তিতাস স্যার শিক্ষার্থীদের হাজিরা নিচ্ছেন, রোল নম্বর এক, ময়না খাতুন রোল নম্বর দুই, হুমায়ুন কবির রোল নম্বর তিন, সালেহা বেগম এমন সময় দরজায় আওয়াজ, রোল নম্বর ছাব্বিশ জিয়া। স্যার ঘাড় ফিরিয়ে চশমার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে এক নজর দেখলেন বই সামনে মাটিতে রেখে জিয়া কানধরে দাড়িয়ে আছে। তিনি বললেন ছাব্বিশে এখনো আসিনি দাড়িয়ে থাক, স্যার আবার শুরু করলেন রোল নাম্বার চার, মমিন মিয়া রোল নাম্বার পাঁচ… শিক্ষার্থীদের হাজিরা নেওয়া শেষ হলে হাজিরা খাতা বন্ধ করে স্যার জিয়াকে ডাকলেন, আয়! ভেতরে এসে সামনে দাড়িয়ে কানে ধরে বল আমার নাম জিয়া রোল নাম্বার ছাব্বিশ। জিয়া কাচুমাচু করতে লাগল। স্যার জোরে আরেকটি ধমক দিতেই বরাবরের মত জিয়ার প্যান্টের ভিতর দিয়ে পানি বের হতে লাগল। স্যার স্বাভাবিক স্বরে বললেন যা প্যন্ট পাল্টে আয় আর ঝাড়ু, পানি এনে এটা পরিস্কার কর। জিয়াও স্যারের কথামত প্যন্ট পাল্টাতে চলে গেল । জিয়ার মা জানে জিয়া এই কাজ করে তাই জিয়ার বইয়ের সাথে কাগজে পেচিয়ে একটা হাফপ্যন্টও দিয়ে দেয়। জিয়া স্বাভাবিকভাবেই বাইরে গিয়ে হাফপ্যন্ট পাল্টে স্কুলের কলপাড় থেকে এক বদনা পানি আর ঝাড়ু এনে পরিস্কার করতে লাগল। স্যার পড়াতে লাগলেন সব কিছুই স্বাভাবিক, জিয়ার এই কান্ডে এখন আর কেউ অবাক হয় না হাঁসেও না। ভুল করেও যদি কেউ হেসে ফেলে তাকেও জিয়ার সাথে পরিস্কারের কাজ করতে হয়। এই তো সেদিন স্কুলে মাদ্রাসা থেকে এক নতুন ছেলে এসে ভর্তি হল। জিয়া যখন ক্লাসে দাড়িয়ে ছাব্বিশ জিয়া বলল, স্যার বলল সামনে এসে কানে ধরে দাড়া জিয়া সামনে আসতে আসতে বেঞ্চের কাছ থেকেই প্যন্ট ভিজতে শুরু করল। আর নতুন ছেলেটা ফিক করে হেঁসে দিল স্যার বলল “কে হাসল কে? এদিকে আয় কানে ধরে বাইরে গিয়ে পানি আর ঝাড়ু নিয়ে আয়”। ছেলেটা কানে ধরে হাঁসির পরিবর্তে কাঁদতে লাগল। কান্না দেখে স্যার বললেন, “কাঁদলে হবে না নতুন এসেছিস স্কুলে থাকলে থাকবি না থাকলে নাই আমি কোন বেয়াদবি সহ্য করব না”। ছেলেটাও সেই যে গেল আর এল না। কয়েকদিন স্যার স্কুলে এল না। বড় আপা ক্লাস নিল । বড় আপা কি সুন্দর করে পড়ায় আর কি সুন্দর পরিপাটি হয়ে আসে সবাই আপাকে বলে আপা আমাদের স্যার বদলিয়ে দেন আপনিই আমাদের ক্লাস নেবেন। আপা বলে তোমাদের স্যারও আসার পর সুন্দর করে ক্লাস নেবে। কয়েকদিন পর স্যার এল। ক্লাসে ছাত্রদের মাঝে আবার সেই ভয় জিয়া স্যরকে দেখেই বেঞ্চের উপর কাম সেরে ফেলেছে। স্যার কিছুই বলেনি জিয়াই কলপাড় থেকে বালতি বদনা এনে পরিস্কার করছে। স্যার বলছে জিয়াকে সহযোগীতা করতে। এখন স্যার খুব সুন্দর ক্লাসে পড়ান সবাইকে শিখিয়ে তারপর ছাড়েন । স্কুলে শিক্ষক কম থাকায় স্যারেই আমাদের দুইটা ক্লাস একসাথে নেন । এই দুই ঘন্টা সারাক্ষণ পড়ার উপর থাকতে হয়। স্যার একদিন একটা যন্ত্র নিয়ে ক্লাসে এলেন এবং বললেন “আজ তোদের মাল্টিমিডিয়া ক্লাস করাব” । এখনও এ গ্রামের অনেকের বাড়িতে বিদ্যুত নেই স্কুলে কয়েকদিন আগে এসেছে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ক্লাসের পড়াগুলো স্যার ভিডিওতে চালিয়ে দিলেন আরও দেখালেন পৃথীবি, চাঁদ, মহাকাশ, কতকিছু পুরো ক্লাস নিরব হয়ে দেখে সব। মনে হয় সবাই স্বপ্নের জগতে আছি। আমরা একক কাজ করি, দলীয়ভাবে করি। বাইরে গিয়ে প্রকৃতির ক্লাস করি। এর মাঝে আমরা ক্লাসেই দশ মিনিট ঘুম ও স্বপ্নের বর্ণনা করি। স্যার বলেন, ইংরেজি ক্লাস শেষ অংক ক্লাসে যাওয়ার আগে আমরা দশ মিনিট ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখব। দেখব বড় হয়ে কে কি হয়েছি। স্যার বলেন এক, দুই, তিন এই সবাই ঘুমা অমনি সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। দশ মিনিট শেষ এবার জেগে স্বপ্নের বর্ণনা । হুমায়ুন আমার সামনে এসে বল কি স্বপ্নে দেখেছিস স্যার আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি পুলিশের অফিসার হয়ে সবাইকে বে্ঁধে নিয়ে যাচ্ছি। মালেকা তুই কি দেখেছিস? স্যার আমি বিমানের ড্রাইভার হয়ে বিমান চালাচ্ছি। জিয়া তোর স্বপ্নটা বল? জিয়া সব সময় প্যন্ট ভিজায় না মাঝে মাঝে সে বিরাট সাহসী। সে দ্রুত হেটে স্যারের কাছে এসে বলে, স্যার আমি স্বপ্নে দেখলাম আমি গোস্তু দিয়া গরম ভাত খাইতেছি । এই কথা শুনে ক্লাসে সবাই হেসে উঠে স্বপ্নের ক্লাসে হাসলে স্যার কিছু বলেনা। কারণ একেকজনের স্বপ্নের বর্ণনা একেক রকম হয় মাঝে মাঝে স্যারও হাসেঁন। আতিক তো একদিন স্বপ্নে নায়ক শাকিব খানের মত মারামারি দেখতে গিয়ে স্যারের শরীরে পা লাগিয়ে দিলেন সবাই ভয় পাচ্ছে স্যার না জানি কি বলে কিন্তু স্যার কিছু না বলে উল্টা আতিকের সাথে ভিলেন হয়ে মারামারি খেলতে লাগল । ক্লাসে সবাই হাততালি দিল। এমন আবার মাঝে মাঝে তিনি আমাদের ক্লাসেই খেলতে দেন খেলাটা এরকম তিনি বলেন এখন ১০ মিনিটের খেলা হবে যা তোদের যাকে পছন্দ বন্ধু বানিয়ে নে। তখন সবাই বন্ধু খোজা শুরু হয় একজনকে নিয়ে তিনজন টানাটানি হয় এখানেও জিয়া সমস্যা । জিয়ার কোন বন্ধুও হয় না জিয়া একা কোনায় দাড়িয়ে থাকে । সবাই খেলা শুরু করে মুখোমুখি দুজন বসে পা গুলো লম্বা করে পায়ের পাতা একসাথে করে হাত দিয়ে দুজন দুজনের কান টেনে ধরে বলতে হয় দাদা খেসারি, দাদা মুসুরি.... কি রে জিয়া তোর বন্ধু কই? জিয়া আস্তে করে জবার দেয় কেও মিশে না । আচ্ছা তুই আমার কাছে আয় গল্প করি। জিয়া কিন্তু তখন আর ভয় পায় না বেঞ্চ টেনে সে স্যারের মুখোমুখি বসে হেঁসে হেঁসে গল্প করে স্যার। আইজ কি খাইছস রে জিয়া? আইজ সহালে রাইতের ভাত আছিন আম্মা আমারে কলা দিয়া মাখাইয়া দিছে। আম্মা না খা্ইয়াই কামে গেছে। তোর বাপ কি করে ? মা কইছে আমারও একটা বাপ আছিল আমার জন্মের আগেই মা রে থুইয়া গেছেগা। মার খুব ইচ্ছা আমারে বাপের মত শিক্ষিত বানাইব তাই আমারে স্কুল পাঠায়। আমার মা সারাদিন বাসা বাড়িত কাম করে আর রাইতে আমারে লইয়া কান্দে জিয়াও বা হাতদিয়া চোখ মুছে আর বলে আমিও মা রে কই তুমি চিন্তা কইর না আমি বাপের চেয়ে বড় শিক্ষিত হমু। কথাগুলো শুনে স্যারের চোখগুলো ছলছল করে উঠে, জিয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে তুই অবশ্যই শিক্ষিত হবি আজ থেকে আমি তোর শিক্ষার দায়িত্ব নিলাম আমিই তোরে শিক্ষিত বানাব।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
জিয়া নামে এক শিক্ষার্থী যে কিনা সব সময় ক্লাসে পরে আসে এবং স্যারকে খুব ভয় পায় , ভয় পেয়ে সে যে কান্ড করে তার জন্যও প্রস্তুতি নিয়ে আসে ,দরিদ্রতার জন্য সে খেতে না পারলেও স্কুল ছাড়েনি । শিক্ষকই একসময় তার পড়ালেখার দায়িত্ব নেয়
শিক্ষক বিষয়ে লিখতে হবে আমার গল্পটাও একজন শিক্ষকের প্রশিক্ষণের আগে এবং পরে তার মধ্যে যে আচরনীক পরিবর্তন ঘটে তার উপর।
১৯ জুলাই - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।