্পক নেই।
মকবুল হতভম্ব গলায় বলল, এটা তুই কী বললি? তোর কথার তো আগা- মাথা কিছুই বুঝলাম না।
না বুঝার তো কিছু নাই।দেখ, আমি রেগুলার পড়ালেখা করেও পরীক্ষায় যে রেজাল্ট করি, শুধু পরীক্ষার রাতে পড়েও সে একই রেজাল্ট করি। সারাবছর পড়লেও পরীক্ষায় ফেল করি , না পড়লেও ফেল করি। কাজেই পড়াশোনা করে ফেল করার চেয়ে না করে ফেল করা ভালো। কী বলিস?
মকবুল হা হা করে হাসতে থাকলো। আফতাব বিড়বিড় করে কী বলল তা আর বুঝা গেল না।
দুই বন্ধু মিলে আরো কিছুক্ষন গল্প করে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। আফতাবের পরদিন সকাল সাড়ে সাতটায় বাস ছাড়বে। তাকে সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
পরদিন সকালে আফতাব বাস স্ট্যান্ডে পেঁৗছে জানতে পারলো যে আজ পরিবহন ধর্মঘট চলছে। ধর্মঘট কখন ভাঙ্গবে কেউ জানে না। এ নিয়ে আতঙ্কিত যাএীরা ছুটোছুটি করে বেড়ালেও বাসের টিকিট কাউন্টারের লোকজনের মধ্যে কোনো ভাবানত্দর লক্ষ করা গেল না। আফতাব তাঁর বাসের টিকিট কাউন্টারের সামনেএসে দাঁড়ালো। টিকিট কাউন্টারে বসে থাকা ছেলেটা আফতাবের দিকে তাঁকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেললো। সে 'পিরিতের জ্বালা' নামের একটি ম্যাগাজিন পড়ছে। ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে বিশাল বক্ষা এক তরুনীকে দেখা যাচ্ছে। সে 'পিরিতের জ্বালা' বোঝাতে তার নিজের বিশাল বক্ষের দিকে তাঁকিয়ে আছে। কিন্তুু এটা পিরিতের জ্বালা নাকি তাঁর বিশাল বক্ষের জ্বালা তা স্পষ্ট না।
ছেলেটা তাঁর মোবাইলের মিউজিক পেস্নয়ারে গান ছেড়ে রেখেছে। গানটা এরকম-
আমার যে ঠোঁটে ছিলো প্রিয়ার ঠোঁটের ছোয়া
সেই ঠোঁটেই কেন আজ গাঞ্জ্রই ধোয়া?
আফতাব ছেরেটিকে বলল, এই যে ভাই!বাস কখন ছাড়বে?
ছেলেটি মাথা নাচিয়ে বলল, জানিনা। অপেক্ষা করেন।
কতক্ষন অপেক্ষা করবো?
ছেলেটা বিরক্ত হয়ে বলল, জানিনা।
আফতাব কী করবে বুঝতে পারছে না। ছেলেটা ম্যাগাজিন পড়ছে আর হি হি করে হাসছে। নাম আর প্রচ্ছদেই বোঝা যাচ্ছে যে এটা একটা অশস্নীল ম্যাগাজিন। আফতাবের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। তার ইচ্ছে করছে ম্যাগাজিনটা টান মেওে বের করে এনে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করতে। কিন্তু সেটা সম্ভব না। আফসোস!
আফতাব বুক ভরে দীর্ঘনি:শ্বাস নিয়ে নিজেকে কিছুটা শানত্দ করার চেষ্টা করলো।তারপর নরম গলায় বলল, ভাই পরিবহন ধর্মঘট চলছে নাকি।
ছেলেটি আফতাবের দিকে নাতাঁকিয়েই বলল, হু।
আফতাব বিরক্ত হয়ে বলল, আপনি আমাকে গতকাল বললেন না কেন?আমি তাহলে টিকিট কিনতাম না। এখন শুধু শুধু আমার হয়রানি।
আমি কী করবো বলেন! ধর্মঘট জানলে কী আমি আপনাদের কাছে টিকিট বেচতাম?ধর্মঘট শুরু হলো আজ ভোররাতে।
ধর্মঘটের কারন কী ভাই?কেন ধর্মঘট ডাকা হলো?
ছেলেটা দাত কেলিয়ে বলল, রাতেরবেলা বাসের ড্রাইভার- হেল্পাররা বোতল খেয়ে গাড়ি চালাতে নামে। এক বাসের ড্রাইভার আর হেল্পার মনে হয় বেশি খেয়ে নামছে। এক ঢাকা কলেজের ছাএ টিকিট ছাড়া বাসে উঠতে গেলে হেল্পার বলে আপনের টিকিট কই?
ছাএটা হুমকির সুরে বলে, আমি ঢাকা কলেজের ছাএ।
হেল্পার বলে, ছাএ টাএ বুঝি না। টিকিট লাগবো। টিকিট ছাড়া বাসে উঠতে পারবেন না।
সব ছাএদের টিকিট লাগে। কিন্তু ঢাকা কলেজের ছাএদের টিকিট লাগে না।
হেল্পার বলল, অতসত বুঝি না। আপনের অনত্দত হাফটিকিট লাগবোই।
ঢাকা কলেজের ছাএদেরও হাফ টিকিট লাগবে?
হেল্পার ধমক দিয়ে বলল, ধুৎ তোর ঢাকা কলেজের ছাএ।ঢাকা কলেজের ছাএদের খেতাপুরি।
ছাএটাকে নামায়ে দেয়া হলো । নামার সময় ছাএটা বলল, তোর খবর আছে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই 'খবর' টের পাওয়া গেল।একদল পোলাপান এসে বাশ,রামদা আর হকিস্টিক দিয়ে বাসস্ট্যান্ডে যতবাস ছিলো সব ভেঙ্গে ফেললো। যে বাস থেকে নামায়ে দেয়া হইছিলো, সেই বাসসহ আরো কয়েকটা বাসে আগুন ধরায়ে দিল। যে হেল্পার নামায়ে দিছিলো, সেই হেল্পারকে কয়েকটা পোলা চাপাতি নিয়ে তাড়া করলো। সেই ব্যাটা জানে বাঁচার জন্যে লুঙ্গি খুলে দিল দৌড়।লুঙ্গি পরে দৌড়ানো যায়না বলে লুঙ্গি খুলেই দৌড় দিছে। চিনত্দা করেন অবস্থা! লোমশ পাছা নুনু দেখে আমরা সবাই ফিট। তাও ব্যাটার শেষ রক্ষা হয় নাই। কয়েক মুর্হূতের মধ্যেই ওর দুই হাত পায়ের কব্জি আলাদা হয়ে গেল। সে গলাকাটা কুরবানির পশুর মতো ছটফট করতে লাগলো। তারমধ্যে কোত্থেকে এক মহিলা হাজির। মনে হয় ওই বাসের কোনো যাএী হবে। তার গেছে শাড়ি খুলে। বস্নাউজ পেটিকোটও জায়গায় জায়গায় ছিঁড়া। বস্নাউজের ভেতর আবার ব্রা পরে নাই। বুঝেন অবস্থাটা! মাগির দুই দুধের নাচন আমরা সবাই দেখতেছি...
আফতাব কথা থামানো জন্য বলল, এইসব কথা থাক। শুনতে ভালো লাগছে না। এখন কীভাবে যাওয়া যায় সেটা বলুন।আমার গ্রামে যাওয়া খুবই জরুরী।
তাহলে এক কাজ করেন। এখানে কিছুক্ষন অপেক্ষা করেন।লোকাল কিছু বাস ছাড়ার কথা আছে। সেই বাসে করে যেতে পারেন কিনা দেখেন।

আফতাব লোকাল বাসের জন্যে অপেক্ষা শুরু করে। অপেক্ষা করার সময়টা তার কাছে খুবই কুৎসিত মনে হয়। একসময় সেই কুৎসিত ও ্#২৪৫৩;্#২৫০৯;্#২৪৮২;ানত্দিকর সময় পার হয়ে সে একটা বাসে ওঠে।সেই বাস চলা শুরু করেছে খুবই মন্থর গতিতে।হেল্পার পারলে বাসা থেকে যাএী ধরে আনে। বাসে তিল পরিমান জায়গা নেই। তারপরও হেল্পার যাএী উঠানোর ধান্ধায় আছে। যেদিকে মেয়ে যাএীরা দাঁড়িয়ে আছে, সেদিকে যুবক যাএীদের দঁড়াতে আগ্রহী মনে হচ্ছে। বাস যখন তখন ইচ্ছামতো ব্রেক মেরে চালাচ্ছে।আর আচমকা ব্রেক মারলেই দাঁড়ানো পুরুষ যাএীরা দাঁড়িয়ে থাকা যুবতী যাএীদের গায়ে হাত দিচ্ছে। কেউ কেউ কয়েক ডিগ্রি ওপরে। তারা একইভাবে পড়ে যাবার ভান করে যুবতী যাএীদের জড়িয়ে ধরছে। কেউ আবার ব্রেক করলে সিটে বসে থাকা যাএীদের কোলে বসে পড়ছে।
আফতাব ভাগ্যক্রমে সিট পেলেও তার পাশে বসেছে এক বোরখা পরা মহিলা যাএী। সেই মহিলা আফতাবকে 'ভাইজান জানালা খুলেন।বমি আইছে । বমি আইছে'। বলতে বলতে আফতাবের গা ভাসিয়ে বমি করে দিলো। সেই বমির ছিটে ফোটা আফতাবের চোখে মুখে এসে পড়েছে। তার নিজেরও শরীর ঘিনঘিন করে উঠলো। একসময় সে নিজেও বমি করে গা ভরিয়ে ফেললো।

বমিতে মাখামাখি অবস্থায় আফতাব যখন বাস থেকে তার গ্রামে নামলো তখন মধ্যরাএি। রাত একটার মতো বাজে। বাসস্ট্যান্ডে কোনো ভ্যান বা রিকশা না পেয়ে সে হাঁটা শুরু করলো। সমস্যা হলো, আফতাব হেঁটে বাসায় পেঁৗছাতে পারবে না। সে পথ চিনে না।
কিছুদূর এগিয়ে আসার পর তার মনে হলো, বিরাট বোকামি হয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে থাকলেই বরং রিকশা ভ্যান কিছু একটা পাওয়া যেত। এখানে কিছু পাওয়া সম্ভব না। রাসত্দায় কাউকে দেখাও যাচ্ছে না। তাছাড়া তার কিছুটা ভয়ও লাগছে। একটু পর পর সে পিছন ফিরে তাঁকাচ্ছে।আরো কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে আফতাব হঠাৎ একটা চায়ের দোকান খোলা দেখতে পেলো।সেখানে সাদা চাদরে মাথা ঢাকা একজনকে দেখা যাচ্ছে।
আফতাব তার কাছে গিয়ে বলল, এইযে ভাই! শুনছেন!
চাদরে ঢাকা মুখটি এবার দেখা গেলো। খোঁচা খোঁচা দাঁড়িঅলা মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি।সে আফতাবকে নীচু গলায় বলল,আমারে কিছু বলেন?
জি্ব। আপনি কী এখানেই থাকেন?
জ্বে। আপনের কী হইছে? আপনে কী শহর থেকে আইছেন?
জি্ব। আমি রিকশা ভ্যান কিছুই পাচ্ছি না। পথও চিনি না যে হেঁটে বাসায় চলে যাব।
এত রাতে গাড়ি পাইবেন কই? তয় চিনত্দা নিয়েন না। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি।আপনে চা খাইবেন?
না। খাব না।
আরে খান । অসুবিধা নাই।এক চিনত্দা করেন ক্যান? বললাম তো ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
লোকটি চা বানানো শুরু করলো। আফতাব হঠাৎ অবাক হয়ে লক্ষ করলো- লোকটি চায়ের কাপে চিনি দিয়ে চামচ নাড়ছে কিন্তু তার হাতের কব্জি নেই।কব্জিবিহীন হাত শূন্যে ভাসছে আর চামচ আপনা আপনি চায়ের কাপে নড়ছে।
এ দৃশ্য দেখে আফতাবের বুক ধড়ফড় করে উঠলো। তার আত্মা কেঁপে উঠলো। সে কিছু না বুঝেই চিৎকার করে দৌড়ে পালাতে লাগলো। লোকটি পেছন থেকে 'শোনেন ভাই! শোনেন ! ভয় পেয়েন না।আমার কথা না শুনলে পওে বিপদে পড়বেন'।এসব কথা বলতে লাগলো। আফতাব সেদিকে কর্নপাত না করে সর্বশক্তি দিয়ে দৌড়াতে লাগলো। এভাবে কতক্ষন সে দৌড়ালো তা নিজেও জানে না। একসময় দৌড়াতে দৌড়াতে সে একটা ভ্যানের দেখা পেল। ভ্যানঅলাকে অনুরোধ করলে সেই ভ্যানঅলা তাকে তার বাড়ি পেঁৗছে দিতে রাজি হয়। ভ্যানে ওঠার পর আফতাবের ভয় কিছুটা কাটলো। কিন্তু এখনও তার বুক ধক্ষক ধক্ষক করছে।সে স্পষ্ট তার নিজের বুকের কাঁপুনি শুনতে পাচ্ছে।
আফতাব বসেছে ভ্যানের উল্টাদিকে। সে ভ্যানঅলাকে সব ঘটনা খুলে বলল। সব শুনে ভ্যানঅলা হাসতে হাসতে বলল, বেশি ভয় পাইছেন?
হু।
এত ভয়ের কিছু নাই। এখানে 'এরা' আছে।'এরা' আপনের কোনো ক্ষতি করবো না। শুধু আপনে ভয় পাবেন না। ব্যাস। কারন 'এরা' যদি বুঝে অপনে ভয় পাইছেন, তাইলে এদের অনেকেই রেগে যায়। এদের রাগালে অসুবিধা আছে। তখন 'এরা' রাগের মাথায় আপনের ক্ষতি করে বসতে পারে।
'এরা' কারা? ভূত?ভূত বলে তো কিছু নাই।
ভ্যানঅলা বিচিএ ভঙ্গিতে হাসতে হাসতে বলল, ভূত হবে কীসের জন্যে?
আফতাব বলল, তাহলে 'এরা' কারা?
ভ্যানঅলা তার জবাব না দিয়ে আবারো হাসতে লাগলো। সেই হাসি শুনে আফতাবের মধ্যে ভয় ঢুকে গেল। সে এবার পিছন ফিরে ভ্যানঅলাকে দেখতে গিয়ে বড় রকমের ধাক্কা খেল। আফতাব দেখলো, ভ্যানঅলা ভ্যান চালাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তাঁর হাতের কব্জি নেই। এবার সে ভ্যানের প্যাডেলের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো প্যাডেল ঘুরছে ঠিকই কিন ্তু ভ্যানঅলার পায়ের কব্জি নেই। তার পা শূন্যে আর প্যাডেল নিজের মতো ঘুরছে।
আফতাবের গা কাঁটা দিয়ে মাথা ঘুরে উঠলো। আফতাব পরিস্কার বুঝতে পারলো যে, সে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।

আফতাবের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সে নিজেকে আবিস্কার করলো নিজের গ্রামের বাড়িতে। সে বিছানায় শুয়ে আছে। তার ্#২৪৬৮;্#২৪৯৯;্#২৪৮৭;্#২৫০৯;্#২৪৬৭;্#২৪৯৪; পেয়েছে। গলা ঠোট সব শুকিয়ে আছে। আফতাব মাথা ঘুরিয়ে ঘরটাকে ভালোমতো দেখলো, আর কেউ ঘরে আছে কিনা? না। কেউ নেই। জানালায় পর্দা টেনে দেয়া হয়েছে। সেই পর্দার ফাঁক দিয়ে সূর্যের তেজি রোদ তার বিছানায় এসে পড়ছে। সে তার হাতঘড়ির দিকে তাকালো। পায়ে জুতা মোজা নেই ঠিকই, কিন্তু হাতে ঘড়ি আছে।সময় নয়টা পচিশ। আফতাব দ্রুত মনে করার চেষ্টা করলো রাতে কী ঘটনা ঘটেছিলো এবং সে কীভাবে বাসায় পেঁৗছালো। তেমন কিছু মনে পড়ছে না। শুধু এতটুকু মনে পড়ছে, সে চায়ের দোকান থেকে পালিয়ে ভ্যানে উঠেছিলো এবং কব্জিবিহীন হাত-পাঅলা ভ্যানচালককে ভ্যান চালাতে দেখে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু তারপর বাড়িতে এল কীভাবে? তাহলে সেই ভ্যানঅলাই কী তাকে বাড়িতে পেঁৗছে দিয়ে গেছে?
আফতাবের কানে তার বোনের গলা ভেসে আসছে- 'এইটা কী বানাইছো? আমি তো দই বানাইতে বলছি, পায়খানা বানাইতে বলি নাই।এটা দই হইছে? দই এর কালার এইরকম হয়?দেখে তো পায়খানা মনে হচ্ছে।কোন পুতে দই বানাইছে'...?
আফতাব খাট থেকে নামতে যাবে এমন সময় হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকলো তার ভাগ্নে মিশু। ও ঘরে ঢুকেই স্বভাবমতো আফতাবের পায়ের গোড়ালিতে কামড় বসিয়ে দিল। আফতাব 'না না মিশু' বলতে বলতেই ঘটনা ঘটলো। ছোটবেলা থেকেই মিশুর এমন অভ্যাস। পরিচিত অর্ধপরিচিত এমনকি অপরিচিত যে কাউকে ( যদি তার পছন্দ হয়) সে কামড় বসিয়ে দেয়। এটা মনে হয়, তার আদরের বহিঃপ্রকাশ।
একবার মিশুকে এক সুন্দরী তরুনী চকলেট দিয়েছিলো , সেই চকলেট হাতে নিয়ে মিশু তরুনীকে 'থ্যাঙ্ক ইউ' বলেছিল। তাতে তরুনীটি আদর করে মিশুর গালে চুমু দেয়। এতেই অঘটনটা ঘটে। মিশুও খুশি হয়ে ওই মেয়ের ( আদরের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে) কানে সজোরে কামড় বসিয়ে মেরে দেয়। মেয়ের চিৎকার, আহাজারি, বাড়ির বাকি সবাই মিশুকে ধরে টানাটানি, বুঝানো, শেষমেশ মিশুকে মার দেয়া, কোনো কিছুতেই কিছু হলো না। মিশু কিছুতেই ওই তরুনীর কান ছাড়ে না। অনেকক্ষন পর যখন কান ছাড়লো, ততক্ষনে মেয়ের কান দিয়ে টপটপ করে রক্ত পড়ছে।বেচারীর কানের লতি ছিঁড়ে গেছে। আর তার কানের দুল মিশুর মুখে। সেই কানের দুলও কিছুতেই মিশুর মুখ থেকে বের করা যায় না।
এই ঘটনার সময় মিশুর বয়স ছিলো আট, এখন বারো। মিশুর বয়স বাড়ছে ঠিকই , কিন্তু তার স্বভাব বদলাচ্ছে না। শেষে কী হবে কে জানে?স্কুলের বন্ধুরা প্রকাশ্যে তাকে ডাকে 'পাগলা কুত্তা' বলে।
আফতাব মিশুকে কোমল গলায় বলল, পা ছাড় মিশু।কাছে আস।
একথা বলার সাথে সাথেই মিশু পা ছেড়ে আফতাবের কাছে এসে গা ঘেসে বসলো ।
আফতাব মিশুর পিঠে হাত রেখে বলল, কীরে?কেমন আছিস রে হিসু ব্যাটা?
বলা বাহুল্য, আফতাব মিশুকে 'হিসু' বলে ডাকে?'হিসু' ডাকায় মিশু আনন্দে তার হলুদ দাঁত বের করে বলল, ভালো আছি মামা। তুমি কেমন আছ?
আমিও ভালো আছি । তুই ভালো থাকলেই আমি ভালো থাকি, এটা জানিস না?
মিশু দাঁত কেলিয়ে বলল, তুমি তো ভালো নাই মামা।তোমাকে ফিট মারা অবস্থায় বাড়ির উঠানে পাওয়া গেছে। দরজায় দড়াম দড়াম শব্দ করে ধাক্কা মেরে ফিট মারলে কীভাবে?তারপর তোমাকে আবক্ষু আর আম্মু দুজনে মিলে তুলে এনে বিছানায় শুইয়ে দিল। অনেক ডাকাডাকিতেও তুমি উঠলে না। আমি তোমার জুতা মোজা খুলে দিলাম। ফিট মারলে কেন মামা?
আফতাবের বুঝতে আর কিছু বাকী থাকলো না। ওই ভ্যানঅলা তাকে বাড়ির সামনে রেখে দরজায় শব্দ করে চলে গেছে।আফতাব গোপনে নিঃশ্বাস ফেলে বলল, বাসে উঠে খুব খারাপ লাগছিলো তো তাই।
মিশু বলল, বমিও করছো বলে মনে হয়। সাদা র্শাট হলুদ হয়ে আছে।মুর্হূতেই আফতাবের বাসে পাশে বসা সেই মহিলার কথা মনে পড়লো।এবার সে নিজের শার্টের দিকে তাঁকালো। নিজের বমি আর ওই মহিলার বমিতে শার্ট মাখামাখি।
আফতাবের বমি আসার উপক্রম হলো। সে দৌড়ে খাট থেকে নেমে বাথরুমের দিকে ছুটলো। যাওয়ার সময় অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা তার বোনের সাথে দেখা হলো। তার বোন কাকে যেন গলা ফাটিয়ে বলছে- 'হিসাব তো কিছুই বুঝলাম না। এইটা কী রান্না হইছে? এইটা পোলাও নাকি জাও ভাত?তারমধ্যে এগুলো কালো কালো কী ?পোকা নাকি ময়লা? ওমা এতো দেখি তেলাপোকার বাচ্চা!বাবর্ুচ্চিকে ডাক। ওওে আমি একটা একটা করে সব তেলাপোকা গিলাব'।
আফতাব সেদিকে লক্ষ করলো না। করা সম্ভবও না।তার পেটে তেমন কিছু নেই তারপরও মুখভর্তি বমি চলে এসেছে।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো।ততক্ষনে আফতাব পানি গরম করে নতুন একটা সাবান দিয়ে অনেকক্ষন সময নিয়ে গোসল করেছে।তারপর পেট ভরে ভুনা খিচুরি আর খাসির মাংস খেয়েছে।পালাক্রমে তার সাথে আপা আর দুলাভাই দেখা করেছে।তাদের মুখ থেকে জানা গেল যে, মিশুর মুসলমানি হবে বিকেলবেলা। তারপর রাতে মেহম্নরা আসবে।রাতেই হবে খাওয়া দাওয়া।আফতাব সবকিছু শুনে কিছুই বলল না।কিছু বলা না বলা একই কথা।আপা যা করার তাই করবে।কিছু বলাার কোনো অর্থ নেই।বাকী থাকে দুলাভাই।তাকে বলা আর গাছকে বলা একই কথা।সে ঘরজামাই। ঘরজামাইদের কাজ হলো বউকে খুশি রাখা।কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক সে হিসাব তারা রাখে না।রাখার ক্ষমতাও তারা রাখে না।
আফতাব গতরাতের ঘটনা কাউকে বলল না।আপা দুলাভাই ব্যসত্দতার মধ্যে আছে। এর মধ্যে তার দেখা 'কব্জিবিহীন' ভূতের গল্প বলে হাসির পাএ হওয়ার কোনো মানে নেই। তাছাড়া পুরো বিষয়টা চোখের ধান্ধাও হতে পারে।রাতের নির্জনতায় সে ভয় পেয়েছে।কাজেই হেলুসিলেশনে উল্টা পাল্টা দেখেছে।দ্রষ্টি বিভ্রম আরকি! এরকম কিছু একটা হবে হয়তো।

পড়নত্দ দুপুরে ডাক্তার এসে উপস্থিত হলেন।মুসলমানি হবে বলে মিশুকে কখনোই ভীত কিংবা চিনত্দিত বলে মনে হয়নি। কিন্তু ডাক্তার আসার পরপরই ওর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেল।ডাক্তার যখন মিশুকে নিয়ে আসতে বললেন ঠিক তখনই নাটকীয় ঘটনার সূতপাত।মিশু 'আমি করবো না। করবো না'। বলে ঘরের মধ্যেই ছুটাছুটি শুরু করে দিলো। আফতাবের বোনও তাকে ধরার জন্যে ছুটাছুটি শুরু করে দিলো। অনেকক্ষন এ দৌড়া দৌড়ি চললো। সবাই হতভম্ব হয়ে এ দৃশ্য দেখলো। একপযর্ায়ে মিশুর মা হাত ধরে আটকিয়ে ফেললো।মিশু ছুটার জন্যে মায়ের হাতে কামড় দিয়ে রক্ত বের করে ফেললো। তার মা রেগে গিয়ে তাকে লাথি মারতে গেলো।মিশু চট করে নিচে বসে পড়লো আর তার মায়ের পা ধুম করে গিয়ে লাগলো দেয়ালে। সে বিকৃত আর্তচিৎকার করে 'ওরে গেলাম রে!মরে গেলাম রে! আমি শেষ'!বলতে বলতেই পা উঁচু করে ধরে রেখে নিচে পড়ে গেলো। মিশু হাসতে হাসতে দৌড়ে ঘর থেকে বের হয়ে পড়লো। আফতাব দুলাভাইকে সঙ্গে নিয়ে ধরাধরি করে তার বোনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। ডাক্তাররা জানালেন, তার পায়ের তিনটা আঙ্গুল ভেঙ্গে গেছে।

মিশুর মুসলমানি করানো সেদিন আর সম্ভব হলো না।আফতাবের ধারনা, কোনদিন আর সম্ভবও হবে না।তার বোন পা উঁচু করে বিছানায় শুয়ে দিন কাটাচ্ছে।আফতাব ঢাকায় চলে এল। এক রাতে মকবুলকে সে সব খুলে বলল।সেই 'কব্জিবিহীন' হাত পাঅলাদের কথা। সব শুনে মকবুল হাসতে হাসতে বলল, তুই কী বলতে চাস পরিস্কার করে বল। তুই ভূত দেখেছিস?সেই ভূত আবার তোকে বাসায় পেঁৗছে দিয়েছে?
আফতাব বলল, জানি না।তবে মনে হয় এটা ভূত না।ভূত বলে তো কিছু নেই।এটা অন্যকিছু।
অন্যকিছু মানে?
অন্যকিছু মানে অন্যকিছু।ধর জি্বন বা অন্যকিছু।ওই ভ্যানঅলা ওদেরকে ভূত বলেনি।'এরা' বলে সম্বোধন করেছিল।
তো সেই 'এরা' কী?অন্য কোনো প্রজাতি?
জানি না।বাদ দে।
সেই ভালো। তুই ঘুমা।আর এসব গল্প অন্য কাউকে বলিস না। তোকে পাগল ভাববে।
তুই ঘুমাবি না?
একটু পরে ঘুমাবো। ফিজিঙ্ এর একটা ম্যাথ মিলাতে পারছি না।কিছুক্ষন চেষ্টা করে দেখি।
কর। যত খুশি চেষ্টা কর।আমি ঘুমালাম।
আফতাব চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করে। ঘুম আসছে না। কিছুক্ষন তন্দ্রামতো আসে ঠিক তখনই সে চোখের সামনে কব্জিবিহীন ওদেরকে দেখতে পায়।সেই ভয়াল রাতের সব দৃশ্য তার চোখের স্পষ্ট ভেসে ওঠে।মাঝে মাঝে সে মকবুলের দিকে তাঁকাচ্ছে।মকবুল তা খেয়াল করছে না।সে গভীর মনোযোগে পড়াশোনা করছে।
হঠাৎ একসময় আফতাব অবাক হয়ে দেখলো, মকবুল খাট থেকে না নেমেই হাত লম্বা করে টেবিলে রাখা পানির ্#২৪৫৫;্#২৫০৯;্#২৪৮২;্#২৪৯৪;্#২৪৮৮; নিয়ে পানি পান করলো। তারপর আবার হাত লম্বা করে বিছানায় রাখা বই কাতাগুলো টেবিলে রাখলো এবং যথারীতি হাত লম্বা করে লাইটের সুইচ বন্ধ করলো।
আফতাবের বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। গা কাঁটা দিয়ে শীতল স্রোত বয়ে গেলো। তার হার্টবিট দ্রুত ওঠা নামা করছে। সে চোখ বন্ধ করে দোয়া ইউনুস পড়তে লাগলো আর অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ভোর হবে?কখন?
ভোর হওয়ার পর বাইরে একটু আলো ফুটতেই আফতার বুয়েটে চলে গেলো। মকবুল তখনও ঘুমাচ্ছে। আফতাব বন্ধুদের ডেকে মকবুলের ঘটনা সব খুলে বলল। সবাই মিলে মকবুলের বুয়েটে আসা পর্যনত্দ অপেক্ষা করতে লাগলো। মকবুল আসছে না দেখে তার মোবাইলে ফোন দিয়ে দেখা গেল যে মোবাইল বন্ধ। তখন সবাই মিলে মকবুলের মেসে গিয়ে দেখলো মকবুল মেসে নেই। সারাদিন মকবুলকে মেস কিংবা বুয়েটের কোথাও খুঁজে পাওয়া গেলো না।আফতাব ্#২৪৫৩;্#২৫০৯;্#২৪৮২;্#২৪৯৪;্#২৪৮৮; না করে সম্ভব অসম্ভব সমসত্দ জায়গায় মকবুলকে খুঁজলো। কিন্তু কোথাও তাঁকে পাওয়া গেলো না। তার মোবাইলও সারাদিন বন্ধ পাওয়া গেলো। আফতাব আকাশ পাতাল চিনত্দা করতে করতে শেষে সিদ্ধানত্দ নিল আপাতত গ্রামে তার বোনের কাছে যাওয়া যাক। সেখানে কিছুদিন রেস্ট নিয়ে চিনত্দা করা যাবে কী করা যায়! মেসে একা থাকা তাঁর সাহসে কুলাবে না।ঢাকায় ফিওে অন্য কোথাও উঠতে হবে।
রাতের বেলা আফতাব বাসে করে রওনা দিল। পথিমধ্যে একটা দুর্ঘটনা ঘটলো।আফতাবের বাস একটা ট্রাকের সাথে ধাক্কা খেয়ে খাদে উল্টো হয়ে পড়ে গেল। সেই মালভর্তি ট্রাকটাও খাদে ঐ বাসটার ঠিক ওপর গিয়ে পড়লো।
আফতাব সাঁতার জানে না।যেসব যাএীরা সাঁতার জানে তাঁরাও ট্রাকটার কারনে বের হতে পারলো না। আফতাবের বুঝতে বাকী রইলো না যে সে মরতে বসেছে। তার নাক মুখ দিয়ে অনবরত পানি ঢুকছে। সে নিঃশ্বাস নিতে পারছে না। ানেকে বাঁচার জন্যে একে অন্যকে জড়িয়ে ধরছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে মরে ভেসে উঠেছে।
আফতাব চোখ বন্ধ করলো। প্রায় সাথে সাথেই কে যেন তাকে ধরে হঁ্যাচকা টান মারলো। আফতাব চোখ মেলে দেখে মকবুল!'মকবুল আসলো কোত্থেকে? সে জানলোই বা কী করে যে আমি এখানে'? এসব কোনো চিনত্দায় আফতাবের মাথায় আসলো না। সে দেখলো তালগাছের মতো লম্বা হাত পা দিয়ে মকবুল সাঁতার কাটছে। সে মকবুলকে শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করলো।
এভাবে কতক্ষন গেল কে জানে? একসময় মকবুল নরম গলায় বলল, চোখ খুলো দোসত্দ । চোখ খুলো।
আফতাব তাঁকিয়ে দেখলো সে উপরে উঠে এসেছে। রাসত্দার পাশে একটা গাছে শুয়ে আছে। মকবুল তার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, ভয় নেই। কিচ্ছু হবে না। আমি উদ্ধাকমর্ীদের খবর দিয়েছি।কিছুক্ষনের মধ্যেই তারা চলে আসবে। তারা খুব কাছে চলে এসেছে। তোর পেট থেকে সব পানিও বের করে দিয়েছি। আমি যাই। তুই ভালো থাকিস। বিদায়।
আফতাব কিছু বলতে যাচ্ছিল কিনত্দু তার গলা দিয়ে কোনো স্বর বের হলো না। তাছাড়া সে কিছুটা ্#২৪৫৩;্#২৫০৯;্#২৪৮২;্#২৪৯৪;্#২৪৭২;্#২৫০৯;্#২৪৬৮;্#২৪৫১; বটে। তার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠলো। আফতাব পরিস্কার দেখলো, মকবুল আসত্দে আসত্দে হেঁটে চলে যাচ্ছে। কিন্তু তার দুই হাত ও পায়ের কব্জি নেই।সে শূন্যে ভেসে খুবই স্বাভাবিকভাবে হেঁটে যাচ্ছে। মকবুলের হাত পায়ের কব্জি তো মেসে থাকার সময় আফতাব ঠিকই দেখেছে। তাহলে আজ নেই কেন?


পরদিন একটি দৈনিক পএিকায় প্রকাশিত সংবাদ:
বিরল ঘটনা
যশোর প্রতিনিধি: বুধবার রাতে ঢাকা থেকে যশোরগামী হারুন পরিবহনের একটি বাস ট্রাকের সাথে ধাক্কা লেগে বাস ও ট্রাক উভয়ই গভীর খাদে পড়ে যায়। এতে বাসে থাকা
১২০ জন যাএী নিহত হন। তাঁদের মৃতদেহ উদ্ধার করার কাজ চলছে। এ পর্যনত্দ ৬৮ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উলেস্নখ্য, টেলিফোনে মকবুল নামের এক যুবক এ ঘটনা জানান। খবর পেয়ে উদ্ধারকমর্ী প্রায় সাথে সাথেই সেখানে ছুটে যান। কিন্তু ততক্ষনে বাস ও ট্রাক উভয়ই সমর্্পূন ডুবে যায়। অথচ অলৌকিকভাবে সেই বাসের আফতাব (২৪) নামের এক যাএী বেঁচে যান। উদ্ধারকমর্ীরা জানান, কোনো যাএীকেই জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা না গেলেও আফতাব নামের যুবককে তারা সেই খাদের কাছেই এক রাসত্দার পাশে একটি গাছের নিচ থেকে সমর্্পূন সুস্থ অবস্থায় উদ্দার করা হয়েছে। সেই যুবক কীভাবে উঠে এল তা জানা যায়নি। যুবকটিও কিছু বলেনি। উদ্দারকমর্ীরা আরো জানান, খাদটি গভীর হওয়ায় এবং ট্রাকটি উল্টো হয়ে বাসের ওপর পড়ায় কোওনা যাএী বাস থেকে বের হয়ে প্রানে বাঁচতে পারেনি। কিন্তু সেই বাসের মধ্যে থাকা স্বওেও আফতাব নামের যুবকটি কীভাবে উপরে উঠে এলেন, তার কোনো সদুওর উদ্ধারকমর্ীরা দিতে পারেননি।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
শাহ্‌নাজ আক্তার লোম হর্সক কাহিনী ,, পড়ে আমার গায়ে কাটা দিয়ে উঠলো , বেশ সাবলীল ভাবে সমানতালে লিখেছেন ,, শুধু অসংলগ্ন কথাগুলো খারাপ লেগেছে পাঠক হিসেবে , যাই হোক , তবু ও বলছি খুব ভালো লাগলো আমার , ভোট দিলাম |
সূর্য গল্পটা ভালই লাগলো, তবে কিছু বোকামী করেছেন লেখক। ১) এখানে ধর্মঘটের কারণ বর্ণনায় যে নারী পুরুষের বস্ত্রহীন অবস্থার বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা সত্য হলেও মামা তার ভাগিনাকে বলবেনা। ২) ১৯৮৯ সালে তীর্থের কাকের মত টেলিভিশন নাটকে "টেলিফোন জিনিসটা দেখেছি" মোবাইল নামে কোন যন্ত্রের কথা শুনিনি, তখনই টিকিট কাউন্টারের একটা ছেলে মোবাইল এবং তাতে আবার মিউজিক প্লেয়ারে গান শুনছে? # আর পায়ের কব্জি না পায়ের পাতা হবে "গোড়ালি সহ পায়ের পাতা নেই"
তানভীর আহমেদ গল্পটি ভালো লাগল, যদিও বর্ণনায় দূর্বলতা রয়েছে। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ সংবাদ আকারে না দিয়ে নিজের ভাষায় অর্থাৎ পরোক্ষ বর্ণনায় লিখলে যথাযথ হতো। আরো গল্প প্রত্যাশা করি।
বিন আরফান. ভূতের গল্প শিখতে গল্পটি আবার পড়লাম. জানিনা কতটুকু মগজে গেল তবে বমি আসার বর্ণনা আমার বেশি ভালো লাগলো কেননা পড়তে পড়তে আমার বমি আসতে চাচ্ছিল. সেই মতে বলতে পারি গল্পের ভিতরেই ডুবে যাচ্ছিলাম. আর প্রথম ভূতের বর্ণনায় গায়ে শিহরণ দিয়ে উঠলো সেখানে ভূতের গল্পের যে চমক দরকার তা পেয়েছি পরবর্তিতে বেনের ভূতের তথ্যেও চমকে যাই কিন্তু ডুবে যাওয়ার সময়ে ভূতের বর্ণনা ভূতের ছোয়া দিতে পারেনি আমাকে সে মতে সেখানে আরো একটু চমক দেয়া দরকার ছিল. ভোট কত দিয়েছি সেটা এই মূহুর্তে মনে নেই. তবে আবার দিতে যেয়ে দেখি আমার হাত নেই. শুভ কামনা রইল.
মোঃ আক্তারুজ্জামান চমত্কার লিখেছেন| অনেক অনেক শুভ কামনা|
খন্দকার নাহিদ হোসেন এটা ৫ পাবার মতই একটা গল্প। আর কিছু শব্দ দিয়ে আপনি যে রম্য ভাবটা আনতে চেয়েছেন তা না দিলেও কিন্তু খুব একটা ক্ষতি হতো না। বরং গল্পের মানটা আরো উপরেই থাকতো। সামনে আরো লেখা চাই কিন্তু।
বিন আরফান. কিছু কিছু জনপ্রিয় লেখকের আম শুনে আসছি তাদের বই কিনিনি. পড়ি নি. কেননা তাদের ধারা শুনেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি. আমি জানি চুরি ডাকাতি ধর্ষণ ইত্যাদি নিয়ম অনেক লেখকের লেখার জন্য আবিস্কৃত. সমাজে সন্ত্রাস অহমিকা তাতেও কিছু লেখক তৈরী করেছে যদি পরিনতি খারাপ বলেছে সমাপ্তে. আমি এসব পছন্দ করিনা. আপনি সাহিত্য জানেন সমাজ ভালো কিছ শিখবে আপনার নিকট হতে এই প্রত্যাশায় অসাধারণ বলছি.
Akther Hossain (আকাশ) গল্প অনেক ভালো লাগলো ! অনেক বানান ভুল চোখে পড়ল!
junaidal ভাল হয়েছে। এগিয়ে যান। শুভ কামনা রইল।

১২ ফেব্রুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ২ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪