ছাত্র থাকাকালীন সময়ে কোরবানির ঈদের দিন গোশত কাটাকাটি করার পরে তা বিলি-বন্টনের দায়িত্ব বাড়ির ছোট ছেলে হিসেবে আমার উপরেই পড়ত। আমিও আশেপাশের প্রতিবেশী এবং আত্মীয়-স্বজনকে কোরবানির গোশত পৌঁছে দেওয়ার তাড়ায় থাকতাম, যাতে বিতরণ শেষ করে তাড়াতাড়ি বন্ধুদের সাথে ঈদ আড্ডায় যোগ দিতে পারি। সেই বারও গোশত কাটাকাটি সম্পন্ন করে যথারীতি বিলি-বন্টনের জন্য বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
ঐ সময় রুমীদের বাড়িতে কুরবানীর গোশত দিতে এসে ভুল করে একটি মেয়ে চলে আসে আমাদের বাড়িতে। 1 আমারও ডাক নাম রুমী, তবে পারিবারিক গন্ডি ও ঘনিষ্ঠজনদের বাইরে আমার এ নামটা খুব বেশি প্রচলিত না। প্রতিবেশিনীর নাম 'রুমী' হওয়ায় আমার এ নামটি সর্বমহলে প্রচলিত হোক, এটা আমিও খুব একটা চাইতাম না।
বাসায় এসে দুবার কলিং বেল বাজানোর পর কোন সাড়া না পেয়ে 'রুমী' 'রুমী' বলে ডাকতে থাকে মেয়েটি। মা দরজা খোলে তাকে ড্রয়িং রুমে বসতে বলে আমাকে বললেন, "তোর কাছে সুন্দর একটি মেয়ে এসেছে, হাতে গোশত। তার কথাবার্তা আমি সঠিকভাবে বুঝতে পারিনি। রান্না ঘরে যাওয়ার তাড়া থাকায় আমি তাকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখে চলে এসেছি, তুই গিয়ে দেখ।"
এইটা
- আমি রুমীদের বাসায় গোশত দিতে এসেছিলাম।
-আপনার বাসা কোথায়?
- আমি থাকি ঢাকায়, এখানে আমার ফুপুর বাসায় ঈদে বেড়াতে এসেছি।
- ফুপুর বাসা কোথায়?
- এই রোডের মাথায়, পল্লবী আমার কাজিন।
- আপনি নিশ্চয়ই পল্লবীর চাচাতো বোন রুমীদের বাসার উদ্দেশ্যে এসেছেন।
ক
- জ্বি, এটা ৪২ নং কাচিঝুলি না?
- এটা ৪২/এ, কাচিঝুলি, ময়মনসিংহ।
ও..., আমারই তাহলে ভুল হয়েছে। কিন্তু রুমীদের বাসার কথা জিজ্ঞেস করতেই একজন আপনাদের বাসা দেখিয়ে দিল।
আসলে আমার ডাক নামও রুমী।
- "তাই নাকি?" বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টির সাথে মিষ্টি একখান হাসি দিয়ে অনামিকা বলল, 'আমি তাহলে আসি"।
"আমি মেয়ের কথা শুনেই ভেবেছিলাম, কোথাও কোন ভুল হচ্ছে", ঈদের খাবার নিয়ে ঢুকতে ঢুকতে মা বললেন।
- আপনি এত কিছু নিয়ে এসেছেন!
- ঈদের দিন, এরপর গোশত-পোলাও খেয়ে যেতে হবে কিন্তু!
এই বলে মা আবার ভেতরে চলে গেলেন।
- ও, আমার পরিচয়টাই দেয়া হয়নি। আমি পিয়াল হাসান (রুমী), বুয়েটে থার্ড ইয়ারে পড়ি, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং- এ।
-আমি অনামিকা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজিতে পড়ি, ফার্স্ট ইয়ার।
- আপনি কি ইউনিভার্সিটির হলে থাকেন?
- হ্যাঁ, শামসুন্নাহার হলে থাকি।
- আমি আপনার কাছাকাছিই থাকি, শেরে বাংলা হলে।
ও, আচ্ছা।
তো, আপনি গোশত নিয়ে এলেন কেন? পল্লবীদের বাসায় আর কেউ কি ছিল না?
- সবাই বাইরে, আর আমি নিজেই অনেকটা জোর করে এসেছি। অনেক আগেও একবার এসেছিলাম। ভাবলাম, আমি আগে চলে আসি, পরে পল্লবী এসে আমাদের সাথে যোগ দিবে।
কথায় কথায় পরস্পরের আরও অনেক কিছুই জানা হল, মোবাইল নম্বরও বিনিময় হল। এ সময়ই ধরা পড়ল যে, অনামিকা তাড়াহুড়ো করে আসতে গিয়ে ভুল করে মোবাইল ফোন রেখে চলে এসেছে। এর মধ্যে বাসায় একই সাথে ঢুকল পল্লবী ও রুমী। অনামিকাকে দেখেই বলল "ফোন ধরছিস না কেন?"
ফোন ভুলে রেখে চলে এসেছি।
- তাই বল, আমরা তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম।
এরপর পল্লবী ও রুমী আমাকে 'খুব ভাল মানুষ' উল্লেখ করে পুনরায় অনামিকার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। উল্লেখ্য, একই এলাকার হওয়ায় পল্লবী ও রুমীদের সাথে আমাদের বেশ ভাল একটা সম্পর্ক ছিল।
ভেতর থেকে ডেকে এনে মা'র সাথে দেখা করে এবং পুনরায় আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পল্লবী ও রুমীর সাথে বিদায় নিল অনামিকা। যাওয়ার সময় সাথে আনা গোশত জোর করে আমাদেরকেই দিয়ে গেল সে। আর আমার দিকে তাকিয়ে শুধু বলল, "দেখা হবে।" আমিও হেসে বললাম, "দেখা হবে।"
ঈদের দিনে অনামিকার গোশত বিতরণের সেই ভুল থেকেই আমাদের পরবর্তী পর্বের শুরু। তার পর থেকে বুয়েট ক্যাম্পাস, ঢাকা ইউনিভার্সিটির টিএসসি, পাবলিক লাইব্রেরী, রমনা পার্ক, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি লেক কিংবা চন্দ্রিমা উদ্যান হয়ে উঠে আমাদের পালা করে ঘোরাঘুরির নিয়মিত স্থান। আর বাকিটা খুনসুটি, মান- অভিমান আর বিশ্বাসে ভরপুর এক রোমান্টিক ইতিহাস।
ভুল থেকে যদি 'মধুর' কিছু হয়, তাহলে ভুলই ভালো, তাই না? দুই মেয়েসহ বিয়ের দেড় দশক পূর্তির দিনে আমাদের বুয়েট ব্যাচের পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান ছিল। বন্ধুদের বার বার পীড়াপীড়িতে সেদিন আমরা অমর শিল্পী বশির আহমেদের জনপ্রিয় একটি গান ডুয়েট হিসেবে গেয়েছিলাম, গানটি ছিল:
"ভুল যদি হয় মধুর এমন, হোক না ভুল।"
লেখার সাথে বিষয়ের সামঞ্জস্যতা
ব্যাখ্যায় লেখকের বক্তব্য
ছাত্র থাকাকালীন সময়ে কোরবানির ঈদের দিন গোশত কাটাকাটি করার পরে তা বিলি-বন্টনের দায়িত্ব বাড়ির ছোট ছেলে হিসেবে আমার উপরেই পড়ত
১৬ জুলাই - ২০১৯
গল্প/কবিতা:
১৫ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪